leadT1ad

শীতের শুরুতে জ্বর-সর্দি কেন হয়, প্রতিকার কী

শীত এসে গেছে। তুলনামূলক আরামদায়ক হলেও ঠান্ডা, সর্দি-কাশি, জ্বর হওয়ার আশঙ্কা এ সময়ে অনেক বেশি। কিন্তু এমন কেন হয়, প্রতিকারই-বা কী? পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. ফারুক আহাম্মদ।

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক

শীত এসে গেছে। শীতের সঙ্গে এসেছে সর্দি, জ্বর ও কাশি। স্ট্রিম ছবি

শীত এসে গেছে। শীতের সঙ্গে এসেছে সর্দি, জ্বর ও কাশি। শুধু তাই নয়, গলার স্বরও বদলে যাচ্ছে অনেকের। চিকিৎসকেরা বলছেন, তাপমাত্রা কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। ফলে ইনফ্লুয়েঞ্জা, অ্যাডিনোভাইরাসের মতো জীবাণু শ্বাসনালিতে প্রবেশ করে সর্দি-জ্বর, গলা ব্যথা ও কাশি সৃষ্টি করে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ও ভাইস প্রিন্সিপাল ডা. ফারুক আহাম্মদ জানান, শীতের শুকনো বাতাস ও তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ফলে ভাইরাস অনেক দ্রুত ছড়ায়। এ সময় মাস্ক পড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

শীতের শুরুতে কেন জ্বর-সর্দি

নভেম্বর মাসের শেষের দিক থেকে বাংলাদেশে তাপমাত্রা পরিবর্তন হওয়া শুরু করে। বর্ষার আর্দ্রতা হারিয়ে বাতাস হয় শুকনো, ধুলাবালিও বাড়ে। ফারুক আহাম্মদের মতে, এই পরিবর্তনটাই প্রথম ধাক্কা।

তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘হঠাৎ করে মৌসুমী তাপমাত্রার পরিবর্তন এবং ধুলা ও ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ায় নতুন-পুরাতন ভাইরাস বিস্তার করে। এই ভাইরাস অনেকদিন পর্যন্ত থাকতেও পারে। যেমন অ্যাডেনোভাইরাস, রাইনোভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস—এই ভাইরাসগুলো শীত শুরুর আবহাওয়াকে পছন্দ করে। এই সময়ে ভাইরাসগুলো বেশি বেশি ছড়িয়ে পড়ে।’

ফারুক আহাম্মদ আরও বলেন, ‘ধুলাবালি, ঠান্ডায় যাদের অ্যালার্জি আছে, তাপমাত্রা পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের শ্বাসনালিতে এগুলি প্রবেশ করে অস্বাভাবিক আচরণ করা শুরু করে। যেটাকে আমরা সহজ ভাষায় অ্যালার্জি বলি। কিন্তু এই অ্যালার্জি চলাকালীন যদি নতুন একটা ভাইরাস ঢুকে পড়ে, তাহলে ওই সিম্পটমগুলিকে আরও বাড়িয়ে দেয়।’

চিকিৎসক আরও বলেন, ‘এটা আসলে একটা মিক্সড প্যাটার্নে হওয়া ইনফেকশন। হাসপাতালে এখন অনেক বেশি রোগী আসা শুরু হয়েছে যারা সর্দি, কফ, কাশি নিয়ে আসছেন। এদের বেশিরভাগই ভাইরাস ও আবহাওয়া দূষণের কারণে রোগাক্রান্ত হয়েছেন।’

যে হারে পলিউশন হচ্ছে, মাস্ক ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া মানেই বিপদের মধ্যে ঢুকে পড়া। স্ট্রিম ছবি
যে হারে পলিউশন হচ্ছে, মাস্ক ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া মানেই বিপদের মধ্যে ঢুকে পড়া। স্ট্রিম ছবি

সবচেয়ে ঝুঁকিতে কারা?

এই সময়টায় সবচেয়ে সতর্ক থাকার কথা শিশু ও বয়স্কদের। ভাইরাসজনিত জ্বর-সর্দি অনেক সময় নিম্ন শ্বাসনালিতে নেমে গিয়ে নিউমোনিয়া তৈরি করতে পারে।

ডা. ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। এই ভাইরাসগুলি খুব সহজেই শিশু শরীরের ভেতর নিউমোনিয়া তৈরি করতে পারে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে যাদের অন্যান্য রোগ আছে, যেমন হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, সিওপিডি ও ডায়াবেটিস—এই ধরণের রোগীদেরকেও সতর্ক থাকতে হবে। বয়স্কদেরকে যখন এই ভাইরাসগুলি আক্রমণ করে, তখন তাঁদের দ্রুত ঘায়েল করে ফেলে।’

যে হারে পলিউশন হচ্ছে, মাস্ক ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া মানেই বিপদের মধ্যে ঢুকে পড়া। সুতরাং মাস্ক ব্যবহার করা, শিষ্টাচার মেনে চলা জরুরী।

সতর্কতাই সেরা অস্ত্র

শীতের শুরুতে সংক্রমণ এড়াতে কিছু অভ্যাস খুব জরুরি। ডা. ফারুক বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নেওয়া ভালো। বছরের শুরুতে একটি ডোজ নিলে জটিলতা অনেকটাই কমে। বিশেষ করে হাঁপানি, সিওপিডি, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং বয়স্করা এটি নিলে বেশি উপকার পাবেন।

সতর্ক থাকার কথা জানিয়ে ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘আর অবশ্যই আমি বলব, এই পরিবেশে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যে হারে পলিউশন হচ্ছে, মাস্ক ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া মানেই বিপদের মধ্যে ঢুকে পড়া। সুতরাং মাস্ক ব্যবহার করা, শিষ্টাচার মেনে চলা জরুরী। আমরা কোভিডের সময় অনেক কিছু শিখেছিলাম এবং পালনও করেছিলাম। আমরা যদি আবার সেটা ধারণ করতে পারি, তাহলে এই প্রকোপ থেকে আমরা অনেকটা সহজেই নিষ্কৃতি পাব।’

এছাড়া শীতে ঠান্ডা, জ্বর, কাশি থেকে রক্ষা পেতে কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। যেমন ঠান্ডা খাবার ও পানীয় পরিহার করা, কুসুম কুসুম গরম পানি পান করা, প্রয়োজনমতো গরম কাপড় পরা, সঠিক সময়ে গোসল শেষ করা, ঘরে মুক্ত ও নির্মল বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা। আর লক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হলে বা শ্বাসকষ্ট, উচ্চ জ্বর বা শিশু–বয়স্কদের অবস্থার দ্রুত অবনতি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত