ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা পৃথক তিনটি মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর)। এই তিন মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট আসামি ২৩ জন।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এই রায় ঘোষণা করবেন। এর আগে গত রোববার (২৪ নভেম্বর) কারাগারে থাকা একমাত্র আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।
মামলা তিনটিতে শেখ হাসিনাসহ ২২ জন আসামিই পলাতক রয়েছেন। পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে পারেননি এবং তারা আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করার সুযোগও পাননি। শুধু গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা আসামি মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের পক্ষে আইনি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।
রায় প্রসঙ্গে দুদক প্রসিকিউটর খান মো. মাইনুল হাসান (লিপন) বলেন, ‘আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রত্যাশা করছি। আশা করছি, আদালত থেকে সর্বোচ্চ সাজাটাই আসবে।’ অন্যদিকে, আসামি খুরশীদ আলমের আইনজীবী শাহীনুর রহমান দাবি করেন, ‘দুদক আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। কাজেই আশা করছি তিনি খালাস পাবেন।’
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তারা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে প্রত্যেকে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নেন।
প্লট বরাদ্দের দুর্নীতির অভিযোগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পৃথক ছয়টি মামলা দায়ের করে। তদন্ত শেষে মার্চ মাসে তদন্ত কর্মকর্তারা আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ৩১ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন তিনটি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বাকি তিনটি মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক মো. রবিউল আলম অভিযোগ গঠন করেন। আজ যে তিনটি মামলার রায় হতে যাচ্ছে, সেগুলোর তদন্ত ও অভিযোগপত্র দাখিল করেছিলেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া এবং এস এম রাশেদুল হাসান।
মামলাগুলোতে শেখ পরিবারের প্রভাবশালী সদস্যদের আসামি করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়াও আসামিদের মধ্যে রয়েছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক।
এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা ও রাজউকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন—সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সাবেক সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিনসহ আরও অনেকে।