দেশের পরিচিত ধর্মীয় বক্তা মুফতি আমির হামজা। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে দীর্ঘদিন আজান দিতে না নেওয়া এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সকালে ‘মদ দিয়ে কুলি’ করার মতো বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন।
স্ট্রিম প্রতিবেদক
দেশের পরিচিত ধর্মীয় বক্তা মুফতি আমির হামজা। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে দীর্ঘদিন আজান দিতে না নেওয়া এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সকালে ‘মদ দিয়ে কুলি’ করার মতো বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন। এ জন্য পরবর্তীকালে ক্ষমাও চান। তবে আমির হামজার এমন বক্তব্য দেওয়া এবং পরে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার এমনটি করেছেন।
বিভিন্ন সময় নিজেকে ‘ভারছিটির মাল’ (বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী) পরিচয় দেওয়া এই বক্তা ধর্মীয় ব্যাখ্যার আড়ালে, কখনও সামাজিক প্রসঙ্গ টেনে এমন কিছু কথা বলেছেন, যা ‘ধর্মীয় বিভাজনমূলক’, ‘উস্কানিমূলক’ কিংবা ‘অসম্মানজনক’ বলে সমালোচনা রয়েছে। বিদেশে ‘ধর্মীয় বিভাজনমূলক’ বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। পরবর্তীকালে ‘মুখ ফসকে বলে ফেলেছি’, ‘পরেরবার সতর্ক থাকব’--এমন কথা বলে একাধিকবার দুঃখ প্রকাশ করলেও আমির হামজা ঠিকই ফিরেছেন আগের ধারায়।
সম্প্রতি মুফতি আমির হামজাকে কুষ্টিয়া-৩ আসনে এমপি পদে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এরপর থেকে বেশি সমালোচনা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন আমির হামজা। তাঁর ভাষ্য, ‘এত দিন কথা বললাম কিছু হলো না। হঠাৎ নমিনেশন (জামায়াত মনোনীত প্রার্থী) ঘোষণা দেওয়ার পরে জোকের মতো লেগে আছে।’
২০২৪ সালের আগস্টে সিঙ্গাপুরে আয়োজিত একটি ওয়াজ মাহফিলে আমির হামজার বক্তব্য আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত হয়। ওয়াজে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা মুসলমানরা অন্য ধর্মের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারি না। আমাদের সন্তানদেরও ওদের মতো হতে দেওয়া যাবে না।’
তাঁর ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায় খোদ সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় আমির হামজার এ বক্তব্যকে সরাসরি ‘বিভাজনমূলক ও উসকানিমূলক’ আখ্যা দেয়। দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ ধরনের বক্তব্য সমাজে ধর্মীয় সহনশীলতার বিরুদ্ধে যায় এবং সেখানে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে পারে।
ঘটনার পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকাও হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশেও আলোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, একজন বাংলাদেশি বক্তা বিদেশের মাটিতে গিয়ে কেন এমন বক্তব্য দেবেন, যার ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।
ওই সময় সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী কে শানমুগাম বলেছিলেন, ‘আমির হামজা যা বলেছেন, তা সিঙ্গাপুরের জাতীয় নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে এবং আমাদের মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
'এখন বিশ্বে যত সুন্দর মানুষ আছে; আপনারা ইন্টারনেট ঘাঁটবেন, ১৫৭টি রাষ্ট্রের মধ্যে চেহারার কাটিংয়ে ১ নম্বরে রয়েছেন রাশমিকা মান্দানা। নাম শুনেছেন? চেহারার কাটিংয়ে এখন ১ নম্বরে আছেন। এই মহিলার দিকে একটু আল্লাহর নাম নিয়ে তাকাবেন। দেখেন তো কী সুন্দর করে আল্লাহ তাঁকে বানিয়েছেন। এর চেয়ে শত গুণে সুন্দর ছিলেন আমাদের আদি মাতা হাওয়া (আ.)।’
আরেক ওয়াজে মা হাওয়া (আ.)-এর সৌন্দর্য বোঝাতে গিয়ে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানার নাম টেনে আনেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘এখন বিশ্বে যত সুন্দর মানুষ আছে; আপনারা ইন্টারনেট ঘাঁটবেন, ১৫৭টি রাষ্ট্রের মধ্যে চেহারার কাটিংয়ে ১ নম্বরে রয়েছেন রাশমিকা মান্দানা। নাম শুনেছেন? চেহারার কাটিংয়ে এখন ১ নম্বরে আছেন। এই মহিলার দিকে একটু আল্লাহর নাম নিয়ে তাকাবেন। দেখেন তো কী সুন্দর করে আল্লাহ তাঁকে বানিয়েছেন। এর চেয়ে শত গুণে সুন্দর ছিলেন আমাদের আদি মাতা হাওয়া (আ.)।’
এই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হয়। অনেকেই জানান, ধর্মীয় বক্তৃতার মঞ্চে একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রীর সঙ্গে মা হাওয়া (আ.)-এর তুলনা করা শোভন হয়নি।
পরদিনই প্রকাশ্যে ক্ষমা চান আমির হামজা। রাশমিকা মান্দানাকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'মা হাওয়ার সৌন্দর্যের বর্ণনা প্রসঙ্গ তুলনা করতে গিয়ে আমি এ কথা বলেছিলাম। এজন্য আমি মাফ চেয়েছি। আর কোনোদিন এসব কথা বলব না। কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।'
চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মোস্তফা সরয়ার ফারুকী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কিছুদিন পর তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার অসত্য তথ্য ছড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে অংশ নেন আমির হামজাও।
ওই সময় তিনি এক ওয়াজে বলেন, ‘ফারুকীর উপদেষ্টা পদ চলে গেছে আজকে। ওই জায়গায় মাহাতাব (আসিফ মাহাতাব উৎস) স্যারকে দিয়েছে। ওর চলে যাওয়ার পেছনে যে কারণগুলো দিয়েছে, পাঁচটা না ছয়টা কারণ দেখলাম। এক নম্বর কারণ ওর বউ। ওর বউ কেন মুজিবের স্ত্রীর চরিত্রে কেন অভিনয় করতে গেল?’
একই ওয়াজে তিনি মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী নির্মিত ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ চলচ্চিত্র নিয়েও কথা বলেন। এই চলচ্চিত্রকে উপন্যাস হিসেবে উল্লেখ করেন। যদিও এই নামে কোনো উপন্যাস নেই। ওয়াজে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘তিনি (ফারুকী) একটা সিনেমা বানিয়েছিল “থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার”।… আমি উপন্যাস পড়েছিলাম ভার্সিটি থাকতে, “থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার”, “ব্যাচেলর”--এগুলো দিয়ে পরবর্তীতে ফারুকী সিনেমা বানিয়েছে। এখানে এই পরকীয়া প্রেম উৎসাহ দেয়। কী করে পরকীয়া প্রেম করা যায়।’
গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থক প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয় পান। এরপর এক ওয়াজ মাহফিলে আমির হামজা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে ১৬ বছর আজান দিতে দেয়নি জালেমরা। ছাত্রলীগের ভাইদের ঘুমের ডিস্টার্ব হবে বলে ফজরের আজান দিতে দিত না। এবার ডাকসুতে শিবির প্যানেল জয়ী হওয়ার পর পরদিনই আজান আরম্ভ হয়েছে।’
তাঁর ওই বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, মুহসিন হলে আজান বন্ধের কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সমালোচনার মুখে পরে তিনি স্বীকার করেন যে, ভুল বলেছিলেন। এ জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন।
এ সময় গণমাধ্যমে আমির হামজা বলেন, ‘সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের নাম বলতে গিয়ে মুহসীন হলের নাম বলে ফেলেছি। এটা মুখ ফসকে হয়ে গেছে। আমি এ জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। মুহসিন হলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের জামানায় অনেক জুলুম অত্যাচার হয়েছে। বাথরুমে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার ঘটনা ছাত্রদের কাছে শুনেছি। এমন তো না, সেখানে কোনো জুলুম হয়নি। কিন্তু আমার এভাবে বলা উচিত হয়নি। আগামীতে সতর্ক থাকব।’
তবে এই ‘সতর্কতা’ও স্থায়ী হয়নি। কয়েকদিন পরই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফের আলোচনায় আসেন তিনি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনেও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়। এ ঘটনার পর আরেক বক্তৃতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে আমির হামজা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যে রুমগুলো, আবাসিক রুম থেকে বের হচ্ছে সকালবেলা। মদ দিয়ে কুলি করে বের হচ্ছে। আমি প্রথমে জাহাঙ্গীরনগরে চান্স পেয়েছিলাম, সাংবাদিকতায়। আমার সুরত–সিরত যা, ওই ছাতায় তো পড়া সম্ভব না। এজন্যে বছরখানেক থাকার পরে এসে আল কুরআনে ভর্তি হয়েছিলাম, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি দেখেছিলাম ওখানে মানুষ, ছাত্র মাস্টার্সে পড়ে, সকালবেলা মদ দিয়ে কুলি করে এরপরে বের হচ্ছে। এটা ছাত্র!’
এ বক্তব্যও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করে। জাবি প্রশাসন বিবৃতি দিয়ে আমির হামজার বক্তব্য সত্য নয় বলে জানায়। শিক্ষক–শিক্ষার্থীর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, একজন জনপ্রিয় ধর্মীয় বক্তা যদি এমন অযাচিত মন্তব্য করেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। সমালোচনার মুখে পরে তিনি এই মন্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।
তিনি বলেন, ‘আমি তো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছিলাম। ওই ক্যাম্পাসে কি হতো সবাই জানে। আমি কি অপরাধ করলাম। এখন বলেছে মদের বোতলে পানি খায়। আমি কি জানি! যদি তাই হয় আমি দুঃখিত। আমি এসব নিয়ে আর কিছুই বলব না।’
জামায়াত মনোনীত প্রার্থীর সম্পর্কে ‘বাড়িয়ে বলা’
কুষ্টিয়ার একটি আসনে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আব্দুল গফুর নামের একজনকে মনোনীত করা হয়েছে। এক ওয়াজ মাহফিলে মুফতি আমির হামজা আব্দুল গফুর সম্পর্কে বাড়িয়ে বলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওই ওয়াজে আমির হামজাকে বলতে শোনা যায়, কুষ্টিয়ার মিরপুর ভেড়ামারায় জামায়াত যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তাঁর নাম আব্দুল গফুর। আল্লাহর বান্দা (আব্দুর গফুর) ধনী মানুষের সন্তান। ইসলামী আন্দোলন করতে করতে আল্লাহর বান্দা এখন একেবারে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছে। একটা বাড়ি আছে মিরপুরে কুষ্টিয়ায় বাড়িটা দিয়ে রং করবে সেই টাকাটাও তার নেই। অথচ উনি এমপি নমিনি।
ওয়াজে আমির হামজা আরও বলেন, ‘(আব্দুল গফুর) উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন তিনবার। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ছিলেন তিনবার। মেম্বার ছিলেন তিনবার। আরে ভাই, একবার মেম্বার হলেই তো তার ১০ বছর কিছু করা লাগে না। আর সে তো জনগণের প্রতিনিধি।’
তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চেয়ারম্যানের তালিকায় আব্দুল গফুরের নাম আছে একবার। তিনি শুধু ২০০৯ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তালিকা অনুসারে ১৯৯০ সালে জিতেছিলেন মারফত আলী, ২০০৯ সালে আব্দুল গফুর, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে কামারুল আরেফিন আর ২০২৪ সালে আব্দুল হালিম।
দেশের পরিচিত ধর্মীয় বক্তা মুফতি আমির হামজা। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে দীর্ঘদিন আজান দিতে না নেওয়া এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সকালে ‘মদ দিয়ে কুলি’ করার মতো বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন। এ জন্য পরবর্তীকালে ক্ষমাও চান। তবে আমির হামজার এমন বক্তব্য দেওয়া এবং পরে ক্ষমা চাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও তিনি একাধিকবার এমনটি করেছেন।
বিভিন্ন সময় নিজেকে ‘ভারছিটির মাল’ (বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী) পরিচয় দেওয়া এই বক্তা ধর্মীয় ব্যাখ্যার আড়ালে, কখনও সামাজিক প্রসঙ্গ টেনে এমন কিছু কথা বলেছেন, যা ‘ধর্মীয় বিভাজনমূলক’, ‘উস্কানিমূলক’ কিংবা ‘অসম্মানজনক’ বলে সমালোচনা রয়েছে। বিদেশে ‘ধর্মীয় বিভাজনমূলক’ বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। পরবর্তীকালে ‘মুখ ফসকে বলে ফেলেছি’, ‘পরেরবার সতর্ক থাকব’--এমন কথা বলে একাধিকবার দুঃখ প্রকাশ করলেও আমির হামজা ঠিকই ফিরেছেন আগের ধারায়।
সম্প্রতি মুফতি আমির হামজাকে কুষ্টিয়া-৩ আসনে এমপি পদে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এরপর থেকে বেশি সমালোচনা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন আমির হামজা। তাঁর ভাষ্য, ‘এত দিন কথা বললাম কিছু হলো না। হঠাৎ নমিনেশন (জামায়াত মনোনীত প্রার্থী) ঘোষণা দেওয়ার পরে জোকের মতো লেগে আছে।’
২০২৪ সালের আগস্টে সিঙ্গাপুরে আয়োজিত একটি ওয়াজ মাহফিলে আমির হামজার বক্তব্য আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত হয়। ওয়াজে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা মুসলমানরা অন্য ধর্মের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারি না। আমাদের সন্তানদেরও ওদের মতো হতে দেওয়া যাবে না।’
তাঁর ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায় খোদ সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় আমির হামজার এ বক্তব্যকে সরাসরি ‘বিভাজনমূলক ও উসকানিমূলক’ আখ্যা দেয়। দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ ধরনের বক্তব্য সমাজে ধর্মীয় সহনশীলতার বিরুদ্ধে যায় এবং সেখানে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে পারে।
ঘটনার পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকাও হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশেও আলোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, একজন বাংলাদেশি বক্তা বিদেশের মাটিতে গিয়ে কেন এমন বক্তব্য দেবেন, যার ফলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে।
ওই সময় সিঙ্গাপুরের স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী কে শানমুগাম বলেছিলেন, ‘আমির হামজা যা বলেছেন, তা সিঙ্গাপুরের জাতীয় নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে এবং আমাদের মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
'এখন বিশ্বে যত সুন্দর মানুষ আছে; আপনারা ইন্টারনেট ঘাঁটবেন, ১৫৭টি রাষ্ট্রের মধ্যে চেহারার কাটিংয়ে ১ নম্বরে রয়েছেন রাশমিকা মান্দানা। নাম শুনেছেন? চেহারার কাটিংয়ে এখন ১ নম্বরে আছেন। এই মহিলার দিকে একটু আল্লাহর নাম নিয়ে তাকাবেন। দেখেন তো কী সুন্দর করে আল্লাহ তাঁকে বানিয়েছেন। এর চেয়ে শত গুণে সুন্দর ছিলেন আমাদের আদি মাতা হাওয়া (আ.)।’
আরেক ওয়াজে মা হাওয়া (আ.)-এর সৌন্দর্য বোঝাতে গিয়ে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানার নাম টেনে আনেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘এখন বিশ্বে যত সুন্দর মানুষ আছে; আপনারা ইন্টারনেট ঘাঁটবেন, ১৫৭টি রাষ্ট্রের মধ্যে চেহারার কাটিংয়ে ১ নম্বরে রয়েছেন রাশমিকা মান্দানা। নাম শুনেছেন? চেহারার কাটিংয়ে এখন ১ নম্বরে আছেন। এই মহিলার দিকে একটু আল্লাহর নাম নিয়ে তাকাবেন। দেখেন তো কী সুন্দর করে আল্লাহ তাঁকে বানিয়েছেন। এর চেয়ে শত গুণে সুন্দর ছিলেন আমাদের আদি মাতা হাওয়া (আ.)।’
এই মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচিত হয়। অনেকেই জানান, ধর্মীয় বক্তৃতার মঞ্চে একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রীর সঙ্গে মা হাওয়া (আ.)-এর তুলনা করা শোভন হয়নি।
পরদিনই প্রকাশ্যে ক্ষমা চান আমির হামজা। রাশমিকা মান্দানাকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'মা হাওয়ার সৌন্দর্যের বর্ণনা প্রসঙ্গ তুলনা করতে গিয়ে আমি এ কথা বলেছিলাম। এজন্য আমি মাফ চেয়েছি। আর কোনোদিন এসব কথা বলব না। কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।'
চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব মোস্তফা সরয়ার ফারুকী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার কিছুদিন পর তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার অসত্য তথ্য ছড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে অংশ নেন আমির হামজাও।
ওই সময় তিনি এক ওয়াজে বলেন, ‘ফারুকীর উপদেষ্টা পদ চলে গেছে আজকে। ওই জায়গায় মাহাতাব (আসিফ মাহাতাব উৎস) স্যারকে দিয়েছে। ওর চলে যাওয়ার পেছনে যে কারণগুলো দিয়েছে, পাঁচটা না ছয়টা কারণ দেখলাম। এক নম্বর কারণ ওর বউ। ওর বউ কেন মুজিবের স্ত্রীর চরিত্রে কেন অভিনয় করতে গেল?’
একই ওয়াজে তিনি মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী নির্মিত ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ চলচ্চিত্র নিয়েও কথা বলেন। এই চলচ্চিত্রকে উপন্যাস হিসেবে উল্লেখ করেন। যদিও এই নামে কোনো উপন্যাস নেই। ওয়াজে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘তিনি (ফারুকী) একটা সিনেমা বানিয়েছিল “থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার”।… আমি উপন্যাস পড়েছিলাম ভার্সিটি থাকতে, “থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার”, “ব্যাচেলর”--এগুলো দিয়ে পরবর্তীতে ফারুকী সিনেমা বানিয়েছে। এখানে এই পরকীয়া প্রেম উৎসাহ দেয়। কী করে পরকীয়া প্রেম করা যায়।’
গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থক প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয় পান। এরপর এক ওয়াজ মাহফিলে আমির হামজা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে ১৬ বছর আজান দিতে দেয়নি জালেমরা। ছাত্রলীগের ভাইদের ঘুমের ডিস্টার্ব হবে বলে ফজরের আজান দিতে দিত না। এবার ডাকসুতে শিবির প্যানেল জয়ী হওয়ার পর পরদিনই আজান আরম্ভ হয়েছে।’
তাঁর ওই বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, মুহসিন হলে আজান বন্ধের কথা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সমালোচনার মুখে পরে তিনি স্বীকার করেন যে, ভুল বলেছিলেন। এ জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন।
এ সময় গণমাধ্যমে আমির হামজা বলেন, ‘সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের নাম বলতে গিয়ে মুহসীন হলের নাম বলে ফেলেছি। এটা মুখ ফসকে হয়ে গেছে। আমি এ জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। মুহসিন হলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের জামানায় অনেক জুলুম অত্যাচার হয়েছে। বাথরুমে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার ঘটনা ছাত্রদের কাছে শুনেছি। এমন তো না, সেখানে কোনো জুলুম হয়নি। কিন্তু আমার এভাবে বলা উচিত হয়নি। আগামীতে সতর্ক থাকব।’
তবে এই ‘সতর্কতা’ও স্থায়ী হয়নি। কয়েকদিন পরই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফের আলোচনায় আসেন তিনি।
গত ১১ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনেও ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়। এ ঘটনার পর আরেক বক্তৃতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে আমির হামজা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যে রুমগুলো, আবাসিক রুম থেকে বের হচ্ছে সকালবেলা। মদ দিয়ে কুলি করে বের হচ্ছে। আমি প্রথমে জাহাঙ্গীরনগরে চান্স পেয়েছিলাম, সাংবাদিকতায়। আমার সুরত–সিরত যা, ওই ছাতায় তো পড়া সম্ভব না। এজন্যে বছরখানেক থাকার পরে এসে আল কুরআনে ভর্তি হয়েছিলাম, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি দেখেছিলাম ওখানে মানুষ, ছাত্র মাস্টার্সে পড়ে, সকালবেলা মদ দিয়ে কুলি করে এরপরে বের হচ্ছে। এটা ছাত্র!’
এ বক্তব্যও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করে। জাবি প্রশাসন বিবৃতি দিয়ে আমির হামজার বক্তব্য সত্য নয় বলে জানায়। শিক্ষক–শিক্ষার্থীর প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, একজন জনপ্রিয় ধর্মীয় বক্তা যদি এমন অযাচিত মন্তব্য করেন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। সমালোচনার মুখে পরে তিনি এই মন্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।
তিনি বলেন, ‘আমি তো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছিলাম। ওই ক্যাম্পাসে কি হতো সবাই জানে। আমি কি অপরাধ করলাম। এখন বলেছে মদের বোতলে পানি খায়। আমি কি জানি! যদি তাই হয় আমি দুঃখিত। আমি এসব নিয়ে আর কিছুই বলব না।’
জামায়াত মনোনীত প্রার্থীর সম্পর্কে ‘বাড়িয়ে বলা’
কুষ্টিয়ার একটি আসনে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আব্দুল গফুর নামের একজনকে মনোনীত করা হয়েছে। এক ওয়াজ মাহফিলে মুফতি আমির হামজা আব্দুল গফুর সম্পর্কে বাড়িয়ে বলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ওই ওয়াজে আমির হামজাকে বলতে শোনা যায়, কুষ্টিয়ার মিরপুর ভেড়ামারায় জামায়াত যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তাঁর নাম আব্দুল গফুর। আল্লাহর বান্দা (আব্দুর গফুর) ধনী মানুষের সন্তান। ইসলামী আন্দোলন করতে করতে আল্লাহর বান্দা এখন একেবারে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছে। একটা বাড়ি আছে মিরপুরে কুষ্টিয়ায় বাড়িটা দিয়ে রং করবে সেই টাকাটাও তার নেই। অথচ উনি এমপি নমিনি।
ওয়াজে আমির হামজা আরও বলেন, ‘(আব্দুল গফুর) উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন তিনবার। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ছিলেন তিনবার। মেম্বার ছিলেন তিনবার। আরে ভাই, একবার মেম্বার হলেই তো তার ১০ বছর কিছু করা লাগে না। আর সে তো জনগণের প্রতিনিধি।’
তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার চেয়ারম্যানের তালিকায় আব্দুল গফুরের নাম আছে একবার। তিনি শুধু ২০০৯ সালে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তালিকা অনুসারে ১৯৯০ সালে জিতেছিলেন মারফত আলী, ২০০৯ সালে আব্দুল গফুর, ২০১৪ ও ২০১৯ সালে কামারুল আরেফিন আর ২০২৪ সালে আব্দুল হালিম।
আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট কিছু পেইজ ও অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি ছড়াতে দেখা যায়। কিন্তু এই ভিডিওটি বাংলাদেশের নয় বলে প্রমাণ পেয়েছে ফ্
১ ঘণ্টা আগেসাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারের ছেলে শাহেদ আহমেদ মজুমদারকে গ্রেপ্তার করেছে গুলশান থানা পুলিশ।
১ ঘণ্টা আগেআসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের ৭৩টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধনযোগ্য বলে চিহ্নিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাতে এই সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তিটি জারি করেছে ইসি।
২ ঘণ্টা আগেদেশের টেলিযোগাযোগ খাতে বড় ধরনের পরিবর্তনের আভাস দিয়ে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) প্রথমবারের মতো ‘ট্রিপল-প্লে’ এবং ‘কোয়াড-প্লে’ সেবা চালুর ঘোষণা দিতে যাচ্ছে।
২ ঘণ্টা আগে