১৯৯০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ক্যানসারে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বৈশ্বিক চিত্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এখানে ক্যানসার কেবল বাড়ছেই না, বরং এক নীরব মহামারির মতো কেড়ে নিচ্ছে বিপুল সংখ্যক প্রাণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশে নতুন শনাক্ত হওয়া প্রতি তিনজন ক্যানসার রোগীর মধ্যে দুজনেরই মৃত্যু হচ্ছে।
তুফায়েল আহমদ
বিশ্ব যখন ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ধীরে ধীরে সাফল্য পাচ্ছে, তখন সম্পূর্ণ উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বনামধন্য চিকিৎসা সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে, ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ক্যানসারে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। উন্নত চিকিৎসা, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং কার্যকর জনস্বাস্থ্য নীতির ফলে এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।
কিন্তু এই বৈশ্বিক চিত্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এখানে ক্যানসার কেবল বাড়ছেই না, বরং এক নীরব মহামারির মতো কেড়ে নিচ্ছে বিপুল সংখ্যক প্রাণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশে নতুন শনাক্ত হওয়া প্রতি তিনজন ক্যানসার রোগীর মধ্যে দুজনেরই মৃত্যু হচ্ছে।
বিশ্ব ও বাংলাদেশের পরিসংখ্যানের বৈপরীত্য এই রোগের ভয়াবহতা এবং দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর সংকটকে একযোগে সামনে নিয়ে এসেছে। এই উদ্বেগজনক বৈপরীত্যের পেছনে লুকিয়ে আছে তামাকের অবাধ ব্যবহার, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ এবং একটি ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থার জটিল সমীকরণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীন পরিচালিত আন্তর্জাতিক ক্যানসার গবেষণা এজেন্সির (আইএআরসি) ‘গ্লোবোক্যান’-এর ২০২২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র এক বছরে বাংলাদেশে নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৫৬ জন; একই সময়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৯৮ জন। ২০১৮ সালের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, নতুন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার বেড়েছে ৮ শতাংশ।
গ্লোবোক্যানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নতুন আক্রান্তদের প্রায় ৭০ শতাংশই মারা যাচ্ছেন। একই রিপোর্ট অনুসারে, দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ গত পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন।
আইএআরসি আরও জানাচ্ছে, বাংলাদেশে ৭৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই যেকোনো ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সামগ্রিক ঝুঁকি ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি দশজন নাগরিকের মধ্যে একজনের বেশি তার জীবদ্দশায় ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার বাস্তব ঝুঁকিতে রয়েছেন।
গ্লোবোক্যানের তথ্যমতে, পুরুষদের মধ্যে খাদ্যনালী, মুখগহ্বর ও ফুসফুসের ক্যানসারের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি, যার সঙ্গে তামাক ব্যবহারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে, নারীদের মধ্যে স্তন ও জরায়ুমুখের ক্যানসারের হার সর্বাধিক, যা জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও প্রতিরোধযোগ্য ভাইরাস সংক্রমণকে দায়ী করে।
বৈশ্বিক প্রবণতা থেকে বাংলাদেশের এই বিচ্যুতির পেছনে কোনো একক কারণ নেই। বরং এটি বহুবিধ সামাজিক, পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট সংকটের সম্মিলিত ফল। এর মূলে রয়েছে তামাকের সর্বগ্রাসী থাবা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশের প্রায় ৩৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোনো না কোনোভাবে তামাক ব্যবহার করেন, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ হারের দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ধূমপানের পাশাপাশি পান, জর্দা ও গুলের মতো ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার মুখগহ্বর, গলা, খাদ্যনালীসহ অন্তত এক ডজন ক্যানসারের ঝুঁকি বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়।
সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় সমাজের সব স্তরেই এর ব্যবহার এক নীরব ঘাতকের ভূমিকা পালন করছে। নারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির চিত্রটি ভিন্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, জরায়ুমুখের ক্যানসারের ৯৫ শতাংশের বেশি ঘটনার জন্য হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) দায়ী, যা টিকার মাধ্যমে প্রায় সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু সচেতনতার অভাব, সামাজিক জড়তা এবং টিকাদান কর্মসূচির সীমাবদ্ধতার কারণে দেশের বিপুল সংখ্যক নারী এই মারাত্মক ঝুঁকির আওতায় থেকে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, স্তন ক্যানসারের প্রকোপ বৃদ্ধির পেছনে নিয়ন্ত্রণহীন জীবনযাত্রার প্রভাবকেই দায়ী করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। স্থূলতা, বিলম্বে সন্তান ধারণ, শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ানোর প্রবণতা ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এর অন্যতম কারণ।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিবেশ দূষণ ও অনিরাপদ খাদ্যের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আইএআরসি সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়েছে যে, বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২ দশমিক৫) ফুসফুসের ক্যানসারের একটি অন্যতম কারণ। একে ‘গ্রুপ ১ কার্সিনোজেন’ বা ক্যানসার সৃষ্টিকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলো নিয়মিত বিশ্বের সর্বোচ্চ দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় থাকায় এর বাসিন্দারা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। পাশাপাশি, কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ও খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিকের মিশ্রণ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করে আসছে। এই ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির বিপরীতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সংকট মোকাবেলায় অনেকটাই অপ্রস্তুত।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন মতে, ক্যানসার মোকাবিলার প্রধান শর্ত হলো প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়। কিন্তু বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে ক্যানসার স্ক্রিনিং বা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেই। ফলে, অধিকাংশ রোগী যখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, ততক্ষণে রোগটি আর নিরাময়যোগ্য থাকে না।
দেশের উন্নতমানের ক্যানসার চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় পুরোটাই রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক। ফলে গ্রাম বা মফস্বলের একজন রোগীর পক্ষে ঢাকায় এসে দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। রোগীর সংখ্যার তুলনায় বিশেষজ্ঞ অনকোলজিস্ট, প্রশিক্ষিত নার্স ও রেডিওথেরাপির মতো জরুরি যন্ত্রপাতির সংখ্যাও নগণ্য। ফলে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা ও আকাশছোঁয়া খরচ একটি মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারকে মুহূর্তেই নিঃস্ব করে দেয়।
‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ (জিবিডি) গবেষণাটি ভবিষ্যতের জন্য আরও বড় সতর্কবার্তা দিয়েছে। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ মিলিয়নের বেশি হতে পারে এবং বাংলাদেশসহ সীমিত সম্পদের দেশগুলোতেই এই বৃদ্ধির হার হবে সবচেয়ে বেশি।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের (আইএআরসি) মতে, এই ধরনের পরিস্থিত সামাল দিতে স্বল্প-আয়ের দেশগুলোর উচিত একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রণয়ন। পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের পাশাপাশি দেশব্যাপী এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচিকে সর্বজনীন করতে হবে।
দ্য ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যানসার কন্ট্রোল (ইউআইসিসি) চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর অর্থ, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে ক্যানসার চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করতে হবে, যাতে রোগীদের ঢাকামুখী হতে না হয়। চিকিৎসাকে সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী করতে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা বা সরকারি ভর্তুকি বাড়ানোর মতো নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জিবিডির পরমার্শ হলো, দেশে ক্যানসারের প্রকৃত চিত্র বোঝার জন্য একটি শক্তিশালী জাতীয় ক্যানসার রেজিস্ট্রি তৈরি করা, যা সঠিক তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশে ক্যানসারের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুধু একটি স্বাস্থ্য সংকট নয়, এটি একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটও বটে। এখনই একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ না করা হলে অদূর ভবিষ্যতে এই নীরব মহামারি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি যেকোনো উন্নয়নের গতিকেও বাধাগ্রস্ত করবে।
বিশ্ব যখন ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ধীরে ধীরে সাফল্য পাচ্ছে, তখন সম্পূর্ণ উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বনামধন্য চিকিৎসা সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে, ১৯৯০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ক্যানসারে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। উন্নত চিকিৎসা, প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং কার্যকর জনস্বাস্থ্য নীতির ফলে এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।
কিন্তু এই বৈশ্বিক চিত্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাস্তবতার কোনো মিল নেই। এখানে ক্যানসার কেবল বাড়ছেই না, বরং এক নীরব মহামারির মতো কেড়ে নিচ্ছে বিপুল সংখ্যক প্রাণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশে নতুন শনাক্ত হওয়া প্রতি তিনজন ক্যানসার রোগীর মধ্যে দুজনেরই মৃত্যু হচ্ছে।
বিশ্ব ও বাংলাদেশের পরিসংখ্যানের বৈপরীত্য এই রোগের ভয়াবহতা এবং দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গভীর সংকটকে একযোগে সামনে নিয়ে এসেছে। এই উদ্বেগজনক বৈপরীত্যের পেছনে লুকিয়ে আছে তামাকের অবাধ ব্যবহার, জীবনযাত্রার পরিবর্তন, পরিবেশ দূষণ এবং একটি ভঙ্গুর স্বাস্থ্যব্যবস্থার জটিল সমীকরণ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অধীন পরিচালিত আন্তর্জাতিক ক্যানসার গবেষণা এজেন্সির (আইএআরসি) ‘গ্লোবোক্যান’-এর ২০২২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্র এক বছরে বাংলাদেশে নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৫৬ জন; একই সময়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৯৮ জন। ২০১৮ সালের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, নতুন রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার বেড়েছে ৮ শতাংশ।
গ্লোবোক্যানের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নতুন আক্রান্তদের প্রায় ৭০ শতাংশই মারা যাচ্ছেন। একই রিপোর্ট অনুসারে, দেশে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মানুষ গত পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন।
আইএআরসি আরও জানাচ্ছে, বাংলাদেশে ৭৫ বছর বয়স হওয়ার আগেই যেকোনো ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সামগ্রিক ঝুঁকি ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি দশজন নাগরিকের মধ্যে একজনের বেশি তার জীবদ্দশায় ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার বাস্তব ঝুঁকিতে রয়েছেন।
গ্লোবোক্যানের তথ্যমতে, পুরুষদের মধ্যে খাদ্যনালী, মুখগহ্বর ও ফুসফুসের ক্যানসারের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি, যার সঙ্গে তামাক ব্যবহারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। অন্যদিকে, নারীদের মধ্যে স্তন ও জরায়ুমুখের ক্যানসারের হার সর্বাধিক, যা জীবনযাত্রার পরিবর্তন ও প্রতিরোধযোগ্য ভাইরাস সংক্রমণকে দায়ী করে।
বৈশ্বিক প্রবণতা থেকে বাংলাদেশের এই বিচ্যুতির পেছনে কোনো একক কারণ নেই। বরং এটি বহুবিধ সামাজিক, পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যখাত সংশ্লিষ্ট সংকটের সম্মিলিত ফল। এর মূলে রয়েছে তামাকের সর্বগ্রাসী থাবা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশের প্রায় ৩৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কোনো না কোনোভাবে তামাক ব্যবহার করেন, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ হারের দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ধূমপানের পাশাপাশি পান, জর্দা ও গুলের মতো ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার মুখগহ্বর, গলা, খাদ্যনালীসহ অন্তত এক ডজন ক্যানসারের ঝুঁকি বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়।
সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় সমাজের সব স্তরেই এর ব্যবহার এক নীরব ঘাতকের ভূমিকা পালন করছে। নারীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির চিত্রটি ভিন্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, জরায়ুমুখের ক্যানসারের ৯৫ শতাংশের বেশি ঘটনার জন্য হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) দায়ী, যা টিকার মাধ্যমে প্রায় সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু সচেতনতার অভাব, সামাজিক জড়তা এবং টিকাদান কর্মসূচির সীমাবদ্ধতার কারণে দেশের বিপুল সংখ্যক নারী এই মারাত্মক ঝুঁকির আওতায় থেকে যাচ্ছেন।
অন্যদিকে, স্তন ক্যানসারের প্রকোপ বৃদ্ধির পেছনে নিয়ন্ত্রণহীন জীবনযাত্রার প্রভাবকেই দায়ী করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। স্থূলতা, বিলম্বে সন্তান ধারণ, শিশুকে বুকের দুধ না খাওয়ানোর প্রবণতা ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এর অন্যতম কারণ।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিবেশ দূষণ ও অনিরাপদ খাদ্যের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থারই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আইএআরসি সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়েছে যে, বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২ দশমিক৫) ফুসফুসের ক্যানসারের একটি অন্যতম কারণ। একে ‘গ্রুপ ১ কার্সিনোজেন’ বা ক্যানসার সৃষ্টিকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলো নিয়মিত বিশ্বের সর্বোচ্চ দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় থাকায় এর বাসিন্দারা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। পাশাপাশি, কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ও খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিনসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিকের মিশ্রণ ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্ক করে আসছে। এই ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির বিপরীতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সংকট মোকাবেলায় অনেকটাই অপ্রস্তুত।
বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন মতে, ক্যানসার মোকাবিলার প্রধান শর্ত হলো প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়। কিন্তু বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে ক্যানসার স্ক্রিনিং বা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা নেই। ফলে, অধিকাংশ রোগী যখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, ততক্ষণে রোগটি আর নিরাময়যোগ্য থাকে না।
দেশের উন্নতমানের ক্যানসার চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় পুরোটাই রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক। ফলে গ্রাম বা মফস্বলের একজন রোগীর পক্ষে ঢাকায় এসে দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। রোগীর সংখ্যার তুলনায় বিশেষজ্ঞ অনকোলজিস্ট, প্রশিক্ষিত নার্স ও রেডিওথেরাপির মতো জরুরি যন্ত্রপাতির সংখ্যাও নগণ্য। ফলে চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা ও আকাশছোঁয়া খরচ একটি মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারকে মুহূর্তেই নিঃস্ব করে দেয়।
‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ (জিবিডি) গবেষণাটি ভবিষ্যতের জন্য আরও বড় সতর্কবার্তা দিয়েছে। তাদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ মিলিয়নের বেশি হতে পারে এবং বাংলাদেশসহ সীমিত সম্পদের দেশগুলোতেই এই বৃদ্ধির হার হবে সবচেয়ে বেশি।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সারের (আইএআরসি) মতে, এই ধরনের পরিস্থিত সামাল দিতে স্বল্প-আয়ের দেশগুলোর উচিত একটি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রণয়ন। পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের পাশাপাশি দেশব্যাপী এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচিকে সর্বজনীন করতে হবে।
দ্য ইউনিয়ন ফর ইন্টারন্যাশনাল ক্যানসার কন্ট্রোল (ইউআইসিসি) চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণে জোর দিয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর অর্থ, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে ক্যানসার চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করতে হবে, যাতে রোগীদের ঢাকামুখী হতে না হয়। চিকিৎসাকে সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী করতে স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা বা সরকারি ভর্তুকি বাড়ানোর মতো নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জিবিডির পরমার্শ হলো, দেশে ক্যানসারের প্রকৃত চিত্র বোঝার জন্য একটি শক্তিশালী জাতীয় ক্যানসার রেজিস্ট্রি তৈরি করা, যা সঠিক তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নীতি নির্ধারণে সহায়তা করবে।
বাংলাদেশে ক্যানসারের এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শুধু একটি স্বাস্থ্য সংকট নয়, এটি একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকটও বটে। এখনই একটি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ না করা হলে অদূর ভবিষ্যতে এই নীরব মহামারি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি যেকোনো উন্নয়নের গতিকেও বাধাগ্রস্ত করবে।
পাকিস্তান বহু দশক ধরে নাগরিকদের ওপর নজরদারি করে আসছে। আর আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তি এখন একে আরও সহজ করেছে।
১৪ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজার দুই বছরের যুদ্ধ শেষ করতে ২০ দফার একটি প্রস্তাব ঘোষণা করেন গত ২৯ সেপ্টেম্বর। পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো— হামাসের হাতে আটক সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করা, যুদ্ধবিরতি এবং গাজার পুনর্গঠন ও প্রশাসনের ভিত্তি তৈরি করা।
১ দিন আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা মেনে নিতে হামাসকে রবিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এই সময়ের মধ্যে হামাস একটি চুক্তি মেনে নিলে গাজায় যুদ্ধ শেষ হবে।
২ দিন আগেযুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে একটি সিনাগগে ইয়োম কিপ্পুর প্রার্থনার সময় হামলায় দুজন ইহুদি নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন। পুলিশ এটিকে ইহুদিবিদ্বেষমূলক সন্ত্রাসী হামলা বলে ঘোষণা করেছে। এ ঘটনায় যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা দ্রুত নিন্দা জানিয়েছেন।
২ দিন আগে