leadT1ad

‘বিশ্ব আর হাসছে না’: ২০২৬ সালে ‘অর্থনৈতিক জোয়ার’-এর প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউস থেকে ভাষণ দিচ্ছেন ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার (১৭ ডিসেম্বর ২০২৫) হোয়াইট হাউস থেকে মার্কিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। এটি ছিল একটি বিরল প্রাইমটাইম ভাষণ। ট্রাম্প ভাষণটি দেন হোয়াইট হাউসের ডিপ্লোম্যাটিক রিসেপশন রুম থেকে। ভাষণের দৈর্ঘ্য ছিল প্রায় ২৫ মিনিট।

ভাষণে ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনের প্রথম বছরের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে তাঁর সরকার কাজ শুরু করেছে। একই সঙ্গে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বর্তমান সমস্যার জন্য দায়ী করেন।

ট্রাম্প বলেন, তাঁর সরকার একটি ‘অগোছালো অবস্থা’ উত্তরাধিকার হিসেবে পেয়েছে। তবে সেই অবস্থা দ্রুত ঠিক করা হচ্ছে বলেও তিনি দাবি করেন।

ট্রাম্প ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্র ২০২৬ সালে এক বিশাল অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এমন অর্থনৈতিক জোয়ার আগে কখনো বিশ্ব দেখেনি।

তাঁর মতে, কিছু খাতে পণ্যের দাম কমছে। মজুরি বাড়ছে। অবৈধ অভিবাসন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এছাড়া ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফিফা বিশ্বকাপ ও অলিম্পিক আয়োজন দেশটির অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এই ভাষণ এমন এক সময়ে দেওয়া হলো যখন অর্থনীতি নিয়ে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমছে। এনপিআর, পিবিএস নিউজ ও ম্যারিস্টের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, অর্থনীতিতে তাঁর প্রতি জনগণের সমর্থন মাত্র ৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে।

সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় এখনও বেশি। শুল্কনীতির কারণে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে উত্তেজনাও বাড়ছে। এর মধ্যে ভেনেজুয়েলার তেলের ওপর নতুন অবরোধের ঘোষণাও রয়েছে।

ভাষণের প্রধান দিকগুলো

অর্থনীতি নিয়ে দাবি ও প্রতিশ্রুতি

ট্রাম্প বলেন, তাঁর সরকারের অধীনে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমছে এবং মজুরি বাড়ছে। তিনি দাবি করেন, উচ্চমূল্য খুব দ্রুত নামিয়ে আনা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতির জন্য তিনি বাইডেন প্রশাসনের নীতিকে দায়ী করেন।

ট্রাম্প বলেন, ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে। সাম্প্রতিক রিপাবলিকান কর ছাড়ের কারণে মানুষ বড় অঙ্কের কর ফেরত পাবে বলেও তিনি জানান।

অভিবাসন ও নিরাপত্তা

ট্রাম্প বলেন, অবৈধ সীমান্ত পারাপার এখন ১৯৭০ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। তিনি মাদক চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানের কথাও তুলে ধরেন।

নতুন ঘোষণা

ট্রাম্প ঘোষণা দেন, প্রায় ১৫ লাখ সেনাসদস্যকে ‘স্পেশাল ওয়ারিয়র ডিভিডেন্ড’ দেওয়া হবে। এই বোনাসের পরিমাণ ১,৭৭৬ ডলার। এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার বছর ১৭৭৬-এর প্রতীক। তিনি বলেন, বড়দিনের আগেই এই চেক পাঠানো হচ্ছে।

বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান

ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র আবার বিশ্বে সম্মান ফিরে পেয়েছে। বিশ্ব আর হাসছে না। তাঁর ভাষায়, দেশটি আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরেছে।

ভাষণে ট্রাম্প সরাসরি ভেনেজুয়েলার নাম উল্লেখ করেননি। যদিও ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি সামরিক বা কূটনৈতিক উত্তেজনার বিষয়টি তুলতে পারেন।

ভেনেজুয়েলা নিয়ে প্রেক্ষাপট

এই ভাষণের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। সম্প্রতি ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার তেলবাহী ট্যাংকারের ওপর সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেন। ভেনেজুয়েলার সরকারের আয়ের অর্ধেকের বেশি আসে তেল থেকে। ফলে এই অবরোধ দেশটির অর্থনীতিতে বড় আঘাত হানতে পারে।

ট্রাম্পের উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার দাবি করেন, ভেনেজুয়েলার তেল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্য। ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতিও বাড়ানো হয়েছে। মাদক পাচারের অভিযোগে নৌযানে বিমান হামলা ও ট্যাংকার জব্দের ঘটনাও ঘটেছে। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

ভেনেজুয়েলা এই অবরোধকে ‘অগ্রহণযোগ্য হুমকি’ বলে অভিহিত করেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এতে ভেনেজুয়েলার অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। তবে স্বল্পমেয়াদে বৈশ্বিক তেলের বাজারেও প্রভাব পড়তে পারে। তেলের দাম বেড়ে যেতে পারে।

জনমত ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী নন। প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ মনে করেন, ২০২৬ সাল অর্থনীতির জন্য আরও খারাপ হবে। অর্ধেকের বেশি মানুষ বিশ্বাস করেন, দেশটি ইতিমধ্যে মন্দার মধ্যে রয়েছে। মূল্যস্ফীতি ও পণ্যের দাম এখনো মানুষের প্রধান উদ্বেগ।

ডেমোক্র্যাট নেতারা এই ভাষণকে বাস্তবতাবিবর্জিত বলে সমালোচনা করেছেন। তাঁরা বলেন, ভাষণটি মিথ্যা ও আত্মকেন্দ্রিক। সিনেটর ক্রিস ভ্যান হলেন ও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম অভিযোগ করেন, ট্রাম্প বাস্তব পরিস্থিতি থেকে বিচ্ছিন্ন।

মিডিয়া ও বিশ্লেষকেরাও ভাষণটিকে নির্বাচনী সমাবেশের মতো বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের মতে, শুল্কনীতির কারণে দাম বাড়া ও কর্মসংস্থানের ধীরগতির মতো বিষয়গুলো ভাষণে গুরুত্ব পায়নি। নতুন কোনো দিকনির্দেশনাও খুব একটা পাওয়া যায়নি।

মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগের রাজনৈতিক কৌশল

এই ভাষণ মূলত ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে অর্থনীতি নিয়ে মানুষের ধারণা বদলানোর চেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে। কর ছাড়, বোনাস ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আয়োজনকে সামনে রেখে ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার কৌশল নেওয়া হয়েছে।

তবে শুল্কের কারণে মূল্যস্ফীতি কমছে না। শ্রমজীবী ও কারখানা খাতে চাকরির বাজার দুর্বল হচ্ছে। এসব কারণে ট্রাম্পের অর্থনৈতিক জোয়ারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক ঝুঁকিও পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছে।

এই ভাষণ ট্রাম্পের রাজনৈতিক কৌশলই তুলে ধরে। এতে রয়েছে অতিরঞ্জিত আশাবাদ, পূর্বসূরিকে দায়ী করা এবং সরাসরি ভোটারদের আকর্ষণের চেষ্টা। বাস্তব চ্যালেঞ্জ বাড়লেও এই কৌশলেই যে তিনি এগোতে চান সেটা স্পষ্ট।

সূত্র: আল-জাজিরা

Ad 300x250

সম্পর্কিত