leadT1ad

জুলাই-যোদ্ধার বয়ানে ৫ আগস্ট

লাশের স্তূপের পাশ থেকে হাসপাতাল: হোসাইনের বেঁচে ফেরার গল্প

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের প্রায় প্রতিদিনই অংশ নিয়েছেন হোসাইন। ৫ আগস্ট যখন ‘এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি’ স্লোগানে মুখর ঢাকার রাস্তাঘাট, তখনও রাজপথে ছিলেন হোসাইন।

শতাব্দীকা ঊর্মিঢাকা
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ২২: ৪৯
আপডেট : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ০০: ৪৪
৫ আগস্ট: হোসাইন আহমেদের হাত হারানোর এক বছর। স্ট্রিম ছবি

‘‌লাশটা নিয়া যাইতে দেন’– পুলিশকে অনুরোধ করছিলেন হোসাইনের ভাই হাসান। লাশের স্তূপের পাশে নিজের ভাইকে এমন নিস্তেজ পড়ে থাকতে দেখে আর্তনাদ করে উঠেছিলেন তিনি। এমনই এক ভয়াবহ অবস্থা থেকে কোনোরকমে বেঁচে ফেরেন মোহাম্মদ হোসাইন আহমেদ। তবে তাঁকে চিরদিনের মতো হারাতে হয়েছে একটি হাত।

২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলন চলাকালে ৫ আগস্ট সকালে যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে বিদ্ধ হন হোসাইন। পরে কেটে ফেলতে হয় একটি হাতই। গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে চলছে নানান আয়োজন। কিন্তু নিজের এক হাত হারানোর সঙ্গে সেদিনের ভয়াল স্মৃতি কিছুতেই ভুলতে পারেন না হোসাইন। তার কথাতেই উঠে এলো সেদিনের ভয়াবহ চিত্র। এই জুলাই যোদ্ধা স্ট্রিমকে বলছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনে নিজের অভিজ্ঞতার কথা।

সেদিন সকালে বাড়ি থেকে তিন ভাই একসঙ্গেই বেরোলেন আন্দোলনের উদ্দেশ্যে। যাত্রাবাড়ীতে ছিল অসংখ্য মানুষের ঢল। হঠাৎ পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলি চলতে লাগল। তাঁর সামনে পড়তে লাগল একের পর এক লাশ।

ঢাকার ডেমরায় পরিবারের সঙ্গে বাস করেন ২৪ বছরের হোসাইন। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের প্রায় প্রতিদিনই অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে। ৫ আগস্ট যখন ‘এক দফা এক দাবি, হাসিনা তুই কবে যাবি’ স্লোগানে মুখর ঢাকার রাস্তাঘাট, তখনও রাজপথেই ছিলেন হোসাইন। সেদিন সকালে বাড়ি থেকে তিন ভাই একসঙ্গেই বেরোলেন আন্দোলনের উদ্দেশ্যে। যাত্রাবাড়ীতে ছিল অসংখ্য মানুষের ঢল। হঠাৎ পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলি চলতে লাগল। তাঁর সামনে পড়তে লাগল একের পর এক লাশ। হোসাইনের বয়ান অনুযায়ী, তারা একটু এগিয়ে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করছিলেন, এত গুলি কোথা থেকে আসছে। দেখলেন সামনের উঁচু ভবন থেকে স্নাইপার তাক করা। এরপর আচমকাই কয়েকজন পুলিশ তাঁর সামনে এল এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে বললেন, ‘যেমন আসছিস, তেমন মাশুল দে’। বলামাত্রই গুলি করা হলো হোসাইনকে। লুটিয়ে পড়লেন তিনি।

হোসাইনের মা বলছিলেন, ‘আমার পোলাডা এখন অল্পেই রেগে যায়। হঠাৎ হঠাৎ এত মন খারাপ কইরা থাকে। আমার কষ্ট লাগে, ডর করে।’

সেদিনের টালামাটাল পরিস্থিতিতে আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার পথেও পড়েছেন নানা সংকটে, ছিল না পর্যাপ্ত যানবাহন। ‌‌'ওইদিন শুধু গাড়ি ভাড়া দিতেই আমার খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার টাকার মতো। কোনো হাসপাতালই ভর্তি নিচ্ছিল না। তবুও তো হাত কেটে ফেলা লাগল’, বলছিলেন হোসাইন।

৫ আগস্ট: হোসাইন আহমেদের হাত হারানোর এক বছর। স্ট্রিম ছবি
৫ আগস্ট: হোসাইন আহমেদের হাত হারানোর এক বছর। স্ট্রিম ছবি

হাত হারানোর প্রায় এক বছরের মাথায় দাঁড়িয়ে হোসাইনের জীবন। অঙ্গহানির পর জীবন অনেকখানি বদলে গেছে তার। দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজই হয়ে উঠেছে কষ্টসাধ্য। এখনও খেতে হচ্ছে নিয়মিত ওষুধ। আর হোসাইনের মানসিক চাপ সামলাতেও সমস্যার মুখে পড়েছে তার পরিবার। হোসাইনের মা বলছিলেন, ‘আমার পোলাডা এখন অল্পেই রেগে যায়। হঠাৎ হঠাৎ এত মন খারাপ কইরা থাকে। আমার কষ্ট লাগে, ডর করে।’

২০২৪ সালে ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী। এর পর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে চলতে থাকে আন্দোলন। বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সরকারি নির্দেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা গুম, খুনসহ ছাত্র-জনতার ওপর নির্যাতন শুরু করেন। একপর্যায়ে ৩ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ চেয়ে এক দফা দাবি নিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন দেশের মানুষ। ৫ আগস্ট এক দফা দাবির মুখে সম্মিলিত ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা।

Ad 300x250

সম্পর্কিত