leadT1ad

আমার সামনে দুজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়: আসিফ মাহমুদ

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ৫৪
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে জবানবন্দি দিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি: সংগৃহীত

গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চাঁনখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষে জবানবন্দি দিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করে। জবানবন্দি গ্রহণ অসমাপ্ত থাকা অবস্থায় শুনানি ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

প্রসিকিউশনের ১৯তম সাক্ষী আসিফ মাহমুদ বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে রাজধানীর চানখারপুল এলাকায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা আমার সামনে দুজন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করে। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আন্দোলন দমাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট মর্মে উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান করেন। এই বক্তব্যের পর পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগসহ বহিরাগত ছাত্রলীগ ক্যাডাররা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। তাদের হামলায় শতাধিক ছাত্রছাত্রী গুরুতর রক্তাক্ত আহত হয়। তাদের মধ্যে ছাত্রীদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য ছিলো। আহত ছাত্র-ছাত্রীরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য গেলে সেখানেও ছাত্রলীগ তাদের উপর হামলা করে।

‘এই হামলার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই সারাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। সেদিন শহীদ মিনারে আন্দোলনরত অবস্থায় আমরা জানতে পারি যে, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। পরে জানতে পারি সেদিন চট্টগ্রামের ওয়াসিমসহ সারাদেশে সর্বমোট ৬ জন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছে।’

‘১৭ জুলাই ২০২৪ এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কফিন মিছিল ও গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি পালন করি। তখন আর এ আন্দোলন শুধুমাত্র কোটা সংস্কার দাবিতে সীমাবদ্ধ ছিলো না। রাজু ভাস্কর্যে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি পালনের পূর্বেই আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।’

আসিফ মাহমুদ বলেন, আমাদেরকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আন্দোলন প্রত্যাহারে জন্য চাপ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। আমাদেরকে বার বার বলা হয় যে, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই আমাদেরকে তুলে আনা হয়েছে এবং আন্দোলন প্রত্যাহারের চাপ দেওয়া হচ্ছে। আন্দোলন প্রত্যাহারে রাজি না হলে আমাদের হত্যা করা হবে মর্মে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ ছিলো। তারা আরো বলে যে, তারা দয়া করে আমাদেরকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে।

আসিফ মাহমুদ বলেন, ২৬ জুলাই আমরা গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আমি, নাহিদ ইসলাম ও আবু বাকের মজুমদারকে হাসপাতাল থেকে তুলে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৭ জুলাই সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমকে ডিবি কার্যালয়ে তুলে আনা হয়। ২৮ জুলাই সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকেও ডিবি কার্যালয়ে তুলে আনা হয়। সেখানে আমাদেরকে আন্দোলন প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে আমাদের পরিবারের সদস্যদেরকেও ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। তাদেরকে দিয়ে আমরা সুস্থ্য আছি মর্মে মিডিয়ায় বক্তব্য প্রচারে বাধ্য করা হয়। তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুনুর রশীদ (ডিবি হারুন) এবং রমনা জোনের ডিসি হুমায়ুন কবীর আন্দোলন প্রত্যাহারে আমাদের উপর চাপ ও হুমকি প্রদান করতে থাকে। আমাদেরকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে আন্দোলন প্রত্যাহারে জন্য চাপ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। আমাদেরকে বার বার বলা হয় যে, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই আমাদেরকে তুলে আনা হয়েছে এবং আন্দোলন প্রত্যাহারের চাপ দেওয়া হচ্ছে। আন্দোলন প্রত্যাহারে রাজি না হলে আমাদের হত্যা করা হবে মর্মে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ ছিলো। তারা আরো বলে যে, তারা দয়া করে আমাদেরকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে।

সাক্ষী জানান, তিনি ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপে ১ দফা কর্মসূচি ও অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করেন। উক্ত কর্মসূচিতে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ একাত্মতা ঘোষণা করে।

আমি এই হত্যাযজ্ঞের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ যারা কমান্ডিং অথরিটি ছিলো তারা এবং যারা সরাসরি গুলি করেছে তাদের দায়ী করছি। ‍‌‌‌‌-আসিফ মাহমুদ

৪ আগস্ট ২০২৪ সারাদেশে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে শাহবাগে আমাদের সমাবেশ ছিলো। সেদিন সন্ধ্যায় শাহবাগে আমাদের সমাবেশস্থলে পুলিশ গুলি চালায় এবং সেখানে কমপক্ষে ৪ জন নিহত হয় এবং অসংখ্য আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা আহত হয় মর্মে খবর পাই। সেদিন বিকালে ৫ আগস্ট সারাদেশে বিক্ষোভ ও ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ কর্মসূচি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন কর্তৃক ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয় মর্মে আমরা জানতে পারেন তিনি। এ কারণে সমন্বয়কদের সাথে আলোচনাক্রমে ২ ঘণ্টার মধ্যে পরবর্তী কর্মসূচি পরিবর্তন করে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ৬ তারিখের পরিবর্তে ৫ তারিখে পালনের আহ্বান জানানো হয়। ৫ আগস্ট আসিফ চানখারপুল এলাকায় ছিলেন। তিনি সেখানে থাকার সময় বেলা দেড়টায় জানতে পারেন যে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন আসিফ মাহমুদ। এরপর আমরা মিছিল নিয়ে গণভবনের উদ্দেশ্যে রওনা হই। যাওয়ার পথে আমরা চতুর্দিকে গণভবনগামী জনস্রোত দেখতে পাই। আনুমানিক ৪টার দিকে আমরা সংসদ ভবন এলাকায় যাই, সাক্ষী আসিফ মাহমুদ জানান।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি যে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের হামলায় ও গুলিতে প্রায় দেড় সহস্রাধিক ছাত্রজনতাকে হত্যা করা হয়েছে এবং ত্রিশ সহস্রাধিক ছাত্রজনতাকে আহত করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকেই তাদের চোখ, হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়েছেন।

আমি এই হত্যাযজ্ঞের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ যারা কমান্ডিং অথরিটি ছিলো তারা এবং যারা সরাসরি গুলি করেছে তাদের দায়ী করছি।

আমাদের গুম করে রাখা অবস্থায় বার বার ডিবি কর্মকর্তারা বলছিলো যে, তারা শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আমাদেরকে গুম করেছে, আন্দোলন প্রত্যাহারে চাপ দেওয়া হচ্ছে এবং আমাদের এ ভিডিও বার্তা তাদেরকে দেখানো হবে ও তাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য বার বার চাপ দেওয়া হয়। সে কারণে আমি মনে করি, আন্দোলন দমনের এ সকল কার্যক্রমের জন্য তারা দুজন প্রধানত দায়ী। এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেখ হাসিনা কর্তৃক আন্দোলনকারীদের উপর লেখাল উইপন ও হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যার নির্দেশনার বিষয়ে জানতে পারি।

পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরো জানতে পারি যে, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ওয়্যারলেস মেসেজের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালানোর জন্য তার অধীনস্তদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত