leadT1ad

সাংবাদিক তুহিন হত্যা: সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণে যা পেয়েছে পুলিশ

পুলিশের ধারণা, আক্রান্ত মনে হওয়া নারীও অস্ত্রধারী ব্যক্তিদের দলেরই একজন। গ্রুপটি শহরের বিভিন্ন স্থানে কৌশলে ছিনতাই করে।

স্ট্রিম সংবাদদাতাগাজীপুর
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ৪২
আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ৩৩
স্ট্রিম কোলাজ

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশ। প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে তুহিনকে হত্যার ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশের ধারণা, আক্রান্ত মনে হওয়া ওই নারীও অস্ত্রধারী ব্যক্তিদের দলেরই একজন। সন্ত্রাসী গ্রুপটি শহরের বিভিন্ন স্থানে কৌশলে ছিনতাই করতো।

আসাদুজ্জামান তুহিন ছিলেন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার। পেশাগত কারণে পরিবার নিয়ে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বাস করতেন তিনি। তাঁর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম হাসান জামাল। ফরিদা আক্তার ও তুহিন দম্পতির দুই ছেলে তৌকি (৫) ও ফাহিম (২)।

সিসিটিভি ফুটেজে যা ছিল

সাংবাদিক তুহিনের ওপর হামলা হয় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার পর। তাঁকে হত্যার আগের একটি দৃশ্য ধরা পড়ে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার শাপলা ম্যানশন মার্কেটের একটি দোকানে লাগানো সিসি টিভি ক্যামেরায়। সময় তখন সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিট। একজন নারীর শরীরে আঘাত করেন এক যুবক। পাশেই ধারালো চাপাতি হাতে অবস্থান করছিল চিহ্নিত কয়েকজন সন্ত্রাসী। নারীর গায়ে ওই যুবক হাত তুলতেই সন্ত্রাসীরা ধারালো চাপাতি দিয়ে তাঁকে আঘাত করে। এ সময় ওই যুবক দৌড়ে পালিয়ে যায়।

ফুটেজ পর্যালোচনায় যা পেলো পুলিশ

পুলিশ জানায়, সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া ওই নারীর নাম গোলাপী বেগম। তাঁর গায়ে হাত দেওয়া যুবকটির নাম বাদশা মিয়া। সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত বাদশা মিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

গাজীপুর পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর বাসন, ভোগড়া ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ছিনতাইয়ে জড়িত রয়েছে একাধিক গ্রুপ। তুহিনকে হত্যার আগে সিসিটিভি ফুটেজে যাঁদের দেখা গেছে, তাঁরা সবাই ছিনতাইকারী দলের সদস্য। যে নারীর শরীরে হাত দেওয়াকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত হয়, তিনিও ওই দলের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে ভিডিও ফুটেজে ধারালো অস্ত্রহাতে যাদের দেখা যায়, তাদের কয়েকজনের পরিচয় খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে আছেন মিজান ওরফে কেটু মিজান, শাহ জামাল, বুলেট ও সুজন। তাঁদের বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে তাঁরা ছিনতাই করে থাকেন। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর পুলিশের একাধিক টিম হত্যাকাণ্ডে সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান শুরু করে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রবিউল হাসান বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি ওই মেয়েটিও ছিনতাইকারী দলের সদস্য। অস্ত্রধারীরা যে লোকটাকে ধাওয়া করেছে, তাঁর সঙ্গে ছিনতাইকারীদের কিছু একটা ঘটেছে। যে কারণে ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কুপিয়ে জখম ও ধাওয়া করে। ওই লোকটি বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। ছিনতাইকারীদের ধরতে এরই মধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে।’

হত্যার ঘটনায় মামলা

এদিকে বাসন থানা সূত্রে জানা গেছে, নিহত সাংবাদিক তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম মিয়া বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই বাসন থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় ৫ জনকে সন্দেহভাজন আসামি করা হয়েছে।

বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান বলেন, ‘সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার ঘটনায় তাঁর বড় ভাই মো. সেলিম মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। রাতেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থেই তাঁদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা যাচ্ছে না।’ তবে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

প্রতিবাদে মুখর শহর

সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে শুক্রবার সারা দিনই নানা কর্মসূচি পালন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। সকালে গাজীপুর প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে সাংবাদিক ইউনিয়ন গাজীপুরের উদ্যোগে। সংগঠনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মুজিবুর রহমান, মাজহারুল ইসলাম মাসুম, খায়রুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শাহ সামসুল হক রিপন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল আহমদ সরকার, আমিনুল ইসলামসহ অন্যরা।

এ ছাড়া গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের জানাজার আগে বক্তব্য দেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনি, এনসিপির উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম সংগঠন আলী নাসের খান, বিএনপি নেতা সুরুজ আহমেদ, গাজী সালাহ উদ্দিন, মহানগর কৃষক দলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান ও সাংবাদিক নেতারা। তাঁরা তুহিনের হত্যাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পরের বাংলাদেশেও এই রকম নৃশংসতা দেখতে হবে তা কল্পনাও করা যায় না। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় সামগ্রিকভাবে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘গাজীপুরে সাংবাদিক খুন প্রমাণ করে ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে দেশ এখন চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীদের কবলে চলে গেছে।’

শুক্রবার সকালে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপির নেতা, সাংবাদিক ও এলাকার বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিন হন। জানাজা শেষে তার মরদেহ দাফনের জন্য ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়।

Ad 300x250

সম্পর্কিত