leadT1ad

‘একে-৪৭’ রাইফেল কেন এত আলোচিত

এই অস্ত্রের নকশা করেছিলেন মিখাইল কালাশনিকভ। কিশোর বয়সেই তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে প্রতিভার ছাপ রাখতে পেরেছিলেন। ট্যাংক থেকে গোলা ছোড়ার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে তিনি সেনাবাহিনীতে তরুণ উদ্ভাবক হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছিলেন।

শিশির রায়
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ৫৪
‘একে-৪৭’, বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত অস্ত্র। ছবি: এক্স থেকে নেওয়া

‘একে-৪৭’, বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত অস্ত্র। কল্পনার তুলনায় বেশি প্রাণঘাতী এই আগ্নেয়াস্ত্রের নাম শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে কোনো ভয়াবহ যুদ্ধ কিংবা ক্ষমতার পালাবদলের কথা। বিশ্বের ১০৬টি দেশের সেনাবাহিনী ও বিশেষ বাহিনী এখনো একে-৪৭ ব্যবহার করে। এই রাইফেল এতটাই শক্তিশালী যে, পানির নিচে ডুবিয়েও বা আগুনের ভেতর দিয়েও শত্রুর ওপর গুলি ছোড়া যায়।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে ১৯৪৭ সালে স্বয়ংক্রিয় ‘একে-৪৭’ রাইফেল তৈরি হয়েছিল। সে বছরেই হয় এই অস্ত্রের প্রাথমিক পরীক্ষা। তাতে উত্তীর্ণও হয়েছিল। তবে সরকারিভাবে সোভিয়েত বাহিনীতে এটি যুক্ত হয় ১৯৪৯ সালে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন বুঝতে পারে, তাদের সৈন্যদের জন্য নতুন ধরনের রাইফেল দরকার। যেটা চালানো সহজ, নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকর। কারণ তখনকার রাইফেলগুলো ছিল তুলনামূলক ধীরগতির। আর সাব-মেশিনগান দিয়ে দূরের লক্ষ্যবস্তুতে সহজে আঘাত করা যেত না। তাই তারা এমন একটি অস্ত্র চেয়েছিল যা দুই সমস্যারই সমাধান করবে।

যেভাবে তৈরি হলো একে-৪৭

এই অস্ত্রের নকশা করেছিলেন মিখাইল কালাশনিকভ। কিশোর বয়সেই তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে প্রতিভার ছাপ রাখতে পেরেছিলেন। ট্যাংক থেকে গোলা ছোড়ার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে তিনি সেনাবাহিনীতে তরুণ উদ্ভাবক হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছিলেন।

১৯৪১ সালে বিশ্বযুদ্ধে আহত হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানেই শুয়ে শুয়ে তিনি নকশা করেন একটি অটোমেটিক রাইফেলের। তিনি কিন্তু কোনো অস্ত্র প্রকৌশলী ছিলেন না। শুধু নিজের অভিজ্ঞতা আর ইচ্ছা থেকেই যুক্ত হয়েছিলেন এই কাজে। যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন একজন ট্যাঙ্ক সার্জেন্ট। নাৎসিদের বিরুদ্ধেও লড়েছেন সরাসরি।

সাত বছরের পরিশ্রমের পর তৈরি হয় কালাশনিকভের রাইফেলটি। সোভিয়েত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা সেদিন খুব খুশি হয়েছিলেন। অনেকের মতে, ৬ জুলাই থেকে এটার উৎপাদন শুরু হয়। তবে এই তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কারণ, এই তারিখের সপক্ষে লিখিত কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই।

আভতোমাত কালাশনিকভের নাম অনুসারে এর নাম রাখা হয় ‘একে-৪৭’। রাশিয়ান ভাষায় ‘আভতোমাত’ মানে স্বয়ংক্রিয়। আর ১৯৪৭ সালে এটার ডিজাইন করা হয়েছিল, তাই অস্ত্রের নামের সঙ্গে ‘৪৭’ জুড়ে যায়।

কেন এত আলোচিত

এই রাইফেলের জনপ্রিয়তার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ এর নির্ভরযোগ্যতা। যেকোনো পরিস্থিতিতে—কাদা, বৃষ্টি, বরফ বা ধুলাবালিতেও এটি কাজ করতে পারে। এটা চালানো তুলনামূলকভাবে সহজ। আর রক্ষণাবেক্ষণও অতটা কঠিন নয়। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচও ছিল কম।

যদিও এটি তৈরি হয়েছিল সোভিয়েত সৈন্যদের প্রয়োজনে, কিন্তু অল্প সময়েই এটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে একে-৪৭ হলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত এবং বহুল ব্যবহৃত রাইফেল।

মিখাইল কালাশনিকভ হয়তো কখনো ভাবেননি যে তাঁর এই রাইফেল একদিন পুরো পৃথিবীতে এভাবে ছড়িয়ে যাবে। তবে তাঁর দুঃখও ছিল। ২০০৭ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার তৈরি অস্ত্র দিয়ে যখন সন্ত্রাসীদের গুলি চালাতে দেখি, তখন কষ্ট পাই।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত