রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিশেষ সাক্ষাৎকার: আলতাফ পারভেজ
আজ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আসার আট বছর। এদিনে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আগমনের ইতিহাস, তাদের ফেরত পাঠানোর জটিলতা, আরাকান আর্মি, চীন ও ভারতের প্রভাব—এসব নিয়ে স্ট্রিমের সঙ্গে কথা বলেছেন লেখক ও দক্ষিণ এশিয়া-বিষয়ক গবেষক আলতাফ পারভেজ
স্ট্রিম ডেস্ক
স্ট্রিম: রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক মনোযোগ অনেকটা কমে গেছে। এবার কি বিষয়টি আবার আন্তর্জাতিক আলোচনায় আসছে?
আলতাফ পারভেজ: হ্যাঁ, বাংলাদেশে খুব শিগগিরই রোহিঙ্গাবিষয়ক একটি বড় সম্মেলন হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে আরও দুটি সম্মেলনের আয়োজন হবে। এটি ইতিবাচক। কারণ, ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি অনেকটা দৃষ্টির বাইরে চলে গিয়েছিল। সম্মেলনগুলো আন্তর্জাতিক সাহায্য ও আলোচনার সুযোগ তৈরি করবে। তবে রোহিঙ্গাদের শিগগিরই ফেরত পাঠানোর জন্য যে সমাধান, তা এটি নয়।
স্ট্রিম: রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার ইতিহাসটি সংক্ষেপে যদি বলতেন…
আলতাফ পারভেজ: রোহিঙ্গারা মূলত বার্মার আরাকান (বর্তমান রাখাইন রাজ্য) থেকে এসেছে। তারা বার্মায় নাগরিকত্ব ও জাতিগত স্বীকৃতি পায়নি। আরাকানে বৌদ্ধ রাখাইন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বসবাস করলেও বার্মা সরকার তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তাই নিরাপত্তাহীনতা, সহিংসতা ও নাগরিকত্বহীনতার কারণে তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের আগমন-ইতিহাস তিন দফায় সংঘটিত হয়েছে। ১৯৭৮ সালে প্রথম দফায় সেনা অভ্যুত্থান ও স্থানীয় সহিংসতার কারণে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসেন। এ সময় জিয়াউর রহমান সরকার তাদের মধ্যে অনেককে ফেরত পাঠায়। ১৯৯২ সালে তাদের দ্বিতীয় দফায় আগমন ঘটে নতুন দাঙ্গার কারণে। তখন মূলত উত্তর আরাকান, মংডু, বুথিডং, রাথিডং এলাকা থেকে রোহিঙ্গারা আসে। এরপর থেকে তারা বাংলাদেশে আছে। পরে ২০১৭ সালে তারা এল বড় দফায়। এ সময়টি সবচেয়ে ভয়ংকর; মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ ও নির্মম সহিংসতার কারণে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা তখন বাংলাদেশে আসে। এরপরও তাদের আসা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলেও প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা এসেছে।
বর্তমান আরাকান পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। এ অঞ্চলে ১৭টি টাউনশিপ (জেলা) আছে, যার মধ্যে ১৪টি এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। রোহিঙ্গাদের আসল এলাকা মূলত উত্তর আরাকান। রাখাইন বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী দক্ষিণ আরাকানে কেন্দ্রীভূত। ঐতিহাসিকভাবে ১৯৪২ সালের দাঙ্গার কারণে রোহিঙ্গা ও রাখাইন সমাজের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব রয়েছে, যা তাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আগমন মূলত নিরাপত্তাহীনতা, সহিংসতা ও নাগরিকত্বহীনতার ফল। শিগগিরই তাদের নিরাপদ ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। কারণ, এজন্য আগে আরাকান আর্মি, নাগরিকত্ব সমস্যা ও রাখাইন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সামাজিক দূরত্বের সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।
স্ট্রিম: রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো এত কঠিন কেন?
আলতাফ পারভেজ: একাধিক কারণে। প্রথমত, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জাতিগত স্বীকৃতি নেই। নাগরিকত্বও নেই। দ্বিতীয়ত, তাদের মূল এলাকা আরাকান এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। তাই ফেরত পাঠাতে হলে তাদের সম্মতি প্রয়োজন।
আরেকটা বিষয় আছে, যা অনেকেই আলোচনা করেন না। ঐতিহাসিকভাবে আরাকানে রাখাইনদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সামাজিক সম্পর্ক খুব খারাপ। এটা অনেকটা ঐতিহাসিক লিগেসি। ১৯৪২ সালে সেখানে একটা নির্মম দাঙ্গা হয়েছিল। রোহিঙ্গা মুসলিম বা আরাকানের মুসলমানেরা সেখানকার বৌদ্ধ রাখাইনদের সঙ্গে দাঙ্গায় লিপ্ত হয়েছিল। এটি কলকাতার রায়ট বা নোয়াখালীর রায়টের মতো ভয়াবহ ছিল। তবে আমাদের দেশে এ ঘটনা কম আলোচিত।
এ দাঙ্গার পর থেকে রাখাইনদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক ও ধর্মীয় দূরত্ব তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব আজও বিদ্যমান। ফলে রোহিঙ্গাদের জোর করে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। কারণ, যাদের সঙ্গে থাকবে, তাদের সঙ্গে সম্পর্কটা তো আগে ভালো থাকতে হবে। এছাড়া ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করছে তিনটি বড় বিষয়: আরাকান আর্মির সম্মতি, রাখাইন সমাজের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্র পুনর্নির্মাণ ও মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের নাগরিকত্ব আইন ও জাতিগত স্বীকৃতি সংশোধন।
এসব শর্ত পূরণ না করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো প্রায় অসম্ভব।
স্ট্রিম: তাহলে সমাধানের পথ কী? এক্ষেত্রে আসন্ন সম্মেলনগুলো কীভাবে সাহায্য করতে পারে?
আলতাফ পারভেজ: রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো অনেক কারণেই জটিল। শুরুতে আমি যে তিনটি কারণের কথা বললাম, তা তো আছেই।
সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক ও ধর্মীয় দূরত্ব রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনকে কঠিন করছে। তাই শুধু আরাকান আর্মির সম্মতি নয়, রাখাইন সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনও জরুরি।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়ার কারণে কক্সবাজার, টেকনাফ ও উখিয়ায় জনমিতিক চাপ এবং অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। রোহিঙ্গা সমাজের ভেতরে থাকা চারটি সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি বা মিয়ানমার সেনার সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হলে তা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্যও সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।
তবে সমাধানের পথও আছে। নতুন পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতা অপরিহার্য। তারা চাইবে সহযোগিতা আর বাংলাদেশ চাইবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন। এছাড়া, মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ও চীনের সহযোগিতাও প্রয়োজন। কারণ, মিয়ানমারের ওপর চীনের প্রভাব আছে।
আসন্ন সম্মেলনগুলো রোহিঙ্গা সংকটকে আন্তর্জাতিকভাবে সামনে নিয়ে আসবে। এতে আন্তর্জাতিক সাহায্যও বাড়তে পারে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। এখন মূল কাজ এখনো হলো, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা। আর তা সম্ভব আরাকান আর্মি, রাখাইন জনগোষ্ঠী ও মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমেই।
স্ট্রিম: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারে?
আলতাফ পারভেজ: মিয়ানমার সরকারের ওপর চীনের প্রচণ্ড প্রভাব আছে। চীন যদি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে এবং তাদের রোহিঙ্গাদের নেওয়ার পরিবেশ তৈরির ব্যাপারে চাপ দেয়, তবে এটি বাস্তবায়িত হতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে চীনকে অভিভাবক হিসেবে মেনে তাদের রাজি করাতে হবে।
তা ছাড়া আরাকান আর্মির ওপরেও চীনের প্রভাব আছে। তাই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সরকারও চীনের ভূমিকাকে কাজে লাগাতে পারবে। এখন কীভাবে এটি সম্ভব হবে, তা-ই হলো বড় চ্যালেঞ্জ।
এখানে আরেকটা কথাও বলা দরকার, বাংলাদেশের বর্তমান ভূমিকা অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা জোট এবং ‘বার্মা অ্যাক্ট’-এর সঙ্গে যুক্ত, যা পুরো ব্যবস্থাপনাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
স্ট্রিম: বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গা শরণার্থী ব্যবস্থাপনা ‘বার্মা অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে পরিচালনা করে এবং রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ যদি চীনের কূটনৈতিক তত্ত্বাবধানে চলে, তবে এই দুই প্রক্রিয়ার মধ্যে কীভাবে ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে?
আলতাফ পারভেজ: এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবশ্যই ভারসাম্য রাখতে হবে। কিন্তু আমাদের জন্য এটা কোনো টেকসই কৌশল হতে পারে না যে আন্তর্জাতিক মহল রোহিঙ্গাদের সাহায্য দেবে আর বাংলাদেশ দেবে আশ্রয়। আমাদের জন্য টেকসই সমাধান হলো রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। কারণ, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের কারণে মিয়ানমার ও আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে একটি সম্ভাবনাময় সম্পর্ক তৈরি করতে পারছে না।
তাই রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দিকে আমাদের যেতে হবে। আন্তর্জাতিক সাহায্য পাব আর রোহিঙ্গাদের এখানে রেখে খাওয়াব-পরাব, এটা কোনো টেকসই সমাধান হতে পারে না। ফলে যুক্তরাষ্ট্র যদি কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়ও, তবু রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের এখন আরাকান আর্মি ও চীনের সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার দ্বার খোলা উচিত। রোহিঙ্গাদের কীভাবে বাংলাদেশে ভালোভাবে রাখা যায়, তার চেয়ে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
গত ছয়-সাত বছরে বাংলাদেশ যে পুরোনো কৌশল নিয়েছিল, তা কার্যকর হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিকে আমরা তাকিয়েছিলাম—জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে আমাদের কোনো সহায়তা করতে পারেনি।
স্ট্রিম: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের ব্যর্থতার কারণ কী?
আলতাফ পারভেজ: তাদের সক্ষমতার অভাব আছে, ইচ্ছারও অভাব আছে। তবে সক্ষমতার অভাবটা এখানে মূখ্য। কারণ, মিয়ানমারে চীনের যে প্রভাব, তাকে অগ্রাহ্য করে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কিছু করতে পারবে বলে আমি মনে করি না।
আর এখন ২০১৭ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে আরাকানের পরিস্থিতি আমূল পাল্টে গেছে। আরাকান আর্মি নামে ৩০ হাজার বাহিনীর একটি নতুন শক্তির উদ্ভব ঘটেছে সেখানে। ফলে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার কোনো সমাধান করা যাবে বলে মনে হয় না।
স্ট্রিম: রোহিঙ্গা সংকট আলোচনায় অনেক ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট স্বার্থের কথা উঠে আসে। এখানে অর্থনৈতিক স্বার্থ কি রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে?
আলতাফ পারভেজ: মিয়ানমার সংকটের একটা পলিটিক্যাল ইকোনমি রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটেরও আছে নিজস্ব পলিটিক্যাল ইকোনমি। অর্থাৎ এখানে শুধু রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ নয়, ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট স্বার্থও প্রবলভাবে যুক্ত। বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান সরাসরি বা পরোক্ষভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক সুবিধা, বাজার ও সম্পদ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
ফলে এই স্বার্থসংঘাত অনেক সময় সমস্যার স্থায়ী সমাধানকে ব্যাহত করছে। শুধু রাজনীতিবিদ বা স্থানীয় সরকারই নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতি ও রাজনৈতিক স্বার্থ মিয়ানমারের সমস্যাকে ঝুলিয়ে রাখছে। এই জটিল পটভূমিতে, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান শুধু মানবিক বা রাজনৈতিক উদ্যোগে সম্ভব নয়। এখানে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্থনীতির হিসাব-নিকাশও মোকাবিলা করতে হবে।
স্ট্রিম: এ প্রেক্ষাপটে ভারতের ভূমিকা কেমন? আরাকান ও বাংলাদেশের সীমান্তের পরিস্থিতি ভারতের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থে কী প্রভাব ফেলছে?
আলতাফ পারভেজ: দেখুন, বাংলাদেশের এ মুহূর্তে এক অর্থে কোনো প্রতিবেশী নেই। এখন প্রতিবেশী হলো আরাকান। আরাকানের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার। সেখান দিয়ে কিন্তু বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মাদক ঢুকছে দেশে। এই মাদক ব্যবসা আর বর্ডার আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মাদকের একটা ইকোনমি আছে। যারা এই এর সঙ্গে যুক্ত, তারা বর্ডারকে এখনকার অবস্থাতেই রাখতে চায়। মাদক ব্যবসার সঙ্গে মিয়ানমার সরকার ও তার বিভিন্ন অংশ, দেশটির গেরিলা সংগঠন এবং রোহিঙ্গাদের কিছু অংশও যুক্ত।
এছাড়া, এ অঞ্চল অস্ত্র চোরাচালানের বড় জায়গা। মিয়ানমারে সম্প্রতি আইন হয়েছে, যারা বিনিয়োগ করবে, তারা প্রাইভেট আর্মি রাখতে পারবে। অর্থাৎ চীন ও ভারত এখানে তাদের বিনিয়োগের জন্য ছোট নিরাপত্তা বাহিনী রাখতে পারবে। এর মানে হলো মিয়ানমারের পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। আরাকানে ভারতের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হলো কালাদান প্রকল্প। এখানে চীনেরও বিপুল বিনিয়োগ আছে—গ্যাস উত্তোলন, রেললাইন, দুটি পাইপলাইন, এবং কিয়াউকফিউতে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন।
তাই এখানে চীন এমন রাজনৈতিক সমাধান চাইবে, যা তার স্বার্থ রক্ষা করবে। আবার ভারতও চাইবে এমন সমাধান, যাতে তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকে। আর বাংলাদেশ চাইবে মাদক সমস্যা সমাধান হোক এবং রোহিঙ্গারা ফিরে যাক। কিন্তু আন্তর্জাতিক অনেক মহল, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র এমন না-ও চাইতে পারে। তারা চাইবে অস্থিতিশীলতা, যাতে চীনের সঙ্গে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীতা ও মিয়ানমারে নিজস্ব বলয় নির্মাণ করা যায়। অনেকে এমনও অনুমান করেন যে মিয়ানমারের কিছু অংশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের অংশ নিয়ে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে।
ফলে এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার জন্য কিছু শক্তি সক্রিয় রয়েছে। তাই বাংলাদেশের এখন সুচিন্তিত অবস্থান নেওয়া দরকার। সীমান্ত সুরক্ষা, শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আমাদের যেকোনো মূল্যে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা উচিত।
অনুলিখন: মো. ইসতিয়াক
স্ট্রিম: রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক মনোযোগ অনেকটা কমে গেছে। এবার কি বিষয়টি আবার আন্তর্জাতিক আলোচনায় আসছে?
আলতাফ পারভেজ: হ্যাঁ, বাংলাদেশে খুব শিগগিরই রোহিঙ্গাবিষয়ক একটি বড় সম্মেলন হবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে আরও দুটি সম্মেলনের আয়োজন হবে। এটি ইতিবাচক। কারণ, ইউক্রেন ও গাজা যুদ্ধের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি অনেকটা দৃষ্টির বাইরে চলে গিয়েছিল। সম্মেলনগুলো আন্তর্জাতিক সাহায্য ও আলোচনার সুযোগ তৈরি করবে। তবে রোহিঙ্গাদের শিগগিরই ফেরত পাঠানোর জন্য যে সমাধান, তা এটি নয়।
স্ট্রিম: রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার ইতিহাসটি সংক্ষেপে যদি বলতেন…
আলতাফ পারভেজ: রোহিঙ্গারা মূলত বার্মার আরাকান (বর্তমান রাখাইন রাজ্য) থেকে এসেছে। তারা বার্মায় নাগরিকত্ব ও জাতিগত স্বীকৃতি পায়নি। আরাকানে বৌদ্ধ রাখাইন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বসবাস করলেও বার্মা সরকার তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তাই নিরাপত্তাহীনতা, সহিংসতা ও নাগরিকত্বহীনতার কারণে তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের আগমন-ইতিহাস তিন দফায় সংঘটিত হয়েছে। ১৯৭৮ সালে প্রথম দফায় সেনা অভ্যুত্থান ও স্থানীয় সহিংসতার কারণে প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসেন। এ সময় জিয়াউর রহমান সরকার তাদের মধ্যে অনেককে ফেরত পাঠায়। ১৯৯২ সালে তাদের দ্বিতীয় দফায় আগমন ঘটে নতুন দাঙ্গার কারণে। তখন মূলত উত্তর আরাকান, মংডু, বুথিডং, রাথিডং এলাকা থেকে রোহিঙ্গারা আসে। এরপর থেকে তারা বাংলাদেশে আছে। পরে ২০১৭ সালে তারা এল বড় দফায়। এ সময়টি সবচেয়ে ভয়ংকর; মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ ও নির্মম সহিংসতার কারণে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা তখন বাংলাদেশে আসে। এরপরও তাদের আসা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান সরকারের আমলেও প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা এসেছে।
বর্তমান আরাকান পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল। এ অঞ্চলে ১৭টি টাউনশিপ (জেলা) আছে, যার মধ্যে ১৪টি এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। রোহিঙ্গাদের আসল এলাকা মূলত উত্তর আরাকান। রাখাইন বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী দক্ষিণ আরাকানে কেন্দ্রীভূত। ঐতিহাসিকভাবে ১৯৪২ সালের দাঙ্গার কারণে রোহিঙ্গা ও রাখাইন সমাজের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব রয়েছে, যা তাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আগমন মূলত নিরাপত্তাহীনতা, সহিংসতা ও নাগরিকত্বহীনতার ফল। শিগগিরই তাদের নিরাপদ ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। কারণ, এজন্য আগে আরাকান আর্মি, নাগরিকত্ব সমস্যা ও রাখাইন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের সামাজিক দূরত্বের সমস্যাগুলো সমাধান করতে হবে।
স্ট্রিম: রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো এত কঠিন কেন?
আলতাফ পারভেজ: একাধিক কারণে। প্রথমত, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জাতিগত স্বীকৃতি নেই। নাগরিকত্বও নেই। দ্বিতীয়ত, তাদের মূল এলাকা আরাকান এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। তাই ফেরত পাঠাতে হলে তাদের সম্মতি প্রয়োজন।
আরেকটা বিষয় আছে, যা অনেকেই আলোচনা করেন না। ঐতিহাসিকভাবে আরাকানে রাখাইনদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সামাজিক সম্পর্ক খুব খারাপ। এটা অনেকটা ঐতিহাসিক লিগেসি। ১৯৪২ সালে সেখানে একটা নির্মম দাঙ্গা হয়েছিল। রোহিঙ্গা মুসলিম বা আরাকানের মুসলমানেরা সেখানকার বৌদ্ধ রাখাইনদের সঙ্গে দাঙ্গায় লিপ্ত হয়েছিল। এটি কলকাতার রায়ট বা নোয়াখালীর রায়টের মতো ভয়াবহ ছিল। তবে আমাদের দেশে এ ঘটনা কম আলোচিত।
এ দাঙ্গার পর থেকে রাখাইনদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের মধ্যে সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক ও ধর্মীয় দূরত্ব তৈরি হয়েছে। যার প্রভাব আজও বিদ্যমান। ফলে রোহিঙ্গাদের জোর করে ফেরত পাঠানো সম্ভব নয়। কারণ, যাদের সঙ্গে থাকবে, তাদের সঙ্গে সম্পর্কটা তো আগে ভালো থাকতে হবে। এছাড়া ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করছে তিনটি বড় বিষয়: আরাকান আর্মির সম্মতি, রাখাইন সমাজের সঙ্গে সামাজিক সম্পর্র পুনর্নির্মাণ ও মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের নাগরিকত্ব আইন ও জাতিগত স্বীকৃতি সংশোধন।
এসব শর্ত পূরণ না করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো প্রায় অসম্ভব।
স্ট্রিম: তাহলে সমাধানের পথ কী? এক্ষেত্রে আসন্ন সম্মেলনগুলো কীভাবে সাহায্য করতে পারে?
আলতাফ পারভেজ: রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো অনেক কারণেই জটিল। শুরুতে আমি যে তিনটি কারণের কথা বললাম, তা তো আছেই।
সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক ও ধর্মীয় দূরত্ব রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনকে কঠিন করছে। তাই শুধু আরাকান আর্মির সম্মতি নয়, রাখাইন সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনও জরুরি।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়ার কারণে কক্সবাজার, টেকনাফ ও উখিয়ায় জনমিতিক চাপ এবং অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। রোহিঙ্গা সমাজের ভেতরে থাকা চারটি সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি বা মিয়ানমার সেনার সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হলে তা বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্যও সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।
তবে সমাধানের পথও আছে। নতুন পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের সমঝোতা অপরিহার্য। তারা চাইবে সহযোগিতা আর বাংলাদেশ চাইবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন। এছাড়া, মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমঝোতা ও চীনের সহযোগিতাও প্রয়োজন। কারণ, মিয়ানমারের ওপর চীনের প্রভাব আছে।
আসন্ন সম্মেলনগুলো রোহিঙ্গা সংকটকে আন্তর্জাতিকভাবে সামনে নিয়ে আসবে। এতে আন্তর্জাতিক সাহায্যও বাড়তে পারে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে এটি স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। এখন মূল কাজ এখনো হলো, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা। আর তা সম্ভব আরাকান আর্মি, রাখাইন জনগোষ্ঠী ও মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমেই।
স্ট্রিম: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীন কি কোনো ভূমিকা রাখতে পারে?
আলতাফ পারভেজ: মিয়ানমার সরকারের ওপর চীনের প্রচণ্ড প্রভাব আছে। চীন যদি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে এবং তাদের রোহিঙ্গাদের নেওয়ার পরিবেশ তৈরির ব্যাপারে চাপ দেয়, তবে এটি বাস্তবায়িত হতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে চীনকে অভিভাবক হিসেবে মেনে তাদের রাজি করাতে হবে।
তা ছাড়া আরাকান আর্মির ওপরেও চীনের প্রভাব আছে। তাই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সরকারও চীনের ভূমিকাকে কাজে লাগাতে পারবে। এখন কীভাবে এটি সম্ভব হবে, তা-ই হলো বড় চ্যালেঞ্জ।
এখানে আরেকটা কথাও বলা দরকার, বাংলাদেশের বর্তমান ভূমিকা অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা জোট এবং ‘বার্মা অ্যাক্ট’-এর সঙ্গে যুক্ত, যা পুরো ব্যবস্থাপনাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
স্ট্রিম: বাংলাদেশ যদি রোহিঙ্গা শরণার্থী ব্যবস্থাপনা ‘বার্মা অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে পরিচালনা করে এবং রাজনৈতিক সমাধানের উদ্যোগ যদি চীনের কূটনৈতিক তত্ত্বাবধানে চলে, তবে এই দুই প্রক্রিয়ার মধ্যে কীভাবে ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হবে?
আলতাফ পারভেজ: এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবশ্যই ভারসাম্য রাখতে হবে। কিন্তু আমাদের জন্য এটা কোনো টেকসই কৌশল হতে পারে না যে আন্তর্জাতিক মহল রোহিঙ্গাদের সাহায্য দেবে আর বাংলাদেশ দেবে আশ্রয়। আমাদের জন্য টেকসই সমাধান হলো রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। কারণ, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের কারণে মিয়ানমার ও আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে একটি সম্ভাবনাময় সম্পর্ক তৈরি করতে পারছে না।
তাই রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দিকে আমাদের যেতে হবে। আন্তর্জাতিক সাহায্য পাব আর রোহিঙ্গাদের এখানে রেখে খাওয়াব-পরাব, এটা কোনো টেকসই সমাধান হতে পারে না। ফলে যুক্তরাষ্ট্র যদি কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়ও, তবু রোহিঙ্গা প্রশ্নে বাংলাদেশের এখন আরাকান আর্মি ও চীনের সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার দ্বার খোলা উচিত। রোহিঙ্গাদের কীভাবে বাংলাদেশে ভালোভাবে রাখা যায়, তার চেয়ে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
গত ছয়-সাত বছরে বাংলাদেশ যে পুরোনো কৌশল নিয়েছিল, তা কার্যকর হয়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দিকে আমরা তাকিয়েছিলাম—জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের দিকে। তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে আমাদের কোনো সহায়তা করতে পারেনি।
স্ট্রিম: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের ব্যর্থতার কারণ কী?
আলতাফ পারভেজ: তাদের সক্ষমতার অভাব আছে, ইচ্ছারও অভাব আছে। তবে সক্ষমতার অভাবটা এখানে মূখ্য। কারণ, মিয়ানমারে চীনের যে প্রভাব, তাকে অগ্রাহ্য করে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে কিছু করতে পারবে বলে আমি মনে করি না।
আর এখন ২০১৭ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে আরাকানের পরিস্থিতি আমূল পাল্টে গেছে। আরাকান আর্মি নামে ৩০ হাজার বাহিনীর একটি নতুন শক্তির উদ্ভব ঘটেছে সেখানে। ফলে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যার কোনো সমাধান করা যাবে বলে মনে হয় না।
স্ট্রিম: রোহিঙ্গা সংকট আলোচনায় অনেক ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট স্বার্থের কথা উঠে আসে। এখানে অর্থনৈতিক স্বার্থ কি রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে?
আলতাফ পারভেজ: মিয়ানমার সংকটের একটা পলিটিক্যাল ইকোনমি রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটেরও আছে নিজস্ব পলিটিক্যাল ইকোনমি। অর্থাৎ এখানে শুধু রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ নয়, ব্যক্তিগত ও কর্পোরেট স্বার্থও প্রবলভাবে যুক্ত। বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান সরাসরি বা পরোক্ষভাবে রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক সুবিধা, বাজার ও সম্পদ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
ফলে এই স্বার্থসংঘাত অনেক সময় সমস্যার স্থায়ী সমাধানকে ব্যাহত করছে। শুধু রাজনীতিবিদ বা স্থানীয় সরকারই নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতি ও রাজনৈতিক স্বার্থ মিয়ানমারের সমস্যাকে ঝুলিয়ে রাখছে। এই জটিল পটভূমিতে, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান শুধু মানবিক বা রাজনৈতিক উদ্যোগে সম্ভব নয়। এখানে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্থনীতির হিসাব-নিকাশও মোকাবিলা করতে হবে।
স্ট্রিম: এ প্রেক্ষাপটে ভারতের ভূমিকা কেমন? আরাকান ও বাংলাদেশের সীমান্তের পরিস্থিতি ভারতের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থে কী প্রভাব ফেলছে?
আলতাফ পারভেজ: দেখুন, বাংলাদেশের এ মুহূর্তে এক অর্থে কোনো প্রতিবেশী নেই। এখন প্রতিবেশী হলো আরাকান। আরাকানের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার। সেখান দিয়ে কিন্তু বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মাদক ঢুকছে দেশে। এই মাদক ব্যবসা আর বর্ডার আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মাদকের একটা ইকোনমি আছে। যারা এই এর সঙ্গে যুক্ত, তারা বর্ডারকে এখনকার অবস্থাতেই রাখতে চায়। মাদক ব্যবসার সঙ্গে মিয়ানমার সরকার ও তার বিভিন্ন অংশ, দেশটির গেরিলা সংগঠন এবং রোহিঙ্গাদের কিছু অংশও যুক্ত।
এছাড়া, এ অঞ্চল অস্ত্র চোরাচালানের বড় জায়গা। মিয়ানমারে সম্প্রতি আইন হয়েছে, যারা বিনিয়োগ করবে, তারা প্রাইভেট আর্মি রাখতে পারবে। অর্থাৎ চীন ও ভারত এখানে তাদের বিনিয়োগের জন্য ছোট নিরাপত্তা বাহিনী রাখতে পারবে। এর মানে হলো মিয়ানমারের পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। আরাকানে ভারতের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হলো কালাদান প্রকল্প। এখানে চীনেরও বিপুল বিনিয়োগ আছে—গ্যাস উত্তোলন, রেললাইন, দুটি পাইপলাইন, এবং কিয়াউকফিউতে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন।
তাই এখানে চীন এমন রাজনৈতিক সমাধান চাইবে, যা তার স্বার্থ রক্ষা করবে। আবার ভারতও চাইবে এমন সমাধান, যাতে তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষিত থাকে। আর বাংলাদেশ চাইবে মাদক সমস্যা সমাধান হোক এবং রোহিঙ্গারা ফিরে যাক। কিন্তু আন্তর্জাতিক অনেক মহল, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র এমন না-ও চাইতে পারে। তারা চাইবে অস্থিতিশীলতা, যাতে চীনের সঙ্গে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীতা ও মিয়ানমারে নিজস্ব বলয় নির্মাণ করা যায়। অনেকে এমনও অনুমান করেন যে মিয়ানমারের কিছু অংশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের অংশ নিয়ে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে।
ফলে এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার জন্য কিছু শক্তি সক্রিয় রয়েছে। তাই বাংলাদেশের এখন সুচিন্তিত অবস্থান নেওয়া দরকার। সীমান্ত সুরক্ষা, শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে আমাদের যেকোনো মূল্যে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করা উচিত।
অনুলিখন: মো. ইসতিয়াক
আট বছর পেরিয়ে গেলেও রোহিঙ্গা সংকটের কার্যকর কোনও সমাধান হয়নি। ভবিষ্যতও অনিশ্চিত। এই সংকট এখন কার্যত ‘স্থবির অবস্থায়’ রয়েছে। কারণ সমাধান শুধু বাংলাদেশ–মিয়ানমারের উপর নির্ভর করছে না। বরং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সক্রিয় ভূমিকাও জরুরি।
৬ ঘণ্টা আগেকক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরের পর তাদের জীবন ও প্রকৃতির ওপর এর কী প্রভাব পড়ছে এবং এই সংকটের ভবিষ্যৎ কী—এসব বিষয় নিয়ে স্ট্রিমের সঙ্গে কথা বলেছেন শিক্ষক ও গবেষক জাভেদ কায়সার।
৮ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত হয়েছিল ‘মুজিবপিডিয়া’। প্রকাশের পরপরই বইটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। দুই খণ্ডে লেখা এই বইকে ‘জ্ঞানকোষ’ হিসেবে দাবি করে তাতে শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও স্বাধীনতা-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের...
৩ দিন আগেপ্রতিবেদনে জয়নুল আবেদীন লিখেছেন, ‘কমিশন আন্তরিকভাবে জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের শীর্ষ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের ধারাবাহিক অস্বীকৃতির মুখে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।’
৪ দিন আগে