leadT1ad

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি ২১ অক্টোবর

স্ট্রিম ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ৫৮
হাইকোর্ট ভবন। ছবি: সংগৃহীত

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনবেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এ জন্য আগামী ২১ অক্টোবর শুনানির দিন ঠিক করেছে আপিল বিভাগ। আজ বুধবার (২৭ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বিভাগ এই আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে আপিল বিভাগ প্রায় ১৪ বছর আগে রায় দিয়েছিল। সেই রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষে লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে নতুন এই আদেশ দেওয়া হয়।

তবে শুনানিতে প্রশ্ন ওঠে—লিভ মঞ্জুর করে আপিল শুনানি হবে, নাকি রিভিউ আবেদনের শুনানিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে আবেদনকারীদের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, লিভ না দিয়েও রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তির মাধ্যমে আদালত রায় দিতে পারেন।

সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানিতে বলেন, ‘লিভ দেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এর কোনো প্রেসক্রাইবড ল নেই। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী অনেক সময় লিভ মঞ্জুর করেই রায়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়, আবার লিভ মঞ্জুর ছাড়াও সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়ে থাকে।’

শুনানির একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রথা অনুসরণ করব। লিভ দিয়েই পুরো বিষয়টি শুনব।’

পরে আদালত লিভ মঞ্জুর করে আদেশ দেন।

২০১১ সালের ১০ মে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত সদস্যের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) বাতিল ঘোষণা করেছিলেন।

এই রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বছরের অক্টোবরে। এর আগে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি একই দাবি জানিয়ে রিভিউ আবেদন করেন।

পরবর্তীতে গত বছরের ২৩ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার রিভিউ আবেদন করেন। নওগাঁর রানীনগরের মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও একই বছরের আরেকটি আবেদনে রায় পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানান।

রিভিউ আবেদনের ওপর গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার দুই দিন ধরে শুনানি হয়। শুনানি শেষে আজ আদালত লিভ মঞ্জুর করে জানায়, আগামী ২১ অক্টোবর আপিল শুনানি কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে।

আদালতে বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও রুহুল কুদ্দুস, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কায়সার কামাল। জামায়াতের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ। পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূইয়া, আর অন্য এক আবেদনকারীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী এ এস এম শাহরিয়ার কবির।

এ মামলায় ইন্টারভেনার (ব্যাখ্যাকারী) হিসেবে যুক্ত হয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক। পরে তিনি জানান, বিএনপির করা রিভিউ আবেদনে লিভ মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। অর্থাৎ এখন আপিলের ওপর শুনানি হবে। আগামী ২১ অক্টোবর শুনানির দিন ঠিক করেছেন আদালত। একই সঙ্গে অন্যান্য রিভিউ আবেদনও সেদিন শুনানির জন্য অন্তর্ভুক্ত হবে।

মামলার পটভূমি

১৯৯৬ সালে সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যুক্ত হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ কয়েকজন ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল জারি করে।

পরে হাইকোর্টের একটি বিশেষ বেঞ্চে চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেওয়া হয়। রায়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীকে বৈধ ঘোষণা করে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের এই সংশোধনী সংবিধানসম্মত।

এই রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের সুযোগ দেওয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় রিট আবেদনকারীরা ২০০৫ সালে আপিল করেন। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগ রায় দেন। রায়ের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদ ২০১১ সালের ৩০ জুন পাস করে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন, যা ৩ জুলাই গেজেটে প্রকাশিত হয়।

এদিকে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক রিট দায়ের করেন। প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট রুল জারি করে।

একই বছরের অক্টোবরে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেনও পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ১৬টি ধারা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। আদালত সেই রিটেও রুল জারি করে।

রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর রায় দেন। রায়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানবিরোধী ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। একইসঙ্গে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল এবং ওই আইনের আরও চারটি ধারা বাতিল ঘোষণা করা হয়।

বিষয়:

Ad 300x250

‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরলে কার্যকারিতা কবে থেকে, প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির’

নজরুল যেভাবে বাংলাদেশের

নজরুলের ফারসি বহুলতাকে পূর্ব বাংলার কৃষক-সন্তানেরা যে কারণে গ্রহণ করেছিল

ছাত্রদলের চাপেই কি রাকসু নির্বাচন পেছানো হলো

ঢাবি হল সংসদে প্রার্থী চূড়ান্ত: সর্বোচ্চ ৭৬ অমর একুশে ও সর্বনিম্ন ৩৫ শামসুন নাহার হলে

সম্পর্কিত