leadT1ad

উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের সমাবেশ

কাঁদতে কাঁদতে একই চাওয়া, ‘ঘরে ফিরতে চাই’

নিহত স্বজনদের কথা বলে কেঁদে ফেললেন তারা। মনে পড়ে যায় ফেলে আসা জনপদের স্মৃতি। কাঁদতে কাঁদতে সবাই একই দাবি তোলেন, ‘ঘরে ফিরতে চাই’।

স্ট্রিম সংবাদদাতাউখিয়া, কক্সবাজার
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ২০: ৫২
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ২১: ০৬
উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের সমাবেশ। সংগৃহীত ছবি

২৫ আগস্ট। আট বছর আগে এই দিনেই মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড চালায় দেশটির সামরিক জান্তা। শুরু হয় রোহিঙ্গা নিধন। প্রাণ হাতে কোনোমতে এসে সীমান্তের ওপারে দাঁড়ায় রোহিঙ্গারা। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে তাদের আশ্রয় হয় কক্সবাজারের উখিয়ায়। সেই রক্তাক্ত স্মৃতির স্মরণে আজ সোমবার (২৫ আগস্ট) উখিয়া-টেকনাফের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে পালিত হয়েছে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস’।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্যাম্পের খোলা মাঠগুলোতে ঢল নামে রোহিঙ্গারদের। রাখাইনে নিহতদের স্মরণে মোনাজাতের সময় তৈরি হয় হৃদয় বিদারক দৃশ্য। নিহত স্বজনদের কথা বলে কেঁদে ফেলেন তারা। মনে পড়ে যায় ফেলে আসা জনপদের স্মৃতি। কাঁদতে কাঁদতে সবাই একই দাবি তোলেন, ‘ঘরে ফিরতে চাই’।

সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয়েছে রাজাপালংয়ের মধুরছড়া ক্যাম্পের মাঠে। এতে যোগ দেয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। সেখানে বক্তারা স্মরণ করেন, ২০১৭ সালের ভয়াল রাতের স্মৃতি, ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়া, পরিবার থেকে ছিন্ন হয়ে যাওয়া, সীমান্ত অতিক্রমের ভীতি। এতে অংশ নেওয়া রোহিঙ্গাদেরর হাতে লেখা প্ল্যাকার্ডে ভেসে ওঠে তাদের আকুতি, ‘আরাকান আমাদের ঘর’, ‘আমরা ন্যায়বিচার চাই’, ‘আমরা ফিরব, বিশ্ব শোনো।’

‘আমাদের কেবল নিরাপদ প্রত্যাবাসন চাই। মর্যাদা ছাড়া বাঁচতে চাই না। বিশ্বকে আমাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।’ সমাবেশে এসব কথা বলেন রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মোহাম্মদ কামাল। তিনি স্মরণ করেন, সেদিন (২৫ আগস্ট) চোখের সামনে গুলি করে হাজারো রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যা করেছে সামরিক বাহিনী। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে তারা। ধর্ষণ করা হয়েছে রোহিঙ্গা নারীদের। সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও আশ্রয়শিবিরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন গুলিতে পঙ্গু হয়ে শত শত রোহিঙ্গা।

মাস্টার কামাল বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা চলমান। দ্রুত এই বিচারকাজ শেষ করে হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তাদের প্রত্যাশা।

উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের সমাবেশ। সংগৃহীত ছবি
উখিয়ায় রোহিঙ্গাদের সমাবেশ। সংগৃহীত ছবি

এদিকে গত শুক্রবার রাত ১১টা থেকে শুরু হওয়া এই গোলাগুলির শব্দ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে শনিবার সকাল পর্যন্ত শোনা গেছে। এতে নতুন করে রোহিঙ্গা নাগরিকেরা নৌকায় নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন। সেই কথা স্মরণ করে সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, রাখাইনে প্রত্যাবাসনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ রোহিঙ্গারা। কিন্তু সেখানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কী করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন সম্ভব—তা আন্তর্জাতিক মহলকে ভেবে দেখতে হবে।

রোহিঙ্গা তরুণী জাহান নূর বক্তব্যে বলেন, রাখাইনে চলমান সহিংসতায় আজও তাদের আত্মীয়-স্বজন প্রাণ হারাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তাই আবেদন, ‘আমাদের বাঁচান, আমাদের ফিরতে দিন।’

বিভিন্ন ক্যাম্পে দিনব্যাপী আয়োজিত সমাবেশে কবিতা, গান আর মোনাজাতে তৈরি হয় আবেগঘন পরিবেশ। একইভাবে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ টেকনাফের একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবসের অনুষ্ঠান হয়েছে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের ভয়াবহ স্মৃতি স্মরণ করে রোহিঙ্গা তরুণ মোহাম্মদ সাদেক (২৫) বলেন, ‘তখন আমি কেবল একজন ছাত্র— ভবিষ্যতের জন্য স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষায় ভরা। জীবন ছিল স্বাভাবিক, ছিল সামনে এগোনোর অগণিত পরিকল্পনা। কিন্তু ২৫ আগস্টের আগের রাতের ঘটনা সবকিছু ছিন্ন-ভিন্ন করে দেয়।’ তিনি বলেন, এক রাত, যা আমার স্বপ্নকে পরিণত করেছিল হতাশায়। এক রাত, যা বদলে দিয়েছিল আমার জীবনের গতিপথ।’

এদিকে একই দিনে উখিয়ার ইনানীর সমুদ্র তীরবর্তী হোটেলে চলছিল ‘রোহিঙ্গা বিষয়ক অংশীজন সংলাপ’ শীর্ষক তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন। এর দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘এই সংকট সমাধানে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসনের জন্য সাত দফা রোডম্যাপ প্রস্তাব করেন।

Ad 300x250

যে ছয় মাস আছি, প্রত্যেক জেলায় লিগ্যাল এইডের ব্যবস্থা করে যাব: আইন উপদেষ্টা

মুসলমানি-বাংলা থেকে বাংলাদেশি: ভাষার রাজনৈতিক বিভাজন

রোহিঙ্গারা অধিকার নিয়ে মিয়ানমারে ফিরতে প্রস্তুত: খলিলুর রহমান

ভারতের নতুন নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের পাটশিল্পে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা

‘রোহিঙ্গা সংকট স্থবির হয়ে আছে, সমাধানে আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক সক্রিয়তা জরুরি’

সম্পর্কিত