.png)

সুলতান মাহমুদ রানা

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজ করছে অনিশ্চয়তার পরিবেশ। এরই মধ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর একটি দাবি—তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় দেখতে চায়। আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি কৌশলগত রাজনৈতিক অবস্থান মনে হলেও, এর গভীরে রয়েছে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা, সাংবিধানিক কাঠামো এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জটিল কিছু প্রশ্ন। বিএনপির এই দাবিকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় আগামী দিনের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি কোন দিকে মোড় নিতে পারে।
প্রথমত, বিএনপির এই দাবিকে কেন এক ধরনের ‘যুক্তিসঙ্গত’ বলে মনে করা হচ্ছে, তা বোঝা প্রয়োজন। যে প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার চরিত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে, ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের প্রতিনিধিত্ব এবং তাদের সহযোগীদের দ্বারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা পরিস্থিতিকে জটিল করেছে। বিএনপির আশঙ্কা, অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা উপদেষ্টাদের মধ্যে কেউ কেউ যদি দলীয় রাজনীতির প্রতি সহানুভূতিশীল হন, তবে নির্বাচনের মাঠে সব দলের জন্য সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই তারা এমন একটি ব্যবস্থা চাইছে, যা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে শুধু নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব পালন করবে—যে ভূমিকাটি ঐতিহ্যগতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছিল।
এখানেই অন্তর্বর্তী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্যকার সাংবিধানিক ও কার্যকারিতার পার্থক্যটি সামনে আসে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় একটি সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণের জন্য, যেখানে একটি নির্বাচিত সরকার আসার আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পালন করাই এর মূল কাজ। অন্যদিকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল একটি সম্পূর্ণ সাংবিধানিক ব্যবস্থা (ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে), যার একমাত্র লক্ষ্য ছিল একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। আইনগতভাবে, একটি অন্তর্বর্তী সরকার সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে না, কারণ দুটি ব্যবস্থার দর্শন ও সাংবিধানিক ভিত্তি ভিন্ন।
তবে বিএনপি সরাসরি রূপান্তরের কথা না বলে ‘ভূমিকা’ পালনের কথা বলছে। এর অর্থ হলো, তারা চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার তার দৈনন্দিন কার্যপরিধি সীমিত করে কেবল নির্বাচনকালীন দায়িত্বগুলো পালন করুক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল কাজই ছিল নির্বাচন পরিচালনা করা; তারা নীতি নির্ধারণী বা বড় কোনো প্রকল্পে হাত দিত না। বিএনপি ঠিক এই নিশ্চয়তাটুকুই চাইছে। যেহেতু বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে সংকট চলছে, সেহেতু তাদের এই কৌশলগত দাবিটি মূলত নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতার একটি পরীক্ষা।
এই প্রেক্ষাপটে আদালতের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। অতীতে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়েছিল আদালতের রায়েই। আবার নতুন কোনো পরিস্থিতিতে আদালতের একটি রায় পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষমতা রাখে। যদি আদালত মনে করে যে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যপরিধি কেমন হবে, সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন, তবে তা পুরো পরিস্থিতিকে বদলে দিতে পারে। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পর যে সাংবিধানিক কাঠামো তৈরি হয়েছে, তা একটি অবাধ নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট কি না, সেই প্রশ্নটিও আবারও সামনে আসছে।
আসন্ন ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে একটি সফল নির্বাচনের জন্য সরকারের সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথম ও প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, সব দলকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা। জুলাই সনদে মাত্র ১৬টি দলের অংশগ্রহণ থাকলেও দেশের প্রায় ২৫ থেকে ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, যাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ও বামপন্থী দলগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ শক্তিও রয়েছে, তারা এখনও এই প্রক্রিয়ার বাইরে।
একটি নির্বাচন তখনই অর্থবহ হয়, যখন দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো এতে অংশ নেয়। তাই সব দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা সরকারের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ।
এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির প্রশ্নটি। বর্তমানে মাঠের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সব দলের জন্য সমান সুযোগ এখনো নিশ্চিত হয়নি। ১৯৯৬ বা ২০০১ সালের নির্বাচনের মতো পরিবেশ, যেখানে ফলাফল নিয়ে কোনো পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন ছিল, তা এখনো অনুপস্থিত। একটি নির্বাচন যদি আগে থেকেই ‘অনুমেয়’ হয়ে যায়, তবে তা গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী। মানুষ তখনই ভোটকেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত হয়, যখন তারা বিশ্বাস করে যে তাদের ভোট সরকার পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে।
একটি সত্যিকারের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য কয়েকটি পূর্বশর্ত রয়েছে। প্রথমত, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এমনভাবে কাজ করতে হবে, যাতে তারা কোনো বিশেষ দলকে সুবিধা দিচ্ছে বা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছে—এমন ধারণা তৈরি না হয়। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনী প্রচারণায় সব দলের জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে একজন নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকা পালন করতে হবে, যে খেলার মাঠে ফাউল হলে নির্দ্বিধায় লাল কার্ড দেখাতে পারে। সবশেষে, সরকারকে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের স্বার্থে কঠোর ও নিরপেক্ষ থাকতে হবে। যে ২৫-২৮টি দল এখনো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে, তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তায়। তাদের বাদ দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে।
পরিশেষে বলা যায়, বিএনপির এই দাবিটি নিছক একটি রাজনৈতিক চাণক্য নয়, বরং এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের এক গভীর সংকটের প্রতিফলন। অন্তর্বর্তী সরকার বনাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিতর্কটি আসলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষারই ভিন্ন রূপ। আগামী দিনের নির্বাচন কতটা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে, তা নির্ভর করছে সরকার, রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশন সম্মিলিতভাবে কতটা আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে পারে, তার ওপর। একটি ‘অনুমেয়’ নির্বাচন নয়, দেশবাসী একটি প্রতিযোগিতামূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচন দেখতে চায়, যার ফলাফল আসবে ব্যালট বাক্স থেকে, অন্য কোনো উপায়ে নয়।
লেখক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজ করছে অনিশ্চয়তার পরিবেশ। এরই মধ্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর একটি দাবি—তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় দেখতে চায়। আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি কৌশলগত রাজনৈতিক অবস্থান মনে হলেও, এর গভীরে রয়েছে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা, সাংবিধানিক কাঠামো এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে জটিল কিছু প্রশ্ন। বিএনপির এই দাবিকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করলেই বোঝা যায় আগামী দিনের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি কোন দিকে মোড় নিতে পারে।
প্রথমত, বিএনপির এই দাবিকে কেন এক ধরনের ‘যুক্তিসঙ্গত’ বলে মনে করা হচ্ছে, তা বোঝা প্রয়োজন। যে প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার চরিত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে, ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের প্রতিনিধিত্ব এবং তাদের সহযোগীদের দ্বারা একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা পরিস্থিতিকে জটিল করেছে। বিএনপির আশঙ্কা, অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা উপদেষ্টাদের মধ্যে কেউ কেউ যদি দলীয় রাজনীতির প্রতি সহানুভূতিশীল হন, তবে নির্বাচনের মাঠে সব দলের জন্য সমান সুযোগ বা ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরি করা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই তারা এমন একটি ব্যবস্থা চাইছে, যা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে শুধু নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব পালন করবে—যে ভূমিকাটি ঐতিহ্যগতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছিল।
এখানেই অন্তর্বর্তী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্যকার সাংবিধানিক ও কার্যকারিতার পার্থক্যটি সামনে আসে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় একটি সাংবিধানিক শূন্যতা পূরণের জন্য, যেখানে একটি নির্বাচিত সরকার আসার আগ পর্যন্ত রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পালন করাই এর মূল কাজ। অন্যদিকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল একটি সম্পূর্ণ সাংবিধানিক ব্যবস্থা (ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে), যার একমাত্র লক্ষ্য ছিল একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। আইনগতভাবে, একটি অন্তর্বর্তী সরকার সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারে রূপান্তরিত হতে পারে না, কারণ দুটি ব্যবস্থার দর্শন ও সাংবিধানিক ভিত্তি ভিন্ন।
তবে বিএনপি সরাসরি রূপান্তরের কথা না বলে ‘ভূমিকা’ পালনের কথা বলছে। এর অর্থ হলো, তারা চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার তার দৈনন্দিন কার্যপরিধি সীমিত করে কেবল নির্বাচনকালীন দায়িত্বগুলো পালন করুক। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল কাজই ছিল নির্বাচন পরিচালনা করা; তারা নীতি নির্ধারণী বা বড় কোনো প্রকল্পে হাত দিত না। বিএনপি ঠিক এই নিশ্চয়তাটুকুই চাইছে। যেহেতু বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে সংকট চলছে, সেহেতু তাদের এই কৌশলগত দাবিটি মূলত নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষতার একটি পরীক্ষা।
এই প্রেক্ষাপটে আদালতের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। অতীতে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়েছিল আদালতের রায়েই। আবার নতুন কোনো পরিস্থিতিতে আদালতের একটি রায় পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষমতা রাখে। যদি আদালত মনে করে যে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যপরিধি কেমন হবে, সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন, তবে তা পুরো পরিস্থিতিকে বদলে দিতে পারে। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের পর যে সাংবিধানিক কাঠামো তৈরি হয়েছে, তা একটি অবাধ নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট কি না, সেই প্রশ্নটিও আবারও সামনে আসছে।
আসন্ন ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে একটি সফল নির্বাচনের জন্য সরকারের সামনে একাধিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথম ও প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো, সব দলকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা। জুলাই সনদে মাত্র ১৬টি দলের অংশগ্রহণ থাকলেও দেশের প্রায় ২৫ থেকে ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, যাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ও বামপন্থী দলগুলোর মতো গুরুত্বপূর্ণ শক্তিও রয়েছে, তারা এখনও এই প্রক্রিয়ার বাইরে।
একটি নির্বাচন তখনই অর্থবহ হয়, যখন দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো এতে অংশ নেয়। তাই সব দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা সরকারের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি কাজ।
এর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির প্রশ্নটি। বর্তমানে মাঠের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সব দলের জন্য সমান সুযোগ এখনো নিশ্চিত হয়নি। ১৯৯৬ বা ২০০১ সালের নির্বাচনের মতো পরিবেশ, যেখানে ফলাফল নিয়ে কোনো পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন ছিল, তা এখনো অনুপস্থিত। একটি নির্বাচন যদি আগে থেকেই ‘অনুমেয়’ হয়ে যায়, তবে তা গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী। মানুষ তখনই ভোটকেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত হয়, যখন তারা বিশ্বাস করে যে তাদের ভোট সরকার পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে।
একটি সত্যিকারের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য কয়েকটি পূর্বশর্ত রয়েছে। প্রথমত, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এমনভাবে কাজ করতে হবে, যাতে তারা কোনো বিশেষ দলকে সুবিধা দিচ্ছে বা অন্যায়কে প্রশ্রয় দিচ্ছে—এমন ধারণা তৈরি না হয়। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনী প্রচারণায় সব দলের জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে একজন নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকা পালন করতে হবে, যে খেলার মাঠে ফাউল হলে নির্দ্বিধায় লাল কার্ড দেখাতে পারে। সবশেষে, সরকারকে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রমাণ দিতে হবে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের স্বার্থে কঠোর ও নিরপেক্ষ থাকতে হবে। যে ২৫-২৮টি দল এখনো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে, তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকারের ওপরই বর্তায়। তাদের বাদ দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে।
পরিশেষে বলা যায়, বিএনপির এই দাবিটি নিছক একটি রাজনৈতিক চাণক্য নয়, বরং এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের এক গভীর সংকটের প্রতিফলন। অন্তর্বর্তী সরকার বনাম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিতর্কটি আসলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষারই ভিন্ন রূপ। আগামী দিনের নির্বাচন কতটা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে, তা নির্ভর করছে সরকার, রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশন সম্মিলিতভাবে কতটা আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে পারে, তার ওপর। একটি ‘অনুমেয়’ নির্বাচন নয়, দেশবাসী একটি প্রতিযোগিতামূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচন দেখতে চায়, যার ফলাফল আসবে ব্যালট বাক্স থেকে, অন্য কোনো উপায়ে নয়।
লেখক: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সামরিক ঘনিষ্ঠতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক ঢাকার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কিনা সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগে
গুম–নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি সেনাবাহিনীর ১৫ কর্মকর্তা। বাংলাদেশে এই প্রথম ১৯৭৩ সালের আইনের অধীনে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, এই বিচার কি সেনা আইনের অধীনে কোর্ট মার্শালে করা যেতো কিনা। এর আইনগত বাস্তবতা নিয়ে লিখেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর
১ দিন আগে
গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, তা এখন নতুন পরীক্ষার সম্মুখীন। জুলাই সনদ ও আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংকটের কারণ এবং উত্তরণের উপায় নিয়ে স্ট্রিমের সঙ্গে কথা বলেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞা
২ দিন আগে
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পরপর সাক্ষাৎ এখন একটি নতুন আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় গতকাল এনসিপি নেতাদের সাক্ষাৎ, একই দিনে জামায়াতে ইসলামী ও একদিন আগে বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি নতুন এক রাজনৈতিক সমীকরণের ইঙ্গিত
৩ দিন আগে