লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের ৩৫০ জনেরও বেশি জঙ্গির ওপর গবেষণা করেছিলেন চার্লস রাসেল এবং বোম্যান মিলার। সেখানে দেখা গেছে, ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ সময়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসবাদীদের দুই-তৃতীয়াংশই ছিলেন স্নাতক। যদি দারিদ্র্যই সন্ত্রাসবাদের একমাত্র কারণ হতো, তাহলে কোটি কোটি মানুষ সহিংসতার দিকে ঝুঁকে পড়ত। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।
মোহাম্মদ আলী বাবাখেল
বিশ্বে যতক্ষণ দারিদ্র্য, অবিচার ও চরম বৈষম্য থাকবে, ততক্ষণ আমরা কেউই সত্যিকার অর্থে শান্তিতে থাকতে পারব না। —নেলসন ম্যান্ডেলা
পৃথিবীতে চরমপন্থা ক্রমেই বাড়ছে। আর প্রায়ই এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় দারিদ্র্যকে। এই দাবি প্রমাণ করা অতটা সহজ নয়। তবে বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য সূচক থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এই ক্ষেত্রে পাকিস্তানে দারিদ্র্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশের ভেতরের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও আর্থ-সামাজিক মেরুকরণও এখানে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি।
চরমপন্থার বিস্তারের জন্য অনেক সময় গরিব রাষ্ট্রগুলো দারিদ্র্য আর ধর্মীয় অপব্যাখ্যাকে দায়ী করে। শুধু এই দুটি কারণের ওপর সমস্ত মনোযোগ দেওয়ার পেছনে কি কোনো বিশেষ কারণ থাকে? বিশেষ করে যখন তারা সেই অজুহাত দিয়ে সম্ভবত সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন, সেই সঙ্গে জাতিগত, সাম্প্রদায়িক, সমাজ-সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংকট এড়িয়ে যান?
আইএমএফ ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক ২০২৪’ নামে একটি জরিপ করেছে। বুরকিনা ফাসো বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর ভেতর ১৬তম স্থানে রয়েছে। একই সঙ্গে দেশটি বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে প্রথম স্থানে রয়েছে। পাকিস্তান বিশ্বের ৫০তম দরিদ্র দেশ। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে তাদের স্থান দ্বিতীয়। সিরিয়া ও আফগানিস্তানের অবস্থানও বেশ সামনে। দেশ দুটির অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি অর্থনৈতিক মূল্যায়নকে কঠিন করে তোলে।
সন্ত্রাসবাদ সূচকে মালি (দারিদ্র্যে ১৫তম) চতুর্থ স্থানে রয়েছে। নাইজার (দারিদ্র্যে ৬ষ্ঠ) পঞ্চম; নাইজেরিয়া (দারিদ্র্যে ৪৬তম) ষষ্ঠ আর সোমালিয়া (দারিদ্র্যে ১১তম) সপ্তম স্থানে রয়েছে। ইসরায়েল কিন্তু বেশ ধনী রাষ্ট্র। দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে তারা আছে ১৫৭তম স্থানে। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ সূচকে ইসরায়েল রয়েছে অষ্টম স্থানে। যেখানে ক্যামেরুন দারিদ্র্য সূচকে ৪০তম আর সন্ত্রাসবাদ সূচকে রয়েছে ১০ম স্থানে।
এই সূচক একটি মিশ্র চিত্র দেখাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে, দারিদ্র্য এবং চরমপন্থার মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের মতো রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, তাদের সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার পেছনে আছে সম্প্রসারণবাদী আচরণ।
২০২৫ সালের মানব উন্নয়ন সূচক এই যোগসূত্রকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। দারিদ্র্যে ১৯৩টি দেশের মধ্যে বুরকিনা ফাসো ১৮৬তম এবং সন্ত্রাসবাদে প্রথম স্থানে রয়েছে। পাকিস্তান দারিদ্র্যে ১৬৮তম এবং সন্ত্রাসে দ্বিতীয়। সিরিয়া দারিদ্র্যে ১৬২তম এবং সন্ত্রাসে তৃতীয়। মালি দারিদ্র্যে ১৮৮তম এবং সন্ত্রাসে চতুর্থ। নাইজার দারিদ্র্যে ১৮৭তম এবং সন্ত্রাসে পঞ্চম। নাইজেরিয়া দারিদ্র্যে ১৬৪তম এবং সন্ত্রাসে ষষ্ঠ। সোমালিয়া দারিদ্র্যে ১৯২তম আর সন্ত্রাসে রয়েছে সপ্তম স্থানে। বিপরীতে ইসরায়েল মানব উন্নয়ন সূচকে ২৭তম কিন্তু সন্ত্রাসে অষ্টম স্থানে রয়েছে। আফগানিস্তান দারিদ্র্যে ১৮১ এবং সন্ত্রাসে নবম। অন্যদিকে ক্যামেরুন দারিদ্র্যে ১৫৫তম এবং সন্ত্রাসে ১০তম স্থানে রয়েছে। এই তালিকা থেকে দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েল বাদে সন্ত্রাসবাদে শীর্ষ ১০টি দেশ মানব উন্নয়ন সূচকে ১৫৫ থেকে ১৯২-এর মধ্যে রয়েছে। এই পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, স্বল্পউন্নয়ন এবং সন্ত্রাসবাদের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক আছে।
দারিদ্র্যই সহিংসতার একমাত্র কারণ নয়। প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাক্ষরতা সূচকের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা যায়। ইসরায়েল (৮৬তম) বাদে, সন্ত্রাসবাদবাদ সূচকে শীর্ষ দেশগুলো প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাক্ষরতার সূচকে ১১০ থেকে ১৬২-এর মধ্যে রয়েছে। এই দেশগুলো তাদের নীতির মধ্যে শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয় কম। তাদের বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দও কম।
বাস্তবে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো দল ভারী করতে দারিদ্র্যকে কাজে লাগায়। যখন অভাবের সঙ্গে যোগ হয় অনুন্নত শাসনব্যবস্থা, সেই দেশ চরমপন্থার জন্য আরো উর্বর হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রের জন্য জরুরি কাজ হলো তরুণদের দুর্বল এবং অদক্ষ না রেখে তাদের শিক্ষা এবং দক্ষতা বাড়ানো নিশ্চিত করা।
বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্যসীমারেখা অনুসারে, দৈনিক ৪ দশমিক ২০ ডলারের কম আয় করলে তাকে দরিদ্র ধরা হয়। এই হিসেবে পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। বিশ্বব্যাংকের কাছে দারিদ্র্য মানে—জীবনযাত্রার ন্যূনতম মান পূরণে অক্ষমতা। আদর্শিক কারণ ছাড়াও দারিদ্র্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অপরাধ, সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদকে ইন্ধন জোগায়। আফ্রিকা এবং এশিয়ার কিছু অংশে জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য সংগ্রহের ধরণ দেখলে বোঝা যায় যে দারিদ্র্য সন্ত্রাসবাদের একটি প্রধান চালিকাশক্তি। মানুষকে যখন বোঝানো হয়, তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ সমাজের এলিট শ্রেণি লুট করছে তখন সেই শ্রেণির প্রতি অসন্তোষ তৈরি হয়।
বেকারত্বের সঙ্গে দারিদ্র্য এবং লুটেরা শ্রেণির প্রতি ঘৃণা চরমপন্থী সংগঠনগুলোর প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। চরমপন্থীরা যে শুধু শিক্ষাবঞ্চিতদের আকর্ষণ করে এমন নয়। অনেক সংগঠনই শিক্ষিত ও প্রযুক্তিতে দক্ষদের দলে টানতে পারে। লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের ৩৫০ জনেরও বেশি জঙ্গির ওপর গবেষণা করেছিলেন চার্লস রাসেল এবং বোম্যান মিলার। সেখানে দেখা গেছে যে ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ সময়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসবাদীদের দুই-তৃতীয়াংশই ছিলেন স্নাতক। যদি দারিদ্র্যই সন্ত্রাসবাদের একমাত্র কারণ হতো, তাহলে কোটি কোটি মানুষ সহিংসতার দিকে ঝুঁকে পড়ত। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।
সুদান, বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো এবং মোজাম্বিকের মতো দরিদ্র দেশগুলো বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকের শীর্ষ ১০ দেশের ভেতর নেই। আদর্শ, পরিচয় সংকট, কর্তৃত্ববাদ, রাজনৈতিক স্বাধীনতার অভাব এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিদেশি দখলদারিত্ব, ড্রোন হামলা, অনলাইন মৌলবাদ এবং ঐতিহাসিক অবিচারও চরমপন্থাকে ইন্ধন জোগায়।
দারিদ্র্য হ্রাস এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শাসন, যুব কর্মসংস্থান কর্মসূচি, জনসম্পৃক্ততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনসেবা উন্নত করার চেষ্টা করলে চরমপন্থী গোষ্ঠীর প্রতি ঝোঁক কমতে পারে। স্বাক্ষরতা এবং নাগরিক শিক্ষার প্রচার চরমপন্থা প্রতিরোধে হতে পারে সহায়ক। এর মধ্য দিয়ে নাগরিকেরা চরমপন্থী বয়ানের সমালোচনা করতে পারবে। এই প্রয়াসগুলো অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করতে পারে। সেই সঙ্গে সম্প্রদায়-ভিত্তিক স্বাক্ষরতা কর্মসূচিতে মানবাধিকার, সহনশীলতা এবং সংঘাত সমাধানও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে চরমপন্থী মতাদর্শকে সংলাপ দিয়ে চ্যালেঞ্জ করা যাবে।
মোহাম্মদ আলী বাবাখেল: পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা। ‘পাকিস্তান: ইন বিটুইন এক্সট্রিমিজম অ্যান্ড পিস’ বইয়ের লেখক।
ডন থেকে অনুবাদ: সালেহ ফুয়াদ
বিশ্বে যতক্ষণ দারিদ্র্য, অবিচার ও চরম বৈষম্য থাকবে, ততক্ষণ আমরা কেউই সত্যিকার অর্থে শান্তিতে থাকতে পারব না। —নেলসন ম্যান্ডেলা
পৃথিবীতে চরমপন্থা ক্রমেই বাড়ছে। আর প্রায়ই এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় দারিদ্র্যকে। এই দাবি প্রমাণ করা অতটা সহজ নয়। তবে বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য সূচক থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এই ক্ষেত্রে পাকিস্তানে দারিদ্র্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দেশের ভেতরের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও আর্থ-সামাজিক মেরুকরণও এখানে গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি।
চরমপন্থার বিস্তারের জন্য অনেক সময় গরিব রাষ্ট্রগুলো দারিদ্র্য আর ধর্মীয় অপব্যাখ্যাকে দায়ী করে। শুধু এই দুটি কারণের ওপর সমস্ত মনোযোগ দেওয়ার পেছনে কি কোনো বিশেষ কারণ থাকে? বিশেষ করে যখন তারা সেই অজুহাত দিয়ে সম্ভবত সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন, সেই সঙ্গে জাতিগত, সাম্প্রদায়িক, সমাজ-সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংকট এড়িয়ে যান?
আইএমএফ ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক ২০২৪’ নামে একটি জরিপ করেছে। বুরকিনা ফাসো বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর ভেতর ১৬তম স্থানে রয়েছে। একই সঙ্গে দেশটি বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে প্রথম স্থানে রয়েছে। পাকিস্তান বিশ্বের ৫০তম দরিদ্র দেশ। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকে তাদের স্থান দ্বিতীয়। সিরিয়া ও আফগানিস্তানের অবস্থানও বেশ সামনে। দেশ দুটির অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি অর্থনৈতিক মূল্যায়নকে কঠিন করে তোলে।
সন্ত্রাসবাদ সূচকে মালি (দারিদ্র্যে ১৫তম) চতুর্থ স্থানে রয়েছে। নাইজার (দারিদ্র্যে ৬ষ্ঠ) পঞ্চম; নাইজেরিয়া (দারিদ্র্যে ৪৬তম) ষষ্ঠ আর সোমালিয়া (দারিদ্র্যে ১১তম) সপ্তম স্থানে রয়েছে। ইসরায়েল কিন্তু বেশ ধনী রাষ্ট্র। দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে তারা আছে ১৫৭তম স্থানে। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ সূচকে ইসরায়েল রয়েছে অষ্টম স্থানে। যেখানে ক্যামেরুন দারিদ্র্য সূচকে ৪০তম আর সন্ত্রাসবাদ সূচকে রয়েছে ১০ম স্থানে।
এই সূচক একটি মিশ্র চিত্র দেখাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে, দারিদ্র্য এবং চরমপন্থার মধ্যে সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের মতো রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে, তাদের সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার পেছনে আছে সম্প্রসারণবাদী আচরণ।
২০২৫ সালের মানব উন্নয়ন সূচক এই যোগসূত্রকে আরও স্পষ্ট করে তোলে। দারিদ্র্যে ১৯৩টি দেশের মধ্যে বুরকিনা ফাসো ১৮৬তম এবং সন্ত্রাসবাদে প্রথম স্থানে রয়েছে। পাকিস্তান দারিদ্র্যে ১৬৮তম এবং সন্ত্রাসে দ্বিতীয়। সিরিয়া দারিদ্র্যে ১৬২তম এবং সন্ত্রাসে তৃতীয়। মালি দারিদ্র্যে ১৮৮তম এবং সন্ত্রাসে চতুর্থ। নাইজার দারিদ্র্যে ১৮৭তম এবং সন্ত্রাসে পঞ্চম। নাইজেরিয়া দারিদ্র্যে ১৬৪তম এবং সন্ত্রাসে ষষ্ঠ। সোমালিয়া দারিদ্র্যে ১৯২তম আর সন্ত্রাসে রয়েছে সপ্তম স্থানে। বিপরীতে ইসরায়েল মানব উন্নয়ন সূচকে ২৭তম কিন্তু সন্ত্রাসে অষ্টম স্থানে রয়েছে। আফগানিস্তান দারিদ্র্যে ১৮১ এবং সন্ত্রাসে নবম। অন্যদিকে ক্যামেরুন দারিদ্র্যে ১৫৫তম এবং সন্ত্রাসে ১০তম স্থানে রয়েছে। এই তালিকা থেকে দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েল বাদে সন্ত্রাসবাদে শীর্ষ ১০টি দেশ মানব উন্নয়ন সূচকে ১৫৫ থেকে ১৯২-এর মধ্যে রয়েছে। এই পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, স্বল্পউন্নয়ন এবং সন্ত্রাসবাদের মধ্যে শক্তিশালী সম্পর্ক আছে।
দারিদ্র্যই সহিংসতার একমাত্র কারণ নয়। প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাক্ষরতা সূচকের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা যায়। ইসরায়েল (৮৬তম) বাদে, সন্ত্রাসবাদবাদ সূচকে শীর্ষ দেশগুলো প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাক্ষরতার সূচকে ১১০ থেকে ১৬২-এর মধ্যে রয়েছে। এই দেশগুলো তাদের নীতির মধ্যে শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয় কম। তাদের বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দও কম।
বাস্তবে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো দল ভারী করতে দারিদ্র্যকে কাজে লাগায়। যখন অভাবের সঙ্গে যোগ হয় অনুন্নত শাসনব্যবস্থা, সেই দেশ চরমপন্থার জন্য আরো উর্বর হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রের জন্য জরুরি কাজ হলো তরুণদের দুর্বল এবং অদক্ষ না রেখে তাদের শিক্ষা এবং দক্ষতা বাড়ানো নিশ্চিত করা।
বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্যসীমারেখা অনুসারে, দৈনিক ৪ দশমিক ২০ ডলারের কম আয় করলে তাকে দরিদ্র ধরা হয়। এই হিসেবে পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। বিশ্বব্যাংকের কাছে দারিদ্র্য মানে—জীবনযাত্রার ন্যূনতম মান পূরণে অক্ষমতা। আদর্শিক কারণ ছাড়াও দারিদ্র্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অপরাধ, সহিংসতা এবং সন্ত্রাসবাদকে ইন্ধন জোগায়। আফ্রিকা এবং এশিয়ার কিছু অংশে জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য সংগ্রহের ধরণ দেখলে বোঝা যায় যে দারিদ্র্য সন্ত্রাসবাদের একটি প্রধান চালিকাশক্তি। মানুষকে যখন বোঝানো হয়, তাদের প্রাকৃতিক সম্পদ সমাজের এলিট শ্রেণি লুট করছে তখন সেই শ্রেণির প্রতি অসন্তোষ তৈরি হয়।
বেকারত্বের সঙ্গে দারিদ্র্য এবং লুটেরা শ্রেণির প্রতি ঘৃণা চরমপন্থী সংগঠনগুলোর প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। চরমপন্থীরা যে শুধু শিক্ষাবঞ্চিতদের আকর্ষণ করে এমন নয়। অনেক সংগঠনই শিক্ষিত ও প্রযুক্তিতে দক্ষদের দলে টানতে পারে। লাতিন আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের ৩৫০ জনেরও বেশি জঙ্গির ওপর গবেষণা করেছিলেন চার্লস রাসেল এবং বোম্যান মিলার। সেখানে দেখা গেছে যে ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ সময়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসবাদীদের দুই-তৃতীয়াংশই ছিলেন স্নাতক। যদি দারিদ্র্যই সন্ত্রাসবাদের একমাত্র কারণ হতো, তাহলে কোটি কোটি মানুষ সহিংসতার দিকে ঝুঁকে পড়ত। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।
সুদান, বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো এবং মোজাম্বিকের মতো দরিদ্র দেশগুলো বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ সূচকের শীর্ষ ১০ দেশের ভেতর নেই। আদর্শ, পরিচয় সংকট, কর্তৃত্ববাদ, রাজনৈতিক স্বাধীনতার অভাব এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিদেশি দখলদারিত্ব, ড্রোন হামলা, অনলাইন মৌলবাদ এবং ঐতিহাসিক অবিচারও চরমপন্থাকে ইন্ধন জোগায়।
দারিদ্র্য হ্রাস এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং শাসন, যুব কর্মসংস্থান কর্মসূচি, জনসম্পৃক্ততা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনসেবা উন্নত করার চেষ্টা করলে চরমপন্থী গোষ্ঠীর প্রতি ঝোঁক কমতে পারে। স্বাক্ষরতা এবং নাগরিক শিক্ষার প্রচার চরমপন্থা প্রতিরোধে হতে পারে সহায়ক। এর মধ্য দিয়ে নাগরিকেরা চরমপন্থী বয়ানের সমালোচনা করতে পারবে। এই প্রয়াসগুলো অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করতে পারে। সেই সঙ্গে সম্প্রদায়-ভিত্তিক স্বাক্ষরতা কর্মসূচিতে মানবাধিকার, সহনশীলতা এবং সংঘাত সমাধানও অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। এসব উদ্যোগের মাধ্যমে চরমপন্থী মতাদর্শকে সংলাপ দিয়ে চ্যালেঞ্জ করা যাবে।
মোহাম্মদ আলী বাবাখেল: পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা। ‘পাকিস্তান: ইন বিটুইন এক্সট্রিমিজম অ্যান্ড পিস’ বইয়ের লেখক।
ডন থেকে অনুবাদ: সালেহ ফুয়াদ
দশকের পর দশক ধরে পশ্চিমা বিশ্ব যেভাবে বিভিন্ন দেশকে প্রথমে খলনায়ক বানায়, তারপর তাদের অধিকার কেড়ে নেয় এবং সবশেষে ‘বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বলে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়—এই পদ্ধতি (প্যাটার্ন) এখন আর অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
১ দিন আগেবাংলাদেশ নদী ও বন্যার দেশ হিসেবে পরিচিত। যদিও দেশটির পানির উৎসের প্রায় পুরোটাই দেশের বাইরে। এ দেশের মোট নদীর ৮০ শতাংশের উৎসমুখ প্রতিবেশী দেশগুলোতে। ফলে মিঠাপানির প্রাপ্যতার সংকট নিত্যদিনের ঘটনা। আর নগরায়ণ, কৃষি খাতের আধুনিকায়ন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি এ সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
৭ দিন আগেভারতের প্রতিরক্ষা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান গত মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের স্বার্থ পরস্পর জড়িত, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।’ অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) ফরেন পলিসি সার্ভে ২০২৪ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময় জেনারেল...
৯ দিন আগেএ প্লাস যারা পেয়েছে, তাদের স্ট্যাটাস আর যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন বহু যুগ আগে, তাঁদেরও স্ট্যাটাস। এমনকি, যাদের পরীক্ষা দেয়ার বয়স হয়নি, তারাও লিখছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ, জিপিএ-৫’। এই যে এক সম্মিলিত জুনুন বা গণ-উন্মাদনা—এর মনস্তত্ত্বটা কী?
১০ দিন আগে