সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ১৬ মাসে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন। তাঁর দাবি, সরকারের অযোগ্যতা, অদক্ষতা ও উপদেষ্টাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে সংস্কারের কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি; বরং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় গুপ্তহত্যার মতো ঘটনা শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
রাশেদ খাঁন বলেন, ‘এই সরকারের যে ভুলভ্রান্তি আমরা দেখলাম, বিশেষ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে সরকারের অযোগ্যতা, অদক্ষতা এবং এই উপদেষ্টাদের মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা, আমরা অনেক কিছু দেখেছি। তারা আমাদের সবসময় সংস্কারের কথা বলেছিল। তারা এমন একটা রাষ্ট্র উপহার দেবে, যেখানে প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা হবে। একটা উন্নত, সমৃদ্ধ রাষ্ট্র, আমেরিকা ইউরোপের মতো রাষ্ট্রব্যবস্থা; তার কোনো কিছু আমরা দেখি নাই।’
তিনি বলেন, ‘১৬ মাসে আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করা হয়েছে। বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে। যার ফলাফল আমরা দেখলাম, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারার কারণে আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা আজকে গুপ্তহত্যা শুরু করেছে।’
স্বাধীনতার লক্ষ্য ও অর্জনের প্রসঙ্গ টেনে গণঅধিকার পরিষদের এই নেতা বলেন, ‘আমরা যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে স্বাধীন হয়েছিলাম, স্বাধীনতার এত বছরে বা বিজয়ের এত বছরে এখনও কিন্তু আমরা সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও মানবিক সুবিচারের ভিত্তিতে একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। এখনও পর্যন্ত আমরা বলছি নতুন রাষ্ট্র। ঠিক ওই সময় যারা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, তাঁরাও একই কথা বলেছিলেন—একটা নতুন বাংলাদেশ, একটা নতুন রাষ্ট্র। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত সেই নতুন রাষ্ট্র, যেখানে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার থাকবে, সেটি আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিজেদের সবসময় মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে দাবি করেছে। কিন্তু সেই আওয়ামী লীগই গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা—সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার; যেখানে কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে, চলাফেরার নিরাপত্তা থাকবে, মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। সে ধরনের বাংলাদেশ আমরা গঠন করতে পারিনি। বিশেষ করে ১৪ সালের নির্বাচন, ১৮ সালের নির্বাচন, ২৪ সালের ডামি নির্বাচন; এই যে নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে, এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই ধ্বংস করেছে।’
রাশেদ খাঁন আরও বলেন, ‘এই কারণেই চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। এই গণ-অভ্যুত্থানে দুই হাজার ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছে। আমরা দেখেছি, কিভাবে গণ-অভ্যুত্থানের সময় নির্বিচারে গুলি করে শিশু থেকে বৃদ্ধ, তরুণ এমনকি আমাদের মা-বোনদের হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ ধরনের অতীতে আর ফিরে যেতে চাই না। আমাদের সবাইকে একতাবদ্ধ হয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠন করতে হবে।’
আসন্ন নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সে লক্ষ্যে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে যে নির্বাচন হবে, সেটি হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ফ্যাসিবাদমুক্ত নির্বাচন। যদি সরকার সেটি জাতিকে উপহার দিতে পারে।’
সরকারের ভূমিকা নিয়ে আবারও সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তারা সংস্কারের কথা বলেছিল। কিন্তু ১৬ মাসে আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন। বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলেই আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তরা আজ গুপ্তহত্যা শুরু করেছে।’
রাশেদ খাঁন বলেন, ‘আমি আমার বক্তব্যে বলেছিলাম, আওয়ামী লীগ একটা মিশন নিয়েছে, প্রায় ৫০ জন প্রার্থীকে তারা হত্যা করবে। এটা তারা শুরু করেছে। আমরা দেখেছি, আমাদের একজন বিপ্লবী যোদ্ধা, বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর; বিশেষ করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যিনি লড়াই করছিলেন, সেই যোদ্ধা ওসমান হাদি ভাইকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় গুলি করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সেই আসামিদের গ্রেপ্তার করা যায়নি।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, যদি কেউ আসামিদের চিহ্নিত করে দিতে পারে, সেক্ষেত্রে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। আমার প্রশ্ন, তাহলে আপনার গোয়েন্দা সংস্থা কি করছে, পুলিশ কি করছে, র্যাব ও যৌথ বাহিনী কি করছে?’
তিনি আরও বলেন, ‘এর আগে অপারেশন ডেভিল হান্ট ঘোষণা করা হয়েছিল। আমার কাছে মনে হয়, এখন অপারেশন ডেভিল হান্ট ২ ঘোষণা করা উচিত। ফ্যাসিবাদের দোসর যারা সরকারে, উপদেষ্টা পরিষদে, বিভিন্ন সেক্টরে, দপ্তরে ও বাহিনীতে রয়েছে, এই ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মাদের ধরার জন্যই এই অভিযান হওয়া দরকার।’
এ সময় গণঅধিকার পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।