leadT1ad

রাজধানীতে বাসে হেনস্তা: যা জানালেন ভুক্তভোগী তরুণী

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

বাসে তরুণীকে হেনস্তা (ছবি ভিডিও থেকে), অভিযুক্ত বাস হেলপার নিজামউদ্দিন

রাজধানীতে যাত্রীবাহী বাসে এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার ঘটনাটির সূত্রপাত ‘হাফভাড়া’ নিয়ে হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক আহমেদ। তবে ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর অভিযোগ, অভিযুক্ত সেই হেলপার বাসে ওঠার সময়ই সহযোগিতার নামে তাঁর ‘গায়ে টাচ’ করার চেষ্টা করেছেন। আবার পরে ভাড়া নিতে এসে এবং বাস থেকে নেমে যাওয়ার সময় দুই দফায় তাঁকে হেনস্তা করেছেন।

গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে ধানমন্ডি থেকে রমজান পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক তরুণী। বাসটি বসিলা মেট্রো হাউজিং এলাকায় পৌঁছালে ভাড়াকে কেন্দ্র করে ওই ছাত্রীর সঙ্গে বাসের হেলপারের বাগবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যায়, বাসে ওই তরুণীকে আঘাত করা হলে তিনিও জুতা দিয়ে পাল্টা আঘাত করেন।

এ ঘটনায় গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী ওই তরুণী। মামলায় শুধু বাসের ওই হেলপার নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) আসামি করা হয়েছে। সেই অভিযুক্তের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের খান্দারপাড় গ্রামে। এরই মধ্যে নিজাম উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। পরে ঢাকার একটি আদালত কারাগারে তাকে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে রোববার স্ট্রিমের সঙ্গে কথা হয় ভুক্তভোগী ওই তরুণীর। সেদিনের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সেদিন বাসে ওঠার সময়ই তিনি (অভিযুক্ত বাসের হেলপার) সহযোগিতার নামে শরীরে টাচ করেছিল। আমি তখনই বলেছিলাম, (সহযোগিতার) দরকার নেই। সিটে বসার পর তিনি ভাড়া নিতে আসেন। স্টুডেন্ট ভাড়া নেওয়ার কথা বললে তিনি বলে ওঠেন, আপনারে তো স্টুডেন্ট মনে হচ্ছে না। স্টুডেন্টরা এসব পোশাক পরে নাকি? তখনই আমি প্রতিবাদ করেছি। তাকে বলেছি, আপনি আমার পোশাক নিয়ে কথা বলছেন কেন? তখন তিনি বলেন, আমি তোমার থেকে বড়, মুরুব্বি হিসেবেই বলছি।’

ওই তরুণী বলেন, ‘তখন পর্যন্ত আমি তার সঙ্গে ভদ্রভাবে কথা বলে গেছি। যখন বাস থেকে নামতে যাবো, তখন তিনি আমাকে নিয়ে খারাপ মন্তব্য শুরু করেন। বলে ওঠেন—যা যা, খারাপ মাইয়া কোথাকার, খা***র (অশ্রাব্য) মতো চলাফেরা! তারপরই আমি তাকে তুই সম্বোধন করে কথা বলতে থাকি। এক পর্যায়ে সে আমাকে চড় মেরে বসে। এরপরই আমি জুতা খুলে তাকে আঘাত করি।’

মামলার অভিযোগেও পোশাক নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে ধরেছেন ভুক্তভোগী ওই তরুণী। শনিবার দুপুরে এ প্রসঙ্গে স্ট্রিমের কথা হয় মোহাম্মদপুর থানার ওসি কাজী রফিক আহমেদের সঙ্গে। তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ধানমন্ডি থেকে বসিলাগামী বাসে উঠেছিলেন ওই নারী শিক্ষার্থী। বাসের হেলপার নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে ‘হাফভাড়া’ নিয়ে তর্কাতর্কি শুরু হয়। একপর্যায়ে হেলপার নাজিম উদ্দিন নারী শিক্ষার্থীর শরীরে প্রথম আঘাত করেন। ওইসময় নারীর পোশাক নিয়ে কোনো কটূক্তি করেননি বলে দাবি করেছেন হেলপার।’

মামলার প্রাথমিক তদন্তের বরাত দিয়েও এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, ঝগড়ার সূত্রপাত হয় হাফ ভাড়া নিয়ে। সেসময় ছাত্রীর পোশাক নিয়ে কোনো বাজে মন্তব্য করেননি। মূলত বাসের ভাড়া নিয়েই বাসে ঝগড়া শুরু হয়। এরপরই হেলপার মেয়েটিকে শারিরীকভাবে আঘাত করেন। এতে মেয়েটিও তার পায়ের জুতা খুলে হেলপারকে আঘাত করেন।

বাসের হেলপার কেন মেয়েটির শরীরে আঘাত করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাড়া নিয়ে দ্বন্দ্বের কথাই বলেছেন হেলপার। এর বাইরে অন্যকিছু পাওয়া যায়নি।

এই ঘটনায় করা মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আক্কেল আলী। তিনি শনিবার স্ট্রিমকে বলেন, ‘হাফভাড়া নিয়েই ঝগড়ার সূত্রপাত। তারপর তার পোশাক নিয়ে কটূক্তি করা হয়।’

আজ দুপুরে ওই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে ওই তরুণী স্ট্রিমকে বলেন, ‘আপনারা ভিডিওতে যেসব দেখেছেন, তার আগে থেকেই বাস হেলপার আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে গেছেন। তবে নামার সময় তিনি যে বাজে কথা ও বাজে আচরণ করেন, সেটাতে আমি আমার মেজাজ ধরে রাখতে পারি নাই।’

তিনি বলেন, ‘ওই ঘটনার পর থেকেই আমি অসুস্থ। মানসিক সমস্যার পাশাপাশি এখন জ্বর ও ঠান্ডাজনিত সমস্যাতেও ভুগছি।’

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত