leadT1ad

তারেক রহমান দেশের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী: মির্জা ফখরুল

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ২২
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ২০: ২১
অনুষ্ঠানে অতিথিরা। ছবি: বিএনপির ফেসবুক পেজ থেকে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জিতলে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার (৯ আগস্ট) ঢাকার কাকরাইলে উইলন্স লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ মিলনায়তনে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাব’ এর জাতীয় কাউন্সিল-২০২৫ এর আয়োজন করা হয়। এ কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

অনুষ্ঠানে তারেক রহমানকে ‘ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে সম্বোধন করে দেশের স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আজকে তারেক রহমান শুধু আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নয়, আমাদের ভবিষ্যৎ নেতা, ভবিষ্যৎ কাণ্ডারী, ভবিষ্যতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী আজ এখানে বসে আছেন। আমি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, আমাদের এই নেতা আমাদের ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী, তার দৃষ্টিতে এটা আনতে চাই। তার স্ত্রীও (জুবাইদা রহমান) একজন প্রখ্যাত চিকিৎসক, এখান (ঢাকা) থেকে তিনি গ্রাজুয়েশন করেছেন, এই বিষয়টার দিকে তিনি অত্যন্ত বেশি গুরুত্ব দেবেন। কারণ ১৮ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবা এটা বড় বিশাল একটা দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।’

এ সময়ে পুরো মিলনায়তন তুমুল করতালি দিয়ে তারেক রহমানকে অভিনন্দন জানাতে থাকে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ডা. ফরিদ আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজন চিকিৎসক, আমার স্ত্রীর চিকিৎসক এবং আমি তার কাছে অত্যন্ত ঋণী। উনি আমাকে বলছিলেন, উনি যে বিষয়টার ওপর বিশেষজ্ঞ, বিলাত থেকে এসে এখানে তিনি ক্যান্সারের ওপরে যে কাজগুলো করতে চান, সেই কাজগুলো করতে পারছেন না। মেধাবী চিকিৎসক নিয়ে এখানে একটা সেন্টার গড়ে তুলতে চান, যেটা হবে ‘সেন্টার অব এক্সেলেন্স’।

‘ওষুধ নীতি’ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ওষুধ নীতি বিশেষ করে, যারা ওষুধ তৈরি করেন, প্রস্তুতকারক, তারা দুদিন আগে আমার কাছে এসেছিলেন। তারা গুরুতর সংকটে আছেন। বর্তমান সরকার প্রধানের যিনি বিশেষ সহকারী আছেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের, তিনি এমন কতগুলো ব্যবস্থা বা আইন দিচ্ছেন যাতে করে (ওষুধ) শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই বিষয়গুলো আমাদের তুলে ধরতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আজ যে এখানে আমাদের ওষুধ শিল্প, বিশ্বের অন্যন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিল, বাইরে রপ্তানি করছিল, এখন তারা বলছে যে, আমাদের কারখানা বন্ধ করে দিতে হবে, অর্থাৎ এই সরকারের নীতিগুলো এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মহাসচিব বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ৩১ দফা দিয়েছেন। এই জাতির সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দফাগুলো দিয়েছেন, এটাকে আমরা ‘ম্যাগনাকাটা’ বলি, সেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কথা তিনি (তারেক রহমান) উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যবহার করেছেন।

একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা বলতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমার অনেক বয়স হয়ে গেছে। আমরা দেখতে চাই, একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নয়, বাংলাদেশে শুধুমাত্র মানুষের ভোটের অধিকার নয়, বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার, বেঁচে থাকার অধিকার, অন্নের অধিকার সব কিছু নিশ্চিত করতে হবে।’

ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলন চলাকালে ‘নির্যাতিত চিকিৎসকদের অবদান তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলন চলার সময় আমাদের অনেক চিকিৎসককে তাদের কাজে বাধা দেয়া হয়েছে, আহতদের চিকিৎসা দেয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, জাতি আপনাদের সম্মান জানাচ্ছে যে, আপনারা যারা ওই সময়ে ঝুঁকি নিয়ে আহতদের চিকিৎসা করেছেন, সেটা জাতি কোনোদিন ভুলবে না।’

এ সময় জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান এবং ড্যাবের কাউন্সিলের সফলতাও কামনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

কাউন্সিল অধিবেশনের পর ড্যাবের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য বেলা ১টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এই নির্বাচনে ‘আজিজ-শাকুর’ ও ‘হারুন-শাকিল’ এই দুইটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

বিএনপির কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা বেশি: তারেক রহমান

বিএনপির কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা বেশি বলে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, ‘স্বৈরাচার পতনের পর ভালো কিছুর পরিবর্তনে দেশের মানুষ, বিএনপির কাছে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা করে। বাংলাদেশের ভালো পরিবর্তন প্রত্যাশা করে প্রতিটি নাগরিক।’

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের মানুষ বুক ভরে শ্বাস নিতে পেরেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‌‌’মানুষ চায় সামনের দিনগুলো যেন ভালো হয়। ৫ আগস্টের পর নিরপেক্ষ মানুষও বিএনপির কাছে ভালো কিছুর পরিবর্তন প্রত্যাশা করে সবচেয়ে বেশি। তাই দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়াতে হবে।’

সম্মেলনের শুরুতেই বিএনপি চেয়ারপারর্সন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিশ্চিত করায় তাঁর সন্তান হিসেবে দেশের চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানান তারেক রহমান। তিনি আরো বলেন, গত ১৫ বছরে হাজারো মানুষ খুন ও সহিংসতার শিকার হয়েছে। অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে, নিখোঁজ হয়েছে। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথ ধরে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের বিদায়ের পর মানুষ বুক ভরে নিশ্বাস নিয়েছিল। স্বৈরাচারের বিদায়ে মানুষের সামনে বাংলাদেশকে নতুন করে বিনির্মাণের প্রত্যাশা জেগে ওঠে।

তিনি বলেন, এখন দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা হলো একটি স্বস্তির বাংলাদেশ। আমরা বিশ্বাস করি, সবাই মিলে চেষ্টা করলে মানুষের সেই প্রত্যাশার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।

বিএনপির ভারপ্রপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে গণতন্ত্রের ভীতকে ধীরে ধীরে শক্তিশালী করতে হবে। সঠিক ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে জবাবদিহিতা ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করা সম্ভব।

রাষ্ট্র পুনর্গঠনে ৩১ দফা বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। আজকে যেসব রিফর্ম নিয়ে কথা হচ্ছে, বর্তমান সরকার রিফর্ম কমিটি গঠন করেছে, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত দিচ্ছে, এই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে যেসব প্রস্তাব, তার ৯৯ শতাংশই বিএনপি আড়াই বছর আগে জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিল।’

তারেক রহমান বলেন, ড্যাবের কাউন্সিল প্রমাণ করে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা নেই, এমন বক্তব্য পুরোপুরি সত্য নয়।

তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। খালেদা জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে দেশকে পরিচালিত করেছেন। তাই বর্তমান প্রজন্মের দায়িত্ব হচ্ছে সেই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখা, ধীরে ধীরে তার ভিত শক্ত করা।

চিকিৎসকদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ৩১ দফার মধ্যে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে যে প্রস্তাব রয়েছে, তা বাস্তবায়নে চিকিৎসক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, সরকার একা এসব বাস্তবায়ন করতে পারবে না। দলীয় সংসদ সদস্য বা নেতারাও পারবেন না। আপনাদের প্রত্যেকের সহযোগিতা প্রয়োজন। ড্যাবের প্রতিটি সদস্য, প্রতিটি কাউন্সিলরের সক্রিয় ভূমিকা ছাড়া এটি সম্ভব নয়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির কেন্দ্রীয় শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) ভিসি অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম প্রমুখ।

Ad 300x250

সম্পর্কিত