leadT1ad

অ্যান্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার গুরুতর সংকট সৃষ্টি করছে: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ৩০
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। ছবি: পিআইডি

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) মোকাবিলায় প্রিভেন্টিভ হেলথ প্র্যাকটিস, ‘ওয়ান হেলথ’ সহযোগিতা এবং শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। তিনি বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এখন দেশের স্বাস্থ্য, প্রাণিসম্পদ, মৎস্য এবং এমনকি কৃষি খাতেও গুরুতর সংকট সৃষ্টি করছে, তাই অবিলম্বে সমন্বিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।’

আজ রোববার (২৩ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সচেতনতা সপ্তাহ–২০২৫ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত মাল্টি-সেক্টোরাল ওয়ান হেলথ এএমআর সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, দেশে সম্প্রতি ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প নিয়ে মানুষের মনে আতঙ্ক থাকলেও, এর চেয়েও বড় ও স্থায়ী ঝুঁকি তৈরি করছে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক ব্যবহার। সেমিনারে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের হার ৯৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এছাড়া পোল্ট্রি খাতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের হার ৭৬ দশমিক ৯ শতাংশ, যা সরাসরি মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর প্রভাব ফেলছে। তিনি যুক্তি দেন, ভূমিকম্পের ক্ষতি একবারে ঘটে শেষ হয়ে যায় কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও ঝুঁকির মুখে ফেলে।

ফরিদা আখতার আরও বলেন, শুধু মানুষের স্বাস্থ্যের কথা ভাবলে হবে না। আমাদের প্রাণী (এনিমেল), বন (ফরেস্ট) ও বন্যপ্রাণীর (ওয়াইল্ড লাইফ) স্বাস্থ্য—সবকিছুরই সুরক্ষা দিতে হবে। খাদ্য, প্রাণী ও মানুষের স্বাস্থ্য একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত; এ কারণেই ‘ওয়ান হেলথ’ ধারণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উপদেষ্টা বলেন, খাদ্য নিরাপদ না হলে মানুষের স্বাস্থ্য কখনোই নিরাপদ থাকবে না। এ জন্য জনসাধারণের মাঝে এমন দাবি জোরালো করতে হবে—‘অ্যান্টিবায়োটিক-ফ্রি মুরগি চাই, অ্যান্টিবায়োটিক-ফ্রি মাছ চাই’। তিনি মনে করেন, নিরাপদ খাদ্য নিয়ে সামাজিক চাপ ও সচেতনতা তৈরি করাই রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলার অন্যতম কার্যকর উপায়। তিনি আরও বলেন, এএমআর বিষয়ে সচেতনতা শুধু একটি সপ্তাহে সীমাবদ্ধ না রেখে বছরব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন দিবসের মাধ্যমে ধারাবাহিক প্রচারণা চালাতে হবে, যেখানে গণমাধ্যমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

সাম্প্রতিক ব্রাজিল জলবায়ু সম্মেলনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং যত তীব্র হচ্ছে, নতুন রোগের প্রকোপ ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের ঝুঁকিও তত বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও এএমআর—দুটি বৈশ্বিক সংকট পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কিত এবং এ দুটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে সমন্বিত ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন এফএও বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ জিয়াওকুন শি, ডব্লিউএইচও বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ আহমেদ জামশেদ মোহাম্মদ, বিশ্ব প্রাণী স্বাস্থ্য সংস্থার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রতিনিধি ড. হিরোফুমি কুগিটা, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক এবং স্বাস্হ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ড. খায়ের আহমেদ চৌধুরী।

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত