leadT1ad

আকাশসীমা নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য ‘ঔপনিবেশিক হুমকি’: ভেনেজুয়েলা

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (বামে) এবং ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো (ডানে)

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিবৃতিকে ঔপনিবেশিক হুমকি আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে ভেনেজুয়েলা। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ভেনেজুয়েলার আকাশসীমা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে। দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা এ ঘোষণার পর আরও বেড়েছে।

ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই বক্তব্য দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে। তাদের মতে, এটি ভেনেজুয়েলার জনগণের বিরুদ্ধে অন্যায় ও বেআইনি আগ্রাসন।

ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বিমান সংস্থা, পাইলট, চোরাচালানকারী ও মানবপাচারকারীদের উদ্দেশে বার্তা দেন—ভেনেজুয়েলার আকাশসীমা বন্ধ। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে দাবি করছে, তারা মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র আসলে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার পথ তৈরি করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সাগরে বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করেছে। মাদকবাহী বলে সন্দেহ করা কয়েকটি জাহাজে হামলা চালিয়ে বহু লোককে হত্যা করা হয়েছে। জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা এগুলোকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে দেখছেন। সম্প্রতি ট্রাম্প জানিয়েছেন, শীঘ্রই স্থলপথেও ভেনেজুয়েলার মাদকচক্রকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে।

টেলিভিশন ভাষণে মাদুরো জানান, ভেনেজুয়েলাকে ভয় দেখানো যাবে না। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপের অজুহাত তৈরি করছে এবং তাদের বক্তব্য মিথ্যা। আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে চাপ বাড়াচ্ছে।

আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র মাদুরোর গ্রেপ্তারের তথ্য দিলে ৫০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে। একই সঙ্গে তারা ‘কার্টেল দে লস সোলে’স’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেয়। এ সংগঠনকে মাদুরোর সঙ্গে যুক্ত বলে দাবি করা হয়। এ বিরোধের মধ্যেই খবর আসে, ট্রাম্প ও মাদুরোর মধ্যে কথোপকথনও হয়েছে। যদিও আনুষ্ঠানিক বৈঠকের কোনো পরিকল্পনা নেই।

বিশ্লেষকদের মতে, আকাশসীমা বন্ধ ঘোষণা কাগজে কঠোর ইঙ্গিত দিলেও যুক্তরাষ্ট্র আসলে সামরিক হামলা করবে কিনা তা স্পষ্ট নয়। বিমান চলাচল বন্ধের সতর্কতা দেওয়ার পর দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি প্রধান বিমান সংস্থা ভেনেজুয়েলায় ফ্লাইট স্থগিত করে। ভেনেজুয়েলা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তাদের পরিচালনা অনুমতি বাতিল করে।

ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত চার্লস শাপিরো বলেন, এই সিদ্ধান্ত মাদুরোর ওপর চাপ বাড়ানোর কৌশল। তাঁর মতে, মূল উদ্দেশ্য মাদুরোকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করেন, এই নীতি ভেনেজুয়েলার সাধারণ মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হবে। আকাশপথ বন্ধ হলে ওষুধ, খাদ্য ও জরুরি প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেশে প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হবে। নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজনে বিদেশেও যাওয়া কঠিন হবে। গবেষণা সংস্থার ফেলো ফ্রান্সিসকো রদ্রিগেজ বলেন, সাধারণ মানুষ কোনো রাজনৈতিক খেলার ঘুঁটি নয়।

ভেনেজুয়েলার বোলিভারিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওমর হাসান ফারিনিয়া জানান, এটি দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করার দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার আরেক ধাপ। তাঁর বক্তব্য, এই আগ্রাসন সরকার নয়, সরাসরি জনগণের বিরুদ্ধে। উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ ও দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা অর্থনীতিকে দুর্বল করেছে এবং বাণিজ্য কমে গেছে।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত