leadT1ad

ট্রাভেল এজেন্সির আড়তদারি ব্যবসা বন্ধ করতে চাই: বিমান উপদেষ্টা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ৩৩
বক্তব্য রাখছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। স্ট্রিম ছবি

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘এয়ার টিকিটে আড়তদারি ব্যবসা শুরুর পর থেকেই একটা সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা সেই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। এজন্য ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর আড়তদারি ব্যবসা বন্ধ করতে চাই।’

বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বেসামরিক বিমান চলাচল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫ সম্পর্কে অবহিতকরণ নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, ‘আইন লঙ্ঘনের সাজা ১ বছর এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে বেসামরিক বিমান চলাচল এবং বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। আইন বাস্তবায়ন শুরু হলে এয়ার টিকিটের ভাড়া যৌক্তিক হবে, পাশাপাশি যাত্রীর অধিকার সুরক্ষা ও সেবা নিশ্চিতে কাজ করবে এই আইন।’

একটা ট্রাভেল এজেন্সি আরেকটি ট্রাভেল এজেন্সির কাছে টিকিট বিক্রি করতে পারবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে বিমান উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘পারবে না, কারণ ট্রাভেল এজেন্সি কোনো আড়তদারি ব্যবসা না। আমরা এই ব্যবসাটাকে বন্ধ করতে চাই। আড়তদারি ব্যবসার মাধ্যমেই টিকিট নৈরাজ্যের প্রাথমিক স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে। সুতরাং আমরা এটা বন্ধ করে দিতে চাই।’

উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যাত্রীর স্বার্থ ও যাত্রীর অধিকার রক্ষা করা। বিশেষ করে আমাদের যেসব শ্রমিক বিদেশে কাজ করেন তাদের সংখ্যা দুই কোটির অধিক। ৪০ হাজার টাকার একটা টিকিট এক লাখ ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত বছর এদেশ থেকে এক কোটি ৩২ লাখ লোক বিদেশে গেছেন। এর ৮০ শতাংশ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যগামী লোক। আমরা যদি ৫০ হাজার করে টিকিটের বাড়তি দাম ধরি তাহলে মাসে সেটি দাঁড়ায় ৫ হাজার টাকা এবং বছরে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এই যে একটা সাগর পরিমাণ (অর্থ) প্রতারণার মাধ্যমে আদায় হয়ে দেশ থেকে পাচার হয়েছে, আমরা সেটা বন্ধ করে দিতে চাই। এটার জন্য আমাদের যত ধরনের উদ্যোগ নিতে হয় নেব।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যগামী লোকদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং দ্বিতীয় হচ্ছে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার বন্ধ করা। এ উদ্দেশ্যে যেটা প্রয়োজন সেটা আমরা করবো।’

অধ্যাদেশে কী ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘অপরাধভেদে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং এক বছরের কারাদণ্ড। আর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে— এই শ্রেণিটিতে আরও কিছু নতুন কিছু যুক্ত করা হয়েছে, যেটা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আগের আইনে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা যেত না। নতুন আইনে সেটা সুস্পষ্ট পরিধি নিশ্চিত করেছি।’

নিবন্ধন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘এজেন্সির আয়টা অ্যাপ্রুভ বা মন্ত্রণালয় কর্তৃক অ্যাপ্রুভ কিনা — সেটা কোনো বিষয় না। পাসপোর্ট আপনাকে রাষ্ট্র দেবে, কিন্তু ভিসা আপনাকে যে রাষ্ট্র দেবে সেটা তাদের দায়। নিবন্ধন আমরা দিই বা যে রাষ্ট্রই দিক, আয়টা তো বাংলাদেশি কোনো প্রতিষ্ঠানের না। সে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আপনার ব্যবসায়িক কার্যক্রম কী হবে সেটা সম্পূর্ণ দ্বিপাক্ষিক বিষয়। সেখানে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই।’

গ্রুপ ভিত্তিক টিকিটিং থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে গেলে ১০, ৫, ৫০ জন মিলে পারিবারিকভাবে ছুটি কাটাতে বিভিন্ন দেশে যান, সে ক্ষেত্রে এটা অন্যায় হবে না। গ্রুপ ভিত্তিক টিকিটিং থাকবে। তবে বৈদেশিক জনশক্তি কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) যারা কার্ডধারী, তাদের নামে আমরা কোনো গ্রুপ বুকিং করতে দেব না। এর বাইরে গ্রুপ বুকিংয়ে কোনো সমস্যা নেই।’

সাধারণ বিক্রয় প্রতিনিধি (জিএসএ) নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জিএসএ সিস্টেম আমাদের দেশে ঐচ্ছিক ছিল। ২০১৭ সালে এক ব্যক্তির ইচ্ছায় এটা আবশ্যিক করা হয়। এর ফলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার টিকিট ১ লাখ ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমরা বাজারে একটা উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা তৈরি করতে চাই। আমাদের টিকিটের মূল্য কমানো আমাদের লক্ষ্য না, টিকিটের মূল্য যৌক্তিক করা আমাদের মূল উদ্দেশ্য। এজন্য একটা প্রতিযোগিতা তৈরি করতে চাই। আমরা এমন একটা বাজার ব্যবস্থায় যেতে চাই যেখান বাজার চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করবে।’

আইন বাস্তবায়নে কোনো পথ বা মেকানিজম তৈরি করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘শুধু মেকানিজম না, দায় তৈরি করার কথা। এই আইনের ফলে এয়ারলাইন্সগুলো বুঝবে যে একটা দায় তাদের ওপর আছে। এছাড়া আমাদের মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার, সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি ও মোবাইল কোর্ট—এদের সমন্বিত উদ্যোগ তো বাজারে জারি থাকবে। সামগ্রিকভাবে দায় তৈরি করাটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা ধারণা করছি, কর্তৃপক্ষের সক্ষমতার ওপর বাজারে একটা শৃঙ্খলা আসবে।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত