leadT1ad

৭ হাজার বছরের ইতিহাস এক ছাদের নিচে: খুলে গেল ‘গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম’

স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম ডেস্ক

স্ট্রিম গ্রাফিক

সাত হাজার বছরের ইতিহাস এখন যেন এক ছাদের নিচে। প্রাচীন বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি, মিশরের 'দ্যা গ্রেট পিরামিড অফ খুফুর' কাছেই আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে 'দ্যা গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম বা জিইএম'-এর।

এটিই পৃথিবীর বৃহত্তম প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর। এই স্থাপনায় রয়েছে প্রায় এক লাখেরও বেশি প্রত্নসামগ্রী। সেখানে প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে শুরু করে গ্রিক ও রোমান আমল পর্যন্ত মিশরের সাত হাজার বছরের ইতিহাস চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে।

এই জাদুঘর নির্মাণের প্রস্তাব আসে ১৯৯২ সালে। আর কাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে। তবে আর্থিক সংকট, ২০১১ সালের আরব বসন্ত, কোভিড-১৯ ও আঞ্চলিক সংঘাতের কারণে জাদুঘর নির্মাণে বিলম্ব ঘটে। অবশেষে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ১৪ হাজার কোটিরও বেশি) ব্যয়ে নির্মিত এই জাদুঘরটি এখন জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। প্রায় ৭০টি ফুটবল মাঠের সমান আয়তনের এই জাদুঘর প্রতি বছর প্রায় ৮০ লক্ষ পর্যটক আকর্ষণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে মিশরের পর্যটন খাতেও নতুন গতি আসবে।

মিশরের গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম। সংগৃহীত ছবি
মিশরের গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম। সংগৃহীত ছবি

তুতেনখামেনের সম্পূর্ণ সমাধি

গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মিশরের বালক সম্রাট তুতেনখামেনের সমাধির সম্পূর্ণ সংগ্রহ। এই প্রথমবার একসঙ্গে প্রদর্শিত হচ্ছে সেই অক্ষত সমাধি থেকে পাওয়া সব নিদর্শন। ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার আবিষ্কার করেছিলেন এই সমাধি।

এখানে রয়েছে ৫ হাজার ৫০০টিরও বেশি নিদর্শন। তার মধ্যে আছে তুতেনখামেনের সোনার মুখোশ, সিংহাসন, রথ থেকে শুরু করে বহু ধনরত্ন। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ইজিপ্টোলজিস্টের সভাপতি ড. তারেক তাওফিক বলেন, দর্শকদের হাওয়ার্ড কার্টারের মতো অভিজ্ঞতা দেওয়ার লক্ষ্যেই এই প্রদর্শন সাজানো হয়েছে।

অন্যান্য আকর্ষণ

জাদুঘরে আরও রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক সম্পদ। এর মধ্যে অন্যতম ৪ হাজার ৫০০ বছরের পুরোনো খুফুর মৃতদেহবাহী নৌকা। এটি প্রাচীন বিশ্বের সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত নৌযানের একটি।

এছাড়া ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের ৩২ হাজার বছর পুরোনো ১৬ মিটার লম্বা ওবেলিস্ক এবং তাঁর ১১ মিটার উঁচু বিশাল মূর্তিও নজর কাড়বে।

গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়ামের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মিশরের বালক সম্রাট তুতেনখামেনের সমাধির সম্পূর্ণ সংগ্রহ। এই প্রথমবার একসঙ্গে প্রদর্শিত হচ্ছে সেই অক্ষত সমাধি থেকে পাওয়া সব নিদর্শন। ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার আবিষ্কার করেছিলেন এই সমাধি।

প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ফেরানোর দাবি

নতুন এই জাদুঘর চালু হওয়ার পর থেকেই বিদেশে থাকা মিশরের প্রত্নসম্পদ ফেরানোর দাবি আরও জোরালো হয়েছে। মিশর ফেরত পেতে চাচ্ছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রাখা রোসেটা স্টোন, লুভরে থাকা ডেনডেরা জোডিয়াক এবং বার্লিনের নিউস মিউজিয়ামে রাখা নেফারতিতির আবক্ষ মূর্তি।

মিশরের প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. জাহি হাওয়াস এই তিনটি নিদর্শন ফেরানোর দাবিতে অনলাইন পিটিশন চালু করেছেন। এতে স্বাক্ষর করেছেন লক্ষাধিক মানুষ। তাঁর ভাষায়, ‘এই তিনটি জিনিস আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।’

যদিও ব্রিটিশ মিউজিয়াম জানিয়েছে, তারা এখনও মিশরের কাছ থেকে রোসেটা স্টোন ফেরত বা ধার দেওয়ার কোনো আনুষ্ঠানিক অনুরোধ পায়নি। তবে ড. হাওয়াস এবং অন্যান্য মিশরীয় বিশেষজ্ঞদের আশা, গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম এই দাবিকে আরও শক্তিশালী করবে।

গবেষণা ও সংরক্ষণের নতুন কেন্দ্র

মিশরীয় প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, এই নতুন জাদুঘর একাডেমিক গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে। এখান থেকে নতুন আবিষ্কারেরও পথ খুলবে। ইতিমধ্যে জাদুঘরের কিউরেটররা তুতেনখামেনের টেক্সটাইল ও চামড়ার বর্মসহ বহু নিদর্শন পুনরুদ্ধার করেছেন।

ড. তাওফিক বলেন, ‘এই কাজ কেবল মিশরীয়রাই করতে পারে। কারণ এটি আমাদের জাতীয় গর্বের বিষয়।’ তাঁর মতে, ‘পুরো প্রকল্পটি আমাদের জাতীয় গর্বের প্রতীক। আমরা শুধু প্রাচীন মিশর নয়, আধুনিক মিশরকেও তুলে ধরছি। কারণ এই জাদুঘর আমরা নিজেরাই তৈরি করেছি।’

সূত্র: বিবিসি

Ad 300x250

সম্পর্কিত