leadT1ad

‘গণছুটিতে’ ফেনীর পল্লী বিদ্যুতের ৫৪৮ কর্মচারী, ক্ষুদ্ধ গ্রাহকেরা

৩১ আগস্ট থেকে রোববার পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারীরা। এর শেষ দিন রোববার তাঁরা দপ্তরে এসে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটির আবেদন জমা দিয়েই বেরিয়ে যান সমিতির ৫৬৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী।

স্ট্রিম সংবাদদাতাফেনী
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০: ২৭
‘গণছুটিতে’ ফেনীর পল্লী বিদ্যুতের ৫৪৮ কর্মচারী, ক্ষুদ্ধ গ্রাহকেরা। স্ট্রিম ছবি

ফেনীতে চার দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য এক যোগে ‘গণছুটি’ পালন করছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পিবিএস) ৫৪৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দপ্তরে আবেদন জমা দিয়েই ছুটি কাটানো শুরু করেন জেলার ছয় উপজেলার জোনাল অফিসসহ বিভিন্ন সাব-স্টেশন অফিসে কর্মরত এ সব কর্মচারী। এতে সারা স্থাবির হয়ে পড়েছে বিদ্যুতের জরুরি সেবা, লাইন মেরামত, মিটার সংযোগ, বিলিংসহ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে। প্রয়োজনীয় সেবা না পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। এর প্রতিবাদে সোমবার ফুলগাজীতে সড়ক অবরোধ করেছিলেন বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।

এর আগে ৩১ আগস্ট থেকে রোববার পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মচারীরা। এ সময় জরুরি কাজ ছাড়া কিছুই করেননি তাঁরা। কর্মবিরতির শেষ দিন রোববার তাঁরা দপ্তরে এসে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটির আবেদন জমা দিয়েই বেরিয়ে যান সমিতির ৫৬৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী। তবে তাঁদের মধ্যে ২১ জন পরবর্তীতে কাজে ফিরে এসেছে। এ ছাড়া জেলায় সমিতির মোট ৫৭৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ১০ জন ছুটির আবেদন জমা দেননি।

ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সমিতির অধীন বিভিন্ন উপজেলা ও সাব-স্টেশনে কর্মরত ৫৭৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ৫৬৯ ‘গণছুটিতে’ গেছেন। তার মধ্যে ফেনী সদর উপজেলার ১১৭ জনের সবাই, ছাগলনাইয়া জোনাল অফিসের ৮৫ জনের মধ্যে ৭০ জন, দাগনভূঞায় জোনাল অফিসে ৭৪ জনের মধ্যে ৬৭, পরশুরামে ৪১ জনের মধ্যে ৩৯, ফুলগাজীতে ৪৯ জনের মধ্যে ৪৩ ও সোনাগাজীতে ৭৫ জনের মধ্যে ৬৮ জন ‘গণ ছুটিতে’ রয়েছেন।

‘গণ ছুটি’ অনুমোদন সম্পর্কে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ফেনী জোনাল অফিসের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মোহাম্মদ নুরুল হোসাইন বলেন, ‘কারো ছুটি মঞ্জুর করা হয়নি। সবাই ছুটির ফর্ম পূরণ করে অফিসে রেখে চলে গেছেন। তাঁদের ব্যাপারে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুত্যায়ন বোর্ডে (আরইবি) কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে ছুটি পালন করা কর্মীদের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যোগ না দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে ঠিকাদারের লোকজন ও বহিরাগত কিছু লোক দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

গ্রাহকেরা কী বলছেন

এ দিকে দুই দিন ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা থাকায় সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) ফুলগাজীতে সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। পরে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

ফুলগাজীর শ্রীপুরের বাসিন্দা ইয়াকুব হোসেন বলেন, ‘রোববার থেকেই বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। অভিযোগ জানাতে গেলে দেখি অফিসে তালা ঝুলছে। কবে এ সমস্যার সমাধান হবে, তা কিছুই বুঝতে পারছি না।’ একই অবস্থার কথা জানিয়ে পরশুরামের মির্জানগর গ্রামের মো. নাহিদ বলেন, পল্লী বিদ্যুতের জরুরি সেবার মোবাইল ফোনব নম্বরও বন্ধ রয়েছে।

ফেনী সদরের শর্শদী ইউনিয়নের পোল্ট্রি খামারি মো. রফিক বলেন, ‘বিদ্যুৎ খামারিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্যথায় আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়। বর্তমানে লম্বা সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে বড় ধরনের লোকসানের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।’

কী আছে কর্মচারীদের দাবিতে

বিদ্যুতের কর্মচারীরা তাঁদের চার দফা দাবিকে উল্লেখ করেছেন ‘পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ব্যবস্থাপনা সংস্কার এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) শোষণ, নিপীড়ন থেকে মুক্তির’ চেষ্টা হিসেবে। এর মধ্যে আছে আরইবি-পিবিএস একীভূত করে বা কোম্পানি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত সব কর্মীদের নিয়মিতকরণ ছাড়াও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে বিভিন্ন সময় দায়ের করা মামলা তুলে নিয়ে স্বপদে পুনর্বহাল করতে হবে।

এ ছাড়া চলতি বছরের ১৭ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত চাকরিচ্যুত, বরখাস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পূর্বের কর্মস্থলে পদায়ন করতে হবে। শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে কাজে যোগ না দেওয়া পাঁচ জন লাইনক্রুকে আগের কর্মস্থলেই যোগদানের ব্যবস্থা করতে হবে। তা ছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ‘দুর্নীতিবাজ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ নিতে হবে।

আন্দোলনের অংশ নেওয়া ফেনী জোনাল অফিসের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে স্ট্রিমকে বলেন, ‘এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছি। বারবার আশ্বাস পেলেও কার্যকর হয়নি কিছুই। দাবি আদায় না হলে আমরা কাজে ফিরব না। তবে জনভোগান্তি আমাদের উদ্দেশ্য নয়।’

কর্মকর্তারা যা বলছেন

ফেনী সদর উপজেলার কসকা জোনাল অফিসের এজিএম কামরুল হাসান বলেন, ‘এই অফিসে ৪০ জন কর্মচারীর মধ্যে ৩৫ জন ছুটির আবেদন ফরম জমা দিয়ে চলে গেছেন। বাকি ৫ জন কর্মচারী দিয়ে ৩২ হাজার গ্রাহকের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সদর উপজেলা লেমুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদপুর ও মিরগঞ্জ এলাকায় বিদ্যুৎ সমস্যার কথা জানলেও জনবল না থাকায় সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ফেনী জোনাল অফিসের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মোহাম্মদ নুরুল হোসাইন বলেন, জেলার ছয় উপজেলার জোনাল অফিসসহ বিভিন্ন সাব-স্টেশন অফিসে কর্মরত ৫৭৯ জনের মধ্যে ৫৬৯ আবেদন ফরম জমা দিয়ে গণছুটিতে গেছেন। তাদের মধ্যে ২১ জন পরবর্তীতে কর্মস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। জনবল সংকটের কারণে বর্তমানে ফুলগাজীতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকলেও মেরামত কাজে বিলম্ব হচ্ছে। গণছুটিতে যাওয়া কর্মীদের বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে কাজে ফেরানোর চেষ্টা চলছে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত