leadT1ad

দ্রুজ জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলা

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১৩: ১৮
বুধবার সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ সিরিয়ার সোয়েইদা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার ১৬০টি লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ)। গত সোমবার (১৪ জুলাই) থেকে বুধবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব হামলা করে ইসরায়েল।

আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে। তারা জানায়, আইডিএফের বিমান হামলায় দামেস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সামরিক সদর দপ্তর ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আশপাশের এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইসরায়েলি বিমান হামলার পর সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা আজ টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে বলেছেন, ইসরায়েলি হামলার হুমকির মুখে থাকা দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের দ্রুজ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা তাঁদের প্রধান অগ্রাধিকার।

আহমেদ আল-শারা বলেন, ‘আমরা যুদ্ধকে ভয় পাই না। বরং বারবার নিজেদের আত্মমর্যাদা রক্ষায় লড়েছি। তবে দেশের স্বার্থে আমরা বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংস এড়িয়ে চলতে চাই।’

দ্রুজ সম্প্রদায়ের উদ্দেশে শারা আরও বলেন, ‘আপনারা বাইরের শক্তির ফাঁদে পা দেবেন না। আমরা আপনাদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলা এমন সময়ে ঘটল, যখন আহমেদ আল-শারার সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে এবং ইসরায়েলের সঙ্গেও নিরাপত্তা বিষয়ে যোগাযোগ শুরু করেছে।

এই হামলার বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠক ডেকেছে।

কারা এই দ্রুজ

দ্রুজ সিরিয়া, লেবানন, ইসরায়েল ও অধিকৃত গোলানে বসবাসরত একটি ছোট কিন্তু প্রভাবশালী সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। ইসরায়েল এই গোষ্ঠীকে বিশ্বস্ত মিত্র হিসেবে দেখে। দ্রুজ গোষ্ঠীর অনেকেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন।

বিশ্বে আনুমানিক ১০ লাখ দ্রুজ জনগোষ্ঠীর বাস, যাদের অর্ধেকের বসবাস সিরিয়ায়। দ্রুজরা মূলত আরব পরিচয় ধারণ করে এবং আরবি ভাষায় কথা বলে। একাদশ শতকে ইসমাইলি শিয়ার একটি শাখা হিসেবে দ্রুজদের উদ্ভূত হয়। পরে হিন্দুধর্মসহ বিভিন্ন ধর্ম ও প্রাচীন দর্শনের উপাদান যুক্ত করে একটি স্বতন্ত্র রূপ নেয়। দ্রুজরা পুনর্জন্মের বিশ্বাস করে। ইসলাম, খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের স্বীকৃতিও দেয়।

দ্রুজ জনগোষ্ঠীর অধিবাসীরা নিজেদের পতাকা উড়াচ্ছে। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া
দ্রুজ জনগোষ্ঠীর অধিবাসীরা নিজেদের পতাকা উড়াচ্ছে। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া

কেন এই হামলা

সিরিয়ার সোয়েইদা অঞ্চলে সরকারি বাহিনী ও স্থানীয় দ্রুজ যোদ্ধাদের মধ্যে কয়েক দিনব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলেছে। দ্রুজ যোদ্ধা ও স্থানীয় বেদুইন গোষ্ঠীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি অপহরণ ও হামলার পর এই সহিংসতা শুরু হয়। সিরিয়ার সরকারি বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে গিয়ে দ্রুজদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

দ্য সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের (এসওএইচআর) পরিংখ্যান অনুযায়ী, সিরিয়ায় চলমান জাতিগত সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমাদের দ্রুজ ভাইদের রক্ষা এবং সিরিয়ার শাসকগোষ্ঠীর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে আমাদের বাহিনী কাজ করছে।’

ইসরায়েল বলছে, দক্ষিণে দ্রুজ জনগণের ওপর হামলায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনী জড়িত। ইসরায়েল তা কিছুতেই মেনে নেবে না।

এর আগে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরের দ্রুজ জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সিরিয়ার দ্রুজদের সহায়তার আহ্বান জানানো হয়।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ এয়াল জামির বলেছেন, ‘আমরা দক্ষিণ সিরিয়াকে সন্ত্রাসের ঘাঁটি হতে দেব না।’

আল-জাজিরা জানিয়েছে, সোয়েইদার দ্রুজরা নিজেরাও বিভিন্ন দলে বিভক্ত। দ্রুজ গোষ্ঠীর এক নেতা ইয়াসির জারবু সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। অন্য আরেক নেতা হিকমাত আল-হিজরি, তিনি যেকোনো যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করেন। আবার অনেক সিরিয়ান দ্রুজই চান না যে ইসরায়েল তাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক।

অন্য দিকে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ পতনের পর দক্ষিণ সিরিয়ায় নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তারা সিরিয়ার সঙ্গে কোনো নিরাপত্তা চুক্তিতে আগ্রহ দেখায়নি। এ বছর একাধিকবার সিরিয়ায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বিশ্লেষকদের মতে, একটি শক্তিশালী সিরিয়ার চেয়ে দুর্বল ও বিভক্ত সিরিয়াকেই বেশি সুবিধাজনক মনে করে ইসরায়েল। শক্তিশালী সিরিয়া ভবিষ্যতে তাদের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে—এই ভয় থেকেই এমনটা মনে করে ইসরায়েল।

যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ১৬ জুলাই বলেছেন, সিরিয়ায় চলমান সংঘর্ষের অবসান ঘটাতে ট্রাম্প প্রশাসন সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছে।

এক্সে দেওয়া এক পোস্টে রুবিও বলেন, ‘আমরা কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপে সম্মত হয়েছি। আজ রাতেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির অবসান ঘটাবে। আমরা আশা করছি, সব পক্ষই তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে।’

ইসরায়েল ও সিরিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনাকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বলে উল্লেখ করে রুবিও বলেন, ‘সকালে থেকেই আমরা দুই পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।’

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা স্থানীয় সময় ১৬ জুলাই রাতে জানায়, দেশটির সেনাবাহিনী সুয়েইদা অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে। সিরিয়ান টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে সামরিক যানবাহনের বহরকে সুয়েইদা শহর ত্যাগ করতে দেখা গেছে।

সানা জানায়, ‘দুর্বৃত্ত গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানের কাজ শেষ হওয়ার পর সিরিয়ান সরকার ও দ্রুজ ধর্মীয় নেতাদের চুক্তি অনুসারে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’

(রয়টার্স, দ্য সিএনএন, আল-জাজিরা অবলম্বনে)

Ad 300x250

সম্পর্কিত