leadT1ad

জুলাই আন্দোলনে সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার: সাক্ষী

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৩
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

রামপুরায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে তৎকালীন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান সর্বোচ্চ বল প্রয়োগ এবং চাইনিজ রাইফেল দিয়ে হাঁটু গেড়ে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন—আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এমন জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের দুই সদস্য।

আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) ট্রাইব্যুনাল ২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ হয়। মামলাটি ২০২৪ সালের জুলাইয়ে রামপুরায় শহীদ নাদিম মিজান ও মায়া ইসলামকে হত্যা এবং শিশু মুসাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম ও ফারুক আহাম্মদ। গ্রেপ্তার আসামি চঞ্চল চন্দ্র সরকারের পক্ষে আইনজীবী সারওয়ার জাহান এবং পলাতক চার আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

মামলায় আসামি করা হয়েছে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান, উপপরিদর্শক (এসআই) তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে। এদের মধ্যে চঞ্চল চন্দ্র সরকার গ্রেপ্তার আছেন, বাকিরা পলাতক।

প্রথম সাক্ষী ডিএমপি কন্ট্রোল সেন্টারের তৎকালীন ওয়্যারলেস অপারেটর এএসআই মো. কামরুল হাসান আদালতে বলেন, ‘২০২৪ সালের ১৭ জুলাই সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমান সাংকেতিক কল সাইন “ভিক্টর মাইক-১” ব্যবহার করে সর্বোচ্চ বল প্রয়োগ এবং চাইনিজ রাইফেল দিয়ে হাঁটু গেড়ে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই বার্তাটি আমি ও আমার টিম ওয়্যারলেসের মাধ্যমে ডিএমপির সব ইউনিটে পৌঁছে দিই। অডিও বার্তায় হাবিবুর রহমান স্যারের কণ্ঠ শনাক্ত করা যায়।’

দ্বিতীয় সাক্ষী মো. আবদুর রহমান, যিনি তখন রামপুরা থানার বেতারচালক ছিলেন। তিনি বলেন, ‘১৯ জুলাই জুমার নামাজের পর থানার সামনে বিপুল সংখ্যক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী জড়ো হয়। ওসি মশিউর রহমান ও এডিসি রাশেদুল ইসলাম বিজিবির একটি এপিসি যোগে থানায় আসেন। তাঁদের নির্দেশে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়।’

তিনি বলেন, ‘পরে জানতে পারি, থানার পাশের সেলুনের গলিতে নাদিম মিজান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সেখানে শিশু মুসা ও তার দাদিও গুলিবিদ্ধ হন। পরে দাদি মারা যান।’

জবানবন্দি শেষে দুই সাক্ষীকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন। ট্রাইব্যুনাল মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ আগামী ১১ নভেম্বর নির্ধারণ করেছে।

গত বছরের জুলাইয়ে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তীতে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ওই অভ্যুত্থানে তৎকালীন সরকার পতন হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য অনুযায়ী, তখন ৮ শতাধিক মানুষ নিহত হন, যাদের ‘জুলাই শহীদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলছে।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত