leadT1ad

চাচা-চাচিকে পিতা-মাতা সাজানোর অভিযোগ: ইউএনও কামালের ডিএনএ পরীক্ষা করবে দুদক

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা

ছবি: বাসসের সৌজন্যে

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরি নিতে আপন চাচা-চাচিকে পিতা-মাতা সাজানোর অভিযোগে অভিযুক্ত বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তা ও বর্তমান নাচোল ইউএনও মো. কামাল হোসেনের ডিএনএ পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার তদন্তের অংশ হিসেবে তাঁর, তাঁর প্রকৃত পিতা-মাতা এবং অভিযুক্ত চাচা-চাচির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার করা আবেদনটি কমিশন অনুমোদন করেছে।

আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

আক্তার হোসেন বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি এবং চাকরি লাভসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগের উদ্দেশ্যে জন্মদাতা পিতা-মাতার পরিচয় গোপন করে আপন চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আহসান হাবিব এবং চাচি মোসাম্মৎ সানোয়ারা খাতুনকে পিতা-মাতা সাজিয়ে তিনি চাকরি গ্রহণ করেছিলেন। এই অপরাধে আসামি মোহাম্মদ কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে মামলা রুজু করা হয়েছিল।’

মহাপরিচালক আরও বলেন, ‘উক্ত মামলা তদন্তকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রকৃত পিতামাতার পরিচয় নির্ধারণের জন্য ডিএনএ টেস্টের জন্য আবেদন করেছিলেন। কমিশন কর্তৃক সে আবেদন বিবেচনা করা হয়েছে এবং আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে আসামী মোহাম্মদ কামাল হোসেনসহ তাঁর প্রকৃত পিতামাতা ও তার চাচা-চাচির ডিএনএ টেস্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’

মো: কামাল হোসেনের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. আক্তার হোসেন জানান, আসামি মো. কামাল হোসেন (পরিচিতি নং-১৮২১৫) বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ৩৫ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। তিনি সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার। বর্তমানে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হিসেবে কর্মরত আছেন। এর আগে তিনি নওগাঁর আত্রাইয়ের ইউএনও এবং মাগুরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

এই জালিয়াতির ঘটনায় গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. মনজুরুল ইসলাম মিন্টু বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১-এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, কামাল হোসেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের সিরাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ফিলিপনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত তার প্রকৃত পিতা মো. আবুল কাশেম ও মা মোছা. হাবীয়া খাতুনের নামই ব্যবহার করেন। কিন্তু ৯ম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশনের সময় তিনি জালিয়াতির মাধ্যমে পিতা-মাতার নাম পরিবর্তন করে আপন চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আহসান হাবীব এবং চাচি মোছা. সানোয়ারা খাতুনকে পিতা-মাতা হিসেবে দেখান।

পরবর্তী সময়ে এই পরিবর্তিত নাম ব্যবহার করেই তিনি এসএসসি, এইচএসসিসহ বিভিন্ন উচ্চতর ডিগ্রি, জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। এই ভুয়া পরিচয়ের ভিত্তিতেই তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি লাভ করেন। তাঁর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০ (প্রতারণা), ৪৬৭ (মূল্যবান দলিল জালিয়াতি), ৪৬৮ (প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি) ও ৪৭১ (জেনেশুনে জালিয়াতিপূর্ণ দলিল ব্যবহার) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এখন আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে এই ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন করবেন।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ বা কোটা সংক্রান্ত অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে দুদকের এই মহাপরিচালক বলেন, ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে যে সমস্ত অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছিল সেগুলোর অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান আছে। যেসব ক্ষেত্রে অনুসন্ধান শেষ হয়েছে সেগুলোর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে এবং মামলা রুজু হয়েছে। আরও যেগুলো অপেক্ষমান রয়েছে, সেগুলোর অনুসন্ধান কাজ শেষ হলে প্রতিবেদন দাখিল সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Ad 300x250
সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্কিত