.png)

স্ট্রিম ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বড় এশিয়া সফর শুরু করেছেন আজ রবিবার (২৬ অক্টোবর )। ৪৭তম আসিয়ান সম্মেলন ও ২০তম পূর্ব এশিয়া সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে পৌঁছেছেন। পাঁচ থেকে ছয় দিনের এই সফরে তিনি মালয়েশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় যাবেন। সফরের মূল লক্ষ্য হলো ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আলোকে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এটি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য বিরোধ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংকট তীব্র হয়ে উঠছে।
সফরের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হলো—থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সাক্ষী থাকা, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা এবং শুল্ক, বিরল খনিজ সম্পদ ও মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ নিয়ে বহুপাক্ষিক বৈঠক। ট্রাম্প এই সফরে নিজেকে ‘গ্লোবাল ডিল মেকার’ নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। তবে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমঝোতায় জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মিত্ররা উদ্বিগ্ন হতে পারে। শুরুতেই ট্রাম্পকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হলেও অনেকে তাঁর কূটনৈতিক সাফল্যের স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দিহান।
পটভূমি ও সফরসূচি
দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এটি ট্রাম্পের সবচেয়ে দীর্ঘ বিদেশ সফর। দেশীয় অর্থনৈতিক চাপ ও বৈশ্বিক সরবরাহ সংকটের মধ্যে তিনি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতি নতুন কৌশলগত মনোযোগ দিচ্ছেন। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে আরোপিত ‘লিবারেশন ডে ট্যারিফস’-এর পর এই সফরটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এসব শুল্কে যুক্তরাষ্ট্র অধিকাংশ বাণিজ্য অংশীদারের পণ্যে ১০ থেকে ৪০ শতাংশ কর আরোপ করে, যার মধ্যে আসিয়ান দেশগুলোও রয়েছে। সফরের মাধ্যমে ট্রাম্প সেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রশমিত করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও সম্পদ স্বার্থ এগিয়ে নিতে চান। তার সফরের সময়সূচি হলো—
২৬-২৭ অক্টোবর কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ; থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া শান্তিচুক্তির সাক্ষী থাকা; ৪৭তম আসিয়ান সম্মেলন ও ১৩তম আসিয়ান-যুক্তরাষ্ট্র সম্মেলনে অংশগ্রহণ; পূর্ব এশিয়া সম্মেলনের অধিবেশন; বাণিজ্য ও শুল্ক নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক।

২৮-২৯ অক্টোবর টোকিওতে জাপাননের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা; যুক্তরাষ্ট্র-জাপান নিরাপত্তা জোট, শুল্ক ও বিরল খনিজে চীনের প্রভাব মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা।
৩০-৩১ অক্টোবর সিওলে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ংয়ের সঙ্গে বৈঠক; উত্তর কোরিয়ার হুমকি, সাপ্লাই চেইনের স্থিতিশীলতা এবং গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের জন্য সম্ভাব্য শুল্ক ছাড় নিয়ে আলোচনা।
এই সফরে এক ডজনেরও বেশি নেতা ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত বৈঠকের অনুরোধ করেছেন, যাতে তাঁরা শুল্ক ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। এমন এক সময়ে এই সফরে আসলেন ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র আকার নিয়েছে। চীন বিরল খনিজ রপ্তানিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্র এখন আসিয়ান দেশগুলোতে বিকল্প উৎস খুঁজছে।
মালয়েশিয়ায় আগমন ও প্রাথমিক কার্যক্রম
স্থানীয় সময় রবিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিমান এয়ার ফোর্স ওয়ান কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনায় স্বাগত জানান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এরপর ট্রাম্প তাঁর সাঁজোয়া গাড়ি ‘দ্য বিস্ট’-এ চড়ে সম্মেলনের ভেন্যু কুয়ালালামপুর কনভেনশন সেন্টারের উদ্দেশে রওনা দেন। বিমান থেকে নামার সময় এক সংক্ষিপ্ত হাস্যরসাত্মক মুহূর্তে তাঁকে নাচতে দেখা যায়, যা তাঁর স্বভাবসুলভ রসবোধের প্রকাশ হিসেবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
আসিয়ানের ঘূর্ণায়মান সভাপতির দায়িত্বে থাকা আনোয়ার ইব্রাহিম এই সফরকে যুক্তরাষ্ট্র-আসিয়ান অংশীদারত্বের ‘একটি মাইলফলক’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, উভয় পক্ষের লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। ট্রাম্প মালয়েশিয়ার অগ্রগতির প্রশংসা করে ট্রুথ সোশ্যাল-এ লেখেন, ‘এশিয়ায় ফিরে ভালো লাগছে—এখানে চুক্তি হবে, শান্তি অর্জিত হবে!’ প্রাথমিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র-মালয়েশিয়া বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। ট্রাম্প ইলেকট্রনিক পণ্য ও পাম তেল রপ্তানি খাতে ‘বড় ধরনের চুক্তি’ চূড়ান্ত করার ইঙ্গিত দেন।

আসিয়ান সম্মেলন: অংশগ্রহণকারী ও আলোচ্যসূচি
৪৭তম আসিয়ান সম্মেলন ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে আসিয়ানের ১০ সদস্যদেশ—ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম—এর পাশাপাশি নতুন সদস্য পূর্ব তিমুর যুক্ত হয়েছে, ফলে জোটের সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১।
সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে আরও কয়েকটি প্রধান শক্তি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা— চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, আইএলও, ফিফা।
প্রধান আলোচ্য বিষয়সমূহ:
আঞ্চলিক সংঘাত: মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও এর প্রভাব—শরণার্থী, মাদক ও অস্ত্র পাচার; ২০২১ সালের আসিয়ান ‘ফাইভ-পয়েন্ট কনসেনসাস’ পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ, যদিও বাস্তবায়ন এখনো অনিশ্চিত।
অর্থনৈতিক চাপ: যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি আসিয়ানের ৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলছে; চীনের বিরল খনিজের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও রপ্তানি সীমাবদ্ধতা।
সীমান্তবর্তী হুমকি: কম্বোডিয়া, লাওস ও মিয়ানমারে প্রতারণা কেন্দ্রের বিস্তার ও সীমান্ত নিরাপত্তা সংকট।
যুক্তরাষ্ট্র-আসিয়ান সম্পর্ক: সাপ্লাই চেইনের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি ও চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলা।
তবে আসিয়ানের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঐকমত্য-ভিত্তিক ও অ-বাধ্যতামূলক কাঠামো থাকায় এই সম্মেলনটি মূলত আলোচনা ও কূটনৈতিক সংলাপের ক্ষেত্রেই সীমিত থাকবে, দৃঢ় পদক্ষেপের সম্ভাবনা তুলনামূলক কম।

মূল আকর্ষণ: থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া শান্তিচুক্তি
ট্রাম্পের এশিয়া সফরের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হলো থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ‘বিস্তৃত যুদ্ধবিরতি চুক্তি’ স্বাক্ষর। গত জুলাইয়ে শুরু হওয়া এই সীমান্ত সংঘাতে বহু মানুষ নিহত ও হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। মালয়েশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই চুক্তিটি সম্পন্ন হয়। প্রেহ ভিহিয়ার মন্দির এলাকার সীমান্ত নির্ধারণ নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ মেটাতেই এ উদ্যোগ।
ট্রাম্প শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিয়ে দুই দেশকে আলোচনায় আনেন। তিনি ট্রুথ সোশ্যাল-এ একে ‘শান্তির বড় বিজয়’ বলে উল্লেখ করেন এবং আগমনের পরই চুক্তিতে স্বাক্ষর করার ঘোষণা দেন। থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল জাতীয় শোকের কারণে (রানী মা সিরিকিতের মৃত্যুতে) অনুষ্ঠানটি আগেভাগে সম্পন্ন করেন এবং ট্রাম্পের কাছে ব্যক্তিগতভাবে সমবেদনার অনুরোধ করেন।
তবে সমালোচকরা একে ‘ফটো সেশন মাত্র’ বলে মন্তব্য করেছেন, কারণ সীমান্তে এখনও বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ চলছে এবং বিরোধ পুরোপুরি মেটেনি। তা সত্ত্বেও, এই ঘটনা ট্রাম্পকে কিছুটা শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরেছে—উত্তর কোরিয়া বৈঠকের মতোই—এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রভাবকেও স্পষ্ট করেছে।
বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক আলোচনা
আসিয়ান নেতাদের আলোচনায় সবসময়ই প্রধান বিষয় ছিল বাণিজ্য ও শুল্ক। নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ছাড়ের অনুরোধ জানান, কারণ অতিরিক্ত শুল্ক অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা বাড়িয়েছে। ট্রাম্প ২০২৫ সালের এপ্রিলে আসিয়ান দেশগুলোর পণ্যে ১০-২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন; লাওস ও মিয়ানমারের ক্ষেত্রে তা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমলেও ইলেকট্রনিকস, বস্ত্র ও কৃষিপণ্যের দাম বেড়েছে।
মালয়েশিয়ায় ট্রাম্প প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্ভাব্য বার্ষিক বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব দেন, যাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতকে শুল্কমুক্ত রাখা হতে পারে। বৃহত্তর আলোচনায় উঠে আসে চীনের বিরল খনিজের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি—বিশ্ব সরবরাহের ৯৫ শতাংশই চীনের। যুক্তরাষ্ট্র এই নির্ভরতা কমাতে আসিয়ান দেশগুলোকে বিকল্প উৎস হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্ভাব্য ‘গ্র্যান্ড বার্গেইন’ বা পারস্পরিক ছাড়ের গুঞ্জন জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে উদ্বিগ্ন করেছে; তারা আশঙ্কা করছে, এই সমঝোতায় তারা উপেক্ষিত হতে পারে।

বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক প্রভাব
এই সফর ট্রাম্পের জন্য এক ধরনের ভারসাম্য পরীক্ষা—চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বজায় রেখেও আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা। সফল হলে এটি মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও প্রতারণা কেন্দ্রের বিস্তারের মধ্যেও আসিয়ানের স্থিতিশীলতা আনতে পারে। তবে ব্যর্থ হলে চীনের প্রভাব আরও বাড়বে। দক্ষিণ এশিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে, মিয়ানমার সংকট প্রশমিত হলে বাংলাদেশ উপকৃত হতে পারে, বিশেষত রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবাহের ক্ষেত্রে; যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা এখনও সীমিত।
আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশ্লেষকদের মতে, এই সম্মেলন প্রতীকী প্রদর্শন ও বাস্তব আলোচনার মিশ্রণ। শান্তিচুক্তি অনুষ্ঠান যেমন প্রতীকী, তেমনি শুল্ক ও বাণিজ্য আলোচনাও কার্যকর পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেয়। তারা, ট্রাম্পের মধ্যস্থতাকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে, যা আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য সংযোগও বাড়াতে পারে। মিত্র দেশগুলো সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করেছে—জাপান নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চায়, আর দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
পেশাদার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেজান শিরা অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস-এর আসিয়ান পরিচালক মার্কো ফস্টার আল জাজিরাকে বলেন, বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করার সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। তাঁর ভাষায়, ‘প্রায় সবাই চেষ্টা করছে ট্রাম্প বা তাঁর প্রতিনিধিদের সঙ্গে একই ঘরে থাকতে, যাতে নিজেদের চুক্তির কথা তুলতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘সবাই চায় ট্রাম্পের সঙ্গে অন্তত একবার আলাদা বৈঠক করার সুযোগ।’

আসিয়ানের সীমাবদ্ধতা কী
আসিয়ানকে প্রায়ই সমালোচিত হতে হয় একটি কার্যকর ‘প্রয়োগ ব্যবস্থা’ না থাকার কারণে। অর্থাৎ, কোনো সদস্য দেশ সংগঠনের সিদ্ধান্ত না মানলেও তাদের বাধ্য করার কোনো আইনি উপায় নেই। এ দিক থেকে আসিয়ান ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো নয়, যেখানে সদস্যদের ইইউ-এর আইন ও রায় মানতেই হয়।
মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ এবং কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তবিরোধের মতো সাম্প্রতিক ইস্যুতে এই সীমাবদ্ধতা আরও স্পষ্ট হয়েছে।
ফস্টারের মতে, এটি আসিয়ানের গঠনকালীন ইতিহাসেরই প্রতিফলন। ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠার সময় বিশ্বজুড়ে উপনিবেশমুক্তির ঢেউ চলছিল। তাই সংগঠনটির কাঠামোও সেই যুগের স্বাধীনতাকেন্দ্রিক মানসিকতা বহন করে।
তিনি বলেন, ‘আসিয়ান স্বাধীনতার ভিত্তিতে গঠিত, তাই এটি কখনো এমন কোনো কাঠামোতে পরিণত হবে না যা সদস্যদেশগুলোর সার্বভৌম ক্ষমতা সীমিত করে।’ ফস্টার আরও যোগ করেন, ‘আসিয়ানে সর্বদা জাতিরাষ্ট্রই সর্বোচ্চ স্থান দখল করে থাকবে।’
বর্ণাঢ্য আয়োজন ও উচ্চ প্রত্যাশার মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের এশিয়া সফর শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে অস্থির অঞ্চলে এক অপরিহার্য অংশীদার হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তিনি। মালয়েশিয়ার পর্বে চুক্তিনির্ভর কূটনীতির ইঙ্গিত মিলেছে, তবে এর স্থায়ী সাফল্য নির্ভর করবে পরবর্তী বাস্তবায়নের ওপর। বিশ্ব তাকিয়ে আছে—এই সফর ‘বড় অর্জন’ বয়ে আনবে, নাকি কেবল আলোচনার শিরোনামেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, সিএনএন, রয়টার্স, নিউইয়র্ক টাইমস, এপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বড় এশিয়া সফর শুরু করেছেন আজ রবিবার (২৬ অক্টোবর )। ৪৭তম আসিয়ান সম্মেলন ও ২০তম পূর্ব এশিয়া সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে পৌঁছেছেন। পাঁচ থেকে ছয় দিনের এই সফরে তিনি মালয়েশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় যাবেন। সফরের মূল লক্ষ্য হলো ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আলোকে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এটি এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য বিরোধ ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংকট তীব্র হয়ে উঠছে।
সফরের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো হলো—থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সাক্ষী থাকা, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা এবং শুল্ক, বিরল খনিজ সম্পদ ও মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ নিয়ে বহুপাক্ষিক বৈঠক। ট্রাম্প এই সফরে নিজেকে ‘গ্লোবাল ডিল মেকার’ নেতা হিসেবে উপস্থাপন করতে চান। তবে বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র-চীন সমঝোতায় জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো মিত্ররা উদ্বিগ্ন হতে পারে। শুরুতেই ট্রাম্পকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হলেও অনেকে তাঁর কূটনৈতিক সাফল্যের স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দিহান।
পটভূমি ও সফরসূচি
দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এটি ট্রাম্পের সবচেয়ে দীর্ঘ বিদেশ সফর। দেশীয় অর্থনৈতিক চাপ ও বৈশ্বিক সরবরাহ সংকটের মধ্যে তিনি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রতি নতুন কৌশলগত মনোযোগ দিচ্ছেন। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে আরোপিত ‘লিবারেশন ডে ট্যারিফস’-এর পর এই সফরটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। এসব শুল্কে যুক্তরাষ্ট্র অধিকাংশ বাণিজ্য অংশীদারের পণ্যে ১০ থেকে ৪০ শতাংশ কর আরোপ করে, যার মধ্যে আসিয়ান দেশগুলোও রয়েছে। সফরের মাধ্যমে ট্রাম্প সেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রশমিত করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও সম্পদ স্বার্থ এগিয়ে নিতে চান। তার সফরের সময়সূচি হলো—
২৬-২৭ অক্টোবর কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ; থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া শান্তিচুক্তির সাক্ষী থাকা; ৪৭তম আসিয়ান সম্মেলন ও ১৩তম আসিয়ান-যুক্তরাষ্ট্র সম্মেলনে অংশগ্রহণ; পূর্ব এশিয়া সম্মেলনের অধিবেশন; বাণিজ্য ও শুল্ক নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক।

২৮-২৯ অক্টোবর টোকিওতে জাপাননের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা; যুক্তরাষ্ট্র-জাপান নিরাপত্তা জোট, শুল্ক ও বিরল খনিজে চীনের প্রভাব মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা।
৩০-৩১ অক্টোবর সিওলে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ংয়ের সঙ্গে বৈঠক; উত্তর কোরিয়ার হুমকি, সাপ্লাই চেইনের স্থিতিশীলতা এবং গুরুত্বপূর্ণ মিত্রদের জন্য সম্ভাব্য শুল্ক ছাড় নিয়ে আলোচনা।
এই সফরে এক ডজনেরও বেশি নেতা ট্রাম্পের সঙ্গে ব্যক্তিগত বৈঠকের অনুরোধ করেছেন, যাতে তাঁরা শুল্ক ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন। এমন এক সময়ে এই সফরে আসলেন ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র আকার নিয়েছে। চীন বিরল খনিজ রপ্তানিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্র এখন আসিয়ান দেশগুলোতে বিকল্প উৎস খুঁজছে।
মালয়েশিয়ায় আগমন ও প্রাথমিক কার্যক্রম
স্থানীয় সময় রবিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিমান এয়ার ফোর্স ওয়ান কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনায় স্বাগত জানান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। এরপর ট্রাম্প তাঁর সাঁজোয়া গাড়ি ‘দ্য বিস্ট’-এ চড়ে সম্মেলনের ভেন্যু কুয়ালালামপুর কনভেনশন সেন্টারের উদ্দেশে রওনা দেন। বিমান থেকে নামার সময় এক সংক্ষিপ্ত হাস্যরসাত্মক মুহূর্তে তাঁকে নাচতে দেখা যায়, যা তাঁর স্বভাবসুলভ রসবোধের প্রকাশ হিসেবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
আসিয়ানের ঘূর্ণায়মান সভাপতির দায়িত্বে থাকা আনোয়ার ইব্রাহিম এই সফরকে যুক্তরাষ্ট্র-আসিয়ান অংশীদারত্বের ‘একটি মাইলফলক’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, উভয় পক্ষের লক্ষ্য হলো অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। ট্রাম্প মালয়েশিয়ার অগ্রগতির প্রশংসা করে ট্রুথ সোশ্যাল-এ লেখেন, ‘এশিয়ায় ফিরে ভালো লাগছে—এখানে চুক্তি হবে, শান্তি অর্জিত হবে!’ প্রাথমিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র-মালয়েশিয়া বাণিজ্য চুক্তি দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। ট্রাম্প ইলেকট্রনিক পণ্য ও পাম তেল রপ্তানি খাতে ‘বড় ধরনের চুক্তি’ চূড়ান্ত করার ইঙ্গিত দেন।

আসিয়ান সম্মেলন: অংশগ্রহণকারী ও আলোচ্যসূচি
৪৭তম আসিয়ান সম্মেলন ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে আসিয়ানের ১০ সদস্যদেশ—ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম—এর পাশাপাশি নতুন সদস্য পূর্ব তিমুর যুক্ত হয়েছে, ফলে জোটের সদস্যসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১।
সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে আরও কয়েকটি প্রধান শক্তি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা— চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, আইএলও, ফিফা।
প্রধান আলোচ্য বিষয়সমূহ:
আঞ্চলিক সংঘাত: মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও এর প্রভাব—শরণার্থী, মাদক ও অস্ত্র পাচার; ২০২১ সালের আসিয়ান ‘ফাইভ-পয়েন্ট কনসেনসাস’ পুনরুজ্জীবনের উদ্যোগ, যদিও বাস্তবায়ন এখনো অনিশ্চিত।
অর্থনৈতিক চাপ: যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি আসিয়ানের ৩.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলছে; চীনের বিরল খনিজের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও রপ্তানি সীমাবদ্ধতা।
সীমান্তবর্তী হুমকি: কম্বোডিয়া, লাওস ও মিয়ানমারে প্রতারণা কেন্দ্রের বিস্তার ও সীমান্ত নিরাপত্তা সংকট।
যুক্তরাষ্ট্র-আসিয়ান সম্পর্ক: সাপ্লাই চেইনের স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি ও চীনের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলা।
তবে আসিয়ানের সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঐকমত্য-ভিত্তিক ও অ-বাধ্যতামূলক কাঠামো থাকায় এই সম্মেলনটি মূলত আলোচনা ও কূটনৈতিক সংলাপের ক্ষেত্রেই সীমিত থাকবে, দৃঢ় পদক্ষেপের সম্ভাবনা তুলনামূলক কম।

মূল আকর্ষণ: থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া শান্তিচুক্তি
ট্রাম্পের এশিয়া সফরের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হলো থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ‘বিস্তৃত যুদ্ধবিরতি চুক্তি’ স্বাক্ষর। গত জুলাইয়ে শুরু হওয়া এই সীমান্ত সংঘাতে বহু মানুষ নিহত ও হাজারো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। মালয়েশিয়া, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এই চুক্তিটি সম্পন্ন হয়। প্রেহ ভিহিয়ার মন্দির এলাকার সীমান্ত নির্ধারণ নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ মেটাতেই এ উদ্যোগ।
ট্রাম্প শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিয়ে দুই দেশকে আলোচনায় আনেন। তিনি ট্রুথ সোশ্যাল-এ একে ‘শান্তির বড় বিজয়’ বলে উল্লেখ করেন এবং আগমনের পরই চুক্তিতে স্বাক্ষর করার ঘোষণা দেন। থাই প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল জাতীয় শোকের কারণে (রানী মা সিরিকিতের মৃত্যুতে) অনুষ্ঠানটি আগেভাগে সম্পন্ন করেন এবং ট্রাম্পের কাছে ব্যক্তিগতভাবে সমবেদনার অনুরোধ করেন।
তবে সমালোচকরা একে ‘ফটো সেশন মাত্র’ বলে মন্তব্য করেছেন, কারণ সীমান্তে এখনও বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ চলছে এবং বিরোধ পুরোপুরি মেটেনি। তা সত্ত্বেও, এই ঘটনা ট্রাম্পকে কিছুটা শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরেছে—উত্তর কোরিয়া বৈঠকের মতোই—এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রভাবকেও স্পষ্ট করেছে।
বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক আলোচনা
আসিয়ান নেতাদের আলোচনায় সবসময়ই প্রধান বিষয় ছিল বাণিজ্য ও শুল্ক। নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ছাড়ের অনুরোধ জানান, কারণ অতিরিক্ত শুল্ক অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা বাড়িয়েছে। ট্রাম্প ২০২৫ সালের এপ্রিলে আসিয়ান দেশগুলোর পণ্যে ১০-২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন; লাওস ও মিয়ানমারের ক্ষেত্রে তা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমলেও ইলেকট্রনিকস, বস্ত্র ও কৃষিপণ্যের দাম বেড়েছে।
মালয়েশিয়ায় ট্রাম্প প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলারের সম্ভাব্য বার্ষিক বাণিজ্য চুক্তির প্রস্তাব দেন, যাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাতকে শুল্কমুক্ত রাখা হতে পারে। বৃহত্তর আলোচনায় উঠে আসে চীনের বিরল খনিজের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি—বিশ্ব সরবরাহের ৯৫ শতাংশই চীনের। যুক্তরাষ্ট্র এই নির্ভরতা কমাতে আসিয়ান দেশগুলোকে বিকল্প উৎস হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্ভাব্য ‘গ্র্যান্ড বার্গেইন’ বা পারস্পরিক ছাড়ের গুঞ্জন জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে উদ্বিগ্ন করেছে; তারা আশঙ্কা করছে, এই সমঝোতায় তারা উপেক্ষিত হতে পারে।

বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক প্রভাব
এই সফর ট্রাম্পের জন্য এক ধরনের ভারসাম্য পরীক্ষা—চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বজায় রেখেও আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা। সফল হলে এটি মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ ও প্রতারণা কেন্দ্রের বিস্তারের মধ্যেও আসিয়ানের স্থিতিশীলতা আনতে পারে। তবে ব্যর্থ হলে চীনের প্রভাব আরও বাড়বে। দক্ষিণ এশিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে, মিয়ানমার সংকট প্রশমিত হলে বাংলাদেশ উপকৃত হতে পারে, বিশেষত রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রবাহের ক্ষেত্রে; যদিও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা এখনও সীমিত।
আঞ্চলিক দৃষ্টিভঙ্গি
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশ্লেষকদের মতে, এই সম্মেলন প্রতীকী প্রদর্শন ও বাস্তব আলোচনার মিশ্রণ। শান্তিচুক্তি অনুষ্ঠান যেমন প্রতীকী, তেমনি শুল্ক ও বাণিজ্য আলোচনাও কার্যকর পদক্ষেপের ইঙ্গিত দেয়। তারা, ট্রাম্পের মধ্যস্থতাকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে, যা আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য সংযোগও বাড়াতে পারে। মিত্র দেশগুলো সতর্ক আশাবাদ প্রকাশ করেছে—জাপান নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চায়, আর দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
পেশাদার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডেজান শিরা অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস-এর আসিয়ান পরিচালক মার্কো ফস্টার আল জাজিরাকে বলেন, বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারী ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করার সুযোগের অপেক্ষায় আছেন। তাঁর ভাষায়, ‘প্রায় সবাই চেষ্টা করছে ট্রাম্প বা তাঁর প্রতিনিধিদের সঙ্গে একই ঘরে থাকতে, যাতে নিজেদের চুক্তির কথা তুলতে পারে।’ তিনি যোগ করেন, ‘সবাই চায় ট্রাম্পের সঙ্গে অন্তত একবার আলাদা বৈঠক করার সুযোগ।’

আসিয়ানের সীমাবদ্ধতা কী
আসিয়ানকে প্রায়ই সমালোচিত হতে হয় একটি কার্যকর ‘প্রয়োগ ব্যবস্থা’ না থাকার কারণে। অর্থাৎ, কোনো সদস্য দেশ সংগঠনের সিদ্ধান্ত না মানলেও তাদের বাধ্য করার কোনো আইনি উপায় নেই। এ দিক থেকে আসিয়ান ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো নয়, যেখানে সদস্যদের ইইউ-এর আইন ও রায় মানতেই হয়।
মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ এবং কম্বোডিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্তবিরোধের মতো সাম্প্রতিক ইস্যুতে এই সীমাবদ্ধতা আরও স্পষ্ট হয়েছে।
ফস্টারের মতে, এটি আসিয়ানের গঠনকালীন ইতিহাসেরই প্রতিফলন। ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠার সময় বিশ্বজুড়ে উপনিবেশমুক্তির ঢেউ চলছিল। তাই সংগঠনটির কাঠামোও সেই যুগের স্বাধীনতাকেন্দ্রিক মানসিকতা বহন করে।
তিনি বলেন, ‘আসিয়ান স্বাধীনতার ভিত্তিতে গঠিত, তাই এটি কখনো এমন কোনো কাঠামোতে পরিণত হবে না যা সদস্যদেশগুলোর সার্বভৌম ক্ষমতা সীমিত করে।’ ফস্টার আরও যোগ করেন, ‘আসিয়ানে সর্বদা জাতিরাষ্ট্রই সর্বোচ্চ স্থান দখল করে থাকবে।’
বর্ণাঢ্য আয়োজন ও উচ্চ প্রত্যাশার মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের এশিয়া সফর শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে অস্থির অঞ্চলে এক অপরিহার্য অংশীদার হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তিনি। মালয়েশিয়ার পর্বে চুক্তিনির্ভর কূটনীতির ইঙ্গিত মিলেছে, তবে এর স্থায়ী সাফল্য নির্ভর করবে পরবর্তী বাস্তবায়নের ওপর। বিশ্ব তাকিয়ে আছে—এই সফর ‘বড় অর্জন’ বয়ে আনবে, নাকি কেবল আলোচনার শিরোনামেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, সিএনএন, রয়টার্স, নিউইয়র্ক টাইমস, এপি

পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমার রূপকার মনে করা হয় পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী আবদুল কাদির খানকে। সেই কাদির খানকে হত্যা করতে পারতো যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সৌদি আরবের অনুরোধে তিনি বেঁচে যান।
১ দিন আগে
বিশ্ব বাজার থেকে রাশিয়ান ‘তেল ও গ্যাস সরানোর প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছে বিশ্বের ২০টির বেশি দেশ। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধ থামাতে চাপের অংশ হিসেবে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানাতে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশগুলো।
১ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করেই ক্যারিবীয়ান সাগরে ভেনেজুয়েলার আশপাশে সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে থাকে। সামরিক উপস্থিতি বাড়ানো মানে—বিশ্বের সর্ববৃহৎ রণতরী থেকে শুরু করে এফ-৩৫ যুদ্ধ বিমান, পরমাণু শক্তি চালিত সাবমেরিন এবং কয়েক হাজার সেনার উপস্থিতি।
১ দিন আগে
তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলীয় মুগলা প্রদেশের উপকূলে অভিবাসীদের বহনকারী রাবারের নৌকা ডুবে অন্তত ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। স্থানীয় গভর্নরের কার্যালয় জানিয়েছে, সম্ভাব্য জীবিতদের সন্ধানে ব্যাপক তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযান চলছে।
২ দিন আগে