ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে কুমার নদে গোসল করা কেন্দ্র করে তেলজুড়ী গ্রাম ও বাজারে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে দুটি গ্রামের প্রতিপক্ষের লোকজন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন। এ সময় গ্রামের ১৮টি ঘরবাড়ি এবং বাজারের ৫টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।
আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে উপজেলার শেখর ইউনিয়নের ওই গ্রাম ও বাজারে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পূর্ব বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে পার্শ্ববর্তী সালথা উপজেলার খারদিয়া গ্রাম ও পরমেশ্বরদী গ্রামের লোকজন এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীরা।
খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় দেশীয় অস্ত্রসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে।
তেলজুড়ী এলাকাবাসীদের অভিযোগ, সালথা উপজেলার খারদিয়ার ইউনিয়নের মুশফিক বিল্লাহ জিহাদ ও টুলু মিয়া লোকজনের সঙ্গে নিয়ে তেলজুড়ীতে আক্রমণ করে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের অক্টোবরে কুমার নদে নৌকা বাইচ নিয়ে খারদিয়া গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে তেলজুড়ী এলাকার লোকের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। এদিকে গত সপ্তাহের সোমবার (১৬ নভেম্বর) নদীতে গোসল করা নিয়ে বোয়ালমারীর পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের রাকিব শেখের ছেলে রাজ (৭) ও হারুন শেখের ছেলে রহমতের (১০) মধ্যে মারামারি হয়। এর মীমাংসায় গত শনিবার (২২ নভেম্বর) রাতে হওয়া সালিশ বৈঠক হলেও তাতে সন্তুষ্ট হননি হারুন শেখ। এই দুই বিরোধ কেন্দ্র করে বোয়ালমারীর শেখর ইউনিয়নের তেলজুড়ী বাজার ও গ্রামের অতর্কিত হামলা চালায় সালথার খাড়দিয়া ও পরমেশ্বরদীর এক অংশের লোকজন।
তেলজুড়ী গ্রাম ও বাজারে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে দুটি গ্রামের প্রতিপক্ষের লোকজন। স্ট্রিম ছবিআহত ৩৫ জনের মধ্যে ১৫ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা নেন। এ ছাড়া পাঁচজনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর আহতদের মধ্যে আছেন শেখর ইউনিয়নের দৈবকনন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা আফতাব (৪২), দূর্গাপুর চকপাড়া গ্রামের নাদেন (২৪), সবজি ব্যবসায়ী রেজাউল (৫০), বাজিতপুর গ্রামের বিপ্লব (৩৫), তেলজুড়ী গ্রামের ওহিদ (৪০), ইউনুস (৫০) দূর্গাপুর গ্রামের লিপটন শিকদার (৩৫)। বাকিদের নাম-পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
দূর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াস মোল্লা বলেন, পাশের সালথা উপজেলার খারদিয়া গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্র সজ্জিত হয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। আমাদের লোকজনকে তারা মারাত্মক আহত করেছে। আমরা এর বিচার চাই।
শেখর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান রইসুল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘খারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা মুশফিক বিল্লাহ জিহাদ মিয়া ও তার মামা ইলিয়াস কাজী যৌথভাবে কয়েকশ লোক ঢাল, সুড়কি, দেশীয় অস্ত্র সজ্জিত হয়ে আমাদের ইউনিয়নের লোকজনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।’
হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে জানতে খারদিয়ার ইউনিয়নের মুশফিক বিল্লাহ জিহাদ ও টুলু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী-বোয়ালমারী সার্কেল) আজম খান বলেন, ‘এলাকার দুটি বাচ্চা গোসল করা নিয়ে মারামারি করে। এর সঙ্গে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পার্শ্ববর্তী সালথার থেকে কিছু লোকজন তেলজুড়ী এলাকায় প্রবেশ করে। এ সময় বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আজম খান আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় মামলা হবে। ইতিমধ্যে দুজনকে আটক করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে দেখে আমরা প্রকৃত দোষীদের আটক করব। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’