leadT1ad

তরুণদের ভোট চাইলেন তারেক রহমান, জানালেন তাঁদের নিয়ে পরিকল্পনা

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৮: ৩৩
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ২০: ০৭
রোববার (৩ আগস্ট) জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত ছাত্র সমাবেশ। ফেসবুক থেকে নেওয়া

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত ছাত্র সমাবেশ। রোববার (৩ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৬টায় এ সমাবেশ শেষ হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তারেক রহমান। তিনি দেশের ৪ কোটি নতুন ভোটার নিয়ে দলীয় পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। পাশাপাশি তাঁদের কাছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভোটও চান।

তারেক রহমান দেশের তরুণদের কাছে তাঁর ‘একটি অনুরোধ’ পৌঁছে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্য হোক।’

তারেক রহমান বলেন, ‘মানুষ এখন প্রতিহিংসার রাজনীতি চায় না। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জনগণ এখন রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন চায়। চলুন কথামালার রাজনীতি নয়, শুরু করি জীবনমান উন্নয়নের রাজনীতি।’

রাজধানীর শাহবাগে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান।

এ সময় তিনি বলেন, ‘বিএনপির আগামী দিনের নীতি কর্মসংস্থান সৃষ্টির। এটি জরুরি নয় যে, সব ছাত্রকে রাজনৈতিক সংগঠনে যুক্ত হতে হবে। সফল হওয়ার জন্য যোগ্যতম হওয়ার প্রচেষ্টা থাকা জরুরি। যোগ্য নেতৃত্ব হওয়ার অর্থ কোনও দলের অংশ বা এমপি-মন্ত্রী হওয়া নয়। বরং শিক্ষা, কৃষি, ব্যবসা, সাহিত্যে দক্ষ নেতৃত্ব প্রয়োজন। কারণ এর মাধ্যমেই দেশ এগিয়ে যায়।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘অ্যাকাডেমিক পর্যায়ের পাশাপাশি যার যে ক্ষেত্রে আগ্রহ, সেদিকে তাদের সম্পৃক্ত করা দরকার। বাস্তব কর্ম অভিজ্ঞতা তৈরি করতে হবে। তাহলে শিক্ষা শেষে বা ড্রপআউট হলেও কেউ বেকারত্বের শিকার হবে না, চাকরির জন্য সময়ক্ষেপণ করতে হবে না। একেবারে স্কুল পর্যায় থেকে বিএনপি ব্যবহারিক ও কারিগরি শিক্ষায় জোর দিয়ে কারিকুলাম ঠিক করার চেষ্টা করবে।’

স্কুল পর্যায়ে আইসিটি ও কারিগরি শিক্ষা প্রবর্তন করার পরিকল্পনার কথা জানান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘খেলাধুলা এবং আর্ট ও কালচারকে শিক্ষা কারিকুলামে নিয়ে আসব। যাতে করে যার যেটা পছন্দ দক্ষতা অর্জনে সক্ষম হয়।’

শিক্ষার্থীদের একাধিক ভাষা শেখা নিয়ে দলীয় পরিকল্পনার কথা জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে স্কুল থেকে বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি তৃতীয় ও চতুর্থ ভাষা হিসেবে আরবি, মান্দারিন, জার্মান, ফ্রেঞ্চ, জাপানিজসহ অন্য ভাষাগুলো শেখার সুযোগ করে দেবে। এর পাশাপাশি রাখা হবে প্র্যাকটিক্যাল সাবজেক্ট।’

দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসার ঘটানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তারেক রহমান। তাঁর মতে, এসব খাতে উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে বিশ্বখ্যাত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করা সম্ভব।

এর পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সারদের জন্য দেশে অর্জিত অর্থ আনা সহজ করার উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‌‘মেধাভিত্তিক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যোগ্যতম হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। জ্ঞানার্জন এবং লেখাপড়া হবে প্রথম অগ্রাধিকার। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার বলে মনে করি।’

রোববার (৩ আগস্ট) জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত ছাত্র সমাবেশ। ফেসবুক থেকে নেওয়া
রোববার (৩ আগস্ট) জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল আয়োজিত ছাত্র সমাবেশ। ফেসবুক থেকে নেওয়া

তারেক রহমান বলেন, ‘দেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে দেড় দশকে ফ্যাসিস্ট সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করেছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক হলের সম্প্রসারণ ও খাবারের মান বাড়ানো জরুরি। বিদ্যমান সমস্যা ও তা সমাধানের লিখিত প্রস্তাবনা বিএনপির কাছে পাঠানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের কাছে আহ্বান জানাই।’

বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ বা চরমপন্থার উত্থান বা পুনর্বাসন ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘১৩ কোটির মধ্যে ৪ কোটি নতুন ভোটার। জাতীয় নির্বাচন সামনে, নির্বাচনে হারানো ভোটের অধিকার পুনর্প্রতিষ্ঠার বিরাট সুযোগ তৈরি হয়েছে। সবার সমর্থন এবং সহযোগিতা চাই। সারা দেশের সকল শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার অনুরোধ, নতুন ভোটারদের কাছে আমার আহ্বান ছড়িয়ে দেবে। তারুণ্যের প্রথম ভোট, ধানের শীষের জন্য হোক।’

এর আগে সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাংলাদেশে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বিভক্তি সৃষ্টির অনেক চেষ্টা হচ্ছে। ভারতে বসে ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশে আক্রমণের হুমকি দিচ্ছে। গোলযোগ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের শপথ নিতে হবে, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে রাজনীতি করার সুযোগ দেব না। আমরা কারো কাছে মাথা নত করব না।’

ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘তোমাদের বন্ধু বলতে গর্ববোধ করি। তোমাদের সঙ্গে আমরা কাজ করেছি, করব। মেধা ও বুদ্ধিমত্তার চর্চা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সামনে এখন লড়াই, বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই। মানুষ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচনের অপেক্ষা করছে। তার আগে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন, সেই অপেক্ষা করছে। তারেক রহমান আসবেন, নেতৃত্ব দেবেন, পথ দেখাবেন।’

ছাত্রদলের সমাবেশে অংশ নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আড়ালে-আবডালে নাকি ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এই সরকার ও গণতন্ত্রের বিপক্ষে। যারা ষড়যন্ত্র করবে তাঁদের রেহাই দেওয়া হবে না। ছাত্রদল এরশাদের স্বৈরতন্ত্র বিদায় করেছিল। লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠক অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে বিশ্বাস করি।’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সঞ্চালনা করেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।

সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের অগ্রভাগে ছাত্রদলের লাখ লাখ নেতা-কর্মী নেতৃত্ব দিয়েছে। শহীদ ওয়াসিমের মৃত্যুর পর ১৬ জুলাই রাতে সর্বপ্রথম একদফা দাবি জানিয়েছিলেন তারেক রহমান। আমরা ক্রেডিট নিতে চাই না। কিন্তু ইতিহাসকে বিকৃত করা হলে ছাত্রদল মেনে নেবে না।’

তিনি বলেন, ‘যারা জুলাই-আগস্টের খণ্ডিত চিত্র ও মনগড়া ইতিহাস রচনার চেষ্টা করছেন তাদের ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করা হবে। ডাকসু ও সব ছাত্র সংসদে ছাত্রদল অংশ নেবে। তার আগে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের তালিকা ও শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।’

রাকিব বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট থেকে গড়ে ওঠা ঐক্য আজ বিনষ্ট হয়েছে। ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি। নির্দিষ্ট গোষ্ঠী স্বাধীনতা-সার্বভৌম ও স্থিতিশীলতা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। সামনে ছাত্র সংসদ নিশ্চিতে জোরালো ভূমিকা পালন করবে ছাত্রদল।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত