leadT1ad

শাফিন আহমেদ যেভাবে মাইলসে যোগ দিয়েছিলেন

শাফিন আহমেদের মৃত্যুর এক বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলা গান এখনো তাঁকে হারানোর ব্যথা ভুলতে পারেনি। সংগীতপ্রেমীরা টের পাচ্ছেন তাঁর শূন্যতা। আজ আমরা ফিরে তাকাতে চাই ১৮ বছরের এক তরুণ শাফিন আহমেদের দিকে। কীভাবে তিনি ‘মাইলস’ ব্যান্ডে যোগ দিয়েছিলেন—শুরুর সেই ঘটনা আজ মনে করতে চাই।

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৫, ১৬: ৪০
ছবি: স্ট্রিম গ্রাফিক

১৯৭৮ সালের কথা। সময়টা দেশের ব্যান্ডসংগীতের জন্য একরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার। শহরের নতুন ‘সাউন্ডস্কেপ’গড়ে উঠছে তরুণদের হাতে। সেই সময়েই হামিন আহমেদ, শাফিন আহমেদ, শাহিদুল, কমল আর নিনা মিলে একটা ব্যান্ড গড়েন। নাম দিয়েছিলেন ‘ব্যারাক’।

তবে শুরুর সে পথ খুব দীর্ঘ হয়নি। ব্যান্ডে ভাঙনের সুর বাজে শিগগিরই। কমল আর নিনা বিদেশ পাড়ি দেন। ভেঙে যায় ব্যারাক। এর পরের বছর, ১৯৭৯ সাল। ষাটের দশকের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘লাইটনিংস’-এর ভোকাল ও বেইস গিটারিস্ট ফরিদ রশিদ নতুন দিনের গানের জোয়ারে আবারও পা বাড়ালেন। গড়ে তুললেন এক ঝাঁক তুখোড় মিউজিশিয়ান নিয়ে নতুন ব্যান্ড—‘মাইলস’।

শাফিন আহমেদের প্রথম ব্যান্ড ‘ব্যারাক’ (১৯৭৮)। ছবি: মাইলসের ফেসবুক পেজ থেকে
শাফিন আহমেদের প্রথম ব্যান্ড ‘ব্যারাক’ (১৯৭৮)। ছবি: মাইলসের ফেসবুক পেজ থেকে

মাইলসের শুরুর লাইনআপ ছিল এক কথায় দুর্দান্ত—হ্যাপি আখান্দ, রবিন, কামাল মঈন, ল্যারি, মুসা, ইশতিয়াক। সবাই তখন ঢাকার ব্যান্ড মিউজিকসিনের পরিচিত মুখ। ‘মাইলস’তখন এই লাইনআপে নিয়মিত বাজাতে শুরু করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের চাম্বেলি রুমে। মুক্তিযুদ্ধের আগে এই ‘চাম্বেলি’ছিল ব্যান্ড মিউজিকের তীর্থভূমি। ‘আইওলাইটস (উইন্ডি সাইড অব কেয়ার)’, ‘লাইটেনিংস’, ‘র‍্যাম্বলিং স্টোন’, ‘ইনসেক্স ডুই’—এর মতো ব্যান্ড সেখানে নিয়মিত পারফর্ম করত।

মাইলস যে সময়ে ব্যান্ড শুরু করে, ঢাকায় তখন আজম খানদের হাত ধরে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে এক নতুন দিনের মিউজিক কালচার। শিল্পীরা সবাই ছিলেন সবার পরিচিত। সেই সূত্রেই মাইলসের সদস্য মুসার বাসায় গিয়েছিলেন হামিন আহমেদ। সেখানেই হঠাৎ ফরিদ রশিদের দেখা পেয়ে যান হামিন। এই বাসায় মাঝেমধ্যে হামিন-শাফিনদের ব্যান্ড প্র‍্যাকটিসও করত।

কনসার্টে শাফিন আহমেদ (১৯৮১)। ছবি: মাইলসের ফেসবুক পেজ থেকে
কনসার্টে শাফিন আহমেদ (১৯৮১)। ছবি: মাইলসের ফেসবুক পেজ থেকে

সেদিন পরিচয়ের ফাঁকে হামিন জানান, তিনি ও তাঁর ছোট ভাই শাফিনের ব্যান্ড আছে। মাইলসের ফরিদ রশিদের কৌতূহল জন্মায়। আর সেটা অস্বাভাবিকও নয়। কারণ, নজরুলসংগীতের দুই কিংবদন্তি কমল দাশগুপ্ত আর ফিরোজা বেগমের সন্তান হামিন-শাফিন বেড়ে উঠেছেন সাংগীতিক আবহে।

ফরিদ রশিদ সেদিন শাফিন-হামিনদের ব্যান্ডের প্র‍্যাকটিস দেখতে চেয়েছিলেন। চোখের সামনে ভেসে উঠছে সেই দৃশ্য, ধানমন্ডি ২৮ নম্বরের বাসায় প্র্যাকটিস চলছে। হামিন আর শাফিন গাইছেন-বাজাচ্ছেন, ড্রামসে আছেন নাইদার। ফরিদ রশিদ বসে গভীর মনোযোগে তাঁদের গান শুনছেন। তরুন তুর্কিদের গান ভালো লেগে যায় রশিদের।

ভালোলাগাটা প্রকাশ পেতেও দেরি হয়নি। মাইলসে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব আসে হামিন আহমেদের কাছে। ভোকাল ও গিটারিস্ট হিসেবে হামিন সানন্দে যোগ দেন মাইলসে।

তবে ‘মাইলস’তখনো নিজের পথ খুঁজছে। মুসা আর ল্যারি চলে গেছেন বিদেশে। ব্যান্ডে নতুন মুখ দরকার। সেই সময়ে হামিন ব্যান্ডকে জানান শাফিন আহমেদের কথা। ফরিদ রশিদ সায় দেন সঙ্গে সঙ্গেই। এভাবেই মাইলস পেল নতুন আরেক ভোকাল ও গিটারিস্ট। শুরু হলো শাফিন আহমেদের মাইলস-যাত্রা। ব্যান্ডের তখনকার লাইনআপে ছিল বাংলাদেশের প্রথম গিটার সেনসেশন হ্যাপি আখন্দ, রবিন, ফরিদ রশিদ, কামাল মঈন, ইশতিয়াক, হামিন আহমেদ আর শাফিন আহমেদ।

১৯৮৩ সালে মাইলসের কনসার্ট, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। এই কনসার্টের পরেই শাফিন আহমেদ পড়াশোনার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন। ছবি: মাইলসের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া
১৯৮৩ সালে মাইলসের কনসার্ট, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। এই কনসার্টের পরেই শাফিন আহমেদ পড়াশোনার জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন। ছবি: মাইলসের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

দুই ভাইয়ের উপস্থিতি যেন এক নতুন প্রাণ দেয় ব্যান্ডটিকে। দুই মাসে তারা করে ফেলল বেশ কিছু শো। তবে ব্যান্ড মানেই তো ভাঙা-গড়ার গল্প। রবিন বিদেশে চলে যান। আর ইশতিয়াক ব্যস্ততায় ব্যান্ডে সময় দিতে পারলেন না।

এরপর বছরখানেকের বিরতি এবং তারপরে আবার নতুনভাবে ফিরে আসা। কারণ, শাফিন আহমেদ ১৯৮৩ সালে পড়াশোনার জন্য দেশ ছাড়েন। ‘মাইলস’ তখন পুরোদমে নিজেদের মৌলিক ও জনপ্রিয় ইংরেজি গানের কাভার, দুই-ই করছে। ১৯৮২ ও ১৯৮৬ সালে দুইটা ইংরেজি গানের অ্যালবামও প্রকাশ করে ফেলল ব্যান্ডটি। উল্লেখ্য যে দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘এ স্টেপ ফারদার’-এর সব গানই ছিল মৌলিক ইংরেজি গান। অ্যালবামে শাফিন আহমেদের ভোকালে গানও ছিল। লন্ডনে বসেই গান দুটির ভোকাল রেকর্ড করেছিলেন শাফিন।

১৯৮৭ সালের কথা। মাইলসের দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ফরিদ রশিদ আর কামাল মঈন ব্যান্ড ছেড়ে দেন। মাইলস তখন কিছুটা ধীরে চলো নীতিতে চলতে থাকে। সেই অবস্থা দ্রুতই কেটে যায় ১৯৯০ সালে। কারণ, লেখাপড়া শেষ করে শাফিন আহমেদ স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে এসেছেন। আবার প্রাণ ফিরে পায় ‘মাইলস’। তবে শাফিন এবার হাতে তুলে নেন বেইস গিটার।

মাইলসের প্রথম বাংলা অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’ (১৯৯১)। ছবি: আশিক মিউজিক
মাইলসের প্রথম বাংলা অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’ (১৯৯১)। ছবি: আশিক মিউজিক

তখনকার মাইলসে ছিলেন হামিন আহমেদ, শাফিন আহমেদ, মানাম আহমেদ আর ড্রামসে মিল্টন আকবর। এই লাইনআপেই তাঁরা ঢুকে পড়েন স্টুডিওতে। প্রস্তুতি নিতে থাকেন তাঁদের প্রথম বাংলা গানের অ্যালবামের জন্য। কারণ, তখন মাইলসকে নিয়ে চলছিল নানান সমালোচনা। কেন তারা শুধু ইংরেজি গান গায়?

‘মাইলস’সেই সমালোচনার উত্তর দিয়েছিল সুর আর সংগীতে। ১৯৯১ সালে প্রকাশ পায় তাদের প্রথম বাংলা অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’। অ্যালবামের গানগুলো যেন রাতারাতি ঢুকে পড়লো শ্রোতাদের হৃদয়ে। আর ‘প্রতিশ্রুতি’র গানগুলো হয়ে উঠল সময়ের প্রতিচ্ছবি। এরপরের গল্প তো সবারই জানা। নব্বই দশকে বাংলাদেশ কিংবা কলকাতা—সবখানেই জনপ্রিয় হয়ে উঠল ব্যান্ড ‘মাইলস’।

Ad 300x250

কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটি বাতিল

নায়ক জসীমের মতো অকালে চলে গেলেন তাঁর ছেলে ‘ওউন্ড’ ব্যান্ডের ভোকালিস্ট-বেজিস্ট এ কে রাতুল

মসজিদ নিয়ে সংঘাতে মৃত্যু, এলাকায় ১৪৪ ধারা

ইসির গণমাধ্যমকর্মী নীতিমালা প্রত্যাখ্যান আরএফইডির, সংশোধনের আহ্বান

শাফিন আহমেদ যেভাবে মাইলসে যোগ দিয়েছিলেন

সম্পর্কিত