leadT1ad

রাতে নিরাপত্তাহীন বোধ করছেন চবি শিক্ষার্থীরা

দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা তাঁদের কাছে স্পষ্ট। এ ছাড়া রোববার সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলেও ঘটনাস্থলে সেনা-পুলিশের উপস্থিতি ছিল না ৬ ঘণ্টা।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ২১: ২১
সংঘর্ষ চলাকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। স্ট্রিম ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে রোববারও (৩১ আগস্ট) কয়েক দফা সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। এর জেরে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে রাতের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষার্থীরা।

এদিকে নিরাপত্তাহীনতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থাকা অনেক শিক্ষার্থী হলে অবস্থান নিয়েছেন। তবে দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা তাঁদের কাছে স্পষ্ট। তা ছাড়া আগামীতে অনাবাসিক ও গেট এলাকার খাবার ওপর নির্ভরশীল হলের শিক্ষার্থীদের কী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলনে তাঁরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজাউল করিম তুষার থাকেন এ এফ রহমান হলে। তবে খাবারের জন্য তাঁকে প্রতিবার যেতে হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট এলাকায়। শনিবার (৩০ আগস্ট) রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত ওই এলাকা প্রায় রণক্ষেত্র হয়ে ছিল। এতে আগামীতে কি কি দুর্ভোগে পড়তে হবে ভেবে শঙ্কিত তিনি।

ঢাকা স্ট্রিমকে তুষার বলেন, ‘এতগুলো ছেলেপুলে হলের বাইরের থাকে, তাদের নিরাপত্তা কোথায়? এখন দেখতে পাচ্ছি যে, তারা বাসায় যাইতে ভয় পাইতেছে। আমার বন্ধু-বান্ধব, জুনিয়া যারা এখন বাইরে থাকতে পারতেছে না, আমার হলে চলে আসতেছে। আমি তাদের আজকের রাতটা রাখলাম। কিন্তু কয়জনকে রাখব? কয় দিন রাখব তাদের? এখন এমন একটা অবস্থা যে, তাদের যেখানে পাবে সেখানেই মারা হবে, কুপানো হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দুর্বলতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সারা দিন ধরে দেখতে পেলাম যে, যেখানেই যারা একা পাইতেছে, তারেই তিন-চারজন মিলে কুপাইতেছে। তাহলে এখন প্রশাসন কী ইনেশিয়েটিভ নিচ্ছে, আমার নিরাপত্তা কোথায়? আমি যে হলে থাকি, আমি হলে সব বেলা খাইতে পারি না। আমাকে সব বেলা দুই নম্বর গেটে যাইতে হয়। আমি এখন দুই নম্বর গেটটায় কার ভরসায় যাব। প্রশাসন আমাকে ওই নিরাপত্তাটা কোথায় দিচ্ছে। সত্যি এখন খুবই ভীতিকর পরিস্থিতর মধ্যদিয়ে যাই হচ্ছে।’

তুষারের মতো এ এফ রহমান হলের বাসিন্দা মো. ইফরান পড়েন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। চবির নিরাপত্তাকে ভঙ্গুর মনে করেন তিনি। রোববার সন্ধ্যার দিকে ঢাকা স্ট্রিমকে তিনি বলেন, ‘আজকের আমরা দেখছি, চবির নিরাপত্তা কতটা ভঙ্গুর। আমাদের নিরাপত্তাহীনতার জন্যেই আজকে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এখনকার কথা যদি বলি, যৌথবাহিনী আসছিল, কী করছে না-করছে আমরা কিছু জানি না, তারা আবার চলেও গেছে। এই মুহূর্তে তাহলে আমাদের নিরাপত্তা করা দিবে?’

ইফরান বলেন, ‘আমার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অলরেডি দায় বদ্ধতা নিচ্ছে না। আর যারা সাহায্যে এগিয়ে আসছিলেন, তারাও আহত হয়ে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনী তো কোনো কাজের না, এটা একদম প্রমাণিত। আমরা অনলাইনে ভিডিওতে দেখেছি, তাদের কোনো কাজ নাই। তাহলে আমাদের নিরাপত্তাটা কোথায়?’

বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের ওপর নির্ভরশীলতা প্রসঙ্গ তুলে ইফরান বলেন, ‘আমরা যারা দুই নম্বর বা এক নম্বর গেটে বা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকি। গত (শনিবার) রাতে বা আজ (রবিবার) দুপুরে যেটা হইছে, আমরা দেখেছি, বাসায় গিয়ে গিয়ে তাদের বের করে মারতেছে। আজকের রাতে কী হবে? আমাদের নিরাপত্তাটা কে দিবে? আমরা চবি স্টুডেন্টরা, আমরা তো বলতেছি ওরা যেন ক্যাম্পাসে চলে আসে। ক্যাম্পাসে চলে আসাটা তো আলটিমেড সমাধান না। ক্যাম্পাসে চলে এসে কী হবে!’

সংঘর্ষের ৬ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে সেনা-পুলিশ

এদিকে রোববার সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলেও ঘটনাস্থলে সেনা-পুলিশের উপস্থিতি ছিল না ৬ ঘণ্টা। এ সময়ে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে থাকা শিক্ষার্থীরা। কয়েকটি গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারের মধ্যেও দেখা যায়, সেখানে উপস্থিতি ছিল না সেনা-পুলিশ সদস্যরা। তবে বিকেল ৫টার দিকে ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় সেনাবাহিনীকে দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, রোববার সকাল থেকে দ্বিতীয়বার সংঘর্ষ হয়। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কোনো সেনা ও পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়নি। তবে সাড়ে ৩টার দিকে প্রথমে সেনারা আসেন। পরে পুলিশকে দেখা যায়।

এদিকে রোববার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট সংলগ্ন জোবরা গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাঝোতা করতে গেলে দ্বিতীয়বার হামলা করা হয়।

এসব বিষয়ে জানতে জেলা পুলিশের মুখপাত্র রাসেলকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও প্রথমে ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে তিনি কল রিসিভ করলেও ব্যস্ত আছেন বলে কেটে দেন।

এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে রেলগেট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে রোববার (৩১ আগস্ট) দুপুর ২টা থেকে আগামীকাল সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত