একজন বৈমানিকের চোখে দেখা
ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রাক্তন প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধানোয়া সোস্যাল মিডিয়াকে যোগাযোগের অতিগুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তবে এর অতিমাত্রায় ব্যবহারে মানুষ ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও সংযোগ স্থাপনের দক্ষতা হারিয়ে ফেলছে বলে উল্লেখ করেন।
কর্নেল (অব.) মো. সোহেল রানা
২১ জুলাই সোমবার আমাদের জীবনে দুর্যোগ নেমে এল। ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান হলো বিধ্বস্ত। বেলা একটার খানিক পরে অবতরণের আগমুহূর্তে স্কুলের হায়দার আলী ভবনের সামনে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ ফাইটার বিমানটি। যুদ্ধবিমানটির একমাত্র চালক ছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির ইসলাম। অনেক কোমলমতি শিশুদের মতো তাঁকেও কেড়ে নিয়েছে মৃত্য। শোক আর বেদনায় আক্রান্ত এখন বাংলাদেশ।
আমি নিজেও একজন পেশাদার বৈমানিক। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, যথাযথভাবে বিমান চালনা শিখতে প্রশিক্ষণার্থী বৈমানিকদের কতটা পরিশ্রম করতে হয়। নিশ্চয়ই তৌকিরও ছিলেন সে পরিশ্রমের রাস্তায়। সেজন্যই প্রশিক্ষক তাঁকে বিমানের কমান্ড ছেড়ে দিয়ে একাকী আকাশে পাঠিয়েছিলেন। এই দিন ছিল তৌকিরের নিবিড় প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করার সলো বা একক ফ্লাইট। কিন্তু রানওয়ের পাশে অপেক্ষমাণ প্রশিক্ষক তো তখনও জানতেন না যে একটু পরেই তাঁর প্রিয় ছাত্র বিমানসহ ধোঁয়া আর আগুনের কুণ্ডুলীতে পরিণত হবে।
যেকোনো দেশের বিমানবাহিনীর ফাইটার বৈমানিকদের সবচেয়ে অভিজাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই বৈমানিকদের পেশাগত সফলতা লাভ করা সহজ নয়। এ জন্য দরকার হয় অসাধারণ মেধা, দুর্দান্ত শারীরিক ও মানসিক ফিটনেসের পাশাপাশি কঠোর প্রশিক্ষণ ও ধারাবাহিক অনুশীলন। দেশ তাঁদের অতি যত্নে ও কঠোর শৃঙ্খলার আবরণে লালন করে। দেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষায় তাঁরাই সন্মুখসারির অন্যতম যোদ্ধা, সবসময় আত্মদানে প্রস্তুত।
তৌকিরও এমন একজন মানুষ ছিলেন। কিন্তু সেই প্রাণ অকালে ঝরে গেল। ২২ জুলাই দাফন শেষে রাজশাহীর সাপুরা কবরস্থানে শায়িত হয়েছেন তিনি।
বৈমানিক হিসেবে স্বভাবতই তৌকিরের অকালে চলে যাওয়া আমাকে কাঁদিয়েছে। এর সঙ্গে আছে অসংখ্য শিশুর মৃত্যুর ঘটনা—হৃদয়টা যেন মরে আছে।
মাসখানেক আগে ভারতের আহমেদাবাদের একটি মেডিকেল হোস্টেলের ওপর এয়ার ইন্ডিয়ার এক বিমান আছড়ে পড়েছিল। এতে ৩৭ জন নিহত হন। তাঁরা কেউই বিমানের যাত্রী ছিলেন না। সারা পৃথিবী শোক না কাটাতে না কাটাতেই আমাদের দেশে ঘটে গেল মর্মান্তিক এ ঘটনা। আমাদের দুর্ঘটনাটি আরও করুণ। একদল শিশু তাদের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা শিক্ষাঙ্গনে ছিল। তাদের মা-বাবারা এটা ভেবে নিশ্চিন্ত ছিলেন যে একটু পরেই তাঁদের সন্তানেরা ঘরে ফিরবে। তেমনটা হয়নি।
আর তৌকিরের মা-বাবাও আশায় ছিলেন যে, প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি ফিরবে তাঁদের ছেলেটিও। তৌকির ফিরেছেন। তবে পুড়ে অঙ্গার, লাশ হয়ে। এত এত লাশের ভার আমরা নিতে পারছি না। আমরা হাহাকার করছি। এ সময় কেউ কেউ এমন ভাবনাও ভাবতে পারেন যে কেন এমন ঘটল?
সাধারণত কোনো বিমান দুর্ঘটনার পর আমরা ভাবি, বিমানের যন্ত্রাংশ কি ঠিক ছিল? বিমানগুলো কি পুরোনো? যিনি বিমানটি চালাচ্ছিলেন, তিনি যোগ্য ছিলেন তো? আবহাওয়া ভালো ছিল? আচ্ছা, বিমানবন্দরের আশপাশের বিল্ডিংগুলো এত উঁচু কেন? টাওয়ার কি দেখতে পায়নি? সরকার কি দুর্নীতি করছে?
এমন শত-সহস্র প্রশ্ন সবার মনেই ঘুরপাক খায়। আমার মাথায়ও এমনই ভাবনা। তবে এ লেখা এখন লিখতে বসেছি অন্য এক প্রসঙ্গ নিয়ে।
একটা বিষয় আগেই খোলাসা করা ভালো যে এ লেখায় যা বলতে চাই, তার সাপেক্ষে আমার কাছে কাছে খুব বেশি প্রামাণিক দলিল-দস্তাবেজ নেই। তবুও আমি লিখছি। কারণ, এ লেখা আমার অনুভবজাত। আমি যা দেখেছি—এখনো দেখি—যা পড়েছি এবং যা অনুভব করেছি, নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি নিজে যেহেতু সেনাবাহিনীর একজন বৈমানিক ছিলাম বা এ পেশা সম্পর্কে খানিকটা জানি, তাই বোধহয় দায়বোধটাও বেশি।
২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধানোয়া একটি অদ্ভুত প্রসঙ্গের অবতারণা করেছিলেন। বেঙ্গালুরুতে ৫৭তম ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব এয়ারোস্পেস মেডিসিন সম্মেলনে তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, তাঁর বৈমানিকেরা অনেক রাত পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকেন। অন্যদিকে বেশির ভাগ ফ্লাইট ব্রিফিংই হয় সকাল ছয়টায়। ফলে বৈমানিকেরা রাতে ভালোমতো ঘুমাতে পারেন না। এ সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ইনস্টিটিউট অব এয়ারোস্পেস মেডিসিনকে এমন কোনো উপায় বের করতে বলেন, যেখানে বিমান ওড়ানোর আগে বোঝা যাবে বৈমানিক রাতে ভালো করে ঘুমিয়েছেন কিনা। এ সময় ধানোয়া সোস্যাল মিডিয়াকে যোগাযোগের অতিগুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করেও এর অতিমাত্রায় ব্যবহারে মানুষ ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও সংযোগ স্থাপনের দক্ষতা হারিয়ে ফেলছে বলে উল্লেখ করেন।
এ প্রসঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতা বলি। ২০০৯ সালে একটি ব্যাটেলিয়ানের অধিনায়ক থাকার সময় প্রতিমাসে দরবার নিতে হতো আমাকে। এ দিন আমার অধীনে থাকা সর্বস্তরের সৈনিকদের সঙ্গে ভালোমন্দ আলোচনা করতাম। সবসময় সচেতন থাকতাম, আমার সঙ্গে যেন প্রতিটি সৈনিকের ‘আই কন্টাক্ট’ হয়। বিশ্বাস করতাম, সৈনিকদের সঙ্গে মানসিকভাবে যুক্ত না হলে তাদের আমি প্রেষণা দিতে পারব না। তো সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার প্রায় ৮-১০ বছর পরের ঘটনা। এক অধিনায়ক, যে আমার জুনিয়র ছিল একসময়, তাকে একবার জিজ্ঞাসা করলাম, কেমন চলছে তোমার কমান্ড?
উত্তরে সে যা বলল তা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। সে বলল, অধীনস্থ কেউই তাঁর কথা মনযোগ দিয়ে শোনেন না। তার ধারণা, তার অধীনস্থেরা এমনভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হয়ে গেছে যে, তাদের দেখে মনে হয় সারারাত তারা ঘুমায়নি। অথবা তারা দরবারে বসেই অন্যমনষ্ক থাকে। হয়তো ফেসবুক, ইউটিউব বা টিকটক নিয়ে ভাবছে।
আজ অফিসে এক অনুজ জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা ভাইয়া, এই গত কয়েক বছরে এত প্রশিক্ষণ বিমান ধ্বংস হলো কেন?
প্রশ্নটি খুবই নিরীহ। তবু উত্তর দিতে গিয়ে থমকে গেলাম। তাই তো! প্রশিক্ষণে কোথাও কি ঘাটতি হচ্ছে?
আমার আরও কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলি। তাতে যদি প্রশ্নটির উত্তর কিছুটা মেলে।
নব্বই দশকের শেষের দিকের ঘটনা। বৈমানিক হিসেবে তখন আমি প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলাম। সে সময় আমাদের শয়নে-স্বপনে, আড্ডা বা ঝগড়ায় ছিল শুধুই ফ্লাইং। রাগ, অভিমান, হতাশা—সব ছিল ফ্লাইংকেন্দ্রিক। বইয়ের পাতায় প্রশিক্ষণসংক্রান্ত নানা কিছু খুঁজতাম। আর প্রশিক্ষণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল মানসিক ফ্লাইং বা ‘মেন্টাল ফ্লাইং’। অর্থাৎ পরদিন যে মিশন করব, তা চোখ বন্ধ করে ভাবতাম। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিমান চালনা শুরু থেকে অবতরণ পর্যন্ত কী কী করব, তা নিয়ে ভাবতাম। স্টার্ট থেকে স্টপ—পুরো এক ঘণ্টার মিশনগুলো সিকোয়েন্স অনুযায়ী কল্পনা করতাম। এমনকি ইঞ্জিন বন্ধ হলে বা আগুন ধরলে কী করব, সে ভাবনাও ছিল মাথায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ প্র্যাক্টিস ছিল অত্যন্ত উঁচুমানের মেডিটেশন।
যখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলাম, তখন ঘুমাতে যেতাম ঘড়ি ধরে, ঠিক রাত দশটায়। সকালে উঠে ফুরফুরে মন নিয়ে যেতাম ফ্লাইং মিশনে। আর মাঝেমধ্যেই চিকিৎসকেরা আমাদের সহধর্মিনীদের ডেকে বলতেন, বৈমানিকের মন অশান্ত হয়, এমন কোনো কাজ তাঁরা যেন না করেন। আবার যেকোনো মিশন শেষ হলেই চলত হিসাব-নিকাশ, কী কী ভুল হয়েছে। হাতেকলমে ধরিয়ে দিতেন প্রশিক্ষকেরা।
অনেক দিন হয় আমি সেনা পরিমণ্ডলের বাইরে। এখন কি ফেসবুক, ইউটিউব বা নেটফ্লিক্সের রংদার জগৎ এড়িয়ে বৈমানিকেরা ঘড়ি ধরে ঠিক দশটায় ঘুমাতে যান? মেন্টাল ফ্লাইং করেন? বিমান চালনার সময় জরুরি অবস্থা হলে কী করবেন, ঘুমানোর আগে তা নিয়ে ভাবেন? বিমানে ওঠার আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন? হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজগুলোয় চোখ বুলিয়ে নেন কি? সহধর্মিনীরা কি স্বামীর কাজে সহযোগিতা করেন? ফ্লাইং মিশন শেষে প্রশিক্ষক কি ডিব্রিফিং (পুনরায় বলা) করেন? নাকি নেমেই হোয়াটসঅ্যাপের ম্যাসেজ চেক করতে করতে অফিসে ফিরে যান?
উল্লেখ্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু মিস হয়ে যাওয়ার ভয় মানুষকে এখন ঘন ঘন স্ক্রল করতে বাধ্য করে। এটি আমার নয়, মনোবিদদের বক্তব্য। তাঁদের কথা হলো, ভার্চুয়াল জগতে অতিরিক্ত সময় কাটানো মানসিক চাপ বাড়ায়। পাশাপাশি বাস্তব জীবনের সম্পর্কও দুর্বল করে দেয়। তাই বিষয়টি শুধু বৈমানিকদের নয়, সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
একসময় নিজের চোখে দেখেছি বিমানের প্রকৌশলী বা এয়ারক্রাফট টেকনেশিয়ানেরা সারাদিন ইঞ্জিন খুলে উপুড় হয়ে কাজ করছেন। আর এখন? দেখি যে অধিকাংশের চোখই মোবাইলে নিবদ্ধ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে একদম উত্তরে আমার অফিসে যাওয়ার পথে দেখি কি ড্রাইভার, কি লোডার, মার্শালার—বিমানের সবার চোখই মোবাইলে। বিমান হ্যাঙ্গারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ও মেরামতাধীন বিমানের আশপাশের সবাইকে দেখি মোবাইলে কী যেন দেখছে।
তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি কি আমাদের মানসিকভাবে ক্রীতদাস বানিয়ে দিচ্ছে? কর্মক্ষমতা বা দক্ষতা গ্রাস করে নিচ্ছে?
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম অবশ্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিমানটি নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে গেছেন। তাঁকে তাই বীর হিসেবে স্মরণ করি। তাঁর প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা।
দীর্ঘদিন সেনা পরিমণ্ডলে উড্ডয়ন-প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছি। সেনা-পুলিশ-বিজিবি- বৈমানিক—এদের নির্বাচনী পরীক্ষা এবং একক পরীক্ষাতেও (সলো টেস্ট) যুক্ত ছিলাম। এসব নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় ছাত্র-অফিসারদের কাছে সাধারণ প্রশ্ন থাকে আমার—মাসে মোবাইল বিল কত আসে…ফেসবুকে বন্ধু সংখ্যা কত এবং এর মধ্যে কতজন ব্যক্তিগতভাবে তার চেনা?
এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে আমার ছাত্ররা কখনো হাসে। কখনো বা বিব্রতবোধ করে। কখনো আবার বিরক্ত হয়। তবে এতে আমার কিছু আসে যায় না। কারণ, প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে মূলত তাদের সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি পরিমাপ করার চেষ্টা করি আমি। প্রশিক্ষণের সময়টিতে ছাত্রদের সামাজিক এই যোগাযোগমাধ্যম থেকে খানিকটা দূরে রাখার একটা চেষ্টা করেছি বটে। বিগত দুই যুগের উড্ডয়ন-প্রশিক্ষক জীবন শেষে এটা নিশ্চিত যে মেধা যাচাইয়ে আমি ভুল করিনি। আমার ছাত্রেরা সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের একেকজন উজ্জ্বল নক্ষত্র।
সাম্প্রতিককালে দেশ-বিদেশে ঘন ঘন দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে বিভিন্ন বিমান। এসব দুর্ঘটনার পেছনে সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির কোনো ভূমিকা আছে কি না, এবার তা কি আমরা একটু ভেবে দেখব?
আমরা কি সতর্ক হব?
লেখক: বৈমানিক; উড্ডয়ন-প্রশিক্ষক
২১ জুলাই সোমবার আমাদের জীবনে দুর্যোগ নেমে এল। ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান হলো বিধ্বস্ত। বেলা একটার খানিক পরে অবতরণের আগমুহূর্তে স্কুলের হায়দার আলী ভবনের সামনে বিধ্বস্ত হয় এফ-৭ ফাইটার বিমানটি। যুদ্ধবিমানটির একমাত্র চালক ছিলেন স্কোয়াড্রন লিডার তৌকির ইসলাম। অনেক কোমলমতি শিশুদের মতো তাঁকেও কেড়ে নিয়েছে মৃত্য। শোক আর বেদনায় আক্রান্ত এখন বাংলাদেশ।
আমি নিজেও একজন পেশাদার বৈমানিক। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, যথাযথভাবে বিমান চালনা শিখতে প্রশিক্ষণার্থী বৈমানিকদের কতটা পরিশ্রম করতে হয়। নিশ্চয়ই তৌকিরও ছিলেন সে পরিশ্রমের রাস্তায়। সেজন্যই প্রশিক্ষক তাঁকে বিমানের কমান্ড ছেড়ে দিয়ে একাকী আকাশে পাঠিয়েছিলেন। এই দিন ছিল তৌকিরের নিবিড় প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করার সলো বা একক ফ্লাইট। কিন্তু রানওয়ের পাশে অপেক্ষমাণ প্রশিক্ষক তো তখনও জানতেন না যে একটু পরেই তাঁর প্রিয় ছাত্র বিমানসহ ধোঁয়া আর আগুনের কুণ্ডুলীতে পরিণত হবে।
যেকোনো দেশের বিমানবাহিনীর ফাইটার বৈমানিকদের সবচেয়ে অভিজাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই বৈমানিকদের পেশাগত সফলতা লাভ করা সহজ নয়। এ জন্য দরকার হয় অসাধারণ মেধা, দুর্দান্ত শারীরিক ও মানসিক ফিটনেসের পাশাপাশি কঠোর প্রশিক্ষণ ও ধারাবাহিক অনুশীলন। দেশ তাঁদের অতি যত্নে ও কঠোর শৃঙ্খলার আবরণে লালন করে। দেশের স্বাধীনতা ও অখণ্ডতা রক্ষায় তাঁরাই সন্মুখসারির অন্যতম যোদ্ধা, সবসময় আত্মদানে প্রস্তুত।
তৌকিরও এমন একজন মানুষ ছিলেন। কিন্তু সেই প্রাণ অকালে ঝরে গেল। ২২ জুলাই দাফন শেষে রাজশাহীর সাপুরা কবরস্থানে শায়িত হয়েছেন তিনি।
বৈমানিক হিসেবে স্বভাবতই তৌকিরের অকালে চলে যাওয়া আমাকে কাঁদিয়েছে। এর সঙ্গে আছে অসংখ্য শিশুর মৃত্যুর ঘটনা—হৃদয়টা যেন মরে আছে।
মাসখানেক আগে ভারতের আহমেদাবাদের একটি মেডিকেল হোস্টেলের ওপর এয়ার ইন্ডিয়ার এক বিমান আছড়ে পড়েছিল। এতে ৩৭ জন নিহত হন। তাঁরা কেউই বিমানের যাত্রী ছিলেন না। সারা পৃথিবী শোক না কাটাতে না কাটাতেই আমাদের দেশে ঘটে গেল মর্মান্তিক এ ঘটনা। আমাদের দুর্ঘটনাটি আরও করুণ। একদল শিশু তাদের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা শিক্ষাঙ্গনে ছিল। তাদের মা-বাবারা এটা ভেবে নিশ্চিন্ত ছিলেন যে একটু পরেই তাঁদের সন্তানেরা ঘরে ফিরবে। তেমনটা হয়নি।
আর তৌকিরের মা-বাবাও আশায় ছিলেন যে, প্রশিক্ষণ শেষে বাড়ি ফিরবে তাঁদের ছেলেটিও। তৌকির ফিরেছেন। তবে পুড়ে অঙ্গার, লাশ হয়ে। এত এত লাশের ভার আমরা নিতে পারছি না। আমরা হাহাকার করছি। এ সময় কেউ কেউ এমন ভাবনাও ভাবতে পারেন যে কেন এমন ঘটল?
সাধারণত কোনো বিমান দুর্ঘটনার পর আমরা ভাবি, বিমানের যন্ত্রাংশ কি ঠিক ছিল? বিমানগুলো কি পুরোনো? যিনি বিমানটি চালাচ্ছিলেন, তিনি যোগ্য ছিলেন তো? আবহাওয়া ভালো ছিল? আচ্ছা, বিমানবন্দরের আশপাশের বিল্ডিংগুলো এত উঁচু কেন? টাওয়ার কি দেখতে পায়নি? সরকার কি দুর্নীতি করছে?
এমন শত-সহস্র প্রশ্ন সবার মনেই ঘুরপাক খায়। আমার মাথায়ও এমনই ভাবনা। তবে এ লেখা এখন লিখতে বসেছি অন্য এক প্রসঙ্গ নিয়ে।
একটা বিষয় আগেই খোলাসা করা ভালো যে এ লেখায় যা বলতে চাই, তার সাপেক্ষে আমার কাছে কাছে খুব বেশি প্রামাণিক দলিল-দস্তাবেজ নেই। তবুও আমি লিখছি। কারণ, এ লেখা আমার অনুভবজাত। আমি যা দেখেছি—এখনো দেখি—যা পড়েছি এবং যা অনুভব করেছি, নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমি নিজে যেহেতু সেনাবাহিনীর একজন বৈমানিক ছিলাম বা এ পেশা সম্পর্কে খানিকটা জানি, তাই বোধহয় দায়বোধটাও বেশি।
২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধানোয়া একটি অদ্ভুত প্রসঙ্গের অবতারণা করেছিলেন। বেঙ্গালুরুতে ৫৭তম ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব এয়ারোস্পেস মেডিসিন সম্মেলনে তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, তাঁর বৈমানিকেরা অনেক রাত পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকেন। অন্যদিকে বেশির ভাগ ফ্লাইট ব্রিফিংই হয় সকাল ছয়টায়। ফলে বৈমানিকেরা রাতে ভালোমতো ঘুমাতে পারেন না। এ সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ইনস্টিটিউট অব এয়ারোস্পেস মেডিসিনকে এমন কোনো উপায় বের করতে বলেন, যেখানে বিমান ওড়ানোর আগে বোঝা যাবে বৈমানিক রাতে ভালো করে ঘুমিয়েছেন কিনা। এ সময় ধানোয়া সোস্যাল মিডিয়াকে যোগাযোগের অতিগুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করেও এর অতিমাত্রায় ব্যবহারে মানুষ ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও সংযোগ স্থাপনের দক্ষতা হারিয়ে ফেলছে বলে উল্লেখ করেন।
এ প্রসঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতা বলি। ২০০৯ সালে একটি ব্যাটেলিয়ানের অধিনায়ক থাকার সময় প্রতিমাসে দরবার নিতে হতো আমাকে। এ দিন আমার অধীনে থাকা সর্বস্তরের সৈনিকদের সঙ্গে ভালোমন্দ আলোচনা করতাম। সবসময় সচেতন থাকতাম, আমার সঙ্গে যেন প্রতিটি সৈনিকের ‘আই কন্টাক্ট’ হয়। বিশ্বাস করতাম, সৈনিকদের সঙ্গে মানসিকভাবে যুক্ত না হলে তাদের আমি প্রেষণা দিতে পারব না। তো সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার প্রায় ৮-১০ বছর পরের ঘটনা। এক অধিনায়ক, যে আমার জুনিয়র ছিল একসময়, তাকে একবার জিজ্ঞাসা করলাম, কেমন চলছে তোমার কমান্ড?
উত্তরে সে যা বলল তা শোনার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। সে বলল, অধীনস্থ কেউই তাঁর কথা মনযোগ দিয়ে শোনেন না। তার ধারণা, তার অধীনস্থেরা এমনভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হয়ে গেছে যে, তাদের দেখে মনে হয় সারারাত তারা ঘুমায়নি। অথবা তারা দরবারে বসেই অন্যমনষ্ক থাকে। হয়তো ফেসবুক, ইউটিউব বা টিকটক নিয়ে ভাবছে।
আজ অফিসে এক অনুজ জিজ্ঞাসা করল, আচ্ছা ভাইয়া, এই গত কয়েক বছরে এত প্রশিক্ষণ বিমান ধ্বংস হলো কেন?
প্রশ্নটি খুবই নিরীহ। তবু উত্তর দিতে গিয়ে থমকে গেলাম। তাই তো! প্রশিক্ষণে কোথাও কি ঘাটতি হচ্ছে?
আমার আরও কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলি। তাতে যদি প্রশ্নটির উত্তর কিছুটা মেলে।
নব্বই দশকের শেষের দিকের ঘটনা। বৈমানিক হিসেবে তখন আমি প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলাম। সে সময় আমাদের শয়নে-স্বপনে, আড্ডা বা ঝগড়ায় ছিল শুধুই ফ্লাইং। রাগ, অভিমান, হতাশা—সব ছিল ফ্লাইংকেন্দ্রিক। বইয়ের পাতায় প্রশিক্ষণসংক্রান্ত নানা কিছু খুঁজতাম। আর প্রশিক্ষণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল মানসিক ফ্লাইং বা ‘মেন্টাল ফ্লাইং’। অর্থাৎ পরদিন যে মিশন করব, তা চোখ বন্ধ করে ভাবতাম। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিমান চালনা শুরু থেকে অবতরণ পর্যন্ত কী কী করব, তা নিয়ে ভাবতাম। স্টার্ট থেকে স্টপ—পুরো এক ঘণ্টার মিশনগুলো সিকোয়েন্স অনুযায়ী কল্পনা করতাম। এমনকি ইঞ্জিন বন্ধ হলে বা আগুন ধরলে কী করব, সে ভাবনাও ছিল মাথায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ প্র্যাক্টিস ছিল অত্যন্ত উঁচুমানের মেডিটেশন।
যখন প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলাম, তখন ঘুমাতে যেতাম ঘড়ি ধরে, ঠিক রাত দশটায়। সকালে উঠে ফুরফুরে মন নিয়ে যেতাম ফ্লাইং মিশনে। আর মাঝেমধ্যেই চিকিৎসকেরা আমাদের সহধর্মিনীদের ডেকে বলতেন, বৈমানিকের মন অশান্ত হয়, এমন কোনো কাজ তাঁরা যেন না করেন। আবার যেকোনো মিশন শেষ হলেই চলত হিসাব-নিকাশ, কী কী ভুল হয়েছে। হাতেকলমে ধরিয়ে দিতেন প্রশিক্ষকেরা।
অনেক দিন হয় আমি সেনা পরিমণ্ডলের বাইরে। এখন কি ফেসবুক, ইউটিউব বা নেটফ্লিক্সের রংদার জগৎ এড়িয়ে বৈমানিকেরা ঘড়ি ধরে ঠিক দশটায় ঘুমাতে যান? মেন্টাল ফ্লাইং করেন? বিমান চালনার সময় জরুরি অবস্থা হলে কী করবেন, ঘুমানোর আগে তা নিয়ে ভাবেন? বিমানে ওঠার আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন? হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজগুলোয় চোখ বুলিয়ে নেন কি? সহধর্মিনীরা কি স্বামীর কাজে সহযোগিতা করেন? ফ্লাইং মিশন শেষে প্রশিক্ষক কি ডিব্রিফিং (পুনরায় বলা) করেন? নাকি নেমেই হোয়াটসঅ্যাপের ম্যাসেজ চেক করতে করতে অফিসে ফিরে যান?
উল্লেখ্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু মিস হয়ে যাওয়ার ভয় মানুষকে এখন ঘন ঘন স্ক্রল করতে বাধ্য করে। এটি আমার নয়, মনোবিদদের বক্তব্য। তাঁদের কথা হলো, ভার্চুয়াল জগতে অতিরিক্ত সময় কাটানো মানসিক চাপ বাড়ায়। পাশাপাশি বাস্তব জীবনের সম্পর্কও দুর্বল করে দেয়। তাই বিষয়টি শুধু বৈমানিকদের নয়, সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
একসময় নিজের চোখে দেখেছি বিমানের প্রকৌশলী বা এয়ারক্রাফট টেকনেশিয়ানেরা সারাদিন ইঞ্জিন খুলে উপুড় হয়ে কাজ করছেন। আর এখন? দেখি যে অধিকাংশের চোখই মোবাইলে নিবদ্ধ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকে একদম উত্তরে আমার অফিসে যাওয়ার পথে দেখি কি ড্রাইভার, কি লোডার, মার্শালার—বিমানের সবার চোখই মোবাইলে। বিমান হ্যাঙ্গারের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ও মেরামতাধীন বিমানের আশপাশের সবাইকে দেখি মোবাইলে কী যেন দেখছে।
তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্তি কি আমাদের মানসিকভাবে ক্রীতদাস বানিয়ে দিচ্ছে? কর্মক্ষমতা বা দক্ষতা গ্রাস করে নিচ্ছে?
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আগে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম অবশ্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিমানটি নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে গেছেন। তাঁকে তাই বীর হিসেবে স্মরণ করি। তাঁর প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা।
দীর্ঘদিন সেনা পরিমণ্ডলে উড্ডয়ন-প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেছি। সেনা-পুলিশ-বিজিবি- বৈমানিক—এদের নির্বাচনী পরীক্ষা এবং একক পরীক্ষাতেও (সলো টেস্ট) যুক্ত ছিলাম। এসব নির্বাচন-প্রক্রিয়ায় ছাত্র-অফিসারদের কাছে সাধারণ প্রশ্ন থাকে আমার—মাসে মোবাইল বিল কত আসে…ফেসবুকে বন্ধু সংখ্যা কত এবং এর মধ্যে কতজন ব্যক্তিগতভাবে তার চেনা?
এমন অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে আমার ছাত্ররা কখনো হাসে। কখনো বা বিব্রতবোধ করে। কখনো আবার বিরক্ত হয়। তবে এতে আমার কিছু আসে যায় না। কারণ, প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে মূলত তাদের সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি পরিমাপ করার চেষ্টা করি আমি। প্রশিক্ষণের সময়টিতে ছাত্রদের সামাজিক এই যোগাযোগমাধ্যম থেকে খানিকটা দূরে রাখার একটা চেষ্টা করেছি বটে। বিগত দুই যুগের উড্ডয়ন-প্রশিক্ষক জীবন শেষে এটা নিশ্চিত যে মেধা যাচাইয়ে আমি ভুল করিনি। আমার ছাত্রেরা সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের একেকজন উজ্জ্বল নক্ষত্র।
সাম্প্রতিককালে দেশ-বিদেশে ঘন ঘন দুর্ঘটনার মুখে পড়ছে বিভিন্ন বিমান। এসব দুর্ঘটনার পেছনে সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির কোনো ভূমিকা আছে কি না, এবার তা কি আমরা একটু ভেবে দেখব?
আমরা কি সতর্ক হব?
লেখক: বৈমানিক; উড্ডয়ন-প্রশিক্ষক
এ ধরনের গণ-ট্র্যাজেডি, সামষ্টিক আবেগ থেকে যা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়, তা কভার করার ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমের এমন অবস্থান অবশ্য নতুন নয়। দুর্দশাকে উপজীব্য করে সস্তা সাহিত্য রচনার চল রয়েছে বহু আগে থেকেই। মাইলস্টোন ক্যাম্পাসে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দেশের সংবাদমাধ্যমে সেই ঐতিহ্যই প্রবাহিত হয়েছে।
৬ ঘণ্টা আগেএকজন শিক্ষক হিসেবে ভাবছি, শ্লোকের মতো করে আমাদের মনে রাখতে হবে মাহরীনের অমোঘ উচ্চারণ, ‘দৌড়াও, ভয় পেও না, আমি আছি।’ পরম নির্ভরতা হয়ে এই ‘থাকা’, এই ‘আছিময়তা’ই হয়তো বড় শিক্ষকের গুণ।
১১ ঘণ্টা আগেযিনি যত বড় নেতা, তাঁর গাড়ি তত আগে হাসপাতালের গেটে! তাঁর অনুসারী তত বেশি অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখে! তাঁর ফেসবুক পেজে তত দ্রুত পোস্ট!
১ দিন আগেদশকের পর দশক ধরে পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে বিভিন্ন দেশকে প্রথমে খলনায়ক বানায়, তারপর তাদের অধিকার কেড়ে নেয় এবং সবশেষে ‘বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বলে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়—এই পদ্ধতি (প্যাটার্ন) এখন আর অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
৪ দিন আগে