leadT1ad

কমেছে চালের দাম, অস্বস্তি সবজি-মুরগিতে

স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৯
সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু পণ্যের দাম সামান্য কমলেও বাজার এখনো স্বস্তিদায়ক হয়নি। স্ট্রিম ছবি

রাজধানীর বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের চড়া দাম সাধারণ মানুষের জীবনে বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে কিছু পণ্যের দাম সামান্য কমলেও বাজার এখনো স্বস্তিদায়ক হয়নি। ডাল, আটা-ময়দা, ডিম, মুরগি, মাছ কিংবা সবজি–প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামই সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। ফলে প্রতিদিন বাজার করতে গিয়ে ক্রেতাদের ভাবতে হচ্ছে, কোন জিনিস বাদ দিয়ে কোনটা কেনা যায়।

আজ শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর মিরপুরের মাটিকাটা, কালশী ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিত্যপণ্যের বাজারে কিছুটা ওঠানামা হলেও কোনো পণ্যের দাম স্বস্তিকর পর্যায়ে আসেনি।

চালের বাজারে আমদানির প্রভাব, তবু ‘মিনিকেটে ছাড় নেই’

কয়েক মাস পর চালের বাজারে দামের কিছুটা স্বস্তি দেখা দিয়েছে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ভারত থেকে সরু নাজিরশাইল ও মোটা জাতের চাল আমদানি বেড়েছে। এর প্রভাবেই দাম কমতে শুরু করেছে। তবে জনপ্রিয় ‘মিনিকেট’ চালের দাম একই রয়েছে।

বর্তমানে নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮৪–৮৬ টাকায়, যা আগে ছিল ৯০–৯২ টাকা। মোটা পায়জাম ও স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬–৬০ টাকায়, যা কেজিপ্রতি ৪–৫ টাকা কমেছে। অন্যদিকে মিনিকেট চাল এখনো ৭৮–৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ানবাজারের সজিব রাইস এজেন্সির মালিক রহমান হোসেন বলেন, ‘ভারত থেকে প্রচুর চাল আসছে, তাই দাম কমছে। তবে দেশি মিনিকেট চাল আগের দামেই রয়েছে। আমদানি অব্যাহত থাকলে দাম আরও কমতে পারে।’

মাটিকাটা বাজারের চাল বিক্রেতা হোসেন আলী জানান, মোকামে প্রতি বস্তা (২৫ কেজি) চালের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা কমেছে। এখন এক বস্তা নাজিরশাইল দুই হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে, যা আগে ২ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তবে পুরোনো চাল বা ব্র্যান্ডের মিনিকেটের দাম কমেনি।

সবজির বাজারে স্বস্তি অধরাই

সবজির দাম কিছুটা কমলেও এখনো স্বস্তি ফেরেনি। বাজারে এখনো বেশিরভাগ সবজি কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যেসব সবজির দাম ৮০–১৪০ টাকার মধ্যে উঠেছিল, সেগুলো সামান্য কমলেও সাধারণ ক্রেতাদের নাগালে আসেনি।

শুক্রবার বাজারে প্রতি কেজি বরবটি ১০০ টাকা, ঝিঙা ৮০, চিচিঙ্গা ৮০, ধুন্দুল ৮০, শসা ১০০, কাঁকরোল ৮০, পটোল ৮০, করলা ৮০, গোল বেগুন ১৪০, লম্বা বেগুন ১০০, মুলা ৮০, টমেটো ১৪০, শিম ২৪০, কাঁচা মরিচ ২৪০, গাজর ১৩০, মিষ্টিকুমড়া ৬০ এবং কচু ৬০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, পেঁপে ৩০–৪০ টাকা, আলু ৩০, জালি লাউ প্রতিটি ৫০ টাকা এবং লাউ ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা।

মাটিকাটা বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘তিন মাস ধরে সবজির দাম এত বেশি যে আমরা আধা কেজি বা ২৫০ গ্রাম করে কিনতে বাধ্য হচ্ছি। সাধারণ ক্রেতাদের জন্য এত দামে সবজি খাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। অথচ বাজার মনিটরিংয়ের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। ফলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছেন।’

সবজি বিক্রেতা নুরনবি আহমেদ বলেন, ‘এখন মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারে সরবরাহ কম। নতুন সবজি উঠতে শুরু করলে দাম ধীরে ধীরে কমে আসবে।’

মাছের বাজারে চড়া দাম

চাষের মাছের সরবরাহ কম থাকায় মাছের বাজারেও বেড়েছে চাপ। বিশেষ করে ইলিশ ও চিংড়ির দাম একেবারেই নাগালের বাইরে চলে গেছে।

৭০০ গ্রামের এক হালি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়। বড় ইলিশ (এক কেজির বেশি) প্রতিটি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট ইলিশ (৪০০–৫০০ গ্রাম) কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা। চাষের চিংড়ি কেজিপ্রতি ৭৫০ থেকেও ৮০০ টাকা, আর নদীর চিংড়ি এক হাজার থেকে ১২ শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কেজিপ্রতি অন্তত ৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি।

এ ছাড়া, কই, শিং, শোল, ট্যাংরা ও পুঁটির দামও বেড়েছে। চাষের রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৬০ টাকা এবং পাঙাশ দুই থেকে আড়াই শ টাকায়।

বাড়তি ডিম ও মাংসের দামও

মাংসের বাজারেও একই অবস্থা। গরুর মাংস গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কেজিপ্রতি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুরগির দাম সামান্য বেড়েছে। ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা এবং ডিম ডজনপ্রতি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, ডিমের ডজনে আগের সপ্তাহ ৫ টাকা কমলেও হালির দাম এখনো ৫০ টাকাতেই আছে। ফার্মের ডিম ডজনপ্রতি ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় মিলছে।

মিরপুর কালশী বাজারের বিক্রেতা ইসমাঈল বলেন, ‘ব্রয়লার মুরগিই আগে একটু সস্তা ছিল, এখন সেটাও ১৭০ টাকা কেজি। এই যে এখন ১৭০ করে বিক্রি করতেছি। কিন্তু এটা আবার পাইকারিতে আজকেই সাত থেকে আট টাকা বেড়ে গেছে।’

একই বাজারে ক্রেতা হাবিবুল বাশার বলেন, ‘গরু বা খাসির মাংস তো নাগালের বাইরে। তাই বাধ্য হয়েই ব্রয়লার কিনতে হচ্ছে। অন্য মুরগির দাম ৩০০ থেকে ৩৬০ টাকা, তা-ও এক কেজির কম।’

বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, খামারের খাদ্য ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি দামের ওপরই খুচরা বাজার নির্ভর করছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত