আমাদের জীবনের সঙ্গে এ মাটির গান, গল্প, প্রবাদ মিশে আছে তীব্রভাবে। এগুলো ‘ফোকলোর’ বা লোকসংস্কৃতির অংশ । মাটি থেকে যত দূরেই আসি না কেন, ফেলে আসা শেকড় কি আমাদের পিছু ছাড়ে? না, বোধহয় ছাড়ে না। তাই বিভিন্ন সময়ে এগুলোকে আমরা ডিজিটাল মাধ্যমে হাজির হতে দেখি।
শতাব্দীকা ঊর্মি
‘চোর না শুনে ধর্মের কাহিনি’ বা ‘কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ঠাস ঠাস’ । রাগে-ক্ষোভে, দুঃখে-আনন্দে প্রতিদিন আমরা নানাভাবে ফিরে আসি এসব প্রবাদের কাছে। এগুলো আসলে আমাদের ‘ফোকলোর’ বা লোকসংস্কৃতির অংশ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব মাটির গান, গল্প, প্রবাদ আমাদের জীবনে মিশে আছে। মাটি থেকে যত দূরেই আসি না কেন, ফেলে আসা শেকড় কি আমাদের পিছু ছাড়ে? না, বোধহয় ছাড়ে না। তাই বিভিন্ন সময়ে এগুলোকে আমরা ডিজিটাল মাধ্যমে হাজির হতে দেখি। যেমন এই সময়েও ডিজিটাল মাধ্যমে ফোকলোরের নানা উপাদান দেখা যাচ্ছে নতুন নতুন ফর্মে। লোককথা বা লোকসংগীত চমৎকারভাবে উঠে আসছে সিনেমা, গান, কার্টুনসহ মিম টেমপ্লেটেও।
বাংলা সিনেমায় এক সময় রাজত্ব করত ‘ফোক ফ্যান্টাসি’ জনরার সিনেমা। সাধারণত গ্রামের প্রেমকাহিনি, রূপকথা, রাজা-বাদশার গল্প, নাগ-নাগিনের প্রেম—এসব নিয়ে বানানো সিনেমাকেই বলে ফোক ফ্যান্টাসি। এসব সিনেমা বাংলাদেশের এক শ্রেণির মানুষকে হলমুখী করে তুলেছিল। এমনকি এক সময় বাংলা সিনেমার ‘বাণিজ্যিক পতন’-কেও সামলে দিয়েছিল ‘রূপবান’-এর মতো সিনেমাগুলো। ১৯৬৫ সালে পরিচালক সালাহ উদ্দিনের বানানো এ সিনেমা ছিল তুমুল জনপ্রিয়।
পরের বছর পরিচালক ইবনে মিজান ‘আবার বনবাসে রূপবান’ সিনেমা বানালেন। আর সেটিও ব্যবসায়িকভাবে সফল হল। সিনেমায় সাফল্যের এই ধারা চলল নব্বই দশক পর্যন্ত। তোজাম্মেল হক বকুলের ‘বেদের মেয়ে জোছনা’-এর কথাই ধরা যাক। ইলিয়াস কাঞ্চন ও অন্তু ঘোষ অভিনীত এ সিনেমা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা।
হুমায়ূন আহমেদের বানানো জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘অদেখা ভুবন’-এর পর্বগুলোতে নজর দেওয়া ও মৃত মানুষের ফিরে আসার মতো বিষয়গুলোও ছিল। এর পরেও ফোক-ফ্যান্টাসি ধারার গল্প নিয়ে বানানো সিনেমা-নাটক চলছিল কিছুটা ঢিমেতালেই।
তবে দুই দশক পরে আবারও ফিরে এসেছে লোকগল্পকে পর্দায় হাজির করার জোয়ার। নুহাশ হুমায়ুনের ‘পেট কাটা ষ’ ওয়েব সিরিজের ‘নিশির ডাক’, ‘এই বিল্ডিংয়ে মেয়ে নিষেধ’-এর মতো পর্বগুলোতে দারুণভাবে উঠে এসেছে গ্রামবাংলার ভূতের গল্প। রাতে খোলা চুলে বের না হওয়া, মাছ রান্না করলে পেত্নি আসে—এমন সব লোকসংস্কারকে দেখানো হয়েছে এই সিরিজে। নূরুল আলম আতিকের ‘আষাঢ়ে গল্প’ ওয়েবসিরিজেও উঠে এসেছে ভিন্ন ভিন্ন লোককথা। সেখানে দৈত্যকথা, তাবিজ করা বা জ্বিনের আছড় করার মতো গল্পও দেখা গেছে।
ফেসবুক রিলস বা ইউটিউবে কোথাও না কোথাও শুনতে পাবেন সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’। অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে আজ পর্যন্ত এই গানটি দেখা হয়েছে ২ কোটি ৪৬ লাখ বার। এই প্রজন্মের অনেকেই গানটি প্রথমবার শুনলেও, এটি আসলে জনপ্রিয় একটি ‘ঘেটুগান’।
নতুন কিছু বাক্য যোগ করে নেত্রকোনার লোকসংগীতশিল্পী ছত্তার পাগলা প্রচলিত এই গানটি গাইতেন। লোকগানের অনেকগুলো শাখার মধ্যে ঘেটুগান অন্যতম। এই গানে দেখা যেত কিশোররা মেয়ে সেজে নাচগান করছে। হুমায়ূন আহমেদ সেই নিয়েই বানালেন ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্র। জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ঘেটুগান ‘আমার যমুনার জল দেখতে কালো, স্নান করিতে লাগে ভালো’
বিভিন্ন সময়ে গোপাল ভাঁড়, ঠাকুরমার ঝুলি, বিক্রম বেতাল, পঞ্চতন্ত্রের মতো লোকগল্পনির্ভর কার্টুন সিরিজও ডিজিটাল মিডিয়ায় মানুষের মন জয় করেছে। ব্যস্ত জীবনে সোফায় বসে বা ডিনারের টেবিলে এসব কার্টুন দেখা অনেকের কাছে এখন প্রায় অভ্যাসের মতো হয়ে গেছে। আসলে কোনো যুগের মানুষই বাংলার এ সব লোকগল্পের আবেদন এড়াতে পারে না।
জেন-জিদের হাতে এসব গল্প পরিণত হয়েছে মিম টেমপ্লেটেও।
অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর বিশ্ববিদ্যালয় এখন লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণের কাজে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করছে। বাংলা একাডেমি আর জাতীয় গ্রন্থাগার পুরনো পুঁথি, গান আর কবিতা স্ক্যান করে অনলাইনে লাইব্রেরি তৈরি করছে। এমনকি ইউনেস্কোর ‘ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ পোর্টাল’-এও বাংলাদেশের কিছু লোকউৎসব আর সংস্কৃতি জায়গা করে নিয়েছে।
ফোকলোর এখন আর কেবল গ্রামে শোনা পুরনো গল্প নয়। এখন এটি আধুনিক মিডিয়ার একটি শক্তিশালী ভাষা। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নতুন প্রজন্ম যেমন এসব সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে, তেমনি এগুলোর উপস্থাপনাও বদলে যাচ্ছে।
ফোকলোরের এসব উপাদানকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আমাদের শিকড়, স্মৃতি আর নিজেদের গল্পগুলোও তাহলে ভবিষ্যতে টিকে থাকবে। আবার এসব গল্প যখন ডিজিটাল মাধ্যমে ফিরে আসে, তখন তা শুধু বিনোদনের গণ্ডিতেই বাঁধা থাকে না। বরং সেটা হয়ে দাঁড়ায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের শেকড়ের যোগসূত্র।
‘চোর না শুনে ধর্মের কাহিনি’ বা ‘কাঁচায় না নোয়ালে বাঁশ, পাকলে করে ঠাস ঠাস’ । রাগে-ক্ষোভে, দুঃখে-আনন্দে প্রতিদিন আমরা নানাভাবে ফিরে আসি এসব প্রবাদের কাছে। এগুলো আসলে আমাদের ‘ফোকলোর’ বা লোকসংস্কৃতির অংশ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব মাটির গান, গল্প, প্রবাদ আমাদের জীবনে মিশে আছে। মাটি থেকে যত দূরেই আসি না কেন, ফেলে আসা শেকড় কি আমাদের পিছু ছাড়ে? না, বোধহয় ছাড়ে না। তাই বিভিন্ন সময়ে এগুলোকে আমরা ডিজিটাল মাধ্যমে হাজির হতে দেখি। যেমন এই সময়েও ডিজিটাল মাধ্যমে ফোকলোরের নানা উপাদান দেখা যাচ্ছে নতুন নতুন ফর্মে। লোককথা বা লোকসংগীত চমৎকারভাবে উঠে আসছে সিনেমা, গান, কার্টুনসহ মিম টেমপ্লেটেও।
বাংলা সিনেমায় এক সময় রাজত্ব করত ‘ফোক ফ্যান্টাসি’ জনরার সিনেমা। সাধারণত গ্রামের প্রেমকাহিনি, রূপকথা, রাজা-বাদশার গল্প, নাগ-নাগিনের প্রেম—এসব নিয়ে বানানো সিনেমাকেই বলে ফোক ফ্যান্টাসি। এসব সিনেমা বাংলাদেশের এক শ্রেণির মানুষকে হলমুখী করে তুলেছিল। এমনকি এক সময় বাংলা সিনেমার ‘বাণিজ্যিক পতন’-কেও সামলে দিয়েছিল ‘রূপবান’-এর মতো সিনেমাগুলো। ১৯৬৫ সালে পরিচালক সালাহ উদ্দিনের বানানো এ সিনেমা ছিল তুমুল জনপ্রিয়।
পরের বছর পরিচালক ইবনে মিজান ‘আবার বনবাসে রূপবান’ সিনেমা বানালেন। আর সেটিও ব্যবসায়িকভাবে সফল হল। সিনেমায় সাফল্যের এই ধারা চলল নব্বই দশক পর্যন্ত। তোজাম্মেল হক বকুলের ‘বেদের মেয়ে জোছনা’-এর কথাই ধরা যাক। ইলিয়াস কাঞ্চন ও অন্তু ঘোষ অভিনীত এ সিনেমা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা।
হুমায়ূন আহমেদের বানানো জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘অদেখা ভুবন’-এর পর্বগুলোতে নজর দেওয়া ও মৃত মানুষের ফিরে আসার মতো বিষয়গুলোও ছিল। এর পরেও ফোক-ফ্যান্টাসি ধারার গল্প নিয়ে বানানো সিনেমা-নাটক চলছিল কিছুটা ঢিমেতালেই।
তবে দুই দশক পরে আবারও ফিরে এসেছে লোকগল্পকে পর্দায় হাজির করার জোয়ার। নুহাশ হুমায়ুনের ‘পেট কাটা ষ’ ওয়েব সিরিজের ‘নিশির ডাক’, ‘এই বিল্ডিংয়ে মেয়ে নিষেধ’-এর মতো পর্বগুলোতে দারুণভাবে উঠে এসেছে গ্রামবাংলার ভূতের গল্প। রাতে খোলা চুলে বের না হওয়া, মাছ রান্না করলে পেত্নি আসে—এমন সব লোকসংস্কারকে দেখানো হয়েছে এই সিরিজে। নূরুল আলম আতিকের ‘আষাঢ়ে গল্প’ ওয়েবসিরিজেও উঠে এসেছে ভিন্ন ভিন্ন লোককথা। সেখানে দৈত্যকথা, তাবিজ করা বা জ্বিনের আছড় করার মতো গল্পও দেখা গেছে।
ফেসবুক রিলস বা ইউটিউবে কোথাও না কোথাও শুনতে পাবেন সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’। অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে আজ পর্যন্ত এই গানটি দেখা হয়েছে ২ কোটি ৪৬ লাখ বার। এই প্রজন্মের অনেকেই গানটি প্রথমবার শুনলেও, এটি আসলে জনপ্রিয় একটি ‘ঘেটুগান’।
নতুন কিছু বাক্য যোগ করে নেত্রকোনার লোকসংগীতশিল্পী ছত্তার পাগলা প্রচলিত এই গানটি গাইতেন। লোকগানের অনেকগুলো শাখার মধ্যে ঘেটুগান অন্যতম। এই গানে দেখা যেত কিশোররা মেয়ে সেজে নাচগান করছে। হুমায়ূন আহমেদ সেই নিয়েই বানালেন ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্র। জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ঘেটুগান ‘আমার যমুনার জল দেখতে কালো, স্নান করিতে লাগে ভালো’
বিভিন্ন সময়ে গোপাল ভাঁড়, ঠাকুরমার ঝুলি, বিক্রম বেতাল, পঞ্চতন্ত্রের মতো লোকগল্পনির্ভর কার্টুন সিরিজও ডিজিটাল মিডিয়ায় মানুষের মন জয় করেছে। ব্যস্ত জীবনে সোফায় বসে বা ডিনারের টেবিলে এসব কার্টুন দেখা অনেকের কাছে এখন প্রায় অভ্যাসের মতো হয়ে গেছে। আসলে কোনো যুগের মানুষই বাংলার এ সব লোকগল্পের আবেদন এড়াতে পারে না।
জেন-জিদের হাতে এসব গল্প পরিণত হয়েছে মিম টেমপ্লেটেও।
অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর বিশ্ববিদ্যালয় এখন লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণের কাজে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করছে। বাংলা একাডেমি আর জাতীয় গ্রন্থাগার পুরনো পুঁথি, গান আর কবিতা স্ক্যান করে অনলাইনে লাইব্রেরি তৈরি করছে। এমনকি ইউনেস্কোর ‘ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজ পোর্টাল’-এও বাংলাদেশের কিছু লোকউৎসব আর সংস্কৃতি জায়গা করে নিয়েছে।
ফোকলোর এখন আর কেবল গ্রামে শোনা পুরনো গল্প নয়। এখন এটি আধুনিক মিডিয়ার একটি শক্তিশালী ভাষা। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় নতুন প্রজন্ম যেমন এসব সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে, তেমনি এগুলোর উপস্থাপনাও বদলে যাচ্ছে।
ফোকলোরের এসব উপাদানকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আমাদের শিকড়, স্মৃতি আর নিজেদের গল্পগুলোও তাহলে ভবিষ্যতে টিকে থাকবে। আবার এসব গল্প যখন ডিজিটাল মাধ্যমে ফিরে আসে, তখন তা শুধু বিনোদনের গণ্ডিতেই বাঁধা থাকে না। বরং সেটা হয়ে দাঁড়ায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের শেকড়ের যোগসূত্র।
লোকটা ছিল একেবারে ওজি মিনিমালিস্ট ইনফ্লুয়েন্সার। বাড়ি-ঘর নাই, ধনসম্পদ নাই, গ্ল্যামার নাই। সে মানি হাইস্ট-এর বার্লিনের মতো ক্ষমতালোভী নয়, বরং এমন এক অ্যান্টি-হিরো, যে সবার নজর কাড়ে কিন্তু কারো ধনরত্ন কাড়ে না। আপোষহীন, প্রথাভাঙা এই দার্শনিককে নিয়েই এই লেখা।
৫ ঘণ্টা আগেতাঁর মৃত্যুর বছর তাঁকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়, কিন্তু তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তিনি এক বিবৃতিতে জানান, তিনি সরকারি ও বেসরকারি কোনো পুরস্কার গ্রহণ করেননি এবং এই পুরস্কার গ্রহণ করাও তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।
৯ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কোনো বিশেষ কারণ ছিল না আমার। মাঝেমধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই আমি নানান জায়গায় যাই। শাহবাগের মোড় থেকে আনমনে হাঁটতে হাঁটতে টিএসসির দিকে চলে গেলাম। বিকেলটা সুন্দর। আকাশে মেঘ আছে, আবার মেঘের ফাঁক দিয়ে অদ্ভুত নরম আলো এসে পড়েছে। মনে হচ্ছিলো চা খেতে ভালো লাগবে।
১ দিন আগেশুধু একক অ্যালবামই নয়, সিনেমার গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন মো. ইব্রাহীম। জানা যায়, সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চার শ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। বলা ভালো, অ্যালবামের বেশির ভাগ গানই শিল্পীর নিজের লেখা ও সুর করা। তবে অন্যদের লেখা ও সুরেও কিছু গান গেয়েছেন তিনি।
১ দিন আগে