সিলেটের পাথর, সাদাপাথর
সিলেটের আটটি পাথর কোয়ারি থেকে দেশের চাহিদার সামান্যই আসে। বাকি পাথর বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। আর এই পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে গত ১০ বছরে অন্তত ১১০ জন শ্রমিক মারা গেছেন।
মাইদুল ইসলাম
সিলেটসহ সারা দেশের পাথর কোয়ারি থেকে সরকার রাজস্ব পায় বছরে সাড়ে ৬ কোটি টাকারও কম। অন্যদিকে শুধু সিলেটেই পর্যটন খাতে বছরে ব্যবসা হয় হাজার কোটি টাকার বেশি। সিলেটের পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ পাথর। সেই পাথর সরিয়ে ফেলায় পর্যটন স্পটগুলো সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। ফলে পর্যটন খাতের বিশাল ব্যবসা হুমকির মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান ‘জল-বিছানার শয্যা’-খ্যাত সাদা পাথর, গোয়াইনঘাটের জলাবন রাতারগুল, জাফলং ও বিছনাকান্দি। জেলার এসব স্পটে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ লাখ পর্যটক ঘুরতে যান। শুধু গত ঈদে সিলেটের পর্যটন খাতে হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হয়েছে।
সিলেটের দর্শনীয় এ সব স্থান সরকার নির্ধারিত পাথর কোয়ারির অংশ নয়। এ সবের বাইরে সিলেটে আটটি পাথরের কোয়ারি আছে। এ সব কোয়ারি থেকে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত পাথর উত্তোলন করা হচ্ছিল। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে পাথর তোলার কারণে কোয়ারিগুলোর পাথর প্রায় শেষ হয়ে গেছে। ফলে দর্শনীয় স্থানগুলো থেকে পাথর উত্তোলন করা শুরু হয়। এ সব স্থানের পাথরও শেষের দিকে। ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর এলাকার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।
পাথর সরিয়ে ফেলার কারণে পলিপ্রবাহের ভারসাম্য ভেঙে যাবে। এর ফলে পদ্মা-যমুনার অববাহিকায় পলির বদলে বেশি করে বালু ঢুকে পড়বে। এভাবে ধানের ফলন সরাসরি প্রভাবিত হবে। শুধু ধান নয়, প্রায় সব ধরনের শস্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
যে সব পাথর কোয়ারি সরকার ইজারা দিতো, সেখান থেকে সরকারের আয় সামান্যই। এই সামান্য আয়ের বিনিময়ে পর্যটন খাতের বিশাল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে এবং পাথরের কারবারিরা অনায়াসে কোয়ারির পাথর বলে দর্শনীয় স্থানের পাথর স্থানান্তরের সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনের এক উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, এভাবে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে নষ্ট হয়েছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং পর্যটনশিল্প।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের পাথর কোয়ারিগুলো থেকে যে পরিমাণ পাথর উত্তোলন করা হয়, তাতে মোট চাহিদার মাত্র সাত শতাংশ পূরণ হয়। শুধু সিলেট থেকে নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানের ৫১টি কোয়ারি থেকে চাহিদার এই সাত শতাংশ পাথর সংগ্রহ করা হয়। সিলেটের আটটি পাথর কোয়ারি থেকে দেশের চাহিদার সামান্যই আসে। বাকি পাথর বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। আর এই পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে গত ১০ বছরে অন্তত ১১০ জন শ্রমিক মারা গেছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে চেষ্টা চালিয়েছে, এখনো চালাচ্ছে। কিন্তু জনগণের পক্ষ থেকে সহযোগিতা না এলে আসলে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব হবে না। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়
পাথর উত্তোলনের কারণে সিলেট ছাড়াও দেশের অন্য এলাকাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ বলেন, প্রকৃতিকে তার মতো থাকতে দেওয়া জরুরি। যদি নির্বিচারে আপস্ট্রিম (উজান) থেকে পাথর তোলা হয়, তাহলে দুই ধরনের ক্ষতি হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তাঁর মতে, মূলত পাথরগুলো পর্যায়ক্রমে প্রাকৃতিক নিয়মে ভেঙ্গে পলিতে রূপান্তরিত হয়। সেই পলি পানির প্রবাহের সঙ্গে মিশে কৃষিজমিতে গিয়ে পৌঁছায়। উজানের সব পাথর সরিয়ে ফেলা হলে পলি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে, ফলে প্রাকৃতিক উর্বরতা হারাবে কৃষিজমি।'
দ্বিতীয় ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, 'পাথর সরিয়ে ফেলার কারণে পলিপ্রবাহের ভারসাম্য ভেঙে যাবে। এর ফলে পদ্মা-যমুনার অববাহিকায় পলির বদলে বেশি করে বালু ঢুকে পড়বে। এভাবে ধানের ফলন সরাসরি প্রভাবিত হবে। শুধু ধান নয়, প্রায় সব ধরনের শস্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'
সিলেটের ‘সাদাপাথর’ নামে পরিচিত যে এলাকাটি সেটি জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে। এর বাইরে জাফলং, বিছনাকান্দি, উৎমাছড়াসহ আরও ১০টি জায়গায় পাথর আছে। কিন্তু এগুলো সরকারি তালিকাভুক্ত পাথর কোয়ারি নয়।
এ সব এলাকার বাইরে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে আটটি পাথর কোয়ারি আছে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে এ সব কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়নি।
কোয়ারি এবং এসব পাথরসমৃদ্ধ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই পাথর লুটপাট হয়ে আসছে। অভিযোগ আছে, জাতীয় রাজনীতিতে অনৈক্য থাকলেও সিলেটের স্থানীয় রাজনীতিকেরা পাথর উত্তোলনের ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে ঐকমত্য পোষণ করে এসেছেন। ফলে ধীরে ধীরে সিলেটের আটটি পাথর কোয়ারি থেকে অন্তত ৮০ ভাগ পাথর উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, শুধু গত এক বছরেই সাদাপাথর এলাকার প্রায় সব পাথর সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ফলে নষ্ট হয়েছে নদীর গতিপথ, বনাঞ্চল এবং ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। অথচ দেশের চাহিদার সিংহভাগ পাথর বিদেশ থেকেই আমদানি করা হয়।
দেশের চাহিদার ৯৩ শতাংশের বেশি পাথর আমদানি করা হয় চীন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, ভুটান, কাতার, ওমান, দুবাই থেকে। এ সব দেশ থেকে ২০১৮–১৯ অর্থবছরে ২ কোটি ১১ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি পাথর আমদানি করা হয়। এর পরের অর্থবছরে (২০১৯–২০) আমদানি করা হয় ১৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
ফলে চাহিদার কারণে দেশের পাথরকোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনে মনোযোগী হয় স্বার্থান্বেষী মহল। স্থানীয় সরকার ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাক র্মীদের চাপে পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ইজারা দেওয়া পাথর কোয়ারিগুলো থেকে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে সরকার রাজস্ব আদায় করেছে সাড়ে ৩৮ কোটি টাকা।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ছয় বছরে ৪০ কোটির কম আয়ের জন্য সরকারের দেওয়া ইজারা থেকে নদীব্যবস্থার গতিপ্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, বাধাগ্রস্ত হয়েছে প্রাকৃতিক প্রবাহ, বনাঞ্চল নষ্ট হয়েছে নষ্ট হয়েছে আর পাথরের কোয়ারিতে কাজ করতে গিয়ে মারা গেছে অন্তত ১০৯ জন শ্রমিক।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে পাথর কোয়ারির ইজারা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কোন শ্রমিক মারা যায়নি বলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা গেছে।
এসব ঘটনার পর ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সরকারের পক্ষ থেকে পাথর কোয়ারির ইজারা বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত বছর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পর আবার ইজারার জন্য পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
চলতি বছর নতুন করে পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়ার পর আরও দুজন শ্রমিক মারা গেছে বলে সরকারি নথিপত্রে উল্লেখ আছে।
২০১১ সালে সিলেটের ডাউকি নদীতে একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে উচ্চ আদালত এ সেতুর অবিলম্বে অপসারণ এবং ওই নদীকে পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ নদীর ওপর এ ধরনের কোনো নির্মাণ বা দখলদারত্ব করতে দেওয়া যাবে না বরে উল্লেখ করেন আদালত।
ওই আদেশে ডাউকির পাশাপাশি জাফলংয়ের খাসিয়াপুঞ্জি থেকে ডাউকি–জাফলং এবং পিয়াইন নদীর মধ্যবর্তী ১৪ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার এলাকাকে ইসিএ ঘোষণা করা হয়। উল্লেখ্য, ইসিএভুক্ত এলাকায় যান্ত্রিক, কায়িক বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাথরসহ অন্যান্য খনিজ সম্পদ উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষা একে অপরের শত্রু নয়। কঠোর সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবেশ নষ্ট না করে যদি টেকসই উন্নয়নের নীতিমালা মেনে উন্নয়ন কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়, তবে সেই ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার। তবে এমন বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নেওয়া সবসময় সহজ বা সরল হয় না। কোনো কার্যক্রম চালু রাখলে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে, আবার সেটি বন্ধ করে দিলে অর্থনৈতিক স্বার্থে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তবে সন্দেহের পরিস্থিতিতে পরিবেশ সুরক্ষাকেই অর্থনৈতিক স্বার্থের ওপর অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সমাধান খুব সহজ— আইন মেনে চলা এবং মানুষকে সচেতন করা। সিলেটের পাথর তো সরকারি ও বেসরকারি মিলেই তোলা হচ্ছে। বিদ্যমান আইন আছে, সেটাকে কার্যকর করতে হবে। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে যে আমরা প্রকৃতিকে কতটা ধ্বংস করছি। অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা অনুসারে, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অবস্থাগত ও পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্পকে চার শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো— সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। এক্ষেত্রে শিল্প প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পের কার্যক্রমের প্রকৃতি এবং এসব প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প থেকে সম্ভাব্য দূষণ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০০৮ সালের ১৪ মে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে দেশের সব পাথর কোয়ারিকে কমলা ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়। পরে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এ এটি কমলা ক্যাটাগরিতে সন্নিবেশ করা হয়। বিধিমালায় কমলা ক্যাটাগরিতে মোট ১১৩ ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পকে তালিকাভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ‘সকল কোয়ারি’ আছে তালিকার ৬৩ নম্বরে।
এই বিধিমালা অনুসারে, পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের ক্ষেত্রে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব আছে। তবে এই ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব।
আইন আছে, উচ্চ আদালতও প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ এ সব এলাকার সুরক্ষার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। তবে শুধু আইন, বিধিমালা কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা শক্তি প্রয়োগ করে লুটপাট বা প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব না বলে মন্তব্য করেছেন— খন্দকার হাসান মাহমুদ।
ইজারা দেওয়ার বিষয়টি যথাযথ যাচাইবাছাই শেষে সরকার পুনর্বিবেচনা করতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি। হাসান মাহমুদ বলেন, মানুষের জীবিকার জন্য সামান্য পরিমাণ পাথর উত্তোলন করা যেতো। কিন্তু আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার যেভাবে পাথর উত্তোলন করা হয়েছে, তাতে আসলে কিছুই অবশিষ্ট নেই। পাথর উত্তোলনকে বাণীজ্যিকীকরণ করা হয়েছে। সরকারের নজরদারি থাকলে এমনটি হতো না।
হাসান মাহমুদ বলেন, ‘সমাধান খুব সহজ— আইন মেনে চলা এবং মানুষকে সচেতন করা। সিলেটের পাথর তো সরকারি ও বেসরকারি মিলেই তোলা হচ্ছে। বিদ্যমান আইন আছে, সেটাকে কার্যকর করতে হবে। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে যে আমরা প্রকৃতিকে কতটা ধ্বংস করছি। এমনকি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও আমরা এটা বুঝতে পারি। ইসলাম, খ্রিস্টান, ইহুদি— সব বড় ধর্মই বলে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে মানুষ ধ্বংস করতে পারে না। ফলে প্রকৃতিকে আমরা ব্যবহার করব, কিন্তু শোষণ করব না।’
আন্তর্জাতিকভাবেও প্রকৃতি রক্ষার সতর্কতার কথা বলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন খন্দকার হাসান মাহমুদ। ইউএনডিপির ভাষ্য উপস্থাপন করে তিনি বলেন, ‘আমি প্রাকৃতিক উৎস ব্যবহার করবো, আর এটাও নিশ্চিত করব যে অন্তত তিন প্রজন্ম পরেও যেন সেই উৎসটি জীবন্ত থাকে। যদি এটুকু সচেতনতা আমাদের না থাকে, কেবল আইন দিয়েই এই সংকট সমাধান হবে না।’ তবে সচেতনতার মাধ্যমে কাজ না হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ করার প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান স্ট্রিমকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে চেষ্টা চালিয়েছে, এখনো চালাচ্ছে। কিন্তু জনগণের পক্ষ থেকে সহযোগিতা না এলে আসলে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব হবে না।’
সিলেটসহ সারা দেশের পাথর কোয়ারি থেকে সরকার রাজস্ব পায় বছরে সাড়ে ৬ কোটি টাকারও কম। অন্যদিকে শুধু সিলেটেই পর্যটন খাতে বছরে ব্যবসা হয় হাজার কোটি টাকার বেশি। সিলেটের পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ পাথর। সেই পাথর সরিয়ে ফেলায় পর্যটন স্পটগুলো সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। ফলে পর্যটন খাতের বিশাল ব্যবসা হুমকির মুখে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, জেলার অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান ‘জল-বিছানার শয্যা’-খ্যাত সাদা পাথর, গোয়াইনঘাটের জলাবন রাতারগুল, জাফলং ও বিছনাকান্দি। জেলার এসব স্পটে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ লাখ পর্যটক ঘুরতে যান। শুধু গত ঈদে সিলেটের পর্যটন খাতে হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যবসা হয়েছে।
সিলেটের দর্শনীয় এ সব স্থান সরকার নির্ধারিত পাথর কোয়ারির অংশ নয়। এ সবের বাইরে সিলেটে আটটি পাথরের কোয়ারি আছে। এ সব কোয়ারি থেকে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত পাথর উত্তোলন করা হচ্ছিল। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে পাথর তোলার কারণে কোয়ারিগুলোর পাথর প্রায় শেষ হয়ে গেছে। ফলে দর্শনীয় স্থানগুলো থেকে পাথর উত্তোলন করা শুরু হয়। এ সব স্থানের পাথরও শেষের দিকে। ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর এলাকার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।
পাথর সরিয়ে ফেলার কারণে পলিপ্রবাহের ভারসাম্য ভেঙে যাবে। এর ফলে পদ্মা-যমুনার অববাহিকায় পলির বদলে বেশি করে বালু ঢুকে পড়বে। এভাবে ধানের ফলন সরাসরি প্রভাবিত হবে। শুধু ধান নয়, প্রায় সব ধরনের শস্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
যে সব পাথর কোয়ারি সরকার ইজারা দিতো, সেখান থেকে সরকারের আয় সামান্যই। এই সামান্য আয়ের বিনিময়ে পর্যটন খাতের বিশাল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে এবং পাথরের কারবারিরা অনায়াসে কোয়ারির পাথর বলে দর্শনীয় স্থানের পাথর স্থানান্তরের সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, নির্বিচারে পাথর উত্তোলনের কারণে পরিবেশের ভারসাম্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এদিকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনের এক উপস্থাপনায় বলা হয়েছে, এভাবে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে নষ্ট হয়েছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং পর্যটনশিল্প।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের পাথর কোয়ারিগুলো থেকে যে পরিমাণ পাথর উত্তোলন করা হয়, তাতে মোট চাহিদার মাত্র সাত শতাংশ পূরণ হয়। শুধু সিলেট থেকে নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানের ৫১টি কোয়ারি থেকে চাহিদার এই সাত শতাংশ পাথর সংগ্রহ করা হয়। সিলেটের আটটি পাথর কোয়ারি থেকে দেশের চাহিদার সামান্যই আসে। বাকি পাথর বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। আর এই পাথর উত্তোলন করতে গিয়ে গত ১০ বছরে অন্তত ১১০ জন শ্রমিক মারা গেছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে চেষ্টা চালিয়েছে, এখনো চালাচ্ছে। কিন্তু জনগণের পক্ষ থেকে সহযোগিতা না এলে আসলে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব হবে না। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়
পাথর উত্তোলনের কারণে সিলেট ছাড়াও দেশের অন্য এলাকাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ বলেন, প্রকৃতিকে তার মতো থাকতে দেওয়া জরুরি। যদি নির্বিচারে আপস্ট্রিম (উজান) থেকে পাথর তোলা হয়, তাহলে দুই ধরনের ক্ষতি হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তাঁর মতে, মূলত পাথরগুলো পর্যায়ক্রমে প্রাকৃতিক নিয়মে ভেঙ্গে পলিতে রূপান্তরিত হয়। সেই পলি পানির প্রবাহের সঙ্গে মিশে কৃষিজমিতে গিয়ে পৌঁছায়। উজানের সব পাথর সরিয়ে ফেলা হলে পলি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে, ফলে প্রাকৃতিক উর্বরতা হারাবে কৃষিজমি।'
দ্বিতীয় ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, 'পাথর সরিয়ে ফেলার কারণে পলিপ্রবাহের ভারসাম্য ভেঙে যাবে। এর ফলে পদ্মা-যমুনার অববাহিকায় পলির বদলে বেশি করে বালু ঢুকে পড়বে। এভাবে ধানের ফলন সরাসরি প্রভাবিত হবে। শুধু ধান নয়, প্রায় সব ধরনের শস্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'
সিলেটের ‘সাদাপাথর’ নামে পরিচিত যে এলাকাটি সেটি জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে। এর বাইরে জাফলং, বিছনাকান্দি, উৎমাছড়াসহ আরও ১০টি জায়গায় পাথর আছে। কিন্তু এগুলো সরকারি তালিকাভুক্ত পাথর কোয়ারি নয়।
এ সব এলাকার বাইরে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে আটটি পাথর কোয়ারি আছে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে এ সব কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়নি।
কোয়ারি এবং এসব পাথরসমৃদ্ধ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই পাথর লুটপাট হয়ে আসছে। অভিযোগ আছে, জাতীয় রাজনীতিতে অনৈক্য থাকলেও সিলেটের স্থানীয় রাজনীতিকেরা পাথর উত্তোলনের ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে ঐকমত্য পোষণ করে এসেছেন। ফলে ধীরে ধীরে সিলেটের আটটি পাথর কোয়ারি থেকে অন্তত ৮০ ভাগ পাথর উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
জেলা প্রশাসন সূত্র বলছে, শুধু গত এক বছরেই সাদাপাথর এলাকার প্রায় সব পাথর সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ফলে নষ্ট হয়েছে নদীর গতিপথ, বনাঞ্চল এবং ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে। অথচ দেশের চাহিদার সিংহভাগ পাথর বিদেশ থেকেই আমদানি করা হয়।
দেশের চাহিদার ৯৩ শতাংশের বেশি পাথর আমদানি করা হয় চীন, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভারত, ভুটান, কাতার, ওমান, দুবাই থেকে। এ সব দেশ থেকে ২০১৮–১৯ অর্থবছরে ২ কোটি ১১ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি পাথর আমদানি করা হয়। এর পরের অর্থবছরে (২০১৯–২০) আমদানি করা হয় ১৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
ফলে চাহিদার কারণে দেশের পাথরকোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনে মনোযোগী হয় স্বার্থান্বেষী মহল। স্থানীয় সরকার ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাক র্মীদের চাপে পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ইজারা দেওয়া পাথর কোয়ারিগুলো থেকে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে সরকার রাজস্ব আদায় করেছে সাড়ে ৩৮ কোটি টাকা।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ছয় বছরে ৪০ কোটির কম আয়ের জন্য সরকারের দেওয়া ইজারা থেকে নদীব্যবস্থার গতিপ্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে, বাধাগ্রস্ত হয়েছে প্রাকৃতিক প্রবাহ, বনাঞ্চল নষ্ট হয়েছে নষ্ট হয়েছে আর পাথরের কোয়ারিতে কাজ করতে গিয়ে মারা গেছে অন্তত ১০৯ জন শ্রমিক।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে পাথর কোয়ারির ইজারা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কোন শ্রমিক মারা যায়নি বলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা গেছে।
এসব ঘটনার পর ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সরকারের পক্ষ থেকে পাথর কোয়ারির ইজারা বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত বছর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পর আবার ইজারার জন্য পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
চলতি বছর নতুন করে পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়ার পর আরও দুজন শ্রমিক মারা গেছে বলে সরকারি নথিপত্রে উল্লেখ আছে।
২০১১ সালে সিলেটের ডাউকি নদীতে একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে উচ্চ আদালত এ সেতুর অবিলম্বে অপসারণ এবং ওই নদীকে পরিবেশগতভাবে সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ নদীর ওপর এ ধরনের কোনো নির্মাণ বা দখলদারত্ব করতে দেওয়া যাবে না বরে উল্লেখ করেন আদালত।
ওই আদেশে ডাউকির পাশাপাশি জাফলংয়ের খাসিয়াপুঞ্জি থেকে ডাউকি–জাফলং এবং পিয়াইন নদীর মধ্যবর্তী ১৪ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার এলাকাকে ইসিএ ঘোষণা করা হয়। উল্লেখ্য, ইসিএভুক্ত এলাকায় যান্ত্রিক, কায়িক বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে পাথরসহ অন্যান্য খনিজ সম্পদ উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষা একে অপরের শত্রু নয়। কঠোর সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবেশ নষ্ট না করে যদি টেকসই উন্নয়নের নীতিমালা মেনে উন্নয়ন কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয়, তবে সেই ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার। তবে এমন বিষয়গুলোতে সিদ্ধান্ত নেওয়া সবসময় সহজ বা সরল হয় না। কোনো কার্যক্রম চালু রাখলে পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে, আবার সেটি বন্ধ করে দিলে অর্থনৈতিক স্বার্থে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তবে সন্দেহের পরিস্থিতিতে পরিবেশ সুরক্ষাকেই অর্থনৈতিক স্বার্থের ওপর অগ্রাধিকার দিতে হবে।
সমাধান খুব সহজ— আইন মেনে চলা এবং মানুষকে সচেতন করা। সিলেটের পাথর তো সরকারি ও বেসরকারি মিলেই তোলা হচ্ছে। বিদ্যমান আইন আছে, সেটাকে কার্যকর করতে হবে। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে যে আমরা প্রকৃতিকে কতটা ধ্বংস করছি। অধ্যাপক খন্দকার হাসান মাহমুদ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা অনুসারে, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অবস্থাগত ও পরিবেশগত ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্পকে চার শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো— সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। এক্ষেত্রে শিল্প প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পের কার্যক্রমের প্রকৃতি এবং এসব প্রতিষ্ঠান বা প্রকল্প থেকে সম্ভাব্য দূষণ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০০৮ সালের ১৪ মে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে দেশের সব পাথর কোয়ারিকে কমলা ক্যাটাগরিভুক্ত করা হয়। পরে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এ এটি কমলা ক্যাটাগরিতে সন্নিবেশ করা হয়। বিধিমালায় কমলা ক্যাটাগরিতে মোট ১১৩ ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা প্রকল্পকে তালিকাভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে ‘সকল কোয়ারি’ আছে তালিকার ৬৩ নম্বরে।
এই বিধিমালা অনুসারে, পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের ক্ষেত্রে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব আছে। তবে এই ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব।
আইন আছে, উচ্চ আদালতও প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ এ সব এলাকার সুরক্ষার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। তবে শুধু আইন, বিধিমালা কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা শক্তি প্রয়োগ করে লুটপাট বা প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব না বলে মন্তব্য করেছেন— খন্দকার হাসান মাহমুদ।
ইজারা দেওয়ার বিষয়টি যথাযথ যাচাইবাছাই শেষে সরকার পুনর্বিবেচনা করতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি। হাসান মাহমুদ বলেন, মানুষের জীবিকার জন্য সামান্য পরিমাণ পাথর উত্তোলন করা যেতো। কিন্তু আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার যেভাবে পাথর উত্তোলন করা হয়েছে, তাতে আসলে কিছুই অবশিষ্ট নেই। পাথর উত্তোলনকে বাণীজ্যিকীকরণ করা হয়েছে। সরকারের নজরদারি থাকলে এমনটি হতো না।
হাসান মাহমুদ বলেন, ‘সমাধান খুব সহজ— আইন মেনে চলা এবং মানুষকে সচেতন করা। সিলেটের পাথর তো সরকারি ও বেসরকারি মিলেই তোলা হচ্ছে। বিদ্যমান আইন আছে, সেটাকে কার্যকর করতে হবে। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে যে আমরা প্রকৃতিকে কতটা ধ্বংস করছি। এমনকি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও আমরা এটা বুঝতে পারি। ইসলাম, খ্রিস্টান, ইহুদি— সব বড় ধর্মই বলে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে মানুষ ধ্বংস করতে পারে না। ফলে প্রকৃতিকে আমরা ব্যবহার করব, কিন্তু শোষণ করব না।’
আন্তর্জাতিকভাবেও প্রকৃতি রক্ষার সতর্কতার কথা বলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন খন্দকার হাসান মাহমুদ। ইউএনডিপির ভাষ্য উপস্থাপন করে তিনি বলেন, ‘আমি প্রাকৃতিক উৎস ব্যবহার করবো, আর এটাও নিশ্চিত করব যে অন্তত তিন প্রজন্ম পরেও যেন সেই উৎসটি জীবন্ত থাকে। যদি এটুকু সচেতনতা আমাদের না থাকে, কেবল আইন দিয়েই এই সংকট সমাধান হবে না।’ তবে সচেতনতার মাধ্যমে কাজ না হলে আইনের কঠোর প্রয়োগ করার প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান স্ট্রিমকে বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শুরু থেকেই অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধে চেষ্টা চালিয়েছে, এখনো চালাচ্ছে। কিন্তু জনগণের পক্ষ থেকে সহযোগিতা না এলে আসলে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব হবে না।’
তিন দাবিতে করা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলন নিয়ে স্ট্রিমের পক্ষ থেকে বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক আইনুন নিশাতের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়। জবাবে আইনুন নিশাত তাঁর মতামত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এই দাবিগুলো সম্পূর্ণ যৌক্তিক এবং দেশের স্বার্থে এগুলো বাস্তবায়ন করা দরকার। আমি এই প্রসঙ্গে
৮ ঘণ্টা আগেগবেষক দল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিজস্ব প্রযুক্তি এবং নিজস্ব অ্যালগী এর মাধ্যমে দুটি মডেল তৈরি করেছেন। এর একটি আউটডোর মডেল, অপরটি ইনডোর। গবেষকদের মতে, আউটডোর লিকুইড ট্রি মডেল রাস্তাঘাটের ডিভাইডার, ফুটপাত, ছাদ, পার্কিং এলাকা, শিল্পাঞ্চলে ব্যবহারযোগ্য। এগুলো যানবাহন ও শিল্প কারখানা থেকে নির্গত কার্বন-
১০ ঘণ্টা আগেমুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বেরোনো এসব বইয়ের অনেকগুলোয় এখন বাংলা একাডেমির স্টোরে পড়ে আছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর বদলে যাওয়া প্রেক্ষাপটে বইগুলো বাংলা একাডেমি এখন আর বিক্রি করছে না। বন্ধ রেখেছে বইয়ের প্রদর্শনীও।
২ দিন আগেবর্তমানে দেশের ১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত সময় পরেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি। এ তালিকায় আছে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির নামও। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিলে তড়িঘড়ি করে স্থায়ী ক্যাম্পাস উদ্বোধন করে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।
৪ দিন আগে