ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সড়কে মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা অনুযায়ী নির্ধারিত গতিসীমা মেনে গাড়ি চালানোর জন্য চালক-মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
আজ সোমবার (২৭ অক্টোবর) ডিএনসিসির পক্ষ থেকে ঢাকা উত্তর সিটি এলাকার সড়কে গতিসীমা বাস্তবায়নবিষয়ক মাসব্যাপী ক্যাম্পেইনের সময তিনি এ আহ্বান জানান।
ডিএনসিসি প্রশাসক বিশ্বব্যাপী গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, সড়কে যানবাহনের গতি যত বেশি, দুর্ঘটনা ও মৃত্যুঝুঁকিও তত বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৭ সালে ‘জীবন বাঁচান–গতি কমান’ প্রকাশনায় উল্লেখ করেছে, গড়ে ৫ শতাংশ গতি কমালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি ৩০ শতাংশ কমে। বিশ্বব্যাংক ২০২১ সালে ‘মোবিলিটি অ্যান্ড কানেক্টিভিটি সিরিজ’-এর প্রতিবেদনে জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার শহরাঞ্চলে সড়কে গতি নিয়ন্ত্রণের ফলে সব ধরনের সড়ক ব্যবহারকারীর অকালমৃত্যু প্রায় ২০ শতাংশ এবং পথচারীদের মৃত্যু ৩৯ শতাংশ কমেছে।
ডিএনসিসি প্রশাসক চালকদের সতর্ক করে বলেন, একটি যান যত বেশি গতিতে চলবে, সেটি থামাতে তত বেশি দূরত্ব প্রয়োজন। যেমন, ৫০ কিলোমিটার গতিতে চলমান গাড়ি থামাতে ১৪ মিটার দূরত্ব প্রয়োজন। শহরের সড়কে বিভিন্ন ধরণ ও গতির যান চলে, পথচারীরাও সড়ক ব্যবহার করে। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শহরের সড়কে সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার গতি সুপারিশ করেছে।
ডিএনসিসি প্রশাসক আরও জানান, ডিএনসিসি ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটির সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে সড়ক নিরাপত্তায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ও মোড় চিহ্নিত করা হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউটের সহায়তায় এসব ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের নিরাপদ নকশা করা হচ্ছে। ডিএমপি ও গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপের সঙ্গে সড়ক নিরাপত্তায় বিদ্যমান আইন বাস্তবায়নে পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হচ্ছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট ও সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন রিসার্চ বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সড়কে মানুষের আচরণগত জরিপ করা হচ্ছে। ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের সহায়তায় সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ আয়োজন ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের কারিগরি সহায়তায় একটি গণমাধ্যম প্রচারণা শুরু হয়েছে।
তিনি জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ঢাকা উত্তরে সব ধরনের যানের ২৩ শতাংশ নির্ধারিত গতিসীমা লঙ্ঘন করছে। লোকাল ও কালেকটর রাস্তায় ২৯ শতাংশ যান অতিরিক্ত গতিতে চলে। ছুটির দিনে গতিসীমা লঙ্ঘনের হার আরও বেশি। মোটরসাইকেলের মধ্যে এ হার সর্বাধিক (৫১ শতাংশ)। এছাড়া, মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীদের মানসম্মত হেলমেট ব্যবহারের হারও কম। অতিরিক্ত গতি ও মানহীন হেলমেট মোটরসাইকেল চালকদের মৃত্যু ও সম্পদহানির ঝুঁকি বাড়ায়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রণীত ‘যান্ত্রিক যানের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা ২০২৪’-এ শহরের সড়কে যানবাহনের গতি নির্ধারণ করা হয়েছে। শহরের অভ্যন্তরে ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থ, কমপক্ষে ৬ লেনে বিভক্ত, ফুটপাথ ও সড়ক পারাপারের ব্যবস্থা আছে—এমন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং অভ্যন্তরীণ সড়কে কার, মাইক্রোবাস, জিপ ইত্যাদি হালকা মোটরযান, বাস-মিনিবাস ইত্যাদি মাঝারি ও ভারী যানের সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার এবং ট্রাক, মিনিট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ইত্যাদি মালবাহী ভারী যান ও মোটরসাইকেলের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার।
এছাড়া শহর এলাকার প্রাইমারি আরবান সড়ক, অবিভক্ত ও দুই লেনবিশিষ্ট সড়কে কার, মাইক্রোবাস, জিপ ইত্যাদি হালকা মোটরযানের সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার এবং মোটরসাইকেলের গতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার।
শহরের অভ্যন্তরীণ সংকীর্ণ বা শেয়ার্ড সড়কে মোটরযানের সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার এবং মোটরসাইকেলের গতি ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে।