leadT1ad

ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সিটি ইউনিভার্সিটি, থমথমে পরিবেশ

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
সাভার

সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে ভাঙচুরের দৃশ্য। স্ট্রিম ছবি

ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলা দফায় দফায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সিটি ইউনিভার্সিটি ও আশপাশের এলাকা। রোববার (২৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের এই ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঘটনার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সহযোগিতা পাননি তারা।

সোমবার সকালে বিরুলিয়া এলাকার সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে দেখা যায়, ফটক পুড়ে গেছে। চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কাচ, কাঠসহ ভাঙা জিনিসপত্র। ভাঙচুর করা হয়েছে একটি প্রাইভেট কার, দুটি মাইক্রোবাস ও দুটি মোটরসাইকেল। আগুন দেওয়া হয়েছে অন্তত তিনটি বাস, পাঁচটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেট কারে, কয়েকটিতে সকালেও ধোঁয়া উড়ছিল।

সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে ভাঙচুরের দৃশ্য। স্ট্রিম ছবি
সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে ভাঙচুরের দৃশ্য। স্ট্রিম ছবি

একাডেমিক ভবনেও চালানো হয়েছে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ। ভবনের প্রায় সব জানালার থাই গ্লাস ভাঙা। প্রতিটি ফ্লোরে ছড়িয়ে আছে ফাইল, কাগজ, ভাঙা আসবাব ও কাচের টুকরো। প্রতিটি কক্ষে চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার, বাথরুমের কমোড, বেসিন, দরজা, এসি, ফটোকপি মেশিন, প্রিন্টার, অফিস ও অভ্যর্থনাকক্ষের সামগ্রী গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি লুটপাটও চালানো হয়েছে—ল্যাপটপ, টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।

শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার সন্ধ্যায় ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসা ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেল’-এর পাশে বসেছিল সিটি ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে একজন অসর্তকতাবশত থুতু ফেললে তা মোটরসাইকেলে যাওয়া ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীর গায়ে লাগে। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির পর রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী দেশীয় অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের মেসে হামলা চালায়।

সিটি ইউনিভার্সিটির ল্যাপটপ-কম্পিউটার লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। স্ট্রিম ছবি
সিটি ইউনিভার্সিটির ল্যাপটপ-কম্পিউটার লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। স্ট্রিম ছবি

ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে অগ্রসর হন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ড্যাফোডিলের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা। তাঁরা সিটি ইউনিভার্সিটির প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে সমাধানের আহ্বান জানান।

এরই মধ্যে অন্য স্থানে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। পরে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। সেখানে দাঁড় করানো তিনটি বাস, দুটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেয়। একটি বাস, দুটি প্রাইভেট কার, একটি মোটরসাইকেল ও প্রশাসনিক ভবনও ভাঙচুর করা হয়। পরে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা এলাকা ত্যাগ করলে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে সিটি ইউনিভার্সিটির বাসে। স্ট্রিম ছবি
অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে সিটি ইউনিভার্সিটির বাসে। স্ট্রিম ছবি

সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী বলেন, “ড্যাফোডিলের এক ছাত্রের গায়ে থুতু লাগা থেকে ঘটনার শুরু। পরে সে ‘স্যরি’ বলেছে, কিন্তু ওরা তাকে মারধর করে আটকে রাখে। এরপর বিষয়টা আমাদের কাছে আসে, আমরা এগিয়ে যাই। প্রথমে শুধু ইট ছোড়াছুড়ি হচ্ছিল, পরে ওরা পুরো একাউন্টস অফিস লুট করেছে, পাঁচটা গাড়ি ভেঙেছে, সব রুম গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এটা কেমন আচরণ!”

এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঘুমন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। তারা অস্ত্র নিয়ে আসে, মেয়েদের হলের গেট ভাঙার চেষ্টা করে, ইট ছোড়ে। অনেক মেয়ের গায়ে ইট লেগেছে। পুরো ক্যাম্পাস ভাঙচুর করেছে।’

সিটি ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘রাত ১২টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছি। কিন্তু কেউ আসেনি। ওরা এসে ক্যাম্পাসে আগুন দিয়েছে, শতাধিক শিক্ষার্থীকে আহত করেছে। আমরা খুব অসহায় অবস্থায় পড়েছিলাম।’

সিটি ইউনিভার্সিটির প্রক্টর অধ্যাপক আবু জায়েদ বলেন, ‘ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত নই। ছাত্রদের মারামারি থেকে ক্যাম্পাস পুড়িয়ে দেওয়া পরিকল্পিত কাজ বলে মনে হয়। আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা আনুমানিক অর্ধশতাধিক।’

সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের ফটকে সকালে দেখা যায় পোড়া দাগ। স্ট্রিম ছবি
সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসের ফটকে সকালে দেখা যায় পোড়া দাগ। স্ট্রিম ছবি

ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির অ্যাক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, “অসর্তকতাবশত থুতু লাগার ঘটনাটি ‘স্যরি’ বলেই মিটে গিয়েছিল। পরে রাতে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের মেসে ভাঙচুরের ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত। উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই আমাদের সন্তান, আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।”

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রক্টর শেখ মুহাম্মদ আলিয়া বলেন, ‘এখনো আমাদের ৯ শিক্ষার্থীকে সিটি ইউনিভার্সিটিতে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। আমাদের প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।’

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আরাফাতুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা রাতে হয়েছে। কেন ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে, তবে পরিবেশ কিছুটা থমথমে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত