‘বাংলাদেশে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা এতটাই ধীর ও জটিল যে অধিকাংশ মানুষ ন্যায়বিচারের আশাই করেন না। বিচার শুরু হতেই এক-দুই বছর লেগে যায়। রায় হতে লেগে যায় আরও ৮ থেকে ১০ বছর। এর মধ্যে সাক্ষীরা হারিয়ে যান, প্রমাণ নষ্ট হয়, ভুক্তভোগীর পরিবারও হতাশ হয়ে যায়।’
স্ট্রিম প্রতিবেদক
গত দেড় দশকে বাংলাদেশে একের পর এক নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বিচারহীনতা ও বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা এই সহিংসতার পেছনে বড় চালিকাশক্তি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বজিৎ থেকে লাল চাঁদ–প্রায় দেড় দশকে বহু আলোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটলেও বেশির ভাগেরই বিচার চূড়ান্ত পরিণতি পায়নি।
গত বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে একদল যুবক ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়, বিবস্ত্র করা হয়, এমনকি তাঁর শরীরের ওপর লাফানো হয়।
গত এক যুগে বাংলাদেশে এমন কিছু চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার বিচার হয়নি, বা হলেও তা অসম্পূর্ণ। অনেক মামলার আসামি পলাতক, সাক্ষ্য-প্রমাণ নেওয়া হচ্ছে না।
নিম্ন আদালতে অনেক সময় দ্রুত রায় হলেও হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সেই মামলা বছরের পর বছর পড়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রায় হলেও তা কার্যকর হয় না। যেমন আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে ২০ জনের ফাঁসির রায় উচ্চ আদালত বহাল রাখলেও এখন পর্যন্ত কারও শাস্তি কার্যকর করা হয়নি।
মাবরুক মোহাম্মদ, উপদেষ্টা, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
২০১১ সালের ঈদুল ফিতরের আগের রাতে ছয়জন স্কুল ও কলেজপড়ুয়া কিশোর ঢাকার অদূরে আমিনবাজার এলাকায় বেড়াতে যান। ডাকাত সন্দেহে একদল লোক তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করে। ভোরে ছয়টি বিকৃত ও রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। ওই মামলায় নিম্ন আদালত ১৩ জনকে ফাঁসি ও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। তবে উচ্চ আদালতে এই রায় আজও ঝুলে আছে।
২০১২ সালে বিশ্বজিৎ দাস নামে এক দর্জিকে পুরান ঢাকার আদালত ভবনের সামনে কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ। এ সময় তাঁকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়। এই ঘটনার ফুটেজ ভাইরাল হলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ মামলায় ৮ জনের ফাঁসি ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ আসামিই পলাতক রয়েছেন এবং রায়ও কার্যকর হয়নি।
২০১৩ সালে গুলশানে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা রিয়াজুল ইসলাম মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যা মামলার মূল আসামি র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন। আদালতের নথি থেকে পাওয়া যায়, বাকিরা জামিনে বা বিদেশে পালিয়ে গেছেন। সাক্ষ্যগ্রহণও বহু বছর ধরে আটকে আছে।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে স্ত্রীর উপস্থিতিতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় স্বামী রিফাত শরীফকে। হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এরপর পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড। ঘটনার সময় নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের বাধা দিচ্ছিলেন, এমনটাই ধরা পড়ে ভিডিওতে। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে, এ হত্যাকাণ্ডে স্ত্রী মিন্নিও জড়িত ছিলেন। নিম্ন আদালতে মিন্নির ফাঁসির রায় হলেও আপিল বিভাগে মামলার শুনানি আজও ঝুলে আছে। আর অভিযুক্তদের অধিকাংশ জামিনে বাইরে রয়েছেন।
সে বছরই বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে হত্যা করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তাঁকে। আদালত ২০ জনকে ফাঁসির রায় দিলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি।
২০২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ‘চোর সন্দেহে’ তোফাজ্জল হোসেন নামে এক ইলেকট্রিশিয়ানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই মামলায় পুলিশ অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। পরে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। এ ঘটনায় আদালত ছয় শিক্ষার্থীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে ব্যবসায়ী এহতেশামুল হককে একদল দুর্বৃত্ত এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
এরপর ২৩ জানুয়ারি ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রকাশ্যে সজল রাজবংশী নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার ও টাকা লুট করা হয়। এ মামলায় এখনো কোনো চার্জশিট দেয়নি পুলিশ।
সম্প্রতি খুলনার খুলনাপুরে প্রকাশ্যে মোটরসাইকেল থেকে গুলি করে তরুণ ব্যবসায়ী অর্ণব কুমার সরকারকে হত্যা করা হয়। ৯ জন গ্রেপ্তার হলেও মামলার তদন্তে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি এবং হত্যার কারণও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
বারবার কেন ঘটছে এমন হত্যাকাণ্ড
বিচারহীনতা, রাজনৈতিক প্রভাব ও আইনি প্রক্রিয়ার ধীরগতির কারণেই এ ধরনের নৃশংস হত্যা থামছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ইন্ডিপেন্ডেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আনিসুর রহমান বলেন, ‘একটি ঘটনার ১০-১২ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার শেষ হয় না। ফলে অপরাধীরা বার্তা পায়, তারা পার পেয়ে যাবে। আর একবার যদি কোনো অপরাধীর মনে এমন নিশ্চয়তা গেঁথে যায়, তাহলে সেই সমাজে অপরাধ ঠেকানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।’
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) উপদেষ্টা মাবরুক মোহাম্মদ মনে করেন, অপরাধের পর বিচার না হওয়াটাই বড় সমস্যা নয়, বরং বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতাই মানুষকে বিচারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে বাধ্য করে।
মাবরুক মোহাম্মদ বলেন, ‘বাংলাদেশে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা এতটাই ধীর ও জটিল যে অধিকাংশ মানুষ ন্যায়বিচারের আশা করতেই শেখে না। একজন আসামির বিচার শুরু হয় হয়তো এক বা দুই বছরের মাথায়। কিন্তু রায় হতে লেগে যায় ৮ থেকে ১০ বছর। এর মধ্যে সাক্ষীরা হারিয়ে যান, প্রমাণ নষ্ট হয়, ভুক্তভোগীর পরিবারও হতাশ হয়ে যায়।’
মাবরুক মোহাম্মদ আরও বলেন, ‘নিম্ন আদালতে অনেক সময় দ্রুত রায় হলেও হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সেই মামলা বছরের পর বছর পড়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রায় হলেও তা কার্যকর হয় না। যেমন আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে ২০ জনের ফাঁসির রায় উচ্চ আদালত বহাল রাখলেও, এখন পর্যন্ত কারও শাস্তি কার্যকর হয়নি। অর্থাৎ যেসব আলোচিত মামলার দ্রুত বিচার হয়েছে, তারও কোনো চূড়ান্ত পরিণতি সাধারণ মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। আলোচনার জায়গা থেকেও হারিয়ে যায়।’
অপরাধ বিশ্লেষক সৈয়দ মাহফুজুল হক তাঁর বক্তব্যে এই প্রবণতাকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ব্যর্থতার সঙ্গে যুক্ত করে বলেন, ‘এটি শুধুই অপরাধ নয়, এটি রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। যে দেশে একজন মানুষকে জনসমক্ষে পিটিয়ে মারা হয়, আর কেউ প্রতিবাদ করে না—সে দেশে আইন আছে বলে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ধ্বংস হয়ে যায়। এই বিশ্বাসহীনতার জায়গা থেকেই জন্ম নেয় আরেকটি অপরাধ। কারণ, তখন কেউ আর ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন না।’
গত দেড় দশকে বাংলাদেশে একের পর এক নৃশংস হত্যার ঘটনা ঘটেছে। বিচারহীনতা ও বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা এই সহিংসতার পেছনে বড় চালিকাশক্তি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বজিৎ থেকে লাল চাঁদ–প্রায় দেড় দশকে বহু আলোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটলেও বেশির ভাগেরই বিচার চূড়ান্ত পরিণতি পায়নি।
গত বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে একদল যুবক ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়, বিবস্ত্র করা হয়, এমনকি তাঁর শরীরের ওপর লাফানো হয়।
গত এক যুগে বাংলাদেশে এমন কিছু চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার বিচার হয়নি, বা হলেও তা অসম্পূর্ণ। অনেক মামলার আসামি পলাতক, সাক্ষ্য-প্রমাণ নেওয়া হচ্ছে না।
নিম্ন আদালতে অনেক সময় দ্রুত রায় হলেও হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সেই মামলা বছরের পর বছর পড়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রায় হলেও তা কার্যকর হয় না। যেমন আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে ২০ জনের ফাঁসির রায় উচ্চ আদালত বহাল রাখলেও এখন পর্যন্ত কারও শাস্তি কার্যকর করা হয়নি।
মাবরুক মোহাম্মদ, উপদেষ্টা, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
২০১১ সালের ঈদুল ফিতরের আগের রাতে ছয়জন স্কুল ও কলেজপড়ুয়া কিশোর ঢাকার অদূরে আমিনবাজার এলাকায় বেড়াতে যান। ডাকাত সন্দেহে একদল লোক তাঁদের পিটিয়ে হত্যা করে। ভোরে ছয়টি বিকৃত ও রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। ওই মামলায় নিম্ন আদালত ১৩ জনকে ফাঁসি ও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। তবে উচ্চ আদালতে এই রায় আজও ঝুলে আছে।
২০১২ সালে বিশ্বজিৎ দাস নামে এক দর্জিকে পুরান ঢাকার আদালত ভবনের সামনে কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ। এ সময় তাঁকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়। এই ঘটনার ফুটেজ ভাইরাল হলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ মামলায় ৮ জনের ফাঁসি ও ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ আসামিই পলাতক রয়েছেন এবং রায়ও কার্যকর হয়নি।
২০১৩ সালে গুলশানে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা রিয়াজুল ইসলাম মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ হত্যা মামলার মূল আসামি র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন। আদালতের নথি থেকে পাওয়া যায়, বাকিরা জামিনে বা বিদেশে পালিয়ে গেছেন। সাক্ষ্যগ্রহণও বহু বছর ধরে আটকে আছে।
২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে স্ত্রীর উপস্থিতিতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় স্বামী রিফাত শরীফকে। হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এরপর পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন ওই হত্যা মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড। ঘটনার সময় নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের বাধা দিচ্ছিলেন, এমনটাই ধরা পড়ে ভিডিওতে। তবে তদন্তে বেরিয়ে আসে, এ হত্যাকাণ্ডে স্ত্রী মিন্নিও জড়িত ছিলেন। নিম্ন আদালতে মিন্নির ফাঁসির রায় হলেও আপিল বিভাগে মামলার শুনানি আজও ঝুলে আছে। আর অভিযুক্তদের অধিকাংশ জামিনে বাইরে রয়েছেন।
সে বছরই বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে হত্যা করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তাঁকে। আদালত ২০ জনকে ফাঁসির রায় দিলেও এখনো তা কার্যকর হয়নি।
২০২৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ‘চোর সন্দেহে’ তোফাজ্জল হোসেন নামে এক ইলেকট্রিশিয়ানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এই মামলায় পুলিশ অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে। পরে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। এ ঘটনায় আদালত ছয় শিক্ষার্থীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের সামনে ব্যবসায়ী এহতেশামুল হককে একদল দুর্বৃত্ত এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও মামলার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
এরপর ২৩ জানুয়ারি ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রকাশ্যে সজল রাজবংশী নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ৭০ ভরি স্বর্ণালংকার ও টাকা লুট করা হয়। এ মামলায় এখনো কোনো চার্জশিট দেয়নি পুলিশ।
সম্প্রতি খুলনার খুলনাপুরে প্রকাশ্যে মোটরসাইকেল থেকে গুলি করে তরুণ ব্যবসায়ী অর্ণব কুমার সরকারকে হত্যা করা হয়। ৯ জন গ্রেপ্তার হলেও মামলার তদন্তে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি এবং হত্যার কারণও উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
বারবার কেন ঘটছে এমন হত্যাকাণ্ড
বিচারহীনতা, রাজনৈতিক প্রভাব ও আইনি প্রক্রিয়ার ধীরগতির কারণেই এ ধরনের নৃশংস হত্যা থামছে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ইন্ডিপেন্ডেট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আনিসুর রহমান বলেন, ‘একটি ঘটনার ১০-১২ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার শেষ হয় না। ফলে অপরাধীরা বার্তা পায়, তারা পার পেয়ে যাবে। আর একবার যদি কোনো অপরাধীর মনে এমন নিশ্চয়তা গেঁথে যায়, তাহলে সেই সমাজে অপরাধ ঠেকানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।’
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) উপদেষ্টা মাবরুক মোহাম্মদ মনে করেন, অপরাধের পর বিচার না হওয়াটাই বড় সমস্যা নয়, বরং বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতাই মানুষকে বিচারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে বাধ্য করে।
মাবরুক মোহাম্মদ বলেন, ‘বাংলাদেশে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা এতটাই ধীর ও জটিল যে অধিকাংশ মানুষ ন্যায়বিচারের আশা করতেই শেখে না। একজন আসামির বিচার শুরু হয় হয়তো এক বা দুই বছরের মাথায়। কিন্তু রায় হতে লেগে যায় ৮ থেকে ১০ বছর। এর মধ্যে সাক্ষীরা হারিয়ে যান, প্রমাণ নষ্ট হয়, ভুক্তভোগীর পরিবারও হতাশ হয়ে যায়।’
মাবরুক মোহাম্মদ আরও বলেন, ‘নিম্ন আদালতে অনেক সময় দ্রুত রায় হলেও হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সেই মামলা বছরের পর বছর পড়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রায় হলেও তা কার্যকর হয় না। যেমন আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে ২০ জনের ফাঁসির রায় উচ্চ আদালত বহাল রাখলেও, এখন পর্যন্ত কারও শাস্তি কার্যকর হয়নি। অর্থাৎ যেসব আলোচিত মামলার দ্রুত বিচার হয়েছে, তারও কোনো চূড়ান্ত পরিণতি সাধারণ মানুষের চোখে ধরা পড়ে না। আলোচনার জায়গা থেকেও হারিয়ে যায়।’
অপরাধ বিশ্লেষক সৈয়দ মাহফুজুল হক তাঁর বক্তব্যে এই প্রবণতাকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ব্যর্থতার সঙ্গে যুক্ত করে বলেন, ‘এটি শুধুই অপরাধ নয়, এটি রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। যে দেশে একজন মানুষকে জনসমক্ষে পিটিয়ে মারা হয়, আর কেউ প্রতিবাদ করে না—সে দেশে আইন আছে বলে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ধ্বংস হয়ে যায়। এই বিশ্বাসহীনতার জায়গা থেকেই জন্ম নেয় আরেকটি অপরাধ। কারণ, তখন কেউ আর ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন না।’
আাইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দ্রুত প্রত্যাহার হবে এমন কোনো সম্ভাবনা নেই।’
১ ঘণ্টা আগেস্কুলছাত্রীর মা বলেন, ‘মেয়ে বাড়িতে এসে আমাদের ঘটনার কথা জানায়। মামলা করেছি। এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানাই।’
১ ঘণ্টা আগেএকটি কার্যকর ও ন্যায়সঙ্গত বেতন কাঠামোর সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে মতামত গ্রহণের জন্য অনলাইনে জরিপ করছে জাতীয় বেতন কমিশন। আজ বুধবার (১ অক্টোবর) থেকে ১৫ অক্টোবর প্রশ্নমালা কমিশনের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত থাকবে।
২ ঘণ্টা আগেখাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠা ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষার পর প্রতিবেদন জেলা সিভিল সার্জনের কাছে জমা দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। সেখানে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের আলামত মেলেনি বলে জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ছাবের আহম্মেদের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
২ ঘণ্টা আগে