leadT1ad

‘জান বাঁচাতে’ ফেনী থেকে ঢাকায় যুবলীগ নেতার ভাই, ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
ফেনী

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৮
নিহত ফখরুল ইসলাম। সংগৃহীত ছবি

ফেনীর সোনাগাজীর নিষিদ্ধ সংগঠন যুবলীগ নেতার ভাই ফখরুল ইসলামের ঝুলন্ত মরদেহ রাজধানীর ডেমরা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিকালে ডেমরার মোস্তাক হাজী এলাকার খালের পাশে একটি গাছে ঝুলছিল তাঁর মরদেহ। পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে ডেমরা থানা-পুলিশ।

পরিবারের দাবি, প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে বাঁচতে তিনি ঢাকায় পালিয়ে ছিলেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবেই তাঁকে হত্যার পর গাছের ডালে ঝুলিয়ে রেখেছিল দুর্বৃত্তরা। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে ফখরুলকে তাঁর গ্রামের মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

ফখরুল ইসলাম সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস মিয়ার তৃতীয় সন্তান। তাঁর বড় ভাই নুরুল ইসলাম ভুট্টু চরদরবেশ ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। আরেক ভাই নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

ফখরুলের ৩ বছরের একটি কন্যা রয়েছে। তাঁর স্ত্রী রুবিনা আক্তার ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর একাধিকবার তাঁর ওপর হামলা হয়। ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে বাঁচতে তিনি রাজধানীতে অবস্থান করছিলেন। তিনি ইতালি যাওয়া চেষ্টা করছিলেন ফখরুল। একই কারণে তাঁর বড় ভাই নুরুল ইসলাম ভুট্টু থেকে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সোনাগাজীতে নিজ বাড়িতে থাকা অনিরাপদ মনে করে ফেনী সদরে মুদি মালের দোকান দিয়েছিলেন। গত নভেম্বরে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হলে গোপনে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। খবর পেয়ে সন্ত্রাসীরা বাড়ির সামনে ককটেল ফাটিয়ে তাঁকে খুঁজতে থাকেন। এ সময় তিনি পালিয়ে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে শ্বশুর বাড়িতে চলে যান। সেখানেও সন্ত্রাসীরা তাঁকে তাড়া করলে পরিবারের সহায়তায় ঢাকার ডেমরাতে চলে যান। সেখানে একটি দোকানে চাকরির পাশাপাশি সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবসা করতেন। বর্তমানে কাজের অনুমতিসহ ইতালি যাওয়ার ভিসা পাওয়ার অপেক্ষা করছিলেন তিনি।

স্থানীয়রা বলছেন, রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হলেও ফখরুল ইসলাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এলাকায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। বৈবাহিক সূত্রে বেশিরভাগ সময় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরপর্বতি ইউনিয়নের শ্বশুর বাড়িতে থাকতেন। তাঁর বিরুদ্ধে এলাকার কারও অভিযোগ নেই।

নিহতের স্ত্রী রুবিনা আক্তার বলেন, ‘আমার সঙ্গে তাঁর সবশেষ কথা হয় গত শনিবার রাতে। পরে সকালে তাঁর মোবাইল বন্ধ পেয়ে অনেক স্থানে খোঁজ করেও সন্ধান পাইনি। সোমবার রাতে ডেমরা থানা পুলিশের মাধ্যমে মৃত্যুর খবর পাই।’

রুবিনা আক্তার আরও বলেন, ‘এটি কোনো আত্মহত্যা হতে পারে না। আমার স্বামীর মুখমণ্ডলে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। আত্মহত্যা করলে আঘাতের চিহ্ন থাকবে কেন? আমার দৃঢ় বিশ্বাস এটি হত্যাকাণ্ড। এত হামলার চেষ্টার মুখেও আমার স্বামী নিজের উপর আস্থা রেখেছেন, সর্বশেষ কথা বলার সময়েও তাকে প্রাণবন্ত দেখা গেছে।’

সোনাগাজী মডেল থানায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম। আর ডেমরা থানার ওসি তাইফুর রহমান বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের পর পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এটি হত্যাকাণ্ড, নাকি আত্মহত্যা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া ছাড়া বলা যাবে না। ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত