গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি সুতা উৎপাদন কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে দফায় দফায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শ্রমিকরা। এ সময় তাঁদের সরিয়ে দিতে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের নগরহাওলা গ্রামে অবস্থিত এ এ ইয়ার্ন মিলস্ লিমিটেড এবং এ এ নিটসপিন মিলস্ লিমিটেড নামে একইভূত কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে অবরোধ করেন। দুপুর ৩টার দিকেও থেমে থেমে আন্দোলন চলছিল। এর আগে সেপ্টেম্বরের বেতন বকেয়া রেখেই হঠাৎ অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধের নোটিশ ঝুলিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) আন্দোলন করে কারখানার প্রায় সব শ্রমিক। এ সময় তাঁরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন তাঁরা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে বেতন পরিশোধের আশ্বাসে আন্দোলন বন্ধ করেন শ্রমিকেরা। এ সময় কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, এই সোমবার (২৭ অক্টোবর) থেকে পুরোদমে কারখানা চালু হবে। কিন্তু সোমবার শ্রমিকরা কর্মস্থলে এসে দেখেন, মূল ফটকে কারখানা অনির্দিষ্টকালের নোটিশ ঝুলছে।
শ্রীপুরে কারখানা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করায় সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। স্ট্রিম ছবিকারখানার শ্রমিক সুজন মিয়া বলেন, ‘সোমবার এসে দেখি, কারখানার সামনে বন্ধের নোটিশ ঝুলছে। পরে পুলিশ আমাদের আশ্বাস দেয় যে, আজ মঙ্গলবার ১০টার দিকে কারখানা খুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবে। কিন্তু আজও এসে দেখি কারখানা সামনে বন্ধের নোটিশ। এরপরই শ্রমিকরা রাস্তায় নামে। রাস্তা নামার পরপরই পুলিশ এসে কোনো কথা না বলে লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।’
কারখানার শ্রমিক ঝুটন বলেন, ‘দীর্ঘ বছর যাবৎ এই কারখানায় শ্রমিকের কাজ করছি। কয়েকমাস যাবৎ বেতন পরিশোধ নিয়ে টালবাহানা করছে। আন্দোলনের জেরে হঠাৎ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করছে। আমার বকেয়া বেতনসহ অন্যান্য দাবিদাওয়া না পরিশোধ করেনি। শ্রমিকদের সঙ্গে অনেক অন্যায় করা হয়েছে।’
হঠাৎ বন্ধের বিষয়ে কারখানার মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) শ্রমিকরা বেতন দাবির সময় কারখানার ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করে। ফলে কারখানা চালু রাখা সম্ভব নয়। মালিকপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬-এর ধারা ১৩(১) অনুযায়ী কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’
শ্রমিকদের সরাতে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের কথা জানিয়ে শ্রীপুরের শিল্প পুলিশের ইন্সপেক্টর আব্দুল লতিফ স্ট্রিমকে বলেন, ‘কয়েকদিন ধরেই কারখানাটিতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করলেও আজকে তারা মহাসড়ক অবরোধ করেন। তাদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিতে আমরা সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করি। কিন্তু শ্রমিকরা দফায় দফায় রাস্তা নামছেন।’