leadT1ad

দেশে প্রথমবারের মতো ‘জলাভূমি নির্ভর প্রাণী অভয়ারণ্য’

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৫, ১৭: ২১
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৫, ১৭: ২১

ঢাকা, ৭ মে: দেশের পরিবেশ সংরক্ষণে এক নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলো বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো দুটি জলাভূমিকে ‘জলাভূমি নির্ভর প্রাণী অভয়ারণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। আজ ৭ মে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন শাখা-২ থেকে পৃথক দুটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ ঘোষণা জারি করা হয়।

নতুন ঘোষিত অভয়ারণ্য দুটি হলো রাজশাহী জেলার তানোর উপজেলার বিলজোয়ানা মৌজার ১.৬৫ একর জলাভূমি এবং গোদাগাড়ি উপজেলার বিলভালা মৌজার ১৫.০৮ একর জলাভূমি। এসব জলাভূমি বরাবরই স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের এক গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল ছিল, বিশেষ করে দেশি ও পরিযায়ী পাখিদের জন্য।

বিলজোয়ানা ও বিলভালার জলাভূমিগুলোতে শীতকালে নানা প্রজাতির দেশি ও বিদেশি পাখির মেলা বসে। নিয়মিত দেখা যায় কালেম, কোড়া, ডাহুক, গুড়গুড়ি, জলপিপি, জলময়ূর প্রজাতির দেশি জলচর পাখি। এর পাশাপাশি, বালি হাঁস, পাতি সরালি, বড় সরালি, পিয়াং হাঁস, খুন্তে হাঁস, ভূতিহাঁসসহ নানা ধরনের পরিযায়ী হাঁসও প্রতিবার শীতের অতিথি হয়ে আসে। শুধু পাখিই নয়, এই জলাভূমিগুলো উভচর, সরীসৃপ ও ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় শতাধিক পাখি ছাড়াও ব্যাঙ, কচ্ছপ, সরীসৃপ এবং ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীর বসতি রয়েছে এখানে, যা বাংলাদেশের জলাভূমিভিত্তিক বাস্তুসংস্থানের এক অনন্য উদাহরণ।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি সম্প্রসারণ, নগরায়ন, অবাধ মাছ শিকার এবং জলাভূমি ভরাটের কারণে এই জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে পড়ে। অনেক জলচর পাখির সংখ্যা কমে যেতে শুরু করে এবং কিছু প্রজাতির টিকে থাকা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দেয়। এমন পরিপ্রেক্ষিতে সরকার জলাভূমি সংরক্ষণের গুরুত্ব উপলব্ধি করে বিলজোয়ানা ও বিলভালাকে অভয়ারণ্য ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয়।

এই ঘোষণা কার্যকর হবে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী। এই আইনের ১৩ ধারা অনুযায়ী সরকার কোনো এলাকা বা জলাভূমিকে ‘অভয়ারণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করতে পারে, যেখানে বন্যপ্রাণী হত্যা, শিকার, নিধন, ধরাধরি এবং বসতি সম্প্রসারণের ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। একই আইনের ৩৫ ধারা অনুযায়ী, অভয়ারণ্য এলাকায় জীববৈচিত্র্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়, যাতে প্রাণী ও তাদের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ফলে বিলজোয়ানা ও বিলভালা এখন থেকে আইনি সুরক্ষার ছায়ায় আসবে, যেখানে প্রাণী সংরক্ষণ ও তাদের প্রকৃতিক আবাস রক্ষা করা হবে।

স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে যদি অভয়ারণ্যগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তাহলে এটি শুধু পরিবেশ রক্ষা করবে না, বরং স্থানীয় মানুষের জন্য পরিবেশবান্ধব জীবিকা বিকাশেও ভূমিকা রাখবে। কারণ, সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইকো-ট্যুরিজম এবং গবেষণা কার্যক্রমের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।

Ad 300x250

সম্পর্কিত