আজ এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যুদিন
আজ ৬ জুলাই। বাংলাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরের চলে যাওয়ার দিন। গান দিয়েই তিনি ছুঁয়ে গেছেন একের পর এক প্রজন্মের হৃদয়। আর হয়ে উঠেছিলেন সবার প্রিয় ‘প্লেব্যাক সম্রাট’। কিন্তু তিনি নিজেকে মনে করতেন একজন ‘কণ্ঠশ্রমিক’। আজ এন্ড্রু কিশোরের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা ফিরে তাকাব তাঁর বর্ণাঢ্য সংগীতজীবনের অজানা কিছু অধ্যায়ের দিকে। জানাচ্ছেন রায়হান রহমান
স্ট্রিম ডেস্ক
এন্ড্রু কিশোরের মা ছিলেন সংগীতশিল্পী কিশোর কুমারের অন্ধভক্ত। প্রিয় গায়কের সঙ্গে মিলিয়ে ছেলের নাম রেখেছিলেন ‘কিশোর’। এরপর সময়ের ঢেউয়ে সেই কিশোর হয়ে উঠলেন বাংলাদেশি সিনেমার অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গায়ক। হলিউড আর বলিউডের মতো নায়কপ্রধান ঢালিউডেও একটা সময় ছিল, যখন এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠের কথা মাথায় রেখেই সিনেমায় সুযোগ দেওয়া হতো নায়কদের। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের বহু সিনেমায় গান গেয়েছেন। রোমান্টিক থেকে বিরহ—সব ধরনের গানেই মানিয়ে যেত তাঁর গলায়।
ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে ওঠার সময় ফেল করায় প্রধান শিক্ষক তাঁর প্রমোশন আটকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘সুরবাণী সংগীত বিদ্যালয়’-এ ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বাচ্চুর ক্লাসে তিনি ছিলেন মনোযোগী ছাত্রদের একজন। আরেক কিংবদন্তি গীতিকার মোহাম্মদ রফিকুজ্জামানের হাত ধরে শিশুশিল্পী হিসেবে রাজশাহী বেতারে নামও লিখিয়েছিলেন। এরপর আর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
এন্ড্রু কিশোর ছোটবেলা থেকেই ছিলেন প্রবল রাজনীতি সচেতন। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের সময় শিল্পীদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় বিপ্লবী গান শোনাতে চলে যেতেন। তারপর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আশ্রয় নিলেন ভারতে। সেই সময় শরণার্থীশিবিরেও তাঁর কণ্ঠ উজ্জীবিত করেছে হাজারো শরণার্থী আর মুক্তিযোদ্ধাদের।
পড়াশোনা শেষ করে একসময় পুরোদস্তুর মুদিদোকানি হয়ে উঠেছিলেন এন্ড্রু কিশোর। কিন্তু মাথার ভেতর গানের পোকা তাঁকে সে পথে হাঁটতে দেয়নি। সব ছেড়েছুড়ে তিনি ঢাকায় এসে এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নেন। তারপর বেতারের এক ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিচারকদের তাক লাগিয়ে দেন। সেখান থেকেই শুরু হয় পেশাদার কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ঢাকাই চলচ্চিত্রের ঝলমলে জগতে তাঁর রাজসিক পথচলা।
তখনো তিনি সবার কাছে এন্ড্রু কিশোর কুমার বাড়ৈ নামেই পরিচিত। একদিন চলচ্চিত্র পরিচালক দেওয়ান নজরুল তাঁকে ডেকে বললেন, স্টার হতে হলে নাম হওয়া উচিত দুই শব্দের। দেওয়ান নজরুল তাঁকে এলভিস প্রিসলি, লতা মুঙ্গেশকর, উত্তম কুমার, মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমারের কথা বলতেই তিনি নাম ছোট করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। এন্ড্রু কিশোর কুমার বাড়ৈ থেকে হয়ে গেলেন ‘এন্ড্রু কিশোর’।
১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমায় প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। এরপর ‘প্রতীক্ষা’ সিনেমার ‘এক চোর যায় চলে’ গানটির মাধ্যমে তিনি প্রথম তারকাখ্যাতি পান। তবে এন্ড্রু কিশোরের ক্যারিয়ারে আসল ‘ব্রেক থ্রু’ আসে ১৯৮২ সালে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল সৈয়দ শামসুল হকের। সে এক মজার গল্প!
তখন চলছে বিখ্যাত সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দীন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিল’ সিনেমার কাজ। এই সিনেমার চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছিলেন সৈয়দ শামসুল হক। সংগীত পরিচালক আলম খান সৈয়দ হককে অনুরোধ করলেন, গানগুলোও তাঁকেই লিখে দিতে হবে।
নাছোড়বান্দা আলম খান চেপে ধরলেন সৈয়দ হককে। অনুরোধে ঢেঁকি গেলা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না সৈয়দ শামসুল হকের। কিন্তু গান লিখতে বসে তিনি পড়লেন নতুন বিপদে। যা-ই লেখেন, তাঁর কাছে মনে হয় লালন, রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের হাত ধরে এমন ধরনের গান তো আগেই লেখা হয়ে গেছে। এবার উপায়?
সৈয়দ হক ভাবলেন এমন কিছু করতে হবে যা পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা গৌরীপ্রসন্ন মজুমদাররাও কখনো করেননি। সে ভাবনা থেকে তিনি গানে লোকজ শব্দ প্রয়োগ করলেন। কী সেই গান?
সৈয়দ হকের গানটি ছিল ‘হায়রে মানুষ রঙ্গিন ফানুস দম ফুড়াইলেই ঠুস’। এটি জনপ্রিয় বাংলা গানগুলোর একটি। সৈয়দ হক অবশ্য একবসায় পুরো গানটি লিখতে পারেননি। মাত্র চার লাইন নিয়ে তিনি আলম খানের ডেরায় গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। লাইনগুলো আলম খানকে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যদি গানটা পুরোপুরি শেষ করতে পারি, তাহলে এ গানের জন্য জাতীয় পুরস্কার দিতে বাধ্য।’ তবে পুরো গানটি যে তিনি লিখেছিলেন, সে তো সবারই জানা।
এন্ড্রু কিশোর নিজের শতভাগ উজাড় করে দিয়েছিলেন গানটির জন্য। যে কারণে সৈয়দ হকের ভবিষ্যদ্বাণীও সত্যি হয়েছিল। ১৯৮২ সালে ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ গানটির জন্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর।
এন্ড্রু কিশোর ছিলেন খুব কাজপাগল মানুষ। লিপিকা এন্ড্রুর সঙ্গে বিয়ের পরদিন সকালেই সংগীত পরিচালক আলী হোসেনের ফোন পেয়ে চলে যান ডন স্টুডিওতে।
এন্ড্রু কিশোর শুধু বাংলাদেশেই না, ভারতেও তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের সিনেমায় যেমন গান গেয়েছেন, হিন্দি সিনেমায়ও গেয়েছেন। ১৯৮৬ সালে মুক্তি পাওয়া বলিউডের ‘শত্রু’ সিনেমায় তিনি ‘মে তেরা বিসমিল হু’ গানটি তাঁরই গাওয়া। এই গানের সুর করেছিলেন বিখ্যাত সংগীতকার আরডি বর্মন। তিনি এন্ড্রু কিশোরকে মুম্বাইয়ে থেকে যেতে বলেছিলেন। আর দেশেও তিনি ছিলেন প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া শিল্পী।
‘শত্রু’ সিনেমায় গান গেয়েছিলেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী কিশোর কুমারও। যাঁর নামের সঙ্গে মিলিয়ে মা তাঁর নাম রেখেছিলেন, সেই প্রিয় শিল্পীর সঙ্গে একই সিনেমায় গান গাওয়া ছিল এন্ড্রু কিশোরের জন্য অসম্ভব আনন্দের।
এই প্রশ্নের সহজ উত্তর—যেকোনো ধরনের গান গাওয়ার দুর্দান্ত ক্ষমতা ছিল এন্ড্রু কিশোরের। সব ধরনের গানই তিনি এমনভাবে গাইতেন, যেন প্রতিটিই তাঁর নিজের মনের কথা। তাই গীতিকার, সুরকার আর সংগীত পরিচালকেরা যখন সবচেয়ে ভালো কিছু করতে চাইতেন, তখন সবার আগে এন্ড্রু কিশোরকে চাইতেন।
সত্তর থেকে নব্বই দশকের ঢাকাই সিনেমা ছিল নাগরিক গানের নতুন ভূমি। সে সময়কার গানে যেমন ছিল কাব্যিকতা, মরমি আবেগ, রোমান্টিক আবহ, তেমন ছিল বাংলা গানে ঐতিহ্যের সুর আর নতুন ঢঙে বলার ভঙ্গি। এই নতুন ঢেউয়ের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন এন্ড্রু কিশোর। তাঁর কণ্ঠ দিয়েই গড়ে উঠেছিল বাংলা চলচ্চিত্র গানের এক নতুন পরিচয়।
আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই কিংবদন্তি গায়ক টানা ৪২ বছর বাংলাদেশের সংগীতজগতে রাজত্ব করেছেন। সিনেমার গানের বাইরে টেলিভিশনেও তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। বিটিভির ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে নিয়মিত গান গাইতেন। দেশ-বিদেশের অসংখ্য কনসার্টে তাঁর কণ্ঠ শুনে মুগ্ধ হয়েছে অগণিত শ্রোতা।
এন্ড্রু কিশোরেরে সংগীতজীবনের প্রথম বড় টার্নিং পয়েন্ট ছিল ক্লাসিক্যাল ঘরানা থেকে আধুনিক গানে আসা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল যখন তিনি গিয়েছিলেন আরডি বর্মনের কাছে। সেই অভিজ্ঞতা তাঁর জন্য খুলে দিয়েছিল সংগীতের এক নতুন দিগন্ত, যার প্রভাব পড়েছিল পরবর্তী প্রতিটি গানে।
এত জনপ্রিয়তা থাকলেও এন্ড্রু কিশোর ছিলেন খুব সাধারণ জীবন-যাপন করা মানুষ। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন রাজশাহীর নিরিবিলি পরিবেশে। ২০১৯ সালে তাঁর ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর আর সুস্থ হয়ে ওঠা হয়নি। ২০২০ সালের ৬ জুলাই রাজশাহীতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
রাজশাহীর ‘শ্রীরামপুরের চার্চ অব বাংলাদেশে’ তাঁর কবরের ফলকে লেখা আছে নিজের গাওয়া গানের লাইন:
এন্ড্রু কিশোরের মা ছিলেন সংগীতশিল্পী কিশোর কুমারের অন্ধভক্ত। প্রিয় গায়কের সঙ্গে মিলিয়ে ছেলের নাম রেখেছিলেন ‘কিশোর’। এরপর সময়ের ঢেউয়ে সেই কিশোর হয়ে উঠলেন বাংলাদেশি সিনেমার অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গায়ক। হলিউড আর বলিউডের মতো নায়কপ্রধান ঢালিউডেও একটা সময় ছিল, যখন এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠের কথা মাথায় রেখেই সিনেমায় সুযোগ দেওয়া হতো নায়কদের। তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের বহু সিনেমায় গান গেয়েছেন। রোমান্টিক থেকে বিরহ—সব ধরনের গানেই মানিয়ে যেত তাঁর গলায়।
ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে ওঠার সময় ফেল করায় প্রধান শিক্ষক তাঁর প্রমোশন আটকে দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘সুরবাণী সংগীত বিদ্যালয়’-এ ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বাচ্চুর ক্লাসে তিনি ছিলেন মনোযোগী ছাত্রদের একজন। আরেক কিংবদন্তি গীতিকার মোহাম্মদ রফিকুজ্জামানের হাত ধরে শিশুশিল্পী হিসেবে রাজশাহী বেতারে নামও লিখিয়েছিলেন। এরপর আর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
এন্ড্রু কিশোর ছোটবেলা থেকেই ছিলেন প্রবল রাজনীতি সচেতন। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের সময় শিল্পীদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় বিপ্লবী গান শোনাতে চলে যেতেন। তারপর মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আশ্রয় নিলেন ভারতে। সেই সময় শরণার্থীশিবিরেও তাঁর কণ্ঠ উজ্জীবিত করেছে হাজারো শরণার্থী আর মুক্তিযোদ্ধাদের।
পড়াশোনা শেষ করে একসময় পুরোদস্তুর মুদিদোকানি হয়ে উঠেছিলেন এন্ড্রু কিশোর। কিন্তু মাথার ভেতর গানের পোকা তাঁকে সে পথে হাঁটতে দেয়নি। সব ছেড়েছুড়ে তিনি ঢাকায় এসে এক বন্ধুর বাসায় আশ্রয় নেন। তারপর বেতারের এক ‘ট্যালেন্ট হান্ট’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিচারকদের তাক লাগিয়ে দেন। সেখান থেকেই শুরু হয় পেশাদার কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ঢাকাই চলচ্চিত্রের ঝলমলে জগতে তাঁর রাজসিক পথচলা।
তখনো তিনি সবার কাছে এন্ড্রু কিশোর কুমার বাড়ৈ নামেই পরিচিত। একদিন চলচ্চিত্র পরিচালক দেওয়ান নজরুল তাঁকে ডেকে বললেন, স্টার হতে হলে নাম হওয়া উচিত দুই শব্দের। দেওয়ান নজরুল তাঁকে এলভিস প্রিসলি, লতা মুঙ্গেশকর, উত্তম কুমার, মোহাম্মদ রফি, কিশোর কুমারের কথা বলতেই তিনি নাম ছোট করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। এন্ড্রু কিশোর কুমার বাড়ৈ থেকে হয়ে গেলেন ‘এন্ড্রু কিশোর’।
১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমায় প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। এরপর ‘প্রতীক্ষা’ সিনেমার ‘এক চোর যায় চলে’ গানটির মাধ্যমে তিনি প্রথম তারকাখ্যাতি পান। তবে এন্ড্রু কিশোরের ক্যারিয়ারে আসল ‘ব্রেক থ্রু’ আসে ১৯৮২ সালে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল সৈয়দ শামসুল হকের। সে এক মজার গল্প!
তখন চলছে বিখ্যাত সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দীন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিল’ সিনেমার কাজ। এই সিনেমার চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেছিলেন সৈয়দ শামসুল হক। সংগীত পরিচালক আলম খান সৈয়দ হককে অনুরোধ করলেন, গানগুলোও তাঁকেই লিখে দিতে হবে।
নাছোড়বান্দা আলম খান চেপে ধরলেন সৈয়দ হককে। অনুরোধে ঢেঁকি গেলা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না সৈয়দ শামসুল হকের। কিন্তু গান লিখতে বসে তিনি পড়লেন নতুন বিপদে। যা-ই লেখেন, তাঁর কাছে মনে হয় লালন, রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলের হাত ধরে এমন ধরনের গান তো আগেই লেখা হয়ে গেছে। এবার উপায়?
সৈয়দ হক ভাবলেন এমন কিছু করতে হবে যা পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা গৌরীপ্রসন্ন মজুমদাররাও কখনো করেননি। সে ভাবনা থেকে তিনি গানে লোকজ শব্দ প্রয়োগ করলেন। কী সেই গান?
সৈয়দ হকের গানটি ছিল ‘হায়রে মানুষ রঙ্গিন ফানুস দম ফুড়াইলেই ঠুস’। এটি জনপ্রিয় বাংলা গানগুলোর একটি। সৈয়দ হক অবশ্য একবসায় পুরো গানটি লিখতে পারেননি। মাত্র চার লাইন নিয়ে তিনি আলম খানের ডেরায় গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। লাইনগুলো আলম খানকে ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যদি গানটা পুরোপুরি শেষ করতে পারি, তাহলে এ গানের জন্য জাতীয় পুরস্কার দিতে বাধ্য।’ তবে পুরো গানটি যে তিনি লিখেছিলেন, সে তো সবারই জানা।
এন্ড্রু কিশোর নিজের শতভাগ উজাড় করে দিয়েছিলেন গানটির জন্য। যে কারণে সৈয়দ হকের ভবিষ্যদ্বাণীও সত্যি হয়েছিল। ১৯৮২ সালে ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ গানটির জন্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর।
এন্ড্রু কিশোর ছিলেন খুব কাজপাগল মানুষ। লিপিকা এন্ড্রুর সঙ্গে বিয়ের পরদিন সকালেই সংগীত পরিচালক আলী হোসেনের ফোন পেয়ে চলে যান ডন স্টুডিওতে।
এন্ড্রু কিশোর শুধু বাংলাদেশেই না, ভারতেও তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের সিনেমায় যেমন গান গেয়েছেন, হিন্দি সিনেমায়ও গেয়েছেন। ১৯৮৬ সালে মুক্তি পাওয়া বলিউডের ‘শত্রু’ সিনেমায় তিনি ‘মে তেরা বিসমিল হু’ গানটি তাঁরই গাওয়া। এই গানের সুর করেছিলেন বিখ্যাত সংগীতকার আরডি বর্মন। তিনি এন্ড্রু কিশোরকে মুম্বাইয়ে থেকে যেতে বলেছিলেন। আর দেশেও তিনি ছিলেন প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া শিল্পী।
‘শত্রু’ সিনেমায় গান গেয়েছিলেন কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী কিশোর কুমারও। যাঁর নামের সঙ্গে মিলিয়ে মা তাঁর নাম রেখেছিলেন, সেই প্রিয় শিল্পীর সঙ্গে একই সিনেমায় গান গাওয়া ছিল এন্ড্রু কিশোরের জন্য অসম্ভব আনন্দের।
এই প্রশ্নের সহজ উত্তর—যেকোনো ধরনের গান গাওয়ার দুর্দান্ত ক্ষমতা ছিল এন্ড্রু কিশোরের। সব ধরনের গানই তিনি এমনভাবে গাইতেন, যেন প্রতিটিই তাঁর নিজের মনের কথা। তাই গীতিকার, সুরকার আর সংগীত পরিচালকেরা যখন সবচেয়ে ভালো কিছু করতে চাইতেন, তখন সবার আগে এন্ড্রু কিশোরকে চাইতেন।
সত্তর থেকে নব্বই দশকের ঢাকাই সিনেমা ছিল নাগরিক গানের নতুন ভূমি। সে সময়কার গানে যেমন ছিল কাব্যিকতা, মরমি আবেগ, রোমান্টিক আবহ, তেমন ছিল বাংলা গানে ঐতিহ্যের সুর আর নতুন ঢঙে বলার ভঙ্গি। এই নতুন ঢেউয়ের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন এন্ড্রু কিশোর। তাঁর কণ্ঠ দিয়েই গড়ে উঠেছিল বাংলা চলচ্চিত্র গানের এক নতুন পরিচয়।
আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই কিংবদন্তি গায়ক টানা ৪২ বছর বাংলাদেশের সংগীতজগতে রাজত্ব করেছেন। সিনেমার গানের বাইরে টেলিভিশনেও তিনি বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। বিটিভির ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে নিয়মিত গান গাইতেন। দেশ-বিদেশের অসংখ্য কনসার্টে তাঁর কণ্ঠ শুনে মুগ্ধ হয়েছে অগণিত শ্রোতা।
এন্ড্রু কিশোরেরে সংগীতজীবনের প্রথম বড় টার্নিং পয়েন্ট ছিল ক্লাসিক্যাল ঘরানা থেকে আধুনিক গানে আসা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল যখন তিনি গিয়েছিলেন আরডি বর্মনের কাছে। সেই অভিজ্ঞতা তাঁর জন্য খুলে দিয়েছিল সংগীতের এক নতুন দিগন্ত, যার প্রভাব পড়েছিল পরবর্তী প্রতিটি গানে।
এত জনপ্রিয়তা থাকলেও এন্ড্রু কিশোর ছিলেন খুব সাধারণ জীবন-যাপন করা মানুষ। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছেন রাজশাহীর নিরিবিলি পরিবেশে। ২০১৯ সালে তাঁর ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর আর সুস্থ হয়ে ওঠা হয়নি। ২০২০ সালের ৬ জুলাই রাজশাহীতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
রাজশাহীর ‘শ্রীরামপুরের চার্চ অব বাংলাদেশে’ তাঁর কবরের ফলকে লেখা আছে নিজের গাওয়া গানের লাইন:
আরব থেকে মর্সিয়ার এই ধারা গিয়ে পৌঁছায় পারস্যে। এরপর এর আঙ্গিক ও বিষয়বস্তুতে ঘটে যুগান্তকারী পরিবর্তন। বিশেষ করে ষোড়শ শতকে সাফাভি শাসনামলে ‘শিয়া ইসলাম’ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করার পর মর্সিয়া এক নতুন মাত্রা পায়।
৬ ঘণ্টা আগেএক মর্মান্তিক বাস দুর্ঘটনার পর থেকেই শুরু হয় ফ্রিদার চিত্রশিল্পী হয়ে ওঠার গল্প। ফ্রিদা বলেন, ‘বাস আমাকে ধাক্কা দেওয়ার আগে আমি হতে চেয়েছিলাম একজন ডাক্তার।’
৭ ঘণ্টা আগে১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই, জেফ বেজোস শুরু করেছিলেন তাঁর নতুন ব্যবসা। সিয়াটলে নিজের ভাড়া বাসার গ্যারেজে চালু হওয়া এই কোম্পানির নাম রেখেছিলেন, ‘অ্যামাজন’। তখন কেউ ভাবতেও পারেনি, এই ছোট অনলাইন দোকানটাই একদিন হয়ে উঠবে পুরো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস।
১০ ঘণ্টা আগেবাংলার ফোকলোরের প্রবাদ, লোককাহিনি, ঘেটুগান, ভূতের গল্প—আবারও ফিরে এসেছে ডিজিটাল মাধ্যমে। ইউটিউব, ফেসবুক, ওয়েব সিরিজ আর কার্টুনে ভেসে বেড়াচ্ছে শিকড়ের গল্পগুলো। নতুন প্রজন্মকে শেকড়ের সঙ্গে যুক্ত রাখছে এই ডিজিটাল মাধ্যমে ফোকলরের আবার ফিরে আসা।
১৪ ঘণ্টা আগে