leadT1ad

ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়েই দেড় মাসে ৮০০ গাজাবাসীর মৃত্যু

গত মে মাস থেকেই গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে সাহায্য নিতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে নারী ও শিশুসহ অন্তত আট শত গাজাবাসীর। তবে প্রথমবারের মতো সংস্থাটি তাদের কোনো ত্রাণ কেন্দ্রে প্রাণহানির কথা স্বীকার করল।

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৫, ২০: ২৩
৮ জুন গাজা উপত্যকার কেন্দ্রীয় অংশে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে সহায়তা নিতে আসা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের নির্দেশনা দিচ্ছেন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) নিয়োগ করা একটি বেসরকারি মার্কিন নিরাপত্তা কোম্পানির সদস্যরা। ছবি: গেটি ইমেজ

ফিলিস্তিনের খান ইউনুস শহরে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের এক ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন বা জিএইচএফ হচ্ছে ইসরায়েলি ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সহায়তা সংস্থা। গত মে মাস থেকেই এই সংস্থার ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে সাহায্য নিতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে নারী ও শিশুসহ অন্তত আট শত গাজাবাসীর। তবে প্রথমবারের মতো সংস্থাটি তাদের কোনো ত্রাণ কেন্দ্রে প্রাণহানির কথা স্বীকার করল।

এক বিজ্ঞপ্তিতে জিএইচএফ দাবি করেছে, ‘উসকানিমূলক আচরণের কারণে’ জনতার মধ্যে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। এতে ১৯ জন পায়ের নিচে চাপা পড়ে মারা যান এবং একজন ছুরিকাঘাতে নিহত হন। সংস্থাটির মতে, হামাস-সম্পর্কিত সশস্ত্র ব্যক্তিরা ইচ্ছাকৃতভাবে এই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে।

এদিকে ফিলিস্তিনের হামাস বিদ্রোহীদের মুখপাত্র (জিএমও) জিএইচএফ-কে দায়ী করে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হাজার হাজার ক্ষুধার্ত মানুষকে সংকীর্ণ লোহার করিডোরে ডেকে এনে ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়, যার ফলে ভেতরে হুড়োহুড়ি শুরু হয়।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ত্রাণের জন্য অপেক্ষারত জনতার ওপর টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করা হলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং মারাত্মক ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। ওই ঘটনায় ২১ জন নিহত হন। যাদের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়।

ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকর্মীরা দায়িত্বে থাকেন এবং ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বাইরে অবস্থান করে। সিএনএন বিষয়টি নিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে মন্তব্য চাইলে তারা এখনো কোনো উত্তর দেয়নি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের হিসাব অনুযায়ী, মে মাসের শেষ দিক থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রায় ৮০০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে জিএইচএফ-এর কেন্দ্র বা এর আশেপাশে।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব মৃত্যুর জন্য মূলত ইসরায়েলি সেনাবাহিনীই দায়ী। ইসরায়েলি বাহিনীও কিছু ঘটনায় ‘সতর্কতামূলক গুলি’ চালানোর কথা স্বীকার করেছে।

জুনে জিএইচএফ জানিয়েছিল, ত্রাণকেন্দ্রগুলোর দিকে যাওয়ার পথ নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে, যাতে জনতার সঙ্গে সংঘর্ষ কমে আসে।

এর আগে শনিবার দক্ষিণ রাফার একটি জিএইচএফ কেন্দ্রে গুলিবর্ষণের ঘটনায় ২৭ জন নিহত হন বলে অভিযোগ করেছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাদের দাবি, ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায়।

জিএইচএফ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, শনিবার আমাদের কোনো কেন্দ্রে কিংবা আশেপাশে এধরনের কিছু ঘটেনি।

এদিকে, মার্কিন গনমাধ্যম সিএনএন-এ সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি গোপন মূল্যায়নে ইউএসএইড গাজায় জিএইচএফ-এর কার্যক্রম নিয়ে ‘গুরুতর উদ্বেগ’ জানিয়েছে।

মূল্যায়নে বলা হয়েছে, নিরাপদ পানি নেই এমন এলাকায় পাউডার শিশু খাদ্য বিতরণের পরিকল্পনা করছে জিএইচএফ, যা শিশুদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

বুধবার (১৬ জুলাই) ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী ও মার্কিন প্রশাসন পদ্ধতিগতভাবে এবং নানা কৌশলে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে।

এই ঘটনাগুলো গাজায় মানবিক সহায়তার নামে পরিচালিত একটি বড় সংকট ও প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রমকে সামনে নিয়ে এসেছে, যেখানে ত্রাণ নিতে গিয়ে বারবার ঘটছে অনাহারী মানুষের মৃত্যু।

Ad 300x250

সম্পর্কিত