রাফাত আলম
দেশ-ধারণা হিসেবে ‘বাংলা দেশ’ কোনো অর্বাচীন ধারণা নয়। যদিও রাষ্ট্রধারণা হিসেবে বাংলাদেশ অপেক্ষাকৃত নতুন। তবুও রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ চুয়ান্ন বছর অতিক্রম করেছে; অনেক চড়াই-উৎরাই, সমস্যা ও সম্ভাবনাকে সঙ্গে নিয়ে।
প্রাচীন বঙ্গ জনপদ বিভিন্ন পর্যায় ও শাসনামল অতিক্রম করে ‘বাঙ্গালা’, ‘সুবা বাংলা’, ‘বেঙ্গল’, অতঃপর ‘পূর্ব বাংলা’ পরিচয়সমূহকে সঙ্গে নিয়ে আজকের বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ অর্জিত হলেও জনজীবনে এই জনাঞ্চল যে ‘বাংলা দেশ’ হিসেবে পরিচিত ছিল তার সাক্ষ্য মেলে একাত্তর-পূর্ববর্তী বিভিন্ন গান-কবিতা ও মৌখিক সাহিত্যে।
সাতচল্লিশ ও একাত্তরের মধ্যবর্তী ‘বাংলা দেশ’ ও ‘বাঙালি’র ধারণা যে সম্পূর্ণত পূর্ববঙ্গীয় জন-রাজনীতি সাপেক্ষ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, সাতচল্লিশ-পরবর্তী বাস্তবতায় বায়ান্ন, চুয়ান্ন, ষাটের দশকের রাজনীতি-সাপেক্ষ সাংস্কৃতিক ঘটনাপুঞ্জ ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মতো ঘটনা এই দুই ধারণাকে একান্তভাবে পূর্ববঙ্গীয় করে তোলে। মূলত তৎকালে বিদ্যমান ‘বাংলা দেশ’ ধারণাই বাঙালি জাতীয়তাবাদের অনুষঙ্গে ১৯৭১ সালে ‘বাংলাদেশ’ ধারণায় চূড়ান্ত পরিণতি পায়। বিশেষণহীন ‘বাংলাদেশ’, শুধু ‘বাংলাদেশ’ আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সমার্থ তাৎপর্য নিয়ে উপস্থিত থাকে।
দ্রুত পরিবর্তমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য ‘বাংলাদেশ’-ধারণাকে যুক্ত করে আরও নতুন বিষয়-আশয়ের সঙ্গে, নতুন নতুন বিশেষণের সঙ্গে। এদেশের মানুষ অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত হয় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে, ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ, আমার মরণ বাংলাদেশ’।
আশির দশকে আরও একটি শব্দবন্ধের সঙ্গে পরিচিত হয় এদেশের জনমানুষ—আর তা হচ্ছে ‘নতুন বাংলাদেশ’। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ ও সামরিক শাসন প্রবর্তনের পর প্রথমেই ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর ধারণা দেন। উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচার—এমন কিছু ভালো ভালো কথা সেই ধারণায় জুড়ে দেওয়া হয়।
‘সংগীত-সমঝদার’ এরশাদ লিখে ফেলেন ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর গান, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়বো মোরা নতুন করে আজ শপথ নিলাম। নব জীবনের ফুল ফোটাবো। প্রাণে প্রাণে আজ দীক্ষা নিলাম, নতুন বাংলাদেশ গড়বো মোরা নতুন করে আজ শপথ নিলাম।’ এই গান তখন প্রায় সব সরকারি অনুষ্ঠানে গাওয়া হতো। কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এই ‘নতুন বাংলাদেশের ধারণাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেনি।
বিশেষত আশির দশকে নতুনভাবে বলয়িত—‘পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশ-ধারণা’র বিপরীতে—বাঙালি জাতীয়তাবাদের সাপেক্ষে ‘নতুন বাংলাদেশ’ ধারণা প্রায় পরিত্যাজ্য হয়। একই সঙ্গে এরশাদ শাসনামলের নানামুখী রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যর্থতা ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর ধারণা কোনো সফলতার মুখ দেখে না। বরং আশির পুরো দশকব্যাপী ধারাবাহিকভাবে চলমান আন্দোলনে এরশাদের শাসন স্বৈরশাসন হিসেবে চিহ্নিত হয়। ২০২৪ এর আগ পর্যন্ত এরশাদের শাসনই বাংলাদেশের একমাত্র স্বৈরশাসন হিসেবে পরিচিত ছিল।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত, স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ও রক্তোজ্জ্বল অভ্যুত্থানের পর আবারও নতুন করে উচ্চারিত হতে থাকে ‘নতুন বাংলাদেশ’ শব্দবন্ধটি। চব্বিশের ছাত্র-জনতার সামবায়িক অভ্যুত্থান অনিবার্য করে তোলে বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন বয়ান নির্মাণে। পূর্ববর্তী একমুখী বয়ানের বিপরীতে নির্মিত হচ্ছে প্রতিবয়ান। তবে চব্বিশ, অতঃপর পঁচিশের প্রতিবয়ানের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বহুস্বরতা। বহুকৌণিক, বহুমাত্রিক ও বিচিত্র আদর্শের বয়ান দৃষ্টিগ্রাহ্য হচ্ছে, যা অনেকসময় ‘কেওজ’ হিসেবেও চিহ্নিত হচ্ছে। চব্বিশ-পরবর্তী বয়ান আর কেবল বয়ান থাকছে না, চব্বিশ-পরবর্তী বয়ান অনেকগুলো বয়ানের সমষ্টি। যদিও অনেক বয়ান মিলে কোনো সামবায়িক স্বর নির্মাণ এখন পর্যন্ত লক্ষযোগ্য নয়।
এবার আসা যাক চব্বিশ-পরবর্তী ‘নতুন বাংলাদেশে’। আমরা দেখেছি নতুন বাংলাদেশ নতুন হলেও শব্দবন্ধ হিসেবে এর ব্যবহার নতুন নয়। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই চব্বিশের অভ্যুত্থান একটি বৈষম্যমুক্ত, গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশের দিকে আমাদের ধাবিত করে।
চব্বিশ-পরবর্তী ‘নতুন বাংলাদেশ’ উচ্চারিত হয়েছে সরকার প্রধান থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী মহলের একটি অংশ থেকেও। প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও নতুন কিছু বইও প্রকাশিত হয়েছে এ-প্রসঙ্গে। কিন্তু কোথাও ‘নতুন বাংলাদেশ’ ধারণার সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রণীত হয়নি। এমনকি সরকারিভাবে কেবল শব্দবন্ধ উচ্চারণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ‘নতুন বাংলাদেশ’। এখন পর্যন্ত কেউ স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না। এ থেকে আরও একটি সুযোগ থেকেই যায়, ‘নতুন বাংলাদেশ’ ধারণাটিকে এরশাদ প্রণীত নতুন বাংলাদেশ ধারণার পরম্পরা হিসেবে বিবেচনা করার—অন্তত শব্দতাত্ত্বিক দিক থেকে। কিন্তু আশির দশক আর ২০২৫ তো এক নয়। তাহলে এই ‘নতুন বাংলাদেশ’ কোন বাংলাদেশ? এটি কি ভিন্ন কোনো ধারণা; নাকি অনেক বয়ানের প্রকল্পিত সমষ্টিই ‘নতুন বাংলাদেশ’?
প্রতিটি শাসনের পরিবর্তন জনমানুষকে নতুন প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। এই সূত্র অনুযায়ী ‘বাংলাদেশ’, ‘প্রথম বাংলাদেশ, ‘নতুন বাংলাদেশ’ ধারণাগুলোর জন্ম নিয়েছে। কিন্তু সঠিক তত্ত্বায়নের অভাবে এবং প্রতিশ্রুত শাসনব্যবস্থা পরিচালনার ব্যর্থতা অনেক সময় নতুন ধারণাগুলোকেও ফিকে করে তোলে। সদ্য তৈরি হওয়া ‘নতুন বাংলাদেশ’ ধারণা পূর্ববর্তী বাংলাদেশ ধারণা থেকে কতটুকু স্বতন্ত্র হতে পারল বা পারবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। এখন পর্যন্ত যেসব ধারণার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা থাকলেও কেন্দ্রে অবস্থান করেছে বাংলাদেশ। বলা যায়, অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এটিই বাংলাদেশ-কেন্দ্রিক ধারণাসমূহের স্বাতন্ত্র্যের জায়গা।
লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক
দেশ-ধারণা হিসেবে ‘বাংলা দেশ’ কোনো অর্বাচীন ধারণা নয়। যদিও রাষ্ট্রধারণা হিসেবে বাংলাদেশ অপেক্ষাকৃত নতুন। তবুও রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ চুয়ান্ন বছর অতিক্রম করেছে; অনেক চড়াই-উৎরাই, সমস্যা ও সম্ভাবনাকে সঙ্গে নিয়ে।
প্রাচীন বঙ্গ জনপদ বিভিন্ন পর্যায় ও শাসনামল অতিক্রম করে ‘বাঙ্গালা’, ‘সুবা বাংলা’, ‘বেঙ্গল’, অতঃপর ‘পূর্ব বাংলা’ পরিচয়সমূহকে সঙ্গে নিয়ে আজকের বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ অর্জিত হলেও জনজীবনে এই জনাঞ্চল যে ‘বাংলা দেশ’ হিসেবে পরিচিত ছিল তার সাক্ষ্য মেলে একাত্তর-পূর্ববর্তী বিভিন্ন গান-কবিতা ও মৌখিক সাহিত্যে।
সাতচল্লিশ ও একাত্তরের মধ্যবর্তী ‘বাংলা দেশ’ ও ‘বাঙালি’র ধারণা যে সম্পূর্ণত পূর্ববঙ্গীয় জন-রাজনীতি সাপেক্ষ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কারণ, সাতচল্লিশ-পরবর্তী বাস্তবতায় বায়ান্ন, চুয়ান্ন, ষাটের দশকের রাজনীতি-সাপেক্ষ সাংস্কৃতিক ঘটনাপুঞ্জ ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মতো ঘটনা এই দুই ধারণাকে একান্তভাবে পূর্ববঙ্গীয় করে তোলে। মূলত তৎকালে বিদ্যমান ‘বাংলা দেশ’ ধারণাই বাঙালি জাতীয়তাবাদের অনুষঙ্গে ১৯৭১ সালে ‘বাংলাদেশ’ ধারণায় চূড়ান্ত পরিণতি পায়। বিশেষণহীন ‘বাংলাদেশ’, শুধু ‘বাংলাদেশ’ আর একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সমার্থ তাৎপর্য নিয়ে উপস্থিত থাকে।
দ্রুত পরিবর্তমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্য ‘বাংলাদেশ’-ধারণাকে যুক্ত করে আরও নতুন বিষয়-আশয়ের সঙ্গে, নতুন নতুন বিশেষণের সঙ্গে। এদেশের মানুষ অল্পদিনের মধ্যে পরিচিত হয় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে, ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ, জীবন বাংলাদেশ, আমার মরণ বাংলাদেশ’।
আশির দশকে আরও একটি শব্দবন্ধের সঙ্গে পরিচিত হয় এদেশের জনমানুষ—আর তা হচ্ছে ‘নতুন বাংলাদেশ’। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ ও সামরিক শাসন প্রবর্তনের পর প্রথমেই ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর ধারণা দেন। উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচার—এমন কিছু ভালো ভালো কথা সেই ধারণায় জুড়ে দেওয়া হয়।
‘সংগীত-সমঝদার’ এরশাদ লিখে ফেলেন ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর গান, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়বো মোরা নতুন করে আজ শপথ নিলাম। নব জীবনের ফুল ফোটাবো। প্রাণে প্রাণে আজ দীক্ষা নিলাম, নতুন বাংলাদেশ গড়বো মোরা নতুন করে আজ শপথ নিলাম।’ এই গান তখন প্রায় সব সরকারি অনুষ্ঠানে গাওয়া হতো। কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী এই ‘নতুন বাংলাদেশের ধারণাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেনি।
বিশেষত আশির দশকে নতুনভাবে বলয়িত—‘পঁচাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশ-ধারণা’র বিপরীতে—বাঙালি জাতীয়তাবাদের সাপেক্ষে ‘নতুন বাংলাদেশ’ ধারণা প্রায় পরিত্যাজ্য হয়। একই সঙ্গে এরশাদ শাসনামলের নানামুখী রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যর্থতা ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর ধারণা কোনো সফলতার মুখ দেখে না। বরং আশির পুরো দশকব্যাপী ধারাবাহিকভাবে চলমান আন্দোলনে এরশাদের শাসন স্বৈরশাসন হিসেবে চিহ্নিত হয়। ২০২৪ এর আগ পর্যন্ত এরশাদের শাসনই বাংলাদেশের একমাত্র স্বৈরশাসন হিসেবে পরিচিত ছিল।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার সম্মিলিত, স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন ও রক্তোজ্জ্বল অভ্যুত্থানের পর আবারও নতুন করে উচ্চারিত হতে থাকে ‘নতুন বাংলাদেশ’ শব্দবন্ধটি। চব্বিশের ছাত্র-জনতার সামবায়িক অভ্যুত্থান অনিবার্য করে তোলে বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন বয়ান নির্মাণে। পূর্ববর্তী একমুখী বয়ানের বিপরীতে নির্মিত হচ্ছে প্রতিবয়ান। তবে চব্বিশ, অতঃপর পঁচিশের প্রতিবয়ানের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বহুস্বরতা। বহুকৌণিক, বহুমাত্রিক ও বিচিত্র আদর্শের বয়ান দৃষ্টিগ্রাহ্য হচ্ছে, যা অনেকসময় ‘কেওজ’ হিসেবেও চিহ্নিত হচ্ছে। চব্বিশ-পরবর্তী বয়ান আর কেবল বয়ান থাকছে না, চব্বিশ-পরবর্তী বয়ান অনেকগুলো বয়ানের সমষ্টি। যদিও অনেক বয়ান মিলে কোনো সামবায়িক স্বর নির্মাণ এখন পর্যন্ত লক্ষযোগ্য নয়।
এবার আসা যাক চব্বিশ-পরবর্তী ‘নতুন বাংলাদেশে’। আমরা দেখেছি নতুন বাংলাদেশ নতুন হলেও শব্দবন্ধ হিসেবে এর ব্যবহার নতুন নয়। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই চব্বিশের অভ্যুত্থান একটি বৈষম্যমুক্ত, গণতান্ত্রিক, মানবিক বাংলাদেশের দিকে আমাদের ধাবিত করে।
চব্বিশ-পরবর্তী ‘নতুন বাংলাদেশ’ উচ্চারিত হয়েছে সরকার প্রধান থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী মহলের একটি অংশ থেকেও। প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও নতুন কিছু বইও প্রকাশিত হয়েছে এ-প্রসঙ্গে। কিন্তু কোথাও ‘নতুন বাংলাদেশ’ ধারণার সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রণীত হয়নি। এমনকি সরকারিভাবে কেবল শব্দবন্ধ উচ্চারণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ‘নতুন বাংলাদেশ’। এখন পর্যন্ত কেউ স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না। এ থেকে আরও একটি সুযোগ থেকেই যায়, ‘নতুন বাংলাদেশ’ ধারণাটিকে এরশাদ প্রণীত নতুন বাংলাদেশ ধারণার পরম্পরা হিসেবে বিবেচনা করার—অন্তত শব্দতাত্ত্বিক দিক থেকে। কিন্তু আশির দশক আর ২০২৫ তো এক নয়। তাহলে এই ‘নতুন বাংলাদেশ’ কোন বাংলাদেশ? এটি কি ভিন্ন কোনো ধারণা; নাকি অনেক বয়ানের প্রকল্পিত সমষ্টিই ‘নতুন বাংলাদেশ’?
প্রতিটি শাসনের পরিবর্তন জনমানুষকে নতুন প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। এই সূত্র অনুযায়ী ‘বাংলাদেশ’, ‘প্রথম বাংলাদেশ, ‘নতুন বাংলাদেশ’ ধারণাগুলোর জন্ম নিয়েছে। কিন্তু সঠিক তত্ত্বায়নের অভাবে এবং প্রতিশ্রুত শাসনব্যবস্থা পরিচালনার ব্যর্থতা অনেক সময় নতুন ধারণাগুলোকেও ফিকে করে তোলে। সদ্য তৈরি হওয়া ‘নতুন বাংলাদেশ’ ধারণা পূর্ববর্তী বাংলাদেশ ধারণা থেকে কতটুকু স্বতন্ত্র হতে পারল বা পারবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। এখন পর্যন্ত যেসব ধারণার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা থাকলেও কেন্দ্রে অবস্থান করেছে বাংলাদেশ। বলা যায়, অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এটিই বাংলাদেশ-কেন্দ্রিক ধারণাসমূহের স্বাতন্ত্র্যের জায়গা।
লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি থাকবে, কিন্তু হলে থাকবে না—এটা একটা অদ্ভুত দাবি! সেই অদ্ভুত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গভীর রাতে হলগুলোতে প্রকাশ্য-অদৃশ্য কিংবা উন্মুক্ত-গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
৩ ঘণ্টা আগেশহিদ ও শাহাদাতের ধারণা আদিতে মুসলমানের হলেও উপমহাদেশে মুসলমানের পাশাপাশি হিন্দু, শিখ—সব পরিচয়ের মানুষই ‘শহিদ’ হয়েছে। ‘শহিদ’ ধারণাটি আধুনিক দক্ষিণ এশিয়ায় একটি প্রায়-সর্বজনীন রাজনৈতিক ধারণা আকারে হাজির।
১ দিন আগে৫ আগস্ট ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি। এ উপলক্ষ্যে ২ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ‘অভ্যুত্থানোত্তর বাংলাদেশে কেমন বিশ্ববিদ্যালয় পেলাম?’ শিরোনামে এক সেমিনারের আয়োজন করে। সেখানে পঠিত হয় এই লেখা।
২ দিন আগেআমরা হয়তো অভিযোগ তুলতে পারি, রবীন্দ্রনাথ আর কিছুই নন—উনিশ শতকের উপনিবেশিত কলকাতার চিত্তদূতমাত্র। জমিদারির অঢেল বিত্তে বেড়ে ওঠাদের দলে তিনিও ছিলেন। তাহলে সে কথা হবে আংশিক সত্য।
৩ দিন আগে