leadT1ad

ট্রাম্পের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন খামেনি

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক
ঢাকা

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ৫৭
কূটনৈতিক সংলাপ যদি পুনরায় শুরু না হয়, তাহলে দ্বিতীয় ইরান যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন পারমাণবিক আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি একে ‘কূটনীতি নয়, বরং চাপ ও দমননীতি’ বলে অভিহিত করেন।

খামেনি ট্রাম্পের সেই দাবিও নাকচ করেন যে, ২০২৫ সালের জুনে ১২ দিনের যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়েছে। তিনি বিদ্রূপ করে বলেন, ‘ওরা স্বপ্ন দেখতে থাকুক।’

ইরানের এই প্রত্যাখ্যান আসে এমন সময়ে, যখন পরোক্ষ আলোচনা স্থগিত রয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং ইরান ঘোষণা দিয়েছে যে ১৮ অক্টোবর ২০২৫ থেকে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর সব আন্তর্জাতিক সীমাবদ্ধতা ‘সমাপ্ত’ হয়েছে।

খামেনির এই প্রত্যাখ্যান যুক্তরাষ্ট্র-ইরান অবিশ্বাসকে আরও গভীর করেছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

খামেনির বক্তব্যের সারাংশ

তেহরানে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত ভাষণে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ট্রাম্পের প্রস্তাবকে সরাসরি ‘জবরদস্তিমূলক’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প নিজেকে দক্ষ চুক্তিবাজ বলে দাবি করেন, কিন্তু যদি কোনো চুক্তি চাপিয়ে দেওয়া হয় ও তার ফল আগেই নির্ধারিত থাকে, তবে তা চুক্তি নয়, বরং জুলুম।’

তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা আছে কি নেই, তা আমেরিকার চিন্তার বিষয় কেন? এ হস্তক্ষেপ অন্যায়, অনুচিত ও চাপসৃষ্টিকারী।’ খামেনি যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেন ‘মিথ্যা প্রচারণা’ ও ‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’ চালানোর জন্য, যার উদ্দেশ্য ইরানিদের মনোবল ভাঙা এবং ‘হতাশ ইহুদিবাদীদের’ সাহস জোগানো।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আসলে ‘একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ যে গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধে সহায়তা করেছে। খামেনির ভাষায়, ‘তারা ২০ হাজারেরও বেশি শিশু ও নবজাতককে হত্যা করেছে। এরা কি সন্ত্রাসী ছিল? আসল সন্ত্রাসী তোমরাই।’

পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্রই ‘দায়েশ’ (আইএসআইএস)-এর মতো সংগঠন তৈরি করে পশ্চিম এশিয়া অস্থিতিশীল করেছে।

ট্রাম্পের প্রস্তাব ও দাবি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সপ্তাহে ইসরায়েলি পার্লামেন্টে এক ভাষণে ইরানের সঙ্গে ‘শান্তিচুক্তি’র প্রস্তাব দেন। গাজায় যুদ্ধবিরতির পর তিনি নিজেকে ‘দক্ষ চুক্তিবাজ নেতা’ হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ বিমান হামলায় ২০২৫ সালের জুনে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। এই দাবিকে তিনি আলোচনার জন্য চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেন।

‘১২ দিনের যুদ্ধ’ ও আলোচনার ভাঙন

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত, যা ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত, শুরু হয় গত ১৩ জুন এবং শেষ হয় ২৫ জুনে। এর আগে পাঁচ দফা পরোক্ষ পারমাণবিক আলোচনা ব্যর্থ হয়। এরপর ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায়, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালায়। পশ্চিমা গোয়েন্দারা বলেছিল, ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল।

ইরান পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের অভ্যন্তরে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। খামেনির দাবি অনুযায়ী, এতে ইরান ‘বড় ধরনের জয়’ পেয়েছিল এবং ইসরায়েল ‘বিস্মিত’ হয়েছিল।

যুদ্ধটি তীব্র হলেও তা আঞ্চলিক বা বৈশ্বিক সংঘাতে রূপ নেয়নি, মূলত রাশিয়া ও চীনের সংযমের কারণে। ইরানের কিছু অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা দাবি করছে, এসব স্থাপনা এখনো বেসামরিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

গত ১৮ অক্টোবর ইরান ঘোষণা দেয় যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর সব আন্তর্জাতিক সীমাবদ্ধতা ‘সমাপ্ত’ হয়েছে এবং তারা পূর্ণমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুনরায় শুরু করেছে।

কী প্রভাব পড়তে পারে

খামেনির বক্তব্য ইরানের দৃঢ়তা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে, যাতে দেশটি বাইরের আগ্রাসন ঠেকাতে পারে। এতে দেশের কট্টরপন্থীরা আরও শক্ত অবস্থান নিতে উৎসাহ পেতে পারে। আলোচনায় অস্বীকৃতি জানিয়ে ইরান তার সার্বভৌম অবস্থান জোরালো করেছে, যা পশ্চিমা পরমাণু নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলছে।

গাজার প্রসঙ্গ তুলে খামেনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে একই শত্রু হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, যা অভ্যন্তরীণভাবে সমর্থন জোগাতে পারে, তবে সংলাপপন্থী গোষ্ঠীগুলোর জন্য তা হতাশার কারণ।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই প্রত্যাখ্যান ট্রাম্পের ‘দক্ষ চুক্তিবাজ নেতা’ ভাবমূর্তিতে আঘাত হেনেছে। এতে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা বা পশ্চিমা মিত্রদেশগুলোর চাপের আশঙ্কাও বাড়ছে।

আঞ্চলিকভাবে, এই উত্তেজনা গাজার ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিকে নড়বড়ে করতে পারে এবং পশ্চিম এশিয়ায় ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সক্রিয়তাও বাড়াতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদে, যদি কূটনৈতিক সংলাপ পুনরায় শুরু না হয়, তবে বিশ্লেষকদের মতে ‘দ্বিতীয় ইরান যুদ্ধ’-এর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স, আল-জাজিরা, এনডিটিভি

Ad 300x250

সম্পর্কিত