leadT1ad

নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে অবহেলা-অপরাধে সাজা বাড়ছে

স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০: ০৩
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত

নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও অপরাধের শাস্তি কঠোর করতে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ সংশোধন করে এর খসড়া অনুমোদন করেছেন উপদেষ্টা পরিষদ।

আজ বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান। প্রেস সচিব বলেন, নতুন সংশোধনের ফলে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে এবং কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।

সংশোধনে আইনে নির্বাচন কর্মকর্তা বলতে নির্বাচন-সংক্রান্ত কোনো দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি বা নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা, যেমন—রিটার্নিং অফিসার, ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকেও বোঝানো হয়েছে।

নির্বাচন আইন সংশোধনে শাস্তি ও জবাবদিহি বাড়ছে

নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১-এর ধারা ২, ধারা ৫ ও ধারা ৬-এ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন কর্মকর্তার সংজ্ঞা নতুনভাবে নির্ধারণ, শৃঙ্খলামূলক শাস্তি-সংক্রান্ত বিধান হালনাগাদ এবং নতুন উপধারা সংযোজন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হলে তিনি গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানাতে পারবেন না।

বর্তমান আইনে দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানালে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল। নতুন সংশোধনীতে জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো কর্মকর্তা নির্বাচনী দায়িত্বে অসদাচরণ করলে আগে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা দুই হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। নতুন আইনে এটি বাড়িয়ে সর্বনিম্ন এক বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে, কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা কমিশনের আদেশ বা নির্দেশ ইচ্ছাকৃতভাবে অমান্য করলে, আইন লঙ্ঘন করলে বা দায়িত্বে অবহেলা করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং চাকরিবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

এ ছাড়া উপদেষ্টা পরিষদ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ সংশোধনের প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে। এর আওতায় ধারা ৩-এর উপধারা (৪) প্রতিস্থাপন করে একটি ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠনের কথা বলা হয়েছে।

একই বৈঠকে এনবিআরের উদ্যোগে প্রণীত অর্থসংক্রান্ত কতিপয় আইন (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাসসের খবরে বলা হয়েছে, এর আওতায় মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ সংশোধন করে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষ আদেশ দ্বারা ভ্যাট অব্যাহতি প্রদানের সুযোগ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আয়কর আইন, ২০২৩ সংশোধনের মাধ্যমে সরকারি সিকিউরিটি বা অনুমোদিত সিকিউরিটিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানি করদাতার উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাণিজ্যিকভাবে পরিচালিত বাস ও পরিবহন খাতে কর সংগ্রহকে ‘চূড়ান্ত করযোগ্য আয়’ হিসেবে গণনা করার নতুন বিধান যুক্ত হয়েছে।

সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে জানান, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বৈঠকে পূর্ববর্তী ব্যাচে গৃহীত ১২১টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ ৭৭টির অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি সংস্কার ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৪টি আংশিক বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে এবং বাকিগুলো বাস্তবায়নের পথে আছে।

শফিকুল আলম আরও বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের চেয়ে অনেক বেশি সংস্কার বাস্তবায়ন করা হয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও উপদেষ্টাদের নির্দেশনায়। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তাদের উদ্যোগে সম্পন্ন সংস্কারগুলোর একটি তালিকা দ্রুত প্রস্তুত করে জমা দিতে বৈঠকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শফিকুল আলম জানান, আগামী মাসের মধ্যে এসব সংস্কারের একটি সংকলন বুকলেট আকারে প্রকাশ করা হবে, যা দেশের নাগরিক ও সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে সংস্কারের পূর্ণ চিত্র পৌঁছে দেবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত