leadT1ad

রাজশাহীতে ওয়াসার পাম্প ঘরে বৈদ্যুতিক তার চুরির হিড়িক

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
রাজশাহী

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ৪১
রাজশাহীতে ওয়াসার পাম্প ঘরে বৈদ্যুতিক তার চুরির হিড়িক। স্ট্রিম ছবি

রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) পাম্প ঘরগুলোতে বৈদ্যুতিক তার চুরির হিড়িক পড়েছে। একের পর এক পাম্প ঘরে চুরির ঘটনায় নগরের বিভিন্ন এলাকায় পানির সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় পুলিশের টহল বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে গত সোমবার (২০ অক্টোবর) রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনারকে চিঠি দিয়েছে ওয়াসা। তবে চিঠি পাঠানোর পর রাতেই আরও দুটি পাম্প ঘরে চুরির ঘটনা ঘটে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার ৩০টি ওয়ার্ডে ওয়াসার পাম্প ঘর আছে ১২৩টি। এসব পাম্পের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে নগরবাসীর জন্য সরবরাহ করা হয়। পাম্প ঘরগুলো থেকে তার চুরি হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সবশেষ সোমবার গভীর রাতে নগরের কাজলা ও খোজাপুর গোরস্থানসংলগ্ন পাম্প ঘরে চুরির ঘটনা ঘটে।

ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, আগে বছরে এক–দুটি পাম্প ঘর থেকে বৈদ্যুতিক তার চুরি হতো। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চুরি নিয়মিত ঘটছে। কয়েক মাস আগে রাজশাহী শারীরিক শিক্ষা কলেজের পাম্প ঘরে প্রথম চুরির ঘটনা ঘটে। এরপর বিসিক পাম্প ঘর, ১১ অক্টোবর বুধপাড়া বাইপাস পাম্প ঘর, ১৬ অক্টোবর দায়রাপাক মোড়ের পাম্প ঘর এবং ১৯ অক্টোবর খলিল সরকারের মোড়ের পাম্প ঘরে একই ধরনের চুরি হয়।

পাম্প ঘরগুলো থেকে তার চুরি হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। স্ট্রিম ছবি
পাম্প ঘরগুলো থেকে তার চুরি হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। স্ট্রিম ছবি

পাম্প ঘর এলাকায় টহল জোরদারের অনুরোধ জানিয়ে ওয়াসার সচিব সুবর্ণা রানী সাহা সোমবার আরএমপি কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানকে চিঠি দেন। চিঠির সঙ্গে চুরি হওয়া পাম্পগুলোর তালিকা এবং শহরের ১২৩টি পাম্প ঘরের ঠিকানা দেওয়া হয়। তবে এর কয়েক ঘণ্টা পরেই নগরের কাজলা ও খোজাপুর গোরস্থান পাম্পে আবারও চুরি হয়।

ওয়াসা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জনবল সংকটের কারণে রাতে পাম্প ঘরে চালক থাকেন না। এই সুযোগে চোরেরা ঢুকে পড়ে। কখনো তালা ভেঙে, আবার কখনো ছাদের স্ল্যাব সরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করছে তারা। এরপর বোর্ড থেকে পাম্প পর্যন্ত থাকা সাবমারসিবল তার ও টেন-আরএম তার কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে পাম্প বন্ধ হয়ে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

মঙ্গলবার সকালে ওয়াসা কার্যালয়ে চুরির বিষয়টি জানাতে আসেন খলিল সরকারের মোড়ের পাম্প ঘরের চালক মো. চাঁদ। তিনি বলেন, গত রোববার রাতে তার পাম্প ঘরে চুরি হয়। নতুন তার না লাগানো পর্যন্ত পাম্প বন্ধ ছিল।

দুপুরে খোজাপুর গোরস্থান পাম্প ঘরে নতুন তার লাগানোর কাজ করছিলেন বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি জয়নাল আবেদিন। তিনি বলেন, ‘প্রায়ই বিভিন্ন পাম্পে তার চুরি হচ্ছে। ইদানীং এটা বেড়ে গেছে। দামি এসব তার চুরি করে মাদকাসক্তরা কেজিদরে বিক্রি করছে বলে আমার মনে হয়।’

নতুন তার না লাগানো পর্যন্ত পাম্প বন্ধ থাকছে। স্ট্রিম ছবি
নতুন তার না লাগানো পর্যন্ত পাম্প বন্ধ থাকছে। স্ট্রিম ছবি

খোজাপুর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাতে চুরির পর থেকেই পাম্প বন্ধ। এখন দুপুর গড়িয়ে গেছে, তার লাগানোর কাজ শেষ হয়নি। পানি না থাকায় ভোগান্তি বেড়েছে। পাম্প ঘরে লোক থাকলে এভাবে চুরি হতো না।’

রাজশাহী ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘রাতে পাম্প চলে না, তাই অপারেটররা থাকে না। আবার কোনো নৈশপ্রহরীও নেই। এ জন্যই চুরি ঘটছে। এসব ঘটনায় আমরা থানায় অভিযোগ দিচ্ছি এবং পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছি টহল বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে। পাশাপাশি স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়টিও ভাবছি।’

আরএমপির মুখপাত্র গাজিউর রহমান বলেন, ‘পাম্পগুলো অরক্ষিত থাকে। এগুলো ওয়াসার সম্পদ, তাই সুরক্ষার পরিকল্পনাও তাদেরই নেওয়া উচিত। তবে আমরা অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত চলছে। চোরচক্রকে ধরার চেষ্টা চলছে। ওয়াসা যে তালিকা দিয়েছে, সেইসব এলাকায় রাত্রীকালীন টহল ইতোমধ্যে বাড়ানো হয়েছে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত