জেনেভা ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পজুড়ে ছড়িয়ে আছে পাঁচ-ছয়তলা ভবন। এ সব ভবনের একেকটি কামরার সাইজ আট ফুট বাই আট ফুট। একেকটি কামরায় থাকেন অন্তত চার-পাঁচজন। ঘিঞ্জি এই ক্যাম্পেই গড়ে উঠেছে ঢাকার অন্যতম ‘মাদক-আখড়া’।
আবদুল্লাহ কাফি
মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প। রাজধানীর এই এলাকা যেন মাদকের ‘হটস্পট’। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিশোর বিক্রি করছে গাঁজা। নারী-শিশুদের হাতে ইয়াবা, হেরোইন। এই মাদক কারবারের পেছনে রয়েছে অদৃশ্য রাজনৈতিক ছায়া আর প্রশাসনিক দুর্বলতা। স্ট্রিম অনুসন্ধান করেছে এই মাদক কারবারের ভেতরকার গল্প।
জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারির সংখ্যা ঠিক কত, এর সঠিক উত্তর পাওয়া মুশকিল। তবে পুলিশ, ক্যাম্পবাসী এবং বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সংখ্যাটা অন্তত তিন হাজার।
জেনেভা ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পজুড়ে ছড়িয়ে আছে পাঁচ-ছয়তলা ভবন। এ সব ভবনের একেকটি কামরার সাইজ আট ফুট বাই আট ফুট। একেকটি কামরায় থাকেন অন্তত চার-পাঁচজন। ঘিঞ্জি এই ক্যাম্পেই গড়ে উঠেছে ঢাকার অন্যতম ‘মাদক-আখড়া’।
আমি গাজর (গাঁজা) এবং বিচি (ইয়াবা) বিক্রি করি। বিভিন্ন রকম বিচি আছে। কোয়ালিটি বুঝে দাম। কোনো কোনো বিচি ২৫০ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না। অনেকগুলো আবার ২০০ টাকা বা তার নিচেও বিক্রি করি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ইয়াবা বিক্রেতা, জেনেভা ক্যাম্প
টানা কয়েকদিন জেনেভা ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পের মুরগিপট্টি, বাবর রোড, আল ফালাহ মডেল ক্লিনিক গলি, হুমায়ূন রোডসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত বিক্রি হয় মাদকদ্রব্য।
গত ৫ জুলাই সন্ধ্যার পর আল ফালাহ মডেল ক্লিনিকের (বর্তমানে বন্ধ) সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বেশ কয়েকজন মানুষ ভিড় করেছেন। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সী ৩০–৩৫ জন লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এই লাইন ঠিক রাখার জন্য হাতে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একজন ‘লাইনম্যান’। জানা গেল, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিরা ইয়াবা কিনতে এসেছেন। পরে এসে কেউ যেন আগে ইয়াবা কিনতে না পারেন, সেটা দেখাশোনাই লাইনম্যানের কাজ।
গাঁজার ক্রেতা–বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে এক পুরিয়া গাঁজা বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। ওজন বিবেচনায় ২৫ গ্রাম গাঁজা ৭ শ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাদকবিক্রেতা স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমি গাজর (গাঁজা) এবং বিচি (ইয়াবা) বিক্রি করি। বিভিন্ন রকম বিচি আছে। কোয়ালিটি বুঝে দাম। কোনো কোনো বিচি ২৫০ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না। অনেকগুলো আবার ২০০ টাকা বা তার নিচেও বিক্রি করি।’
পাইকারি দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই বিক্রেতা বলেন, ‘মিরপুর, রায়েরবাজার, আদাবরসহ আশপাশের অনেক এলাকায় জেনেভা ক্যাম্প থেকে ইয়াবা সরবরাহ করা হয়। এখানে ইয়াবা বিক্রি করা হয় ‘কার্ড’ হিসাবে। এক কার্ডে ১০ হাজার পিস ইয়াবা থাকে। এর দাম পড়ে ১৫ থেকে ১৭ লাখ টাকা। প্রতিটির দাম ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা।’
জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা কীভাবে চলে, তা জানতে স্থানীয় সূত্র, মাদক বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মাদক ব্যবসায়ী স্ট্রিমকে বলেন, ‘মাদক কারবার ঘিরে ক্যাম্পে কয়েক স্তরের কর্মী আছে। কেউ খুচরা বিক্রি করে। কেউ পাইকারি বাজার দেখে। অনেকে শুধু ডেলিভারির কাজ করে।’
ওই মাদক ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘ক্যাম্পের অনেক নারী ও শিশুও এই পেশার সঙ্গে জড়িত। তাদের অনেকে বিভিন্ন জায়গায় মাদক সংরক্ষণ করে। কেউ প্যাকেট করে। আবার অনেকে পাহারা দেয়। এরকম আলাদা আলাদা অনেক সেক্টর আছে। একেকজন একেক সেক্টরে কাজ করে।’
মাদক সিন্ডিকেট আগের মতোই আছে। আগে যারা আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় মাদকের কারবার করত, এখন ভোল পাল্টে তারা বিএনপির ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে সিন্ডিকেট চালাচ্ছে। এই নব্য বিএনপির হাত থেকে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দলের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি নেতা
মাদকের উৎস জানতে চাইলে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন সীমান্ত থেকে ইয়াবা, হেরোইন আসে। এগুলো আনতে কাজ করে বিশেষ দল। বিভিন্ন উপায়ে তারা মাদক আনে ক্যাম্পে।’
ঢাকা-১৩ আসনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে জেনেভা ক্যাম্প। ২০০৮ সালে এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবীর নানক। ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শপথ নেওয়ার পর থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দিতে শুরু করেন নানক। নানকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তাঁর ছেলে সায়েম-উর রহমানও।
ক্যাম্পের স্থানীয় লোকেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ সালে সায়েমের মৃত্যুর পর নানকের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান। ২০১৫ সালে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হন তিনি। পরে ক্যাম্পে মাদক কারবার, জমি দখলসহ নানা অবৈধ কার্যকলাপ শুরু করেন এই মিজান। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে শ্রীমঙ্গল থেকে মিজানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। স্থানীয়রা বলছেন, তিনি এখনও জেলেই আছেন।
২০২০ সালে ওয়ার্ডটির কাউন্সিলর হন নানকের আরেক ঘনিষ্ঠজন সৈয়দ হাসান নুর ইসলাম (রাষ্টন)। এলাকাবাসী জানায়, পদে বসে তিনিও গড়ে তোলেন ‘মাদক সিন্ডিকেট’।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয় জেনেভা ক্যাম্পে। প্রায় প্রতিরাতে ঘটছে গোলাগুলির ঘটনা। আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত সাতজন। আহত হয়েছেন কয়েক শ নারী-পুরুষ।
ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ জিয়া (২৭) জানান, কাউন্সিলর রাষ্টন পালিয়ে যাওয়ার পর আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। নতুন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পের আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিজেদের মধ্যে লড়ছেন তাঁরা।
বর্তমানে পতিত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জায়গা বিএনপি নেতারা দখল করছেন বলে অভিযোগ করেন জিয়া। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক মদদ দিচ্ছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা।’
চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন সীমান্ত থেকে ইয়াবা, হেরোইন আসে। এগুলো আনতে কাজ করে বিশেষ দল। বিভিন্ন উপায়ে তারা মাদক আনে ক্যাম্পে। ক্যাম্প থেকে ছড়ায় আশপাশে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ইয়াবা বিক্রেতা, জেনেভা ক্যাম্প
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহাম্মদপুর এলাকার বিএনপির এক নেতা স্ট্রিমকে বলেন, ‘মাদক সিন্ডিকেট আগের মতোই আছে। আগে যারা আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় মাদকের কারবার করতো, এখন ভোল পাল্টে তারা বিএনপির ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে সিন্ডিকেট চালাচ্ছে। এই নব্য বিএনপির হাত থেকে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দলের উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, এই সিন্ডিকেট এত ভয়ংকর যে, আমি পত্রিকায় আমার নাম প্রকাশ করতে পারছি না। এরা যখন যাকে ইচ্ছা, ধরে, মারে। যা ইচ্ছা তাই করে। পুলিশ প্রশাসনও বিষয়টা নিয়ে কাজ করছে।’
জেনেভা ক্যাম্পের গলিগুলো খুব ছোট তাই পুলিশি অভিযানের সময় বেশিরভাগ মাদক কারবারি সহজেই পালিয়ে যায় বলে উল্লেখ করেছেেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও জোনের উপ–পুলিশ কমিশনার রুহুল কবির খান। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘মাদক তো আসলে নির্মূল করা যায় না, নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। পুলিশের পাশাপাশি মাঠে সেনাবাহিনী, র্যাবও আছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’
জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা, বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন মাদক বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক মদদে জেনেভা ক্যাম্পে গড়ে উঠেছে ১২টিরও বেশি গ্যাং। মূলত মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ঘিরে এই গ্যাংগুলোর জন্ম।
একজন মাদক কারবারি বলেন, ‘জেনেভা ক্যাম্পে শীর্ষ মাদক কারবারিদের অন্যতম ভূঁইয়া সোহেল ওরফে বুনিয়া সোহেল। ইয়াবার জায়গা দখল করে হেরোইনের ব্যবসা গড়েছেন তিনি। অন্যদিকে ইয়াবার ব্যবসা ধরে রাখতে চান সেলিম ওরফে চুয়া সেলিম।’
ওই মাদক কারবারি আরও জানান, ক্যাম্পে আরও আছে আছে পিচ্চি রাজা গ্যাং, সৈয়দপুরিয়া গ্যাং ও শান্তি গ্রুপ গ্যাং। এসব গ্যাংয়ের আশ্রয়ে আছে আরও অনেক ছোট ছোট গ্যাং। মাদক ব্যবসার সঙ্গে ভাড়াটে ‘গুন্ডা’ হিসাবেও কাজ করে এসব গ্যাং।’
ক্যাম্পের বাসিন্দা সাজিদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে কথা বললে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। আপনি যদি প্রতিবাদ করেন, তাহলে আপনার ঘরে ইয়াবা রেখে পুলিশ কল করবে ব্যবসায়ীরা। পুলিশ এসে আপনাকে উঠিয়ে নেবে। এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে।’
৫ জুলাই আল ফালাহ মডেল ক্লিনিকের গলিতে যান এই প্রতিবেদক। উদ্দেশ্য, আশুরা নিয়ে ভিডিও রিপোর্ট এবং মাদক ব্যববসার খোঁজ নেওয়া। ক্লিনিকের বিপরীত দিকের ইমামবাড়ায় পৌঁছলে প্রতিবেদককে হঠাৎ ঘিরে ফেলে কয়েকজন। তাঁরা হাত থেকে কেড়ে নেয় ক্যামেরা। এসময় প্রতিবেদকে বিভিন্নভাবে হেনস্তাসহ করাসহ গায়ে হাত তোলেন কয়েকজন কারবারি।
জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবারিরা অভিযানকারী দলকে বলেন ‘ইফতারি টিম’। ইফতারি টিমে আছে কারবারিদের লোক। ফলে অভিযান শুরুর আগেই খবর পৌঁছে যায় তাঁদের কাছে। এই ঘটনার সত্যতা মিলেছে কর্তৃপক্ষের বক্তব্যেও।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো উত্তরের উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমাদের জনবল কম। অভিযানে গেলে অন্য বাহিনীর সহযোগিতা নিতে হয়। কিন্তু সহযোগিতা নিলেই ফাঁস হয়ে যায় তথ্য। পালিয়ে যায় কারবারিরা। ধরা পড়ে খুচরা বিক্রেতা।’
জেনেভা ক্যাম্পের গলিগুলো খুব ছোট, তাই পুলিশি অভিযানের সময় বেশিরভাগ মাদক কারবারি সহজেই পালিয়ে যায়। রুহুল কবির খান, উপ–পুলিশ কমিশনার, তেজগাঁও জোন, ডিএমপি
সারা দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন প্রায় তিন হাজার। এই জনবল নিয়েই চলছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। তাই সতর্কতার সঙ্গে চালাতে হয় অভিযান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (নিরোধ শিক্ষা) ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘এত অল্পসংখ্যক লোক নিয়ে আমরা অভিযান চালাতে পারি না। ৮-১০ জনের টিম নিয়ে অভিযানে গেলে কারবারিদের হামলার মুখে পড়তে হয়। কিছুদিন আগে জেনেভা ক্যাম্পে কারবারিদের হামলায় আহত হয়েছেন আমাদের এক কর্মচারী।’
এই অবস্থায় অধিদপ্তর কী করবে প্রশ্নে মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘অনেক কারবারির কাছে অস্ত্র আছে। তাদের অস্ত্রের মুখে আমরা টিকতে পারি না। তবুও অভিযান চলমান রেখেছি। সম্প্রতি আমরা অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছি। অস্ত্র কেনা এবং প্রশিক্ষণের পর আশা করি আরও ভালো করতে পারব।’
মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান স্ট্রিমকে বলেন, ‘মাদকের জন্য আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জেনেভা ক্যাম্পে খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। অভিযুক্তদের আটক করে জেলে পাঠিয়েছি। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান আছে।’
চলমান অভিযানের মধ্যেও মাদক ব্যবসা কীভাবে চলছে, এমন প্রশ্নে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাজ গ্রেপ্তার করা। পরে কোর্ট যদি তাঁদের জামিনে ছেড়ে দেয়, তাহলে আমরা কী করব?’
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, শুধু গ্রেপ্তার বা সাজা নয়, মাদক কারবারিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে প্রয়োজন চিকিৎসা ও পুনর্বাসন।
বাংলাদেশে মাদক-বিরোধী কার্যক্রম চালায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নোঙর। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক রাশেদ দিদারুল স্ট্রিমকে বলেন, ‘বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর ভেতর সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছি আমরা। কিন্তু তেমন পরিবর্তন আসেনি। যাঁরা কারবারের সঙ্গে জাড়িত, তাঁদের পুনর্বাসন করতে পারলে সংখ্যাটা কমতে পারে।’
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক আহমেদ হেলাল স্ট্রিমকে বলেন, ‘যাঁরা মাদক বিক্রি করেন, তাঁদের বড় অংশ মাদক গ্রহণও করেন। ফলে তাঁদের অপরাধী ভাবার সঙ্গে সঙ্গে রোগীও ভাবতে হবে। সবার আগে তাঁদের পরিপূর্ণ চিকিৎসা দিতে হবে। এরপর পুনর্বাসন করে সম্মানজন পেশায় নিয়োগ দিলে অন্ধকার জগৎ থেকে তাঁরা নিশ্চয়ই ফিরে আসবেন।’
মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প। রাজধানীর এই এলাকা যেন মাদকের ‘হটস্পট’। রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিশোর বিক্রি করছে গাঁজা। নারী-শিশুদের হাতে ইয়াবা, হেরোইন। এই মাদক কারবারের পেছনে রয়েছে অদৃশ্য রাজনৈতিক ছায়া আর প্রশাসনিক দুর্বলতা। স্ট্রিম অনুসন্ধান করেছে এই মাদক কারবারের ভেতরকার গল্প।
জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারির সংখ্যা ঠিক কত, এর সঠিক উত্তর পাওয়া মুশকিল। তবে পুলিশ, ক্যাম্পবাসী এবং বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সংখ্যাটা অন্তত তিন হাজার।
জেনেভা ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পজুড়ে ছড়িয়ে আছে পাঁচ-ছয়তলা ভবন। এ সব ভবনের একেকটি কামরার সাইজ আট ফুট বাই আট ফুট। একেকটি কামরায় থাকেন অন্তত চার-পাঁচজন। ঘিঞ্জি এই ক্যাম্পেই গড়ে উঠেছে ঢাকার অন্যতম ‘মাদক-আখড়া’।
আমি গাজর (গাঁজা) এবং বিচি (ইয়াবা) বিক্রি করি। বিভিন্ন রকম বিচি আছে। কোয়ালিটি বুঝে দাম। কোনো কোনো বিচি ২৫০ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না। অনেকগুলো আবার ২০০ টাকা বা তার নিচেও বিক্রি করি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ইয়াবা বিক্রেতা, জেনেভা ক্যাম্প
টানা কয়েকদিন জেনেভা ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পের মুরগিপট্টি, বাবর রোড, আল ফালাহ মডেল ক্লিনিক গলি, হুমায়ূন রোডসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত বিক্রি হয় মাদকদ্রব্য।
গত ৫ জুলাই সন্ধ্যার পর আল ফালাহ মডেল ক্লিনিকের (বর্তমানে বন্ধ) সামনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বেশ কয়েকজন মানুষ ভিড় করেছেন। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন বয়সী ৩০–৩৫ জন লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এই লাইন ঠিক রাখার জন্য হাতে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন একজন ‘লাইনম্যান’। জানা গেল, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিরা ইয়াবা কিনতে এসেছেন। পরে এসে কেউ যেন আগে ইয়াবা কিনতে না পারেন, সেটা দেখাশোনাই লাইনম্যানের কাজ।
গাঁজার ক্রেতা–বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে এক পুরিয়া গাঁজা বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। ওজন বিবেচনায় ২৫ গ্রাম গাঁজা ৭ শ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাদকবিক্রেতা স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমি গাজর (গাঁজা) এবং বিচি (ইয়াবা) বিক্রি করি। বিভিন্ন রকম বিচি আছে। কোয়ালিটি বুঝে দাম। কোনো কোনো বিচি ২৫০ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না। অনেকগুলো আবার ২০০ টাকা বা তার নিচেও বিক্রি করি।’
পাইকারি দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই বিক্রেতা বলেন, ‘মিরপুর, রায়েরবাজার, আদাবরসহ আশপাশের অনেক এলাকায় জেনেভা ক্যাম্প থেকে ইয়াবা সরবরাহ করা হয়। এখানে ইয়াবা বিক্রি করা হয় ‘কার্ড’ হিসাবে। এক কার্ডে ১০ হাজার পিস ইয়াবা থাকে। এর দাম পড়ে ১৫ থেকে ১৭ লাখ টাকা। প্রতিটির দাম ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা।’
জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা কীভাবে চলে, তা জানতে স্থানীয় সূত্র, মাদক বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মাদক ব্যবসায়ী স্ট্রিমকে বলেন, ‘মাদক কারবার ঘিরে ক্যাম্পে কয়েক স্তরের কর্মী আছে। কেউ খুচরা বিক্রি করে। কেউ পাইকারি বাজার দেখে। অনেকে শুধু ডেলিভারির কাজ করে।’
ওই মাদক ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘ক্যাম্পের অনেক নারী ও শিশুও এই পেশার সঙ্গে জড়িত। তাদের অনেকে বিভিন্ন জায়গায় মাদক সংরক্ষণ করে। কেউ প্যাকেট করে। আবার অনেকে পাহারা দেয়। এরকম আলাদা আলাদা অনেক সেক্টর আছে। একেকজন একেক সেক্টরে কাজ করে।’
মাদক সিন্ডিকেট আগের মতোই আছে। আগে যারা আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় মাদকের কারবার করত, এখন ভোল পাল্টে তারা বিএনপির ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে সিন্ডিকেট চালাচ্ছে। এই নব্য বিএনপির হাত থেকে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দলের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি নেতা
মাদকের উৎস জানতে চাইলে ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন সীমান্ত থেকে ইয়াবা, হেরোইন আসে। এগুলো আনতে কাজ করে বিশেষ দল। বিভিন্ন উপায়ে তারা মাদক আনে ক্যাম্পে।’
ঢাকা-১৩ আসনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে জেনেভা ক্যাম্প। ২০০৮ সালে এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবীর নানক। ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শপথ নেওয়ার পর থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দিতে শুরু করেন নানক। নানকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তাঁর ছেলে সায়েম-উর রহমানও।
ক্যাম্পের স্থানীয় লোকেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ সালে সায়েমের মৃত্যুর পর নানকের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান। ২০১৫ সালে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হন তিনি। পরে ক্যাম্পে মাদক কারবার, জমি দখলসহ নানা অবৈধ কার্যকলাপ শুরু করেন এই মিজান। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে শ্রীমঙ্গল থেকে মিজানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। স্থানীয়রা বলছেন, তিনি এখনও জেলেই আছেন।
২০২০ সালে ওয়ার্ডটির কাউন্সিলর হন নানকের আরেক ঘনিষ্ঠজন সৈয়দ হাসান নুর ইসলাম (রাষ্টন)। এলাকাবাসী জানায়, পদে বসে তিনিও গড়ে তোলেন ‘মাদক সিন্ডিকেট’।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয় জেনেভা ক্যাম্পে। প্রায় প্রতিরাতে ঘটছে গোলাগুলির ঘটনা। আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত সাতজন। আহত হয়েছেন কয়েক শ নারী-পুরুষ।
ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ জিয়া (২৭) জানান, কাউন্সিলর রাষ্টন পালিয়ে যাওয়ার পর আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। নতুন পরিস্থিতিতে ক্যাম্পের আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিজেদের মধ্যে লড়ছেন তাঁরা।
বর্তমানে পতিত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জায়গা বিএনপি নেতারা দখল করছেন বলে অভিযোগ করেন জিয়া। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক মদদ দিচ্ছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা।’
চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন সীমান্ত থেকে ইয়াবা, হেরোইন আসে। এগুলো আনতে কাজ করে বিশেষ দল। বিভিন্ন উপায়ে তারা মাদক আনে ক্যাম্পে। ক্যাম্প থেকে ছড়ায় আশপাশে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ইয়াবা বিক্রেতা, জেনেভা ক্যাম্প
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহাম্মদপুর এলাকার বিএনপির এক নেতা স্ট্রিমকে বলেন, ‘মাদক সিন্ডিকেট আগের মতোই আছে। আগে যারা আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় মাদকের কারবার করতো, এখন ভোল পাল্টে তারা বিএনপির ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে সিন্ডিকেট চালাচ্ছে। এই নব্য বিএনপির হাত থেকে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দলের উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
তিনি আরও বলেন, এই সিন্ডিকেট এত ভয়ংকর যে, আমি পত্রিকায় আমার নাম প্রকাশ করতে পারছি না। এরা যখন যাকে ইচ্ছা, ধরে, মারে। যা ইচ্ছা তাই করে। পুলিশ প্রশাসনও বিষয়টা নিয়ে কাজ করছে।’
জেনেভা ক্যাম্পের গলিগুলো খুব ছোট তাই পুলিশি অভিযানের সময় বেশিরভাগ মাদক কারবারি সহজেই পালিয়ে যায় বলে উল্লেখ করেছেেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও জোনের উপ–পুলিশ কমিশনার রুহুল কবির খান। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘মাদক তো আসলে নির্মূল করা যায় না, নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। পুলিশের পাশাপাশি মাঠে সেনাবাহিনী, র্যাবও আছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’
জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দা, বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন মাদক বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক মদদে জেনেভা ক্যাম্পে গড়ে উঠেছে ১২টিরও বেশি গ্যাং। মূলত মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ঘিরে এই গ্যাংগুলোর জন্ম।
একজন মাদক কারবারি বলেন, ‘জেনেভা ক্যাম্পে শীর্ষ মাদক কারবারিদের অন্যতম ভূঁইয়া সোহেল ওরফে বুনিয়া সোহেল। ইয়াবার জায়গা দখল করে হেরোইনের ব্যবসা গড়েছেন তিনি। অন্যদিকে ইয়াবার ব্যবসা ধরে রাখতে চান সেলিম ওরফে চুয়া সেলিম।’
ওই মাদক কারবারি আরও জানান, ক্যাম্পে আরও আছে আছে পিচ্চি রাজা গ্যাং, সৈয়দপুরিয়া গ্যাং ও শান্তি গ্রুপ গ্যাং। এসব গ্যাংয়ের আশ্রয়ে আছে আরও অনেক ছোট ছোট গ্যাং। মাদক ব্যবসার সঙ্গে ভাড়াটে ‘গুন্ডা’ হিসাবেও কাজ করে এসব গ্যাং।’
ক্যাম্পের বাসিন্দা সাজিদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে কথা বললে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। আপনি যদি প্রতিবাদ করেন, তাহলে আপনার ঘরে ইয়াবা রেখে পুলিশ কল করবে ব্যবসায়ীরা। পুলিশ এসে আপনাকে উঠিয়ে নেবে। এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে।’
৫ জুলাই আল ফালাহ মডেল ক্লিনিকের গলিতে যান এই প্রতিবেদক। উদ্দেশ্য, আশুরা নিয়ে ভিডিও রিপোর্ট এবং মাদক ব্যববসার খোঁজ নেওয়া। ক্লিনিকের বিপরীত দিকের ইমামবাড়ায় পৌঁছলে প্রতিবেদককে হঠাৎ ঘিরে ফেলে কয়েকজন। তাঁরা হাত থেকে কেড়ে নেয় ক্যামেরা। এসময় প্রতিবেদকে বিভিন্নভাবে হেনস্তাসহ করাসহ গায়ে হাত তোলেন কয়েকজন কারবারি।
জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবারিরা অভিযানকারী দলকে বলেন ‘ইফতারি টিম’। ইফতারি টিমে আছে কারবারিদের লোক। ফলে অভিযান শুরুর আগেই খবর পৌঁছে যায় তাঁদের কাছে। এই ঘটনার সত্যতা মিলেছে কর্তৃপক্ষের বক্তব্যেও।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা মেট্রো উত্তরের উপপরিচালক শামীম আহম্মেদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘আমাদের জনবল কম। অভিযানে গেলে অন্য বাহিনীর সহযোগিতা নিতে হয়। কিন্তু সহযোগিতা নিলেই ফাঁস হয়ে যায় তথ্য। পালিয়ে যায় কারবারিরা। ধরা পড়ে খুচরা বিক্রেতা।’
জেনেভা ক্যাম্পের গলিগুলো খুব ছোট, তাই পুলিশি অভিযানের সময় বেশিরভাগ মাদক কারবারি সহজেই পালিয়ে যায়। রুহুল কবির খান, উপ–পুলিশ কমিশনার, তেজগাঁও জোন, ডিএমপি
সারা দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন প্রায় তিন হাজার। এই জনবল নিয়েই চলছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। তাই সতর্কতার সঙ্গে চালাতে হয় অভিযান। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (নিরোধ শিক্ষা) ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ স্ট্রিমকে বলেন, ‘এত অল্পসংখ্যক লোক নিয়ে আমরা অভিযান চালাতে পারি না। ৮-১০ জনের টিম নিয়ে অভিযানে গেলে কারবারিদের হামলার মুখে পড়তে হয়। কিছুদিন আগে জেনেভা ক্যাম্পে কারবারিদের হামলায় আহত হয়েছেন আমাদের এক কর্মচারী।’
এই অবস্থায় অধিদপ্তর কী করবে প্রশ্নে মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘অনেক কারবারির কাছে অস্ত্র আছে। তাদের অস্ত্রের মুখে আমরা টিকতে পারি না। তবুও অভিযান চলমান রেখেছি। সম্প্রতি আমরা অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছি। অস্ত্র কেনা এবং প্রশিক্ষণের পর আশা করি আরও ভালো করতে পারব।’
মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হাফিজুর রহমান স্ট্রিমকে বলেন, ‘মাদকের জন্য আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জেনেভা ক্যাম্পে খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। অভিযুক্তদের আটক করে জেলে পাঠিয়েছি। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান আছে।’
চলমান অভিযানের মধ্যেও মাদক ব্যবসা কীভাবে চলছে, এমন প্রশ্নে হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাজ গ্রেপ্তার করা। পরে কোর্ট যদি তাঁদের জামিনে ছেড়ে দেয়, তাহলে আমরা কী করব?’
বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, শুধু গ্রেপ্তার বা সাজা নয়, মাদক কারবারিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে প্রয়োজন চিকিৎসা ও পুনর্বাসন।
বাংলাদেশে মাদক-বিরোধী কার্যক্রম চালায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নোঙর। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক রাশেদ দিদারুল স্ট্রিমকে বলেন, ‘বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর ভেতর সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছি আমরা। কিন্তু তেমন পরিবর্তন আসেনি। যাঁরা কারবারের সঙ্গে জাড়িত, তাঁদের পুনর্বাসন করতে পারলে সংখ্যাটা কমতে পারে।’
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক আহমেদ হেলাল স্ট্রিমকে বলেন, ‘যাঁরা মাদক বিক্রি করেন, তাঁদের বড় অংশ মাদক গ্রহণও করেন। ফলে তাঁদের অপরাধী ভাবার সঙ্গে সঙ্গে রোগীও ভাবতে হবে। সবার আগে তাঁদের পরিপূর্ণ চিকিৎসা দিতে হবে। এরপর পুনর্বাসন করে সম্মানজন পেশায় নিয়োগ দিলে অন্ধকার জগৎ থেকে তাঁরা নিশ্চয়ই ফিরে আসবেন।’
হাজারো মুসলমান পরিবারকে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে উচ্ছেদের অভিযোগ উঠছে ভারতের আসাম রাজ্যে। বিজেপি শাসিত এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ঘৃণা ও মেরুকরণের রাজনীতির মাধ্যমে একটি গোষ্ঠীকে বিপদের মুখে ফেলছেন, এমন মনে করছেন রাজ্যটির নাগরিক সমাজের বড় অংশ।
১ দিন আগেবাংলাভাষীদের ‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটক ও বাংলাদেশে ‘ঘাড়ধাক্কা’ দেওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। ঘটনার শুরু দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকের আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যমে।
২ দিন আগেবছরের পর বছর যায়, বেসরকারি খাতে সরকারের পক্ষ থেকে মজুরির হার হালনাগাদ করা হয় না। অন্যদিকে স্বাধীনতার পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আট দফায় নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা করা হয়। আরও একটি পে-স্কেল ঘোষণার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
৩ দিন আগেআমাদের ছেলে সূর্য সময় বিশ্বাস। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। আর একই বিদ্যায়তনের কলেজ শাখায় শিক্ষকতা করি আমি। প্রতিদিন ছেলেকে আমিই স্কুলে নিয়ে আসি। তবে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার আগের দিন (২০ জুলাই) সূর্য স্কুলে যায়নি।
৭ দিন আগে