বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীরা। আন্দোলনে দ্বিতীয় দিনে আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেওয়ায় নগর ভবনে প্রবেশ করতে পারেননি রাসিকের শীর্ষ কর্মকর্তা ও সেবাগ্রহীতারা। এদিন সকালের দিকে বিক্ষোভকারীরা নগর ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এতে প্রতিটি বিভাগে দাপ্তরিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা দিয়ে আন্দোলন করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিক-কর্মচারীরা। আজ বুধবার সকাল থেকে সারাদিন প্রধান ফটক অবরোধ করে আন্দোলন করেন তাঁরা। আন্দোলনকারীদের বড় অংশই পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মচারী। তারা কর্মবিরতি শুরু করায় ইতোমধ্যেই ‘পরিচ্ছন্ন নগরী’ হিসেবে পরিচিত রাজশাহীতে ময়লা-আবর্জনা অপসারণে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
জানুয়ারিতে প্রজ্ঞাপন বাস্তবায়ন করেনি রাসিক
বিক্ষুব্ধরা বলছেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দক্ষ শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৭৫০ টাকা এবং অদক্ষ শ্রমিকদের ৭০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু রাসিক এখনো সেটি বাস্তবায়ন করেনি।
এদিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাসিকের বিভিন্ন বিভাগে অস্থায়ীভাবে কর্মরত আছেন প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক-কর্মচারী। তাঁদের মধ্যে পরিচ্ছন্নতা বিভাগেই বেশি। এসব শ্রমিকদের প্রতিদিনের নির্ধারিত মজুরি ৬০০ টাকা হলেও বাস্তবে পাচ্ছেন ৪৮৪ টাকা করে। এ ছাড়া কোনোদিন কাজে অনুপস্থিত থাকলে তাঁরা বেতন-ভাতার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
রাসিক প্রধান ফটক অবরোধ করে বুধবার আন্দোলন। স্ট্রিম ছবিচাকরির স্থায়ী ও অবসরে টাকা দাবি বিক্ষুব্ধদের
রাসিকের পরিবহন শাখার গাড়িচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির পর রাসিক প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার খন্দকার আজিম আহমেদ একটি কমিটি গঠন করেছিলেন। রাসিকের সচিব ছিলেন ওই কমিটির প্রধান। কমিটি শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও গত তিন মাসে কোনো বৈঠক হয়নি। ফলে বেতনও বাড়েনি।
পরিচ্ছন্নতা বিভাগের ভ্যানচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চার মাস আগে ভ্যানে আবর্জনা তুলতে গিয়ে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ পায়ে ঢুকে যায়। তিন মাস চিকিৎসা নিতে হয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন চিকিৎসা ব্যয় দেয়নি, বরং কাজ করতে না পারায় বেতনও বন্ধ করে দিয়েছে। এখন পরিবার নিয়ে আমি চরম অসহায় অবস্থায় আছি।’
বুধবার প্রধান ফটক অবরোধ রেখে সমাবেশ চলাকালে বক্তারা বলেন, সব শ্রমিক-কর্মচারীর মাসিক বেতন ন্যূনতম ২২ হাজার ৫০০ টাকা করতে হবে। এই বেতন মাসের তিন তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে তাঁদের। এ ছাড়া শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত উৎসবভাতাও চালু করতে হবে রাসিকে। কোনো শ্রমিকের কাজে কোনো অনিয়ম হলে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে, কিন্তু বিনা কারণে চাকরিচ্যুত করা যাবে না। চাকরি স্থায়ী করতে হবে এবং চাকরি শেষ হলে এককালীন হিসেবে দিবে হবে পাঁচ লাখ টাকা।
আন্দোলনের নেতৃত্বে খুঁজে পাচ্ছে না রাসিক
করপোরেশনের প্রবেশদ্বারে শ্রমিক-কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে বুধবার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম, প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আহমদ আল মঈন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. নূর ঈ সাঈদ, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফ এ এম আঞ্জুমান আরা বেগমসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা সিটি ভবনে প্রবেশ করতে পারেননি। ফলে দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সেবাগ্রহীতারা। আগের দিন মঙ্গলবার শীর্ষ কর্মকর্তারা নগর ভবনের বাইরে একটি সভায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন। শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ শুরু পর তাঁরা অফিসেই আসেননি।
শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, ‘দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবি আমরা পর্যালোচনা করছি। তবে তারা বেশ কিছু বেআইনি দাবি তুলেছেন। সব কিছু আইনের মধ্যেই করা হবে। তাদের আন্দোলনে কারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেটা স্পষ্ট নয়। তাঁদের নেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এর পেছনে কারও ইন্ধন রয়েছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।’