leadT1ad

ফেনীতে নিজাম-নাসিমসহ সাবেক চার এমপির বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন, থানায় নেননি ওসি

মামলার আবেদনে প্রধান আসামি করা হয়ে ফেনী-১ আসনের সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারীকে। এই তালিকায় আরও আছেন ফেনী-৩ আসনের সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ফেনী-১ আসনে সাবেক এমপি ও শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, একই আসনের আরেক সাবেক এমপি ও জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।

স্ট্রিম সংবাদদাতা
স্ট্রিম সংবাদদাতা
ফেনী
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ০৭
বাম থেকে: আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, নিজাম উদ্দিন হাজারী, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, শিরীন আখতার। সংগৃহীত ছবি

ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গুলি করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে জেলার সাবেক চার সংসদ সদস্যসহ (এমপি) ২৬৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন এক ব্যবসায়ী। এতে নিজাম উদ্দিন হাজারীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

ঘটনার এক বছর পর রবিবার (১৭ আগস্ট) ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অপরাজিতা দাশের আদালতে ওই আবেদন করেন ব্যবসায়ী মো. জামাল উদ্দিন গাজী। তবে তিন মাস আগে ফেনীর মডেল থানা গেলেও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামলা নেননি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি।

এদিকে রবিবার রাতেই জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (সদর সার্কেল) বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী এক মাসের মধ্যে তিনি তদন্ত প্রতিবেদন দেবেন। এতে তার ওপর ভিত্তি করে আদালত মামলা নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে।

মামলার আবেদন করার বিষয়টি সোমবার (১৮ আগস্ট) নিশ্চিত করেন ফেনী আদালতে নিযুক্ত পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। আবেদনকারী জামাল উদ্দিনের বাড়ি জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের পশ্চিম শিলুয়া গ্রামে। তবে জেলা সদরের মহিপাল এলাকায় তাঁর দোকান আছে। গত বছরের ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপাল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন বলে দাবি করেছেন মামলার আবেদনে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার আবেদনে প্রধান আসামি করা হয়ে ফেনী-১ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীকে। তালিকায় আরও আছেন ফেনী-৩ আসনের সাবেক এমপি ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ফেনী-১ আসনে সাবেক এমপি ও শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, একই আসনের আরেক সাবেক এমপি ও জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারের নাম রয়েছে। এ ছাড়া আসামি তালিকায় জেলা-উপজেলা পরিষদে দায়িত্ব পালন করা বিভিন্ন ব্যক্তি এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন।

আবেদনে জামাল উদ্দিন উল্লেখ করেন, গত বছরের ৪ আগস্ট তিনি ফেনীর মহিপাল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। মামলায় উল্লেখিত আসামিরা ওই সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে একটি মিছিল নিয়ে মহিপালের দিকে অগ্রসর হতে হতে গুলি চালান। এ সময় তাঁর শরীরে চারটি গুলি লাগে। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁকে হত্যার উদ্দেশে পিটিয়ে জখম করা হয়। তাঁকে মৃত ভেবে ফেলে যান হামলাকারীরা। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

ঘটনার এক বছর পর মামলা প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন বলেন, চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এবং আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহে সময় লেগেছে। হামলার ঘটনায় চলতি বছরের ২৬ জুন তিনি ফেনী মডেল থানায় এজাহার দাখিল করেন। তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাঁকে পরে এ বিষয়ে ডাকবেন বলে জানালেও তাঁকে ডাকেননি।

মামলার বাদী মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘তিন মাস আগে আমি মডেল থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু থানা-পুলিশ মামলা নিচ্ছি, নেব বলে নেয়নি। ওসি বলেন- আপনি চলে যান, আমি ফোনে ডাকব। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও থানার পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি।’

জামাল উদ্দিন বলেন, মামলা নেওয়ার বিষয়ে থানায় বার বার যোগাযোগ করলে ওসি তাঁকে জানান, ‘ওপর থেকে নির্দেশ আছে, ৪ আগস্টের কোনো মামলা নেওয়া যাবে না।’ থানায় সহযোগিতা না পেয়ে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন। এ কারণে মামলাটি করতে বিলম্ব হয়েছে।

ফেনী মডেল থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামসুজ্জামান বলেন, ‘আদালতে ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন মামলার আবেদনে ওসিকে জড়িয়ে যা লেখা হয়েছে, তা সত্য নয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মহিপালের ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় এখন পর্যন্ত ২২টি মামলা হয়েছে। আদালতে মামলা করতে গিয়ে বাদী মিথ্যা তথ্য উল্লেখ করেছেন। বাস্তবে এমন কিছুই হয়নি।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে (সদর সার্কেল) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, তিনি আদালতের আদেশ পেয়েছেন। আগামী এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিবেন।

Ad 300x250

সম্পর্কিত