স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, ‘পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছিল কেজিপ্রতি প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মতো। গতকাল আমদানির অনুমতি দেওয়ার খবরে আজকে আবার একটু দাম কমেছে।’
কৃষি উপদেষ্টা বলেন, ‘এই যে কারসাজিগুলো করে কৃষকদের যেমন ঠকানো হচ্ছে, ভোক্তাদের আরও বেশি ঠকানো হচ্ছে। এই চক্রটা খুঁজে বের করতে হবে। আমরা সে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
আজ রোববার (৭ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ও উপপরিচালকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ ব্রিফ করে তিনি।
কৃষি উপদেষ্টা বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি আমদানিকারক একবার আইপি (আমদানি অনুমতি) পাবেন, সর্বোচ্চ ৩০ মেট্রিক টন করে। দৈনিক ৫০টি করে আইপি দেওয়া হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
বর্তমান সরকার কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করছে উল্লেখ করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা চাই-কৃষক ও ভোক্তা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হোক, উভয়ের স্বার্থ সংরক্ষণ হোক।’
দেশে সারের মজুতের কোনো সংকট নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা তামাক চাষকে নিরুৎসাহিত করছি। তামাক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর কোনো উপকারিতা নেই। সেজন্য তামাক চাষে সার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে।’
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘আজকে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ সংক্রান্ত একটি সভায় অংশগ্রহণ করেছি। আমাদের খাদ্যে নানা ধরনের ভেজালের কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছি। তার মধ্যে কৃষি খাত ছাড়াও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে কীটনাশক, রাসায়নিক সার ও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের অন্যতম কারণ। তাই কৃষি খাতে কীটনাশক ও ক্ষতিকর রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘কীটনাশক ব্যবহার করে সাথে সাথে ফসল বাজারজাত না করে ৪-৫ দিন পর বাজারজাত করলে ভোক্তা পর্যায়ে এর ক্ষতিকর দিক কমিয়ে আনা সম্ভব। সেজন্য কৃষককেও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’
এ বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘বাজারে সবজির দাম তেমন বেশি না, মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে ও জনগণের নাগালের মাধ্যেই রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে সবজির দাম আরও কমবে। কৃষকরা যাতে এ ক্ষেত্রে লোকসানে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে ১০০টি মিনি কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করে দিয়েছি, যাতে সবজির ক্ষতি না হয়, সংরক্ষণ করা যায়। আমরা দ্রুত আরও ১০০টি মিনি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের পদক্ষেপ নিয়েছি। শীত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের মধ্যে এক মাসের মতো একটি ট্রানজিট সময় থাকে। এ সময় যদি সরবরাহ চেইন ঠিক রাখা যায়, তবে বাজারে সবজির দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। তবে সবসময় কৃষকের স্বার্থ যাতে সংরক্ষিত হয়, সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’
কৃষি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগে লটারির মাধ্যমে এসপি ও ওসিদের বিভিন্ন জেলা ও থানায় পদায়ন করেছি। প্রয়োজন হলে একইভাবে কৃষি অফিসারদের পদায়ন করা হবে। এতে দুর্নীতি ও তদবির বাণিজ্য কমে আসবে।
ব্রিফিংকালে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক ও জেলার উপপরিচালকগণ অনলাইনে অংশ নেন।